কুষ্টিয়া জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৫′১১″ উত্তর ৮৯°১৩′১২″ পূর্ব / ২৩.৯১৯৭২° উত্তর ৮৯.২২০০০° পূর্ব / 23.91972; 89.22000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কুষ্টিয়া জেলা
জেলা
ডাকনাম: সাংস্কৃতিক রাজধানী
মানচিত্রে কুষ্টিয়া জেলা
মানচিত্রে কুষ্টিয়া জেলা
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৫′১১″ উত্তর ৮৯°১৩′১২″ পূর্ব / ২৩.৯১৯৭২° উত্তর ৮৯.২২০০০° পূর্ব / 23.91972; 89.22000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
সদরদপ্তরকুষ্টিয়া সদর উপজেলা
জেলা প্রতিষ্ঠা১৯৪৭
জাতীয় সংসদ আসন৪টি
সরকার
 • ধরনজেলা পরিষদ
 • শাসকমোঃ এহেতেশাম রেজা
আয়তন
 • মোট১,৬০৮.৮০ বর্গকিমি (৬২১.১৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)
 • মোট২১,৪৯,৬৯২
 • জনঘনত্ব১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৮.৮৮%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭০০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ৫০
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

কুষ্টিয়া জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কুষ্টিয়া পৌরসভা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা ও দেশের ১২তম বৃহত্তম শহর। লালন শাহের মাজার ছাড়াও এ জেলার শিলাইদহে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িমীর মশাররফ হোসেনের বসতভিটা। এ জেলাতে রয়েছে ইসলাম বিষয়ক বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি কুষ্টিয়াতে অবস্থিত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে এ-জেলা দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুষ্টিয়া শহর ছাড়াও এ জেলায় কুমারখালীভেড়ামারা পৌরসভায় বিসিক শিল্প গড়ে উঠেছে৷ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। কুষ্টিয়া শহর হলো এ জেলার প্রশাসনিক সদর এবং প্রধান শহর। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা এ জেলা থেকেই। নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম জীবন ও কবিতার স্বর্নযুগ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কাটিয়েছিলেন।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

জেলা হিসেবে অভ্যুদয়[সম্পাদনা]

১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল এবং এর পরিচিতি আসে কান্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারীর সিভিল প্রশাসনের অন্তর্ভূক্তিতে। পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অর্ন্তগত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতায় একটি মহকুমা ছিল। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন কুষ্টিয়া জেলা ৩ টি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল। এগুলো কুষ্টিয়া , চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর। এরপর ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর আলাদা জেলা হিসেবে পৃথক হয়ে গেলে কুষ্টিয়া মহকুমার ৬ টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।[১]

নামকরণের ইতিহাস[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া বহুপূর্ব থেকেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে এর অবিসংবাদিত পরিচিতি রয়েছে। তবে কুষ্টিয়া নামটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে ইতিহাসকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে সমর্থিত মতটি ১৮২০ প্রকাশিত হেমিলটনসের গেজেট-এর সূত্রে পাওয়া যায়। সেটি হলো, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় কোষ্টা (এখনো বলা হয়) বা কুষ্টি বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। কারো মতে ফার্সি ভাষার শব্দ ‘কুশতহ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার ৫ম মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি হয় বলেও একটি মত রয়েছে।[২][৩]

মুঘল আমল[সম্পাদনা]

সম্রাট শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এখানে কুষ্টি নদীবন্দর স্থাপিত হয়।[৪]

কুষ্টিয়াতে মুঘল আমলে তৈরি ০৫টি মসজিদের নিদর্শন পাওয়া যায়। এগুলো হলো:

  1. ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
  2. কুশলীবাসা শাহী মসজিদ
  3. তেবাড়িয়া তিন গম্বুজ জামে মসজিদ
  4. বানিয়াকান্দী তিন গম্বুজ শাহী মসজিদ
  5. স্বস্তিপুর শাহী মসজিদ
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদের ভিতরের দৃশ্য

