কোহিনুর ভিলা
কোহিনুর ভিলা কুষ্টায়া শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক নির্মম গণহত্যার সাক্ষী এই ভিলা।[১][২]
কোহিনুর ভিলা | |
---|---|
অবস্থান | রজব আলী খান রোড, কুষ্টিয়া |
নির্মাণের কারণ | বসবাসের জন্য |
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় ভারতের হুগলি জেলার খানাকুল থানার পাঁচপীরতলা গ্রাম থেকে বাংলাদেশে আসেন রবিউল হক মল্লিক ও আরশেদ হক মল্লিক নামের দুই সহোদর ভাই। তারা কুষ্টিয়া শহরের দেশওয়ালী পাড়ার রজব আলী খান সড়কের পাশে একটি বাড়ি কিনে তাদের মায়ের নামে নাম রাখেন ‘কোহিনুর ভিলা’। হুগলিতে তাদের আরও দুই ভাই রয়ে যান।
দুই ভাই কুষ্টিয়াতে এসে বেকারির ব্যবসা শুরু করেন। তাদের মায়ের নামানুসারে কোহিনুর মিলকো ব্রেড অ্যান্ড বেকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যা শহরে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। রবিউল হক মল্লিক সরাসরি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ভূমিকা পালন করে। তিনি ছিলেন সজ্জন ও শিক্ষানুরাগী মানুষ। তিনি তার বাড়ির পাশেই মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। রবিউলের বড় ছেলের নাম আব্দুল মান্নান যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা জয়বাংলা বাহিনী-এর সদস্য।
গণহত্যা
[সম্পাদনা]“ | বীভৎস ছিল পুরো ঘটনা। ওই রাতে কোরবান বিহারী, মজিদ কসাই, ফোকু কসাই’র নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন কোহিনুর ভিলায় হাজির হয়। তখন রাত আনুমানিক ১২টা। শহরে কারফিউ। সজোরে দরজার কড়া নাড়লেও প্রথমে কেউ দরজা খোলেনি। পরে প্রতিবেশী কোরবান বিহারী বার বার নিজের পরিচয় দিলে দরজা খুলে দেন রবিউলের বড় ভাই আরশেদ হকের বড় ছেলে আশরাফ হক। তখন বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন ১৭ জন মানুষ। | ” |
— হালিম মল্লিক |
গণহত্যার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায় তারা হলেন রবিউল হক মল্লিক ও তার দুই স্ত্রী, আত্মীয় রিজিয়া বেগম, ছেলে আব্দুল হান্নান, আব্দুল মান্নান, বড় ভাই আরশেদ হক মল্লিক, তার স্ত্রী, মেয়ে আনু, আফরোজা, ছেলে আশরাফ, অতিথি রেজাউল, দোকান কর্মচারী আসাদ, বাতাসী, জরিনা ও আকুল। এদের মধ্যে আকুল ছাড়া বাকি সবাই সেদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। দোকান কর্মচারী আকুল বাড়ির এক কোণে লুকিয়ে ছিল, তাকে কেউ খুঁজে পায়নি।
“ | হত্যাকাণ্ডের পর আকুল অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেলেও তার কাছ থেকে তারা ঘটনা জানতে পারেন। সেদিন সবাইকে জবাই করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। লাশগুলোর কারো কারো হাত-পা রশি ও মশারী দিয়ে বাঁধা ছিল। নিহতের আর্ত চিৎকার যাতে বাইরে যেতে না পারে সেজন্য ঘরের মধ্যে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে দেয়া হয় বলে পরবর্তীতে আশেপাশের মানুষজন জানিয়েছিলেন। | ” |
— হালিম মল্লিক |
সকালে পৌরসভার ড্রেনে রক্তের ধারা দেখতে পায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বাড়ির ভিতরে ও আশেপাশে ক্ষতবিক্ষত লাশগুলো দেখতে পায়। রবিউল হক মল্লিক-সহ তিন-চারজনের লাশ পড়েছিল বাাড়ির দক্ষিণপাশে নফর শাহর মাজার-এর পাশে। কয়েকজনের লাশ পড়েছিল বাড়ির পূর্বপাশে পুকুড় পাড়ে। বাড়ির মধ্যে, বাথরুমে, রান্না ঘরে, শোবার ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়েছিল সবার লাশ। ছোট ৮ বছরের রাজু-কে হত্যা করে ফেলে দিয়েছিল পুকুর পাড়ে। নারীদের লাশ ছিল বিবস্ত্র। হত্যাকারীরা টাকা পয়সা ছাড়াও বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়।
“ | শুনেছি হত্যাকাণ্ডের পরের দিন বেলা দশটা সাড়ে দশটার দিকে গাড়িতে কয়েকজন সেনাসহ একজন পাকিস্থানী সেনা কর্মকর্তা এসেছিলেন সংবাদ শুনে। তিনি নাকি এতোটা নৃশংসতা কখনও দেখেননি। | ” |
— হালিম মল্লিক |
বাড়ির পেছনে পূর্বপাশে ফাঁকা জায়গায় চারটি কবরে ১৬ জনকে কবর দেওয়া হয়েছিল। দুইটি কবরে ছোটদের পাঁচজন করে এবং অন্য দুটি কবরে বড়দের তিনজন করে দাফন করা হয়।
গ্রন্থপঞ্জিকা
[সম্পাদনা]- মোঃ রেজাউল করিম (ডিসেম্বর ২০২২)। কুষ্টিয়ার প্রত্ননিদর্শন। ৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: গতিধারা। পৃষ্ঠা ২৯,৩০। আইএসবিএন 978-984-8950-41-8।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ফখরে আলম (২০১৫-০৪-২১)। "যুদ্ধবাড়ি কোহিনুর ভিলা"। কালের কণ্ঠ। ২০২৪-০৯-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৩।
- ↑ ইমাম মেহেদী (২০১০-১১-১৭)। "রক্তবাড়ির ইতিহাস, কুষ্টিয়ার কোহিনুর ভিলা গণহত্যা"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০২৪-০৯-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৩।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- আমানুর আমান (২০২১-০৪-২৬)। "একাত্তরের রক্তাক্ত বাড়ি"। দি ডেইলি স্টার - বাংলা। ২০২৪-০৯-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৩।