বিষয়বস্তুতে চলুন

রাঙ্গামাটি জেলা

(রাঙামাটি জেলা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
রাঙ্গামাটি
জেলা
সাজেক উপত্যকার দৃশ্য
বাংলাদেশে রাঙ্গামাটি জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে রাঙ্গামাটি জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৮′ উত্তর ৯২°১২′ পূর্ব / ২২.৬৩৩° উত্তর ৯২.২০০° পূর্ব / 22.633; 92.200 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৮০
সংসদীয় আসন২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি
আয়তন
  মোট৬,১১৬.১৩ বর্গকিমি (২,৩৬১.৪৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২ জাতীয় আদমশুমারী)[]
  মোট০৬,৪৭,৫৮৬
  জনঘনত্ব১১০/বর্গকিমি (২৭০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৪৩.৬০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৪৫০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
২০ ৮৪
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

রাঙ্গামাটি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্ব রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িবান্দরবান একসাথে একটি জেলা ছিল। ১৮৬০ সালের আগে এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ ছিল। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রামকে ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠন করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভেঙে জেলা খাগড়াছড়িবান্দরবান নামে নতুন দুটি জেলা গঠন করা হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা বাকি অংশ নিয়ে রাঙামাটি জেলা নামে পরিচিত হতে থাকে। রাঙ্গামাটি একটি পার্বত্য জেলা। এটি বাংলাদেশের বৃৃৃহত্তম জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা।[]

আয়তন ও অবস্থান

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলার মোট আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার।[] এটি আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা।[] বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°২৭´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৬´ থেকে ৯২°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে রাঙ্গামাটি জেলার অবস্থান।[] রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে বান্দরবান জেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরামমিয়ানমারের চিন রাজ্য, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলাখাগড়াছড়ি জেলা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জেলা, যার সাথে ভারতমিয়ানমার দুটি দেশেরই আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।

জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা - ২০২২ অনুযায়ী এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৬,৪৭,৫৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ - ৩,৩৩,২০৪ জন, মহিলা - ৩,১৪,৩৫৬ জন এবং হিজড়া - ২৬ জন। মোট পরিবার ১,৫৩,৪৮২ টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৬জন।

রাঙ্গামাটির ধর্মবিশ্বাস-২০২২ []
  1. বৌদ্ধ (৫৭.২৫%)
  2. ইসলাম (৩৬.২২%)
  3. হিন্দু ধর্ম (৫.১%)
  4. খ্রিস্ট ধর্ম (১.৩২%)
  5. অন্যান্য (০.১১%)

ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৬.২২% মুসলিম, ৫.১০% হিন্দু, ৫৭.২৫% বৌদ্ধ এবং ১.৩২% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এ জেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, চাক, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই, পাংখোয়া, প্রভৃতি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর

নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী (২০২২) []
  1. চাকমা 42.63 (৪২.৬%)
  2. বাঙালি 42.42 (৪২.৪%)
  3. মারমা 7.93 (৭.৯৩%)
  4. তঞ্চঙ্গ্যা 4.31 (৪.৩১%)
  5. ত্রিপুরা 1.9 (১.৯০%)
  6. অন্যান্য 0.81 (০.৮১%)

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠাকাল

[সম্পাদনা]

১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয়। জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাস মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথাগত রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় রয়েছে চাকমা সার্কেল চীফ। চাকমা রাজা হলেন নিয়মতান্ত্রিক চাকমা সার্কেল চীফ।[]

সাধারণ ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ব্রিটিশরা আগমনের পূর্বে কার্পাস মহল ছিল ত্রিপুরা, মুঘল, চাকমা ও আরাকানের রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্র। চাকমা রাজা বিজয়গিরি রাজ্য জয় করতে করতে এই অঞ্চল জয় করে নেন ও রাজ্য স্থাপন করে। ১৬৬৬ সালে এই অঞ্চলের কিছু অংশে মুঘলদের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং চাকমা রাজার কাছে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে মুঘলদের দুইটি কামানের মধ্যে '''ফতেহ্ খাঁ''' নামে একটি কামান চাকমা রাজার হস্তগত হয়।

চাকমা রাজা কর্তৃক মোঘল যুদ্ধ হতে অধিকৃত কামান " ফতে খাঁ " । এটি এখন রাঙ্গামাটি রাজবাড়িতে সংরক্ষিত আছে।

১৭৬০-৬১ সালে ইংরেজরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলে প্রবেশ করে।। ১৭৩৭ সালে চাকমা রাজা শের মোস্তা খান মুঘলদেরকে পরাজিত করে এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সরকার আশির দশকে এই অঞ্চলে চার লক্ষ ভূমিহীন বাঙালিকে পুনর্বাসন করেন। বর্তমানে তারাও এই অঞ্চলের অবিচ্ছেদ্য জনজাতিতে পরিণত হয়েছে। বাঙালি ছাড়াও এ অঞ্চলে ১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মানুষ এখানে বসবাস করেন।[]