ব্রিটিশ আমল[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ আমলে কুষ্টিয়া জেলার অনেক উন্নতি হয়। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশরা বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন[৫] জগতি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে কলকাতার সাথে সরাসরি কুষ্টিয়া জেলার রেললাইন স্থাপিত হয়।

বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি রেলওয়ে স্টেশন

পরবর্তীতে এই রেললাইন গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠ। একারণে ব্রিটিশদের কাছে এই অঞ্চল শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থান বলে তখন বিবেচিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (১৮৯৬), মোহিনী মিল (১৯০৮) প্রতিষ্ঠিত হয়।[৬] ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্রাট শাহজাহানের আমলে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টি নদী বন্দর ব্যবহার করত‌। কিন্তু কুষ্টিয়াতে নীলচাষী ও নীলকরদের আগমনের পরেই নগরায়ন শুরু হয়।[৪] ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালীখোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদিয়া জেলার অন্তর্গত হয়‌।[১]

রবীন্দ্রনাথ ও কুষ্টিয়া[সম্পাদনা]

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনারাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।[৭] কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে "পদ্মা" নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তার সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত।[৮]

কুষ্টিয়ার মিল পাড়ায় অবস্থিত টেগর লজ

কুষ্টিয়া জেলা মিল পাড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যবসায়িক কাজের উদ্দেশ্যে টেগর লজ স্থাপন করেছিলেন।[৯]

পাকিস্তান আমল[সম্পাদনা]

১৯৪৭-এ ব্রিটিশ ভারত ভাগের সময় কুষ্টিয়া নদিয়া জেলা থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[১০] এর মহকুমাসমূহ ছিল বর্তমানের কুষ্টিয়া জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলামেহেরপুর জেলা। তৎকালীন এস.ডি.ও মৌলভি আব্দুল বারী বিশ্বাসকে প্রধান করে ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের সদর দপ্তর কুষ্টিয়া জেলায় স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু সরকারি অফিস কুষ্টিয়ায় স্থাপনের পরে শহরটিতে পুনরায় উন্নয়ন শুরু হয়।

ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়া[সম্পাদনা]

ভাষা আন্দোলনের তীব্র ঢেউ লেগেছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ কুষ্টিয়াতেও। বাংলা ভাষার ওপর আকস্মিক আঘাত মেনে নিতে পারেননি কুষ্টিয়ার সাধারণ জনগণ। যদিও ১৯৪৮ সালের প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলনের তেমন হাওয়া লাগেনি কুষ্টিয়াতে। ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়াতে কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে তা কুষ্টিয়া জুড়ে তেমন একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেনি।[১১]

স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়া[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়া জেলা ০৮ নং সেক্টরের অধীনে ছিল।‌ পাকিস্তানি সেনারা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল।[১২]

কুষ্টিয়া জেলায় ২৯০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।[১৩] ২০০৪ সালের প্রদত্ত গেজেট অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলায় ০৮ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।[১৪]

নং গেজেট নম্বর (২০০৪) নাম গ্রাম উপজেলা প্রতীক
০১ খেতাবপ্রাপ্ত-৫৩ আবু তালেব জগতি কুষ্টিয়া বীর উত্তম
০২ খেতাবপ্রাপ্ত- শরফুদ্দীন আহমেদ সুলতানপুর কুমারখালী
০৩ খেতাপ্রাপ্ত-২৩৭ খালেদ সাইফুদ্দীন কাটদহ কুষ্টিয়া বীর বিক্রম
০৪ খেতাবপ্রাপ্ত-৬২৩ হাবিবুর রহমান শেরপুর দৌলতপুর বীর প্রতীক
০৫ খেতাবপ্রাপ্ত-৬২৮ শামসুদ্দীন আহমেদ মহিষখোলা মিরপুর
০৬ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩০ কে এম রফিকুল ইসলাম গোলাপনগর ভেড়ামারা
০৭ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩১ শেখ দিদার আলী আড়ুয়াড়া কুষ্টিয়া
০৮ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩৩ আবদুল আলিম সাহাপুর

