বিশ্বকর্মা পূজা
বিশ্বকর্মা জয়ন্তী | |
---|---|
অন্য নাম | বিশ্বকর্মা পূজা, বিশ্বকর্মা দিবস |
পালনকারী | |
ধরন | হিন্দু |
উদযাপন | বিশ্বকর্মা পূজা |
তারিখ | কন্যা সংক্রান্তি; ভাদ্র মাসের শেষ দিন [১][২] ১৬ অথবা ১৭ সেপ্টেম্বর [৩] |
সংঘটন | বার্ষিক |
বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী হচ্ছে একটি হিন্দুধর্মীয় উৎসব। হিন্দু স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পূজা করা হয়।[৪] তাকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি দেবতা কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, পাণ্ডবদের মায়া সভা,[৫] রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মার পুষ্পক রথ,[৬] দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা। বিশ্বকর্মার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তিনি এই বিশ্বের সব কর্মের সম্পাদক। তিনি সব ধরনের শিল্পের প্রকাশক। শিল্পবিদ্যায় বিশ্বকর্মার রয়েছে একচ্ছত্র অধিকার। তিনি নিজেই চতুঃষষ্টিকলা, স্থাপত্যবেদ এবং উপবেদ এর প্রকাশক। কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেন।[৭] তাকে স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়।
সময়
[সম্পাদনা]হিন্দুদের অন্যান্য পূজার সময় চাঁদের গতি-প্রকৃতির উপর নির্ধারিত হলেও বিশ্বকর্মার পূজার সময় সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।[৮] এই নিয়ম অনুসারে সূর্য যখন সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে তখন উত্তরায়ন শুরু হয়। এই সময়েই দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং বিশ্বকর্মার পূজার আয়োজন শুরু করা হয়। [৯]
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী বিশ্বকর্মা পূজার দিনটি 'কন্যা সংক্রান্তি' তে পড়ে।[১][২] গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে এটি সাধারণত প্রতি বছর ১৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উদযাপিত হয়।[৩] দিনটি ভারতীয় সৌর বর্ষপঞ্জি এবং বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের শেষ দিন। সৌর ক্যালেন্ডারে ভারতীয় ভাডো মাসের শেষ দিন। বাংলাদেশ, ভারতের আসাম, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং ত্রিপুরা রাজ্যে সৌর বর্ষপঞ্জী অনুসারে দিনটি পালিত হয়। প্রতিবেশী দেশ নেপালেও এই উৎসব উদযাপিত হয়।
তবে কোন কোন অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দীপাবলির একদিন পর গোবর্ধন পূজার সাথেও বিশ্বকর্মা পূজা পালন করা হয়।[১০]
পূজা
[সম্পাদনা]বিশ্বকর্মা পূজা মূলত কারখানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হয়। প্রায়ই দোকানের মেঝেতে পূজার আয়োজন করা হয়। কখনো কখনো বিশ্বকর্মার মূর্তি স্থাপন করে কিংবা কখনও কখনও পটে আঁকা চিত্র সামনে রেখে তার পূজা করা হয়। এসময় দোকান কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী একসাথে এক জায়গায় জড়ো হয়ে তার পূজা করে।
বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি অর্জন ও তার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কেবল প্রকৌশলী কিংবা স্থপতি সম্প্রদায় নয়, সব ধরনের কারিগর, সূতার, মিস্ত্রি, কামার-কুমার, স্বর্ণকার, শিল্প কর্মী, কারখানার শ্রমিক, ঢালাইকর সহ অনেক ধরনের পেশার মানুষ এদিন তাঁর পূজা করে। তারা আরও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করে। [৭] আবার শ্রমিকেরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করে। কখনো কখনো কারিগরেরা এসব যন্ত্রপাতি বিশ্বকর্মার নামে সমর্পন করে এবং ওই সময় সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিরত থাকে। আধুনিক ইলেকট্রনিক সার্ভারগুলিও যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে সে জন্যও কেউ কেউ তার উপাসনা করে।
বিশ্বকর্মা পূজার দিন প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বিশেষ খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয় এবং পূজার পরে কোনও কোনও এলাকায় সমবেতভাবে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "विश्वकर्मा पूजा: जानें महत्व और जन्म की कहानी"। Aajtak। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৯।
- ↑ ক খ "All About Lord Vishwakarma and Vishwakarma Puja"। Hind Utsav। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৯।
- ↑ ক খ "বিশ্বকর্মা পুজোর দিন, তারিখ, ইতিহাস এবং প্রাসঙ্গিকতা"। bengali.indianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Melton, J. Gordon (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১)। Religious Celebrations: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorations। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 908–। আইএসবিএন 978-1-59884-205-0।
- ↑ author., Apurvananda, Swami,। দিব্য-রামায়ণ : শ্রীরাম-চরিত। ওসিএলসি 7173340।
- ↑ author., Apurvananda, Swami,। দিব্য-রামায়ণ : শ্রীরাম-চরিত। ওসিএলসি 7173340।
- ↑ ক খ গ মন্ডল, পরেশচন্দ্র। "বিশ্বকর্মা পূজা"। bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯।
- ↑ "বিশ্বকর্মা পূজার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি"। www.anandabazar.com। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯।
- ↑ "প্রতিবছর কেন একই তারিখে বিশ্বকর্মা পূজা হয়?"। www.kalerkantho.com। দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Shobna Gupta (২০১০)। Festivals Of India। Har-Anand Publications। পৃষ্ঠা 84–। আইএসবিএন 978-81-241-1277-9।