কালিম্পং জেলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালিম্পং জেলা
कालेबुङ
পশ্চিমবঙ্গের জেলা
পশ্চিমবঙ্গে কালিম্পং জেলার অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গে কালিম্পং জেলার অবস্থান
রাষ্ট্রভারত
প্রদেশপশ্চিমবঙ্গ
সরকার
 • শাসককালিম্পং পৌরসভা
আয়তন
 • মোট১,০৫৬.৫ বর্গকিমি (৪০৭.৯ বর্গমাইল)
উচ্চতা১,২৪৭ মিটার (৪,০৯১ ফুট)
 • জনঘনত্ব৪০.৭০/বর্গকিমি (১০৫.৪/বর্গমাইল)
ভাষা
 • আঞ্চলিকনেপালি, তিব্বতি, ভূটিয়া, , শেরপা লেপচা, কিরান্তি
 • দাপ্তরিকনেপালি, বাংলা, ইংরেজি[১]
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৭৩৪ ৩০১
টেলিফোন কোড০৩৫৫২
যানবাহন নিবন্ধনডব্লিউ বি-৭৮, ৭৯
লোকসভা নির্বাচনী এলাকাদার্জিলিং
বিধানসভা নির্বাচনী এলাকাকালিম্পং
কালিম্পংয়ের নীল অর্কিড
কালিম্পং শহরে ফুটবল খেলা

কালিম্পং জেলা (নেপালি: कालिम्पोङ; তিব্বতি: ཀ་སྦུག) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি জেলানিম্ন হিমালয়-এ অবস্থিত। গড় উচ্চতা ১,২৫০ মিটার (৪,১০১ ফু)।[২]কালিম্পং জেলার সদর দপ্তর কালিম্পং শহরের উপকণ্ঠে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৭ মাউন্টেন ডিভিশন অবস্থিত।[৩]

কালিম্পং-এর পরিচিতি রয়েছে শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য। এগুলির অধিকাংশ ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত হয়।[৪] চীনের তিব্বত আগ্রাসন ও ভারত-চীন যুদ্ধের আগে পর্যন্ত এই শহর ছিল ভারত-তিব্বত বাণিজ্যদ্বার। ১৯৮০-র দশক থেকে কালিম্পং ও প্রতিবেশী দার্জিলিং পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র।

কালিম্পং তিস্তা নদীর ধারে একটি শৈলশিরার উপর অবস্থিত। মনোরম জলবায়ু ও সহজগম্যতা একে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র করেছে। উদ্যানপালনে কালিম্পং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নানাপ্রকার অর্কিড দেখা যায়। এখানকার নার্সারিগুলিতে হিমালয়ের ফুল, স্ফীতকন্দ (tubers) ও রাইজোমের ফলন চলে। কালিম্পং-এর অর্থনীতিতে এই ফুলের বাজার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।[২] নেপালি, অন্যান্য আদিবাসী উপজাতি ও ভারতের নানা অংশ থেকে অভিনিবেশকারীরা শহরের প্রধান বাসিন্দা। কালিম্পং বৌদ্ধধর্মের একটি কেন্দ্র। এখানকার জ্যাং ঢোক পালরি ফোডাং বৌদ্ধমঠে বহু দুষ্প্রাপ্য তিব্বতি বৌদ্ধ পুঁথি রক্ষিত আছে।[৫]

নামের উৎপত্তি[সম্পাদনা]

কালিম্পং নামের সঠিক উৎস অজ্ঞাত। সর্বজনগ্রাহ্য মত হল, তিব্বতি ভাষায় কালিম্পং মানে রাজার মন্ত্রীদের সভা (বা বেড়া)। কথাটি এসেছে কালোন (রাজার মন্ত্রী) ও পং (বেড়া) শব্দদুটি থেকে। অন্য মতে, লেপচা ভাষায় কালিম্পং শব্দটির অর্থ যে শৈলশিরায় আমরা খেলা করি। অতীতে এখানে স্থানীয় আদিবাসীদের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়ানুষ্ঠানের আসর বসত। পাহাড়ের অধিবাসীরা এই অঞ্চলকে কালিবং-ও (কালো নাল (spur)) বলে থাকেন।[৬]

দি আনটোল্ড অ্যান্ড আননোন রিয়ালিটি অ্যাবাউট দ্য লেপচাস গ্রন্থের রচয়িতা কে পি তামসাং-এর মতে, কালিম্পং কথাটি এসেছে কালেনপাং শব্দ থেকে, লেপচা ভাষায় যার অর্থ গোষ্ঠীর ছোটো পাহাড় ("Hillock of Assemblage")।[৭] শব্দটি প্রথমে হয় কালীবাং। পরে আরও বিকৃত হয়ে হয় কালিম্পং। অন্য মতে, এই অঞ্চলে বহুল প্রাপ্ত তান্তব উদ্ভিদ কাউলিম-এর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে কালিম্পং।কালিম্পং মহুকুমা নতুন জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশের পর জেলার নামও রাখা হয় কালিম্পং।

এলাকা[সম্পাদনা]

২৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কালিম্পং পুরসভা এলাকা ছাড়াও এই জেলার গ্রামাঞ্চল তিনটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অধীনে মোট ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিন্যস্ত। সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলির নাম কালিম্পং ১, কালিম্পং ২গোরুবাথান[৮]

কালিম্পং জেলার আয়তন ১,০৫৩.৬০ কিমি (৪০৬.৮০ মা)। কালিম্পং ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৩৬০.৪৬ কিমি (১৩৯.১৭ মা); কালিম্পং ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ২৪১.২৬ কিমি (৯৩.১৫ মা); গোরুবাথান সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৪৪২.৭২ কিমি (১৭০.৯৪ মা); এবং কালিম্পং পৌর এলাকার আয়তন ৯.১৬ কিমি (৩.৫৪ মা)।[৯]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ক্যাথরিন গ্রাহাম মেমোরিয়াল চ্যাপেল, ড. গ্রাহাম'স হোমস
কালিম্পং-এর ক্লক টাওয়ার
মর্গান হাউস হল কালিম্পং-এর ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের এক ধ্রুপদি নিদর্শন

অধুনা কালিম্পং জেলার ভূখণ্ডটি অতীতে সিক্কিম রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল।[১০][১১] এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রিত হত এখানকার দু'টি পার্বত্য দুর্গের মাধ্যমে - একটি ডামসং ও অপরটি ডালিং (বা ডালিংকোট, অর্থাৎ "ডালিং দুর্গ")। অনুমিত হয় যে, এই অঞ্চলটিও ডালিংকোট নামেই অভিহিত হত।[১২] ১৭১৮ সালে ভুটান রাজ্য এই অঞ্চল অধিকার করে নেয় এবং পরবর্তী ১৫০ বছর এটির ভুটানেরই অধিভুক্ত থাকে।[১৩] সেই যুগে এই জনবিরল অঞ্চলের অধিবাসীরা ছিল মূলত আদিনিবাসী লেপচা সম্প্রদায় এবং অনুপ্রবেশকারী ভুটিয়া, লিম্বুকিরাতি উপজাতি।

১৮৬৪ সালে অ্যাংলো-ভুটান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরের বছর সিঞ্চুলার চুক্তি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পূর্বভাগের কিছু পার্বত্য এলাকা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে হস্তান্তরিত করা হয়।[১০] কোন অঞ্চলগুলি হস্তান্তরিত হয়েছিল তা নির্দিষ্ট না হলেও ডালিংকোট দুর্গ এই অঞ্চলের অন্তর্গতই ছিল। ১৮৬৬-৬৭ সালে অ্যাংলো-ভুটানিজ কমিশন এই এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয় এবং দিচু ও নিচু নদী দু'টিকে পূর্ব সীমানা হিসেবে চিহ্নত করা হয়।[১৪][১৫]

হস্তান্তরিত অঞ্চলটিকে প্রথমে পশ্চিম ডুয়ার্স জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৬৬ সালে তা হস্তান্তরিত হয় দার্জিলিং জেলায়[১৬] এটিকে অভিহিত করা হত অতীতের পার্বত্য দুর্গগুলির নামানুসারে "ডালিংকোট এলাকা" বা "ডামসং এলাকা" নামে।[১৫][১৭] সেই সময় কালিম্পং ছিল একটি ছোটো গ্রাম। মাত্র দু'টি কি তিনটি পরিবার সেখানে থাকত বলে জানা যায়।[১৮] যদিও ১৮৬৪ সালে ভুটানে দৌত্যের সময় অ্যাশলি ইডেন কৃত সমীক্ষা অনুযায়ী জানা যায় যে, কালিম্পং-এর আশেপাশে জনবসতিপূর্ণ বেশ কয়েকটি গ্রাম ছিল। ইডেন আরও বলেন যে, এখানকার লোককন ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এবং তারা ভুটানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করে প্রায়শই তিস্তার পশ্চিমে দার্জিলিং অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালায়।[১৯]

