ছৌ মুখোশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুরুলিয়া ছৌ মুখোশ
ভৌগোলিক নির্দেশক
বিকল্প নামছৌ নাচের মুখোশ
বর্ণনাপুরুলিয়ার ছৌ নাচের ক্ষেত্রে ছৌ মুখোশ ব্যবহৃত হয়
ধরনপশ্চিমবঙ্গ লোকশিল্প কলা
অঞ্চলপুরুলিয়া, ঝালদা, রঘুনাথপুর ও তৎসংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে
দেশ ভারত
নথিবদ্ধ১৩ই চৈত্র ১৪২৪ (২৮শে মার্চ ২০১৮)
উপাদানকাদামাটি, নরম কাগজ, লঘুকৃত আঠা, কাপড়, কাদা, সূক্ষ্ম ভস্মচূর্ণ, রঙ
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটipindiaservices.gov.in


ছৌ মুখোশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলার একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ পুরুলিয়াতে প্রচলিত ছৌ এবং ওড়িশার ময়ুরভঞ্জের ছৌ এর মুল পার্থক্য হলো মুখোশ ও পোষাকাদির ব্যবহার৷ আবার ঝাড়খণ্ডের সরাইকেল্লার ছৌ তে মুখোশ থাকলেও অলঙ্করণ কম ও নির্দিষ্ট বস্ত্রের ব্যবহার নেই৷ যেহেতু পুরুলিয়ার ছৌএর ক্ষেত্রে মুখোশের ব্যবহার আছে তাই এক্ষেত্রে পুরুলিয়া ছৌ এর অঙ্গভঙ্গি মুখের বদলে হাত ও দেহের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়৷[১] পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতির তালিকাতে নিবন্ধিত৷[২] অনন্য দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা ও ছৌ মুখোশ তৈরীর ঐতিহ্যের জন্য এটি বহির্বিশ্বে সমাদৃত৷

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডির রাজা মদনমোহন সিংহ দেবের সময় থেকে ছৌ মুখোশ বানানোর ঐতিহ্য চলে আসছে, তিনি ছিলেন এই লোকশিল্পের অন্যতম পৃৃষ্ঠপোষক৷ ছৌ মুখোশ ঐতিহ্যগতভাবে মানভূমের প্রাচীন নৃত্যশৈলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যা সময়ের সাথে অবলুপ্ত হলেও মুখোশ তৈরীর শিল্পটি আজও অবিচল৷

বিষয় ও ধরন[সম্পাদনা]

পুরুলিয়া ছৌ নাচে মহিষাসুরমর্দিনী

পুরুলিয়ার ছৌ নাচে ব্যবহৃত ছৌ মুখোশগুলি প্রধানত পৌরানিক চরিত্রের ওপর যেমন, মহিষাসুরমর্দিনী, রাম-সীতা, রাম-রাবনের যুদ্ধ ইত্যাদি৷ অনেকক্ষেত্রে সাঁওতাল দম্পতির মুখোশ রূপক হিসাবে ব্যবহার হয়৷ মুল মুখোশের চারধারে দু ফুট পর্যন্ত গয়না ও কাপড় দিয়ে বিভিন্নভাবে অলঙ্করণ করা হয়৷ দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক এর মুখোশগুলি গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙ করা হয়৷ শিব, সরস্বতীগণেশ এর মুখোশগুলি সাদা রঙ করা হয়৷ আবার মা কালীর মুখোশটিতে করা হয় কালো রঙ৷ রামশ্রীকৃৃষ্ণের মুখোশগুলিতে কপালে তিলক কাটা থাকে৷ অসুরের মুখোশের ক্ষেত্রে সাধারণত গোঁফ, দৃৃশ্যমান দন্তপাটি ও বিষ্ফারিত চোখ সহ কালো বা গাঢ় সবুজ রঙ করা হয়৷

প্রক্রিয়াকরণ[সম্পাদনা]

চড়িদা গ্রামে ছৌ মুখোশ প্রস্তুতকারক
চড়িদা গ্রাম হ'তে সংগৃহীত ছৌ-নাচের 'অভিমন্যু বধ' পালায় 'দ্রোণাচার্য'এর মুখোশ।

ছৌ মুখোশ প্রস্তুতকারকরা সূত্রধর সম্প্রদায়ের লোক৷ মুখোশ প্রস্তুতি একাধিক ধারাবাহিক পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে৷ প্রথমে ৮ থেকে ১০ টি নরম কাগজকে আঠাতে ডুবিয়ে পর পর স্তরে আটকে একটি আকার আনা হয়৷ তার ওপর একখণ্ড কাদা নিয়ে তার সাথে সূক্ষ্ম ভস্মচূর্ণ মিশিয়ে আকারটিকে হয় পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা হয়৷ মুখের সূক্ষ্মকাজগুলি কাদামাটির মাধ্যমে করা হয়৷ তার ওপর কাদাসহ কাপড়ের একটি আস্তরন দেওয়া হয় এবং পরে তা সূর্যালোকে শুকিয়ে নেওয়া হয়৷ শুকিয়ে গেলে সেটিকে পালিশ করা হয় কাদার খণ্ড থেকে কাগজ ও কাপড়ের আস্তরনটি সরিয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য সূর্যালোকে শুকানো হয়৷ মুখোশের ছাঁচ তৈরী হয়ে এলে নাক ও কানের অংশে গর্ত করা হয় ও মুখোশটি রঙ করা হয় চারিধারে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্করণ করা হয়৷[৩][৪]

ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তি[সম্পাদনা]

পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ পশ্চিমবঙ্গের একটি নিবন্ধিত ও উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক স্বীকৃতি৷[২] পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ প্রস্তুতি ও ব্যবহার অনবদ্য এবং ঐতিহ্যমন্ডিত একটি শিল্পকলা৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Official Website of Purulia District"purulia.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১২ 
  2. "Bengal handicrafts to get new fillip with GI tags"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। PTI। ২০১৬-০৮-১৬। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৫ 
  3. "The Masks of Bengal" (পিডিএফ)static1.squarespace.com। ২০১৮-০২-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০৭ 
  4. "The Mask"Biswa Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১২