ছৌ মুখোশ
পুরুলিয়া ছৌ মুখোশ | |
---|---|
ভৌগোলিক নির্দেশক | |
বিকল্প নাম | ছৌ নাচের মুখোশ |
বর্ণনা | পুরুলিয়ার ছৌ নাচের ক্ষেত্রে ছৌ মুখোশ ব্যবহৃত হয় |
ধরন | পশ্চিমবঙ্গ লোকশিল্প কলা |
অঞ্চল | পুরুলিয়া, ঝালদা, রঘুনাথপুর ও তৎসংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে |
দেশ | ভারত |
নথিবদ্ধ | ১৩ই চৈত্র ১৪২৪ (২৮শে মার্চ ২০১৮) |
উপাদান | কাদামাটি, নরম কাগজ, লঘুকৃত আঠা, কাপড়, কাদা, সূক্ষ্ম ভস্মচূর্ণ, রঙ |
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ipindiaservices.gov.in |
ছৌ মুখোশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলার একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ পুরুলিয়াতে প্রচলিত ছৌ এবং ওড়িশার ময়ুরভঞ্জের ছৌ এর মুল পার্থক্য হলো মুখোশ ও পোষাকাদির ব্যবহার৷ আবার ঝাড়খণ্ডের সরাইকেল্লার ছৌ তে মুখোশ থাকলেও অলঙ্করণ কম ও নির্দিষ্ট বস্ত্রের ব্যবহার নেই৷ যেহেতু পুরুলিয়ার ছৌএর ক্ষেত্রে মুখোশের ব্যবহার আছে তাই এক্ষেত্রে পুরুলিয়া ছৌ এর অঙ্গভঙ্গি মুখের বদলে হাত ও দেহের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়৷[১] পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতির তালিকাতে নিবন্ধিত৷[২] অনন্য দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা ও ছৌ মুখোশ তৈরীর ঐতিহ্যের জন্য এটি বহির্বিশ্বে সমাদৃত৷
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডির রাজা মদনমোহন সিংহ দেবের সময় থেকে ছৌ মুখোশ বানানোর ঐতিহ্য চলে আসছে, তিনি ছিলেন এই লোকশিল্পের অন্যতম পৃৃষ্ঠপোষক৷ ছৌ মুখোশ ঐতিহ্যগতভাবে মানভূমের প্রাচীন নৃত্যশৈলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যা সময়ের সাথে অবলুপ্ত হলেও মুখোশ তৈরীর শিল্পটি আজও অবিচল৷
বিষয় ও ধরন
[সম্পাদনা]পুরুলিয়ার ছৌ নাচে ব্যবহৃত ছৌ মুখোশগুলি প্রধানত পৌরানিক চরিত্রের ওপর যেমন, মহিষাসুরমর্দিনী, রাম-সীতা, রাম-রাবনের যুদ্ধ ইত্যাদি৷ অনেকক্ষেত্রে সাঁওতাল দম্পতির মুখোশ রূপক হিসাবে ব্যবহার হয়৷ মুল মুখোশের চারধারে দু ফুট পর্যন্ত গয়না ও কাপড় দিয়ে বিভিন্নভাবে অলঙ্করণ করা হয়৷ দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক এর মুখোশগুলি গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙ করা হয়৷ শিব, সরস্বতী ও গণেশ এর মুখোশগুলি সাদা রঙ করা হয়৷ আবার মা কালীর মুখোশটিতে করা হয় কালো রঙ৷ রাম ও শ্রীকৃৃষ্ণের মুখোশগুলিতে কপালে তিলক কাটা থাকে৷ অসুরের মুখোশের ক্ষেত্রে সাধারণত গোঁফ, দৃৃশ্যমান দন্তপাটি ও বিষ্ফারিত চোখ সহ কালো বা গাঢ় সবুজ রঙ করা হয়৷
প্রক্রিয়াকরণ
[সম্পাদনা]ছৌ মুখোশ প্রস্তুতকারকরা সূত্রধর সম্প্রদায়ের লোক৷ মুখোশ প্রস্তুতি একাধিক ধারাবাহিক পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে৷ প্রথমে ৮ থেকে ১০ টি নরম কাগজকে আঠাতে ডুবিয়ে পর পর স্তরে আটকে একটি আকার আনা হয়৷ তার ওপর একখণ্ড কাদা নিয়ে তার সাথে সূক্ষ্ম ভস্মচূর্ণ মিশিয়ে আকারটিকে হয় পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা হয়৷ মুখের সূক্ষ্মকাজগুলি কাদামাটির মাধ্যমে করা হয়৷ তার ওপর কাদাসহ কাপড়ের একটি আস্তরন দেওয়া হয় এবং পরে তা সূর্যালোকে শুকিয়ে নেওয়া হয়৷ শুকিয়ে গেলে সেটিকে পালিশ করা হয় কাদার খণ্ড থেকে কাগজ ও কাপড়ের আস্তরনটি সরিয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য সূর্যালোকে শুকানো হয়৷ মুখোশের ছাঁচ তৈরী হয়ে এলে নাক ও কানের অংশে গর্ত করা হয় ও মুখোশটি রঙ করা হয় চারিধারে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্করণ করা হয়৷[৩][৪]
ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তি
[সম্পাদনা]পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ পশ্চিমবঙ্গের একটি নিবন্ধিত ও উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক স্বীকৃতি৷[২] পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ প্রস্তুতি ও ব্যবহার অনবদ্য এবং ঐতিহ্যমন্ডিত একটি শিল্পকলা৷
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "The Official Website of Purulia District"। purulia.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১২।
- ↑ ক খ "Bengal handicrafts to get new fillip with GI tags"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। PTI। ২০১৬-০৮-১৬। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৫।
- ↑ "The Masks of Bengal" (পিডিএফ)। static1.squarespace.com। ২০১৮-০২-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৭।
- ↑ "The Mask"। Biswa Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১২।