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় স্থাপন করা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রধান ফটক

১৯৮৪ সালে ০১ মার্চ রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলাকে ভেঙে তিনটি জেলায় রূপান্তর করেন। এগুলো হলো কুষ্টিয়া জেলা, মেহেরপুর জেলাচুয়াডাঙ্গা জেলা‌

ভাষা ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

ভাষা[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলার মানুষের কথ্য বাংলাদেশের বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রমিত রূপ বলা হয়ে থাকে। বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার চেয়ে নির্ভুল ভাষা উচ্চরণভঙ্গি একমাত্র যশোর জেলা ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোন জেলায় পাওয়া যায় না।[১৫]

এই জেলার ভাষা অত্যন্ত স্পষ্ট, শ্রুতিমধুর, উচ্চারণে জড়তাহীন ও সকলের কাছে সহজবোধ্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে শুদ্ধ এই ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, লালনগীতি, সংগীত, পালাগান, জারিগান, মেলা, বাউল গান, পাঁচালি, যাত্রা, কৃষকের মেঠো গান ইত্যাদি রচিত হয়েছে। এটি শুদ্ধ বাংলা ভাষা হওয়ায় কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।[১৬]

স্থানীয় সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া অঞ্চলের বাউল সম্রাট লালন শাহ এর আধ্যাত্মিক চেতনা সমৃদ্ধ গান দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খ্যাতি লাভ করেছে।[১৭] উল্লেখযোগ্য গানগুলির দু’একটি হলো-

“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়”

“জাত গেলো জাত গেলো বলে, একি আজব কারখানা”

“সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন”

কুষ্টিয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। কুষ্টিয়ার শিল্পী পরিবারের তীর্থস্থান জেলা শিল্পকলা একাডেমী, শিশু একাডেমী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কুষ্টিয়ার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে গতিশীল রাখতে নিরলস কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।[১৮] কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃক প্রতিবছর বসন্ত উৎসব, নবান্ন উৎসব , পিঠা উৎসব -এর আয়োজন করা হয়। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে পিঠা উৎসব ও লোকজ মেলার আয়োজন করে থাকে। লালন শাহের মাজারে প্রতিবছর লালন মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর জেলা পরিষদ কর্তৃকপক্ষ গড়াই নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।[১৯] প্রতিবছর বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন লাঠি খেলা উৎসবের আয়োজন করে থাকে।[২০]

উল্লেখযোগ্য খাদ্যদ্রব্য[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাঁজা

সাংস্কৃতির পাশাপাশি এ জেলার রয়েছে নিজস্ব মিষ্টিদ্রব্য। এর মধ্যে তিলের খাজাকুলফি মালাই উল্লেখযোগ্য। দই, ঘি ও হরেক রকমের মিষ্টিরও খ্যাতি রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরে রয়েছে বেশকিছু নতুন-পুরনো প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। এসব দোকানে বিক্রিও হয় প্রচুর। এদের মধ্যে জগদীশ মিষ্টান্ন ভান্ডার, অশোক দধি মিষ্টান্ন ভান্ডার, মৌবন সুইটস, কুমারখালী উপজেলার রমেশ দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার, মিরপুর উপজেলার আশীষ সুইটস অন্যতম।[২১]

নং নাম বৈশিষ্ট্য
০১ তিলের খাজা
  • জিআই কর্তৃক স্বীকৃত।[২২]
  • কুষ্টিয়া জেলায় উৎপন্ন তিল দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টান্ন।
  • কুষ্টিয়াসহ সারাদেশেই খুবই জনপ্রিয়।
  • দুই’শ বছরের ঐতিহ্য কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।[২৩]
০২ কুলফি মালাই
  • মুঘল সাম্রাজ্যের হাত ধরেই দুই বাংলায় মালাই কুলফির আগমন।[২৪]
  • কুষ্টিয়ায় আগমনকৃত পর্যটক এই মালাই খুব পছন্দ করেন।[২৪]

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলার আয়তন ১,৬০৮.৮০ বর্গকিলোমিটার।

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলা ৬টি উপজেলা, ৭টি থানা,[২৫] ৫টি পৌরসভা, ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৭১০টি মৌজা ও ৯৭৯টি গ্রামে বিভক্ত।

নং উপজেলা আয়তন (বর্গ কি.মি.) জনসংখ্যা (জন) গনশুমারি-২০২২ থানা নির্বাচনী আসন পৌরসভা ইউনিয়ন [২৬]
০১ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ৩১৬.২৬ ৫,৬০,৯৫২ কুষ্টিয়া-৩ কুষ্টিয়া পৌরসভা
  • আয়তন ৬৯.৫৬ বর্গ কি.মি.
  • বাংলাদেশের ১২তম বড় শহর
১৪টি।
০২ কুমারখালী উপজেলা ২৫৮.৩৮ ৩,৭৩,৭৩৪ কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী পৌরসভা ১১টি
০৩ খোকসা উপজেলা ১১৫.৬০ ১,৪৩,৮২৭ খোকসা থানা কুষ্টিয়া-৪ খোকসা পৌরসভা ০৯ টি
০৪ মিরপুর উপজেলা ২৯৬.৩১ ৩,৬৩,০৮০ মিরপুর থানা কুষ্টিয়া-২ মিরপুর পৌরসভা ১৩টি
০৫ ভেড়ামারা উপজেলা ১৫৩.৭২ ২,২৫,০৪১ ভেড়ামারা থানা কুষ্টিয়া-২ ভেড়ামারা পৌরসভা ০৬টি
০৬ দৌলতপুর উপজেলা ৪৬১ ৪,৮২,৯৬৫ দৌলতপুর থানা কুষ্টিয়া-১ নাই ১৪টি

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা[সম্পাদনা]

১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল এবং এর পরিচিতি আসে কান্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারীর সিভিল প্রশাসনের অমর্ত্মভূক্তিতে। পরে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোর জেলার অমত্মর্ভূক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অর্ন্তগত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতায় একটি মহকুমা ছিল। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন কুষ্টিয়া জেলা ৩ টি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল। এগুলো কুষ্টিয়া , চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর।[২৭] এরপর ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গামেহেরপুর আলাদা জেলা হিসেবে পৃথক হয়ে গেলে কুষ্টিয়া মহকুমার ৬ টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় যে, এই অঞ্চলের ও অবিভক্ত নদীয়া জেলার আদি বাসিন্দাদের মুখের ভাষার সাথে আধুনিক প্রমিত বাংলার ঘনিষ্ঠ মিল পাওয়া যায়। [২৮] এই তিন জেলার অধিবাসীদের বৃহত্তর সমাজকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া বলা হয়। বিভিন্ন সংস্থা এই তিন জেলার জনগনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে বৃহত্তর কুষ্টিয়া এসোসিয়েশন উল্লেখযোগ্য।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার উপজেলা তালিকা[সম্পাদনা]

নং উপজেলা বর্তমান জেলা
০১ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কুষ্টিয়া জেলা
০২ কুমারখালী উপজেলা
০৩ খোকসা উপজেলা
০৪ মিরপুর উপজেলা
০৫ ভেড়ামারা উপজেলা
০৬ দৌলতপুর উপজেলা
০৭ মেহেরপুর সদর উপজেলা মেহেরপুর জেলা
০৮ গাংনী উপজেলা
০৯ মুজিবনগর উপজেলা
১০ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চুয়াডাঙ্গা জেলা
১১ আলমডাঙ্গা উপজেলা
১২ দামুড়হুদা উপজেলা
১৩ জীবননগর উপজেলা

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মুজিব নগর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী যা বর্তমানে মেহেরপুর জেলারএকটি উপজেলা। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পোস্ট অফিস বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় তৈরি করা হয়। বর্তমানে এটি চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা জেলায় রুপান্তর হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রেলস্টেশন জগতি রেলস্টেশন কুষ্টিয়া শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মেজর রেলসেতু গড়াই রেলসেতু, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বালিকা বিদ্যালয় কুমারখালী সরকারি পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ছাপাখানা গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা এগুলো কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত।

জনসংখ্যা ও অন্যান্য উপাত্ত[সম্পাদনা]

লিঙ্গ জনসংখ্যা (জন) মোট জনসংখ্যা (জন)

গণশুমারি-২০২২

সাক্ষরতার হার মোট সাক্ষরতার হার
পুরুষ ১০,৫৫,৬৮১ ২১,৪৯,৬৯২ ৭০.০৫% ৬৮.৮৮%
নারী ১০,৯৩,৫৪৯ ৬৭.৭৭%
অন্যান্য ১২৪ ৫১.২২%

ধর্ম[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলার ধর্মসমূহ[২৯]
ধর্ম শতাংশ
মুসলমান
  
৯৭.২৩%
হিন্দু
  
২.৭৩%
খ্রিস্টান
  
০.০১%
অন্যান্য
  
০.০৩%

২০২২ সালের আদমশুমারির সময়, জেলার জনসংখ্যা ২,১৪৯,৬৯২ জন। তাদের মধ্যে ৯৭.২৩% মুসলমান, ২.৭৩% হিন্দু, ০.০১% খ্রিস্টান এবং ০.০৩% অন্যান্য।

শিক্ষা ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলার সাক্ষরতার হার ৬৮.৮৮%।

কুষ্টিয়া জেলা যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুষ্টিয়া জেলা যশোর বোর্ডে বিভিন্ন বছরে ১ম ও ২য় স্থানে থাকে। এছাড়া কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে অনেক শিক্ষার্থী মেধা বৃত্তি পেয়ে থাকে। ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রথম সারিতে মেধা বৃত্তি পেয়েছে।[৩০][৩১]

যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

প্রধান সড়কপথ সমূহ[সম্পাদনা]

নং নাম কোড
০১ কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক এন৭০৪ (বাংলাদেশ)
০২ কুষ্টিয়া-ঢাকা মহাসড়ক R710 (বাংলাদেশে)
০৩ কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক R747(বাংলাদেশ)
০৪ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়ক R745 (বাংলাদেশ)
০৫ কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক এন৭০৪ (বাংলাদেশ)
০৬ মিরপুর-রাফায়েতপুর সড়ক Z7461(বাংলাদেশ)
০৭ ভেড়ামারা-দৌলতপুর সড়ক Z7411 (বাংলাদেশ)
০৮ এনএস রোড NS RD (বাংলাদেশ)
০৯ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি সড়ক R713 (বাংলাদেশ)
১১ পোড়াদড়-মিরপুর সড়ক

রেলপথ[সম্পাদনা]

নং স্টেশনের নাম প্লাটফর্ম অবস্থান পরিসেবা
০১ হালসা রেলওয়ে স্টেশন হালসা, মিরপুর চালু
০২ পোড়াদহ জংশন রেলওয়ে স্টেশন পোড়াদহ, মিরপুর
০৩ জগতি রেলওয়ে স্টেশন জগতি, কুষ্টিয়া
০৪ কুষ্টিয়া কোর্ট রেলওয়ে স্টেশন কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া
০৫ কুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশন
০৬ চড়াইকোল রেলওয়ে স্টেশন কুমারখালী
০৭ কুমারখালী রেলওয়ে স্টেশন
০৮ খোকসা রেলওয়ে স্টেশন খোকসা
০৯ মিরপুর রেলওয়ে স্টেশন মিরপুর
১০ ভেড়ামারা রেলওয়ে স্টেশন
১১ গোলবাথান রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ
১২ দামুকদিয়া ঘাট রেলওয়ে স্টেশন ভেড়ামারা

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের মতো কুষ্টিয়া কেবল কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল নয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি কুষ্টিয়ায় প্রচুর শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় অনেক তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের অনেক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে নাসির টোব্যাকো লিমিটেড, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, দি ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো, পারফেক্ট টোব্যাকো উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক তার তৈরির কারখানা বি.আর.বি. কেবলস কুষ্টিয়ায় অবস্থিত। জেলার কুমারখালি উপজেলায় গড়ে উঠেছে উন্নতমানের ফ্রেব্রিকস শিল্প। এখানে উৎপাদিত ফ্রেব্রিকস সামগ্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় অসংখ্য চালের মিল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম মা ভান্ডারী অটো রাইচ মিল। বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে ওঠায় কুষ্টিয়া জেলায় এককভাবে কৃষিকাজের উপর নির্ভরতা কম।[৩২]

কৃষি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত কুষ্টিয়াতেও প্রধানত ধান, পাট, ভু্ট্টা, আখ, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি চাষ করা হয়। তবে জেলাটিতে তামাকপানের চাষ উল্লেখযোগ্য।[৩৩] কুষ্টিয়া জেলায় উৎপন্ন পান বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।[৩৪] এছাড়াও মহিষকুন্ডির চরে স্বল্প পরিমানে বাদাম উৎপন্ন হয়।

সরিষা ক্ষেত
তামাক চাষ

কুষ্টিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা:[৩৫]

  • বৃহৎ শিল্প - ১২০ টি
  • মাঝারী শিল্প -২৩০ টি
  • ক্ষুদ্র শিল্প - ৬২১২ টি
  • কুটির শিল্প - ২১৮৩৭ টি

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া শিল্প নগরীতে অনেক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কুমারখালী উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীতে রয়েছে অনেক টেক্সটাইল ও হোসিয়ারী ইন্ডাস্ট্রি। ভেড়ামারা উপজেলায় ৫০০ একর জায়গার উপর নির্মিত হচ্ছে কুষ্টিয়ার ইকোনোমিক জোন, যেখানে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। ভেড়ামারা উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে গড়ে উঠেছে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। দৌলতপুর উপজেলায় রয়েছে তামাক শিল্প। কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় ৪০০ অটো এবং হাস্কিং রাইস মিল রয়েছে যেখান থেকে বাংলাদেশের ৭০% চাল প্রক্রিয়াজাত হয়ে থাকে। কুষ্টিয়াতে এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অনেক আটা ময়দার মিল। এছাড়াও তামাক ও আখ শিল্প এ জেলাকে কৃষির পাশাপাশি শিল্পে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

নং নাম উৎপাদিত পণ্য ঠিকানা
০১ বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড[৩৫] বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ক্যাবল উৎপাদনকারী কুমারগাড়া শিল্প এলাকা
০২ কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মাছের খাদ্য
০৩ কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ধাতু সামগ্রী
০৪ এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মেলামাইন বোর্ড, অ্যালুমিনিয়াম ও কপার তারের রড, পিভিসি শীট
০৫ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ
০৬ জাপান টোব্যাকো মিরপুর
০৭ কুষ্টিয়া চিনি কল লিমিটেড চিনি উৎপাদন জগতি, কুষ্টিয়া
০৮ কিয়াম এগ্রো ফিড পশু খাদ্য ভাদালিয়া, কুষ্টিয়া
০৯ মোহিনী মিল[৬][৩৫] তাঁত শিল্প মিল পাড়া, কুষ্টিয়া
১০ নাসির গ্রুপ গ্লাস, মেলামাইন, মুদ্রণ, প্যাকেজিং, গ্লাসওয়্যার, টিউব, এনার্জি সেভিং ল্যাম্প কুষ্টিয়া
১১ হেলথ্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস[৩৬] সারজেল কুষ্টিয়া

