কুমারী পূজা
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে। বাংলাদেশে সূদূর অতীত থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন ছিলো এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারীপূজাপ্রযে়াগ গ্রন্থের পুথি থেকে।[১] বর্তমানে বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত রামকৃ্ষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পৌরাণিক উপাখ্যান
[সম্পাদনা]শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।[২]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হযে়ছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয় । তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত হলেও কোথাও বলা নেই যে ব্রাহ্মণকন্যাই কেবল পূজ্য। এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে কোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।[২][৩]
- এক বছরের কন্যা — সন্ধ্যা
- দুই বছরের কন্যা — সরস্বতী
- তিন বছরের কন্যা — ত্রিধামূর্তি
- চার বছরের কন্যা — কালীকা
- পাঁচ বছরের কন্যা — সুভগা
- ছয় বছরের কন্যা — উমা
- সাত বছরের কন্যা — মালিনী
- আট বছরের কন্যা — কুব্জিকা
- নয় বছরের কন্যা — কালসন্দর্ভা
- দশ বছরের কন্যা — অপরাজিতা
- এগারো বছরের কন্যা — রূদ্রাণী
- বারো বছরের কন্যা — ভৈরবী
- তেরো বছরের কন্যা — মহালক্ষ্মী
- চৌদ্দ বছরের কন্যা — পীঠনাযি়কা
- পনেরো বছরের কন্যা — ক্ষেত্রজ্ঞা
- ষোলো বছরের কন্যা — অন্নদা বা অম্বিকা
দার্শনিক তত্ত্ব
[সম্পাদনা]কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত আছে, এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ কুমারীপূজাপ্রযে়াগ। ঢাকা: বাংলা একাডেমী সংগ্রহ- ১৫৯। ১৮৫০।
- ↑ ক খ গ দুলাল ভৌমিক (২০১২)। "কুমারী পূজা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত"। দৈনিক যুগান্তর। অক্টোবর ১৩, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৫, ২০১৪।