কালিম্পং-এর জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে ব্রিটিশরা এখানে দার্জিলিং-এর বিকল্প এক শৈলশহর গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়। তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষাকারী নাথু লাজেলেপ লা গিরিপথের নৈকট্যও এই শৈলশহর গড়ে তোলার পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। অনতিকালের মধ্যেই কালিম্পং একটি বাণিজ্যকুঠি এবং তিব্বত ও ভারতের মধ্যে পশুর লোম, উল ও খাদ্যশস্য কেনাবেচার কেন্দ্রে পরিণত হয়।[২০] ব্যবসাবাণিজ্যের বৃদ্ধির ফলে প্রতিবেশী নেপাল ও সিক্কিমের নিম্নাঞ্চল (যেখানে ১৭৯০ সালে সিক্কিমে গোর্খা সামরিক অভিযানের সময় থেকে নেপালিদের বসবাস) থেকে বহু সংখ্যক নেপালি এখানে চলে আসে। এই অঞ্চলে জনসমাগম ও ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতির ফলে কালিম্পং একটি ছোটো গ্রাম থেকে সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়। ব্রিটেন কালিম্পং-এ প্রভাবশালী ভুটানি দোরজি পরিবারকে ভূসম্পত্তি প্রদান করে, যার মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্কটিও বজায় থাকে। এটিই পরে ভুটানি প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ভুটান হাউসে রূপান্তরিত হয়।[২১][২২][২৩]

স্কটিশ মিশনারিদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে ব্রিটিশদের জন্য বিদ্যালয় ও জনকল্যাণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে।[১৮] ১৮৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে রেভারেন্ড ডব্লিউ. ম্যাকফারলেন এই অঞ্চলে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেন।[১৮] ১৮৮৬ সালে স্কটিশ ইউনিভার্সিটি মিশন ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। এরপর স্থাপিত হয় কালিম্পং গার্লস হাই স্কুল। ১৯০০ সালে দুঃস্থ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য রেভারেন্ড জন আন্ডারসন গ্রাহাম প্রতিষ্ঠা করেন ড. গ্রাহাম'স হোমস[১৮] ১৯১০ সালে তরুণ মিশনারি তথা কবি ও সাহিত্যিক এইনিস ফ্র্যানকন উইলিয়ামস মাত্র ২৪ বছর বয়সে কালিম্পং-এ এসে ড. গ্রাহাম'স হোমসের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন।[২৪] এখানে তিনি পরে ধনাধ্যক্ষ হন এবং পরবর্তী চোদ্দো বছর এই স্কুলেই চাকরি করেন।[২৫] ১৯০৭ সাল থেকে কালিম্পং-এর অধিকাংশ স্কুলের দরজা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৯১১ সালের মধ্যেই কালিম্পং-এ নেপালি, লেপচা, তিব্বতি, মুসলমান ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সহ বহু জাতির বসতি গড়ে ওঠে। ফলে এই সময় কালিম্পং-এর জনসংখ্যা বেড়ে হয় ৭,৮০০।[১৮]

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কালিম্পং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৯৫৯ সালে গণচীন তিব্বত দখল করলে অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে এসে কালিম্পং-এ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ভিক্ষুরা বহু দুষ্প্রাপ্য বৌদ্ধ শাস্ত্র সঙ্গে এনেছিলেন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর জেলেপ লা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলে ভারতের সঙ্গে তিব্বতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ছেদ পড়ে এবং তার ফলে কালিম্পং-এর অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৭৬ সালে দলাই লামা এসে কালিম্পং-এ জাং ঢোক পালরি ফোডং মঠ উদ্বোধন করেন। এই মঠে অনেক বৌদ্ধশাস্ত্র রক্ষিত হয়েছে।[১৮]

১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে দাঙ্গা একটি চল্লিশ-দিনের হরতালের পর মারাত্মক আকার নেয়। কালিম্পং কার্যত অবরুদ্ধ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজ্য সরকার সেনাবাহিনী নিয়োগ করে। এর ফলে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল নামে একটি আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা গঠিত হয় শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে অবশিষ্ট দার্জিলিং জেলা পরিচালনার জন্য। ২০০৭ সাল থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কর্তৃক পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়।[২৬]

দার্জিলিং জেলার কালিম্পং মহকুমা ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে পৃথক ভাবে কালিম্পং জেলা হিসাবে পরিচিত হয়।

নদ নদী[সম্পাদনা]

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

এই কালিম্পং জেলা একটি মহুকুমা (কালিম্পং মহকুমা), কালিম্পংপৌরসভা এবং কালিম্পং-১, কালিম্পং-২ ও গোরুবাথান ব্লক তিনটি নিয়ে গঠিত। এই ব্লকে ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। কালিম্পং এই মহকুমার সদর শহর। কালিম্পংপৌরসভা ছাড়াও এই মহকুমা ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত অবস্থিত। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কালিম্পং-১, কালিম্পং-২ ও গোরুবাথান ব্লকের অধীনস্থ।[১]

ব্লক[সম্পাদনা]

কালিম্পং-১ ব্লক[সম্পাদনা]

কালিম্পং-১ ব্লক ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল: বং, কালিম্পং, সামালবং, তিস্তা, ড. গ্রাহামস হোমস, নিম্ন এছায়, সামথার, নিমবং, ডুংরা, উচ্চ এছায়, সেওকবির, ভালুকহোপ, ইয়াংমাকুম, পাবরিংটার, সিনডেপং, কাফের কানকে বং, পুডুং ও তাশিডিং।কালিম্পং এই ব্লকের একমাত্র থানা। ব্লকের সদর কালিম্পং।

কালিম্পং-২ ব্লক[সম্পাদনা]

কালিম্পং-২ ব্লক ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল: দালাপচন্দ, কাশিয়ং, লোলে, লিংসেইখা, গিতাব্লিং, লাআ-গিতাবেয়ং, পেয়ং, কাগে, লিংসে, শাংসে, পেডং স্যাকিয়ং ও শান্তুক। এই ব্লকে কোনো থানা নেই। ব্লকের সদর আলগোরা।

গোরুবাথান ব্লক[সম্পাদনা]

গোরুবাথান ব্লক ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল: দালিম, গোরুবাথান-২, পাটেংগোডাক, টোডেটাংটা, গোরুবাথান-১, কুমাই, পোখরেবং, স্যামসিং, আহালে, নিম ও রোঙ্গো।এই ব্লকে দুটি থানা রয়েছে। যথা, গোরুবাথান ও জলঢাকা।ব্লকের সদর ফাগু।

জনপরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

কালিম্পং জেলার ধর্মবিশ্বাস (২০১১)[২৭]
হিন্দুধর্ম
  
৬০.৯৪%
বৌদ্ধধর্ম
  
২০.৯৪%
খ্রিস্টধর্ম
  
১৪.৮৮%
ইসলাম
  
১.৫৯%
প্রথাগত ধর্ম
  
১.২৯%
অন্যান্য বা অনুল্লিখিত
  
০.৩৬%

কালিম্পং জেলার ভাষা (২০১১)[২৮][২৯]

  নেপালি (৮৭.৬১%)
  হিন্দি (৩.১৮%)
  লেপচা (২.৬৭%)
  ভোজপুরি (১.১৬%)
  অন্যান্য (৫.৩৮%)

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, কালিম্পং জেলার (তদনীন্তন কালিম্পং মহকুমার হিসেব অনুযায়ী) জনসংখ্যা ২৫১,৬৪২। কালিম্পং ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনসংখ্যা ৭৪,৭৪৬; কালিম্পং ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনসংখ্যা ৬৬,৮৩০; গোরুবাথান সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জসংখ্যা ৬০,৬৬৩; এবং কালিম্পং পুরসভার জনসংখ্যা ৪৯,৪০৩। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৬,৪৩৩ (৬.৫৩%) ও ৭৪,৯৭৬ (২৯.৭৯%)।[৯]

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, কালিম্পং জেলার হিন্দু জনসংখ্যা ১৫৩,৩৫৫ (৬০.৯৪%), বৌদ্ধ জনসংখ্যা ৫২,৬৮৮ (২০.৯৪%), খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৩৭,৪৫৩ (১৪.৮৮%), মুসলমান জনসংখ্যা ৩,৯৯৮ (১.৫৯%) এবং কিরাত মুন্ধুম প্রভৃতি প্রথাগত ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ৩,২৪৩ (১.২৯%)।[২৭]

ভাষা[সম্পাদনা]

১৯৫১ সালের জনগণনার সময় দেখা গিয়েছিল যে, অধুনা কালিম্পং জেলার অন্তর্গত ভূখণ্ডের মাত্র ২৪% অধিবাসীর মাতৃভাষা নেপালি। অধিকাংশই রাই, লিম্বু, লেপচাতামাং প্রভৃতি নানান ভাষায় কথা বলত, কিন্তু দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এরা প্রায় সবাই নেপালিও জানত।[৩০] ১৯৬১ সালের মধ্যেই কালিম্পং-এ নেপালিভাষী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫% হয়ে যায়। পার্বত্য এলাকায় অন্যান্য ভাষাভাষীর সংখ্যায় নাটকীয় পতন নেপালিদের সংখ্যাবৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল।[৩১]

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই জেলার জনসংখ্যা ৮৭.৬১% নেপালি, ৩.১৮% হিন্দি, ২.৬৭% লেপচা ও ১.১৬% ভোজপুরি ভাষায় কথা বলে।[২৮][২৯]

উদ্ভিদ ও প্রাণী[সম্পাদনা]

নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যানে লাল পান্ডা।

কালিম্পং জেলাতেই নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। এই জাতীয় উদ্যানটির আয়তন ১৫৯.৮৯ কিমি (৬১.৭৩ মা)।[৩২] এখানে যে সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর অবস্থানের কথা জানা যায় তার মধ্যে আছে ভারতীয় চিতা, পাঁচ প্রজাতির ভাইভেরিডি, এশীয় কালো ভাল্লুক, শ্লথ ভালুক, এশীয় সোনালী বিড়াল, দেশি বুনো শুয়োর, চিতা বিড়াল, ঘোরল, সরাব, কাকড়, সম্বর হরিণ, উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি, তার ছাগল, লাল পান্ডামেঘলা চিতা[৩৩]

আইনসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, কালিম্পং জেলার (তৎকালীন কালিম্পং মহকুমা) অন্তর্গত তিনটি ব্লক (কালিম্পং ১, কালিম্পং ২গোরুবাথান) এবং কালিম্পং পুরসভাটিকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি আবার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ভারতীয় জনতা পার্টির নীরজ জিম্বা এই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। অন্যদিকে কালিম্পং বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (তামাং গোষ্ঠী)-র রুদেন সাদা লেপচা।[৩৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Report of the Commissioner for Linguistic Minorities in India: 48th report (July 2010 to June 2011)" (পিডিএফ)। Commissioner for Linguistic Minorities, Ministry of Minority Affairs, Government of India। পৃষ্ঠা 159–160। ২০১২-১০-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-১৩ 
  2. "General Information"Tourism DepartmentDarjeeling Gorkha Hill Council। ২০০৮-১১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৮ 
  3. "India moves over 6,000 troops to border with China"। Chennai, India: The Hindu। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৭। ৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৮ 
  4. "Education and prospects for employment" (পিডিএফ)। Government of Sikkim। পৃষ্ঠা 33। ২০০৯-০৩-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২১ 
  5. "Special: Kalimpong, West Bengal"Rediff। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৮ 
  6. "Kalimpong Etymology"। Government of West Bengal। ২০০৮-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২২ 
  7. "History of kalimpong"Darjeelingnews.net। Darjeeling News Service। ২০০৭-০২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-১৭ 
  8. "Directory of District, Sub division, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal, March 2008"। Government of West Bengal। ১৯ মার্চ ২০০৮। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. Darjiling District Census Handbook, Part B (পিডিএফ), Directorate of Census Operations, West Bengal, ২০১১ 
  10. "History of Kalimpong"। Darjeeling News Service। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ 
  11. Gurung, Chanda; Gurung, Nawraj (২০০৬)। "The Social and Gendered Nature of Ginger Production and Commercialization"। Ronnie Vernooy। Social and Gender Analysis in Natural Resource Management। International Development Research Centre (Canada), NetLibrary, Inc। পৃষ্ঠা 39–43। আইএসবিএন 1-55250-218-X 
  12. Sengupta, Somen (৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬)। "Next weekend you can be at ... Kalimpong"। The Telegraph। ৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. Subba, J. R. (২০০৮), History, Culture and Customs of Sikkim, Gyan Publishing House, পৃষ্ঠা 50, আইএসবিএন 9788121209649 
  14. Samanta, Gorkhaland Movement (2000), পৃ. 43
  15. Hunter, W. W. (১৮৭৬), A Statistical Account Of Bengal, Vol. X: Districts of Darjiling and Jalpaiguri, State of Kuch Behar, London: Trubner & Co, পৃষ্ঠা 19 – archive.org-এর মাধ্যমে : "In August 1866, by a Government Resolution, the hilly tract situated east of the Tista, west of the Ne-chu and De-chu rivers, and south of Independent Sikkim, being part of the territory acquired as the result of the Bhutan campaign of 1864, was added to the jurisdiction of Darjiling, and now forms the tract known as Damsang or Dalingkot."
  16. Roy, Survey and Settlement of the Western Duars (2013), pp. 6, 41.
  17. Roy, Survey and Settlement of the Western Duars (2013), পৃ. 6: "... the Dalingkot tahsil, which includes the mountainous part of the annexed territory."
  18. Banerjee, Partha S (১৯ মে ২০০২)। "A quiet hill retreat, far from the tourist crowd"Spectrum, The Tribune 
  19. Rennie, Bhotan and the Dooar War (1866), pp. 64–66.
  20. Khawas, Vimal (৩১ ডিসেম্বর ২০০৪)। "The Forgotten Way: Recalling the road to Lhasa from Kalimpong"। The Statesman। The Statesman Ltd। 
  21. Hilker, Deb Shova Kansakar (২০০৫)। Syamukapu: The Lhasa Newars of Kalimpong and Kathmandu। Vajra Publications। আইএসবিএন 99946-644-6-8। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১১ 
  22. Arts of Asia17। Arts of Asia Publications। ১৯৮৭। পৃষ্ঠা 107। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১১ 
  23. Tsarong, Dundul Namgyal; Chödron, Ani K. Trinlay (২০০০)। Ani K. Trinlay Chödron, সম্পাদক। In the service of his country: the biography of Dasang Damdul Tsarong, commander general of Tibet। Snow Lion Publications। পৃষ্ঠা 35। আইএসবিএন 1-55939-151-0। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১১ 
  24. Correspondence from Aeneas Francon Williams addressed from Wolseley House, Kalimpong, is stored in the Dr. Graham Kalimpong Archive held at the National Library of Scotland, Edinburgh
  25. Marriage Certificate for Aeneas Francon Williams and Clara Anne Rendall, 2 December 1914: Findmypast.co.uk – Williams rank of profession is registered as ‘Assistant School Master.’
  26. "Call for Gorkhaland renewed"। Darjeeling Times। ৭ অক্টোবর ২০০৭। ২২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ 
  27. "Table C-01 Population by Religion: West Bengal"censusindia.gov.inRegistrar General and Census Commissioner of India 
  28. "Table C-16 Population by Mother Tongue: West Bengal"Census of IndiaRegistrar General and Census Commissioner of India  see Kalimpong-I, Kalimpong-II, Gorubuthan blocks
  29. "Table C-16 Population by Mother Tongue: West Bengal (Urban)"Census of IndiaRegistrar General and Census Commissioner of India  see Kalimpong (M).
  30. "Table 1.19 Languages: Darjeeling district" (পিডিএফ)Census of IndiaRegistrar General and Census Commissioner of India। ১৯৫১। 
  31. "Table C.V Languages: Darjeeling district" (পিডিএফ)Census of IndiaRegistrar General and Census Commissioner of India। ১৯৬১। 
  32. "National Parks"। ENVIS Centre on Wildlife & Protected Areas। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  33. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে, IBAs in West Bengal – Page 20.
  34. "Press Note, Delimitation Commission" (পিডিএফ)Assembly Constituencies in West Bengal। Delimitation Commission। পৃষ্ঠা 5, 23। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০০৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]