নদ-নদী[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে, নদীগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:[৩৭][৩৮]

নং নাম উৎপত্তি স্থল
০১ পদ্মা নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ
০২ মাথাভাঙ্গা নদী গঙ্গা নদী
০৩ হিশনা-ঝাঞ্চা নদী পদ্মা নদী
০৪ কুমার নদ
০৫ কালীগঙ্গা নদী গড়াই নদী
০৬ গড়াই নদী পদ্মা নদী
০৭ সাগরখালী নদী

আকর্ষণীয় স্থান[সম্পাদনা]

কুষ্টিয়া একটি প্রাচীন জনপদ। পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার একটি মহকুমা ছিল। প্রাচীন নগর হওয়ায় কুষ্টিয়া প্রচুর প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়।

স্থাপত্য শিল্প[সম্পাদনা]

নং নাম বৈশিষ্ট্য ঠিকানা
০১ রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী যাদুঘর শিলাইদহ, কুমারখালী
০২ লালন শাহের মাজার আধ্যাত্মিক সাধক লালনের বাসস্থান ছিল ছেউড়িয়া, কুমারখালী
০৩ রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন একটি যন্ত্রাংশ নির্মাতা সংস্থা যা চিনির কলগুলির জন্য মেশিন এবং যন্ত্রাংশ তৈরি করে। কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৪ মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা জাদুঘর লাহিনীপাড়া, কুমারখালী
০৫ ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ মুঘল আমলে তৈরী মসজিদ ঝাউদিয়া, কুষ্টিয়া
০৬ স্বস্তিপুর শাহী মসজিদ স্বস্তিপুর, কুষ্টিয়া
০৭ কুষ্টিয়া পৌরভবন ঐতিহ্যবাহী ভবন কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৮ কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমী বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমী কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৮ টেগর লজ যাদুঘর মিলপাড়া, কুষ্টিয়া
০৯ পাকশী রেল সেতু ব্রিটিশদের তৈরি রেলবসেতু ভেড়ামারা
১০ লালন শাহ সেতু পদ্মা নদীর উপর তৈরি করা প্রথম সেতু
১১ জগতি রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি, কুষ্টিয়া
১২ মোহিনী মিল উপমহাদেশের একসময়ের বৃহত্তম বস্ত্রকল মোহিনী মিল মিলপাড়া, কুষ্টিয়া পৌরসভা
১৩ গোপীনাথ জিউর মন্দির মন্দির কুষ্টিয়া পৌরসভা
১৪ হরিপুর ব্রিজ গড়াই নদীর উপরে ব্রিজ হরিপুর, কুষ্টিয়া

উল্লেখযোগ্য পার্ক ও রিসোর্ট[সম্পাদনা]