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে ১নং সেক্টরের অধীনে ছিল রাঙ্গামাটি জেলা। মার্চে সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন তার ঢেউ এসে লাগে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতেও। এ সময় রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের ছাত্রনেতা সুনীল কান্তি দে ও গৌতম দেওয়ানের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২৭ মার্চ স্টেশন ক্লাবের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। ২৯ মার্চ ৬০ জনের একটি দল যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভারতে যায়। ২ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক হোসেন তৌহিদ ইমাম রাজকোষ থেকে প্রচুর অর্থ এবং অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। ১০ এপ্রিল প্রথম দল যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে রাঙ্গামাটির পথে রওনা হন শহিদ ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের বীর উত্তমের নেতৃত্বে। এর মধ্যে একটি দলের রাঙ্গামাটি শহরে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক দলটি শহরের কোর্টবিল্ডিং এলাকা দিয়ে নদীপথে ১৫ এপ্রিল শহরে প্রবেশ করে। কিন্তু তাঁরা শহরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। সেদিনই চট্টগ্রাম থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৭ ব্রিগেডের অধীনস্থ দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়ন (এসএসজি)-র দুটি কোম্পানি রাঙ্গামাটিতে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল, যা তাঁরা জানতেন না। ফলে তাঁদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিনের শহীদদের মধ্যে রয়েছেন আবদুস শুক্কুর, এস. এম. কামাল, ইফতেখার, ইলিয়াস, মামুন প্রমুখ। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করছিলেন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) আবদুল আলী। তাঁকেও পাকিস্তানিরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলটির একটি কোম্পানি (১৫০-২০০ জন) খাগড়াছড়ি দখলের জন্য নদীপথে এগিয়ে যায়। ২০ এপ্রিল নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ একাই তাদের ২টি লঞ্চ ও ১টি স্পিডবোট ডুবিয়ে দেন। এতে এক প্লাটুন (৪০-৪৫ জন) শত্রু সৈন্য নিহত হয়। তাঁর এই বীরত্বের ফলে পাকিস্তানিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে তিনি একাই লড়ে তাঁর প্রায় দেড়শ সহযোদ্ধার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানিদের একটি মর্টার শেলের আঘাতে শাহাদাৎবরণ করেন। সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মহালছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ২ মে বিকাল ৪টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হেডকোয়ার্টার রামগড়ের পতন হয়। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে অবস্থান নেন। পাকিস্তানিরা রামগড়ে জনসাধারণের ওপর ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। বাজার, হাসপাতাল, পুলিশ থানাসহ অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। রামগড় থেকে ভারতে যাতাযাতের জন্য নির্মিত সেতুটিও ভেঙে দেয়।

৫ মে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে অধিনায়ক করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ জনকে নিয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠিত হয়। পরে এর সদস্য আরো বৃদ্ধি পেলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কোম্পানিতে পরিণত হয়। তাঁদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল ভারতের হরিণা, বৈষ্ণবপুর ও অম্পিনগরে। বরকল, ফারুয়া ও শুকুরছড়িতে স্থাপিত পাকবাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে তাঁরা বেশকিছু গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। ফারুয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি খণ্ড যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনী যুক্ত হলে মুক্তিযুদ্ধ আরো গতিশীল হয়। এ সময় মুজিববাহিনীর একটি দল ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে। ৯ ডিসেম্বর গ্রুপ কমান্ডার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে কাউখালিতে একটি গেরিলা অপারেশন পরিচালিত হয়। এতে পাকিস্তানিদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ জাফর শহীদ হন। ১১ ডিসেম্বর বেতবুনিয়ায় মাহবুব আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের একটি জিপে আরেকটি গেরিলা হামলা চালানো হয়। এতে দুইজন অফিসারসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। []

১৪ ডিসেম্বর শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। প্রথমে বরকল ও বাঘাইছড়ির পাকিস্তানি ঘাঁটিতে বিমান হামলা করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর ভোরে বরকলের ঘাঁটিটিতে মুজিববাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে হামলা করে। দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলা যুদ্ধে বেশকিছু পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা রাঙ্গামাটি শহরের দিকে পালিয়ে যায়। একইসাথে কাউখালিসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি অবস্থানে হামলা করা হলে পুরো জেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে এবং তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে ১৫ ডিসেম্বরেই রাঙ্গামাটি শত্রুমুক্ত হয়। তবে ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বলে এই দিনকে রাঙ্গামাটি মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।[১০][১১]