নং নাম ঠিকানা
০১ রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট বাইপাস, কুষ্টিয়া
০২ জিয়া শিশু পার্ক হাসপাতাল রোড, কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৩ কামরুল ইসলাম সিদ্দিকি শিশু পার্ক কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৪ জেলা পরিষদ রবীন্দ্র-লালন উদ্যান মিলপাড়া, কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৫ আলাউদ্দিন আহম্মেদ শিক্ষাপল্লী পার্ক আলাউদ্দিন নগর, কুমারখালী
০৬ মন ভোলানো কাঠের বাড়ি শিলাইদহ, কুমারখালী
০৭ ইউটিউব ভিলেজ খোকসা
০৮ রেনউইক পার্ক এন্ড রিসোর্ট কুষ্টিয়া পৌরসভা
০৯ কয়া ইকো পার্ক কয়া, কুমারখালী
১০ মনি পার্ক ভেড়ামারা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "জেলা হিসেবে অভ্যুদয়"জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  2. শাহজাহান আমান (২০২১-১০-১৫)। "ইতিহাসের পাতাজুড়ে যার গৌরব-ঐতিহ্য"বনিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  3. "কুষ্টিয়া নামকরণ"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন-কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  4. "কুষ্টিয়া জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"সংগ্রামের নোটবুক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  5. এস.এম. জামাল (২০২১-১১-১৫)। "বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতে রেলওয়ে স্টেশন"বার্তা ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  6. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "শিল্প প্রতিষ্ঠান"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪ 
  7. শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথনাথ বিশী, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯৫ সংস্করণ, পৃ. ১৮
  8. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 109–111
  9. "টেগর লজ"জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  10. "ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া"। দৈনিক সংগ্রাম। ৯ জুলাই ২০১২। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪ 
  11. আহমদ ইশতিয়াক (২০২৩-০২-০৯)। "ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়া"The Daily Star - বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  12. আবু ওসমান চৌধুরী (২০২০-০২-১২)। "মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ায় প্রতিরোধ যুদ্ধ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  13. "বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকা - কুষ্টিয়া জেলা"মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  14. "খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা"বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  15. "ভাষা ও সংস্কৃতি"জাতীয় তথ্য বাতায়ন-কুষ্টিয়া সদর উপজেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৩ 
  16. মোঃ মেহেদী হাসান (২০২৪-০২-২৪)। "বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ আঞ্চলিক ভাষা"শেরপুর নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৩ 
  17. "ভাষা ও সংস্কৃতি"জাতীয় তথ্য বাতায়ন-খুলনা বিভাগ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৪ 
  18. "কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল"জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  19. "কুষ্টিয়ায় নৌকা বাইচে লাখো মানুষের ঢল"বার্তা ২৪। ২০২২-০৯-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  20. "কুষ্টিয়ায় শেষ হলো তিন দিনব্যাপী লাঠি খেলা উৎসব"প্রতিদিনের বাংলাদেশ। ২০২৪-০২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  21. এমএ রাকিব (২০২২-১১-১১)। "তিন পুরুষের শ্রমে প্যাড়া সন্দেশ"দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  22. কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (২০২৪-০২-১৪)। "জিআই স্বীকৃতি পেল কুষ্টিয়ার তিলের খাজা"সময়ের আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  23. এস এম আলী আহসান পান্না (২০২৩-০১-০১)। "দুই'শ বছরের ঐতিহ্য কুষ্টিয়ার তিলের খাজা"ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  24. "পর্যটকদের প্রথম পছন্দ কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই"সময় নিউজ। ২০২২-০৮-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  25. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কুষ্টিয়া জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪ 
  26. কুষ্টিয়া জেলার ইউনিয়ন পরিষদসমূহ
  27. "কুষ্টিয়া জেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org 
  28. বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ইতিহাস ১ম খণ্ড। গতিধারা। ২০১৭। 
  29. জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২: প্রাথমিক প্রতিবেদন [Census and Household Census 2022: Preliminary Report] (পিডিএফ)Bangladesh Bureau of Statistics 
  30. "যশোর বোর্ডে প্রথম হলেন কুষ্টিয়ার ছেলে শেফাত"সময় সংবাদ। ২০২৩-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১২ 
  31. স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, উত্তম ঘোষ (২০১৮-০৮-১৯)। "যশোর বোর্ডে কোন জেলায় পাসের হার কত"বাংলা নিউজ ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১২ 
  32. "কুষ্টিয়া জেলার অর্থনীতি"The Ballpen। ২০২২-১২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  33. "কুষ্টিয়ায় তামাক চাষ বৃদ্ধি বাড়ছে"বাংলাদেশের খবর। ২০২২-১২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  34. শুভব্রত আমান (২০২৪-০৩-২২)। "কুষ্টিয়ার পান চাষের আওতা বাড়ছে, যাচ্ছে বিদেশে"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  35. "শিল্প প্রতিষ্ঠান"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  36. "হেলথ্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস"প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট - হেলথ্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৩ 
  37. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  38. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]