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলা ১০টি উপজেলা, ১২টি থানা, ২টি পৌরসভা, ৫০টি ইউনিয়ন, ১৫৯টি মৌজা, ১৩৪৭টি গ্রাম ও ১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।[]

রাঙ্গামাটি জেলায় মোট ১০টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:[১২]

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ কাউখালী ৩৩৯.২৯ কাউখালী ইউনিয়ন (৪টি): বেতবুনিয়া, ফটিকছড়ি, ঘাগড়া এবং কলমপতি
০২ কাপ্তাই ২৫৯ চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন (২টি): চিৎমরম এবং রাইখালী
কাপ্তাই ইউনিয়ন (৩টি): চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই এবং ওয়াজ্ঞা
০৩ জুরাছড়ি ৬০৬.০৫ জুরাছড়ি ইউনিয়ন (৪টি): জুরাছড়ি, বনযোগীছড়া, মৈদং এবং দুমদুম্যা
০৪ নানিয়ারচর ৩৯৩.৬৮ নানিয়ারচর ইউনিয়ন (৪টি): সাবেক্ষ্যং, নানিয়ারচর, বুড়িঘাট এবং ঘিলাছড়ি
০৫ বরকল ৭৬০.৮৮ বরকল ইউনিয়ন (৫টি): সুবলং, বরকল, আইমাছড়া, ভূষণছড়া এবং বড় হরিণা
০৬ বাঘাইছড়ি ১৯৩১.২৮ বাঘাইছড়ি পৌরসভা (১টি): বাঘাইছড়ি
ইউনিয়ন (৭টি): সারোয়াতলী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি, মারিশ্যা, রূপকারী, বঙ্গলতলী এবং আমতলী
সাজেক ইউনিয়ন (১টি): সাজেক
০৭ বিলাইছড়ি ৭৪৫.৯২ বিলাইছড়ি ইউনিয়ন (৪টি): বিলাইছড়ি, কেংড়াছড়ি, ফারুয়া এবং বড়থলি
০৮ রাঙ্গামাটি সদর ৫৪৬.৪৯ কোতোয়ালী পৌরসভা (১টি): রাঙ্গামাটি
ইউনিয়ন (৬টি): জীবতলী, মগবান, সাপছড়ি, কুতুকছড়ি, বন্দুকভাঙ্গা এবং বালুখালী
০৯ রাজস্থলী ১৪৫.০৪ রাজস্থলী ইউনিয়ন (২টি): ঘিলাছড়ি এবং গাইন্দ্যা
চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন (১টি): বাঙ্গালহালিয়া
১০ লংগদু ৩৮৮.৪৯ লংগদু ইউনিয়ন (৭টি): আটারকছড়া, কালাপাকুজ্যা, গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসান্যাদম, মাইনীমুখ এবং লংগদু

সংসদীয় আসন

[সম্পাদনা]
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[১৩] সংসদ সদস্য[১৪][১৫][১৬][১৭][১৮] রাজনৈতিক দল
২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি রাঙ্গামাটি জেলা শূণ্য

শিক্ষা ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলার সাক্ষরতার হার ৪৩.৬০%।[] এ জেলায় রয়েছে:

  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : ১টি
  • মেডিকেল কলেজ : ১টি (সরকারি)
  • কলেজ : ১৬টি (২টি সরকারি)
  • মাদ্রাসা : ১৫টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ৫১টি (৬টি সরকারি)
  • কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ৭টি
  • নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ২২টি
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় : ৪১১টি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রাঙামাটি জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নরূপ:

নদ-নদী

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলার প্রধান নদী কর্ণফুলী। এ নদী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙ্গামাটির উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঠেগা নদীর মোহনা হয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলী নদীর উপনদীগুলো হল কাচালং, মাইনী, চেঙ্গি, ঠেগা, সলক, রাইংখ্যং। এছাড়া এ জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ। এ উপনদীগুলো বর্ষাকালে যথেষ্ট খরস্রোতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতাসহ পানির পরিমাণ প্রায় থাকে না।[১৯]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]
পাহাড়ে চাষাবাদ
ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী মহিলারা দৈনন্দিন গৃহস্থালী এবং কৃষিকাজে মূল ভূমিকা রাখে
কৃষি ও কৃষিজাত দ্রব্য

রাঙ্গামাটি জেলায় জুম পদ্ধতিতে পাহাড়ে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এ জেলায় উৎপাদিত প্রধান শস্যগুলো হল ধান, পাট, আলু, তুলা, ভুট্টা, সরিষা। এছাড়া এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে ফলজ ও বনজ গাছের বাগান রয়েছে, যা বাইরে রপ্তানি করে এ জেলার লোকেরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রধান রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আনারস, বনজ পণ্য, কাঠ ইত্যাদি। এছাড়া এ জেলায় আম, কলা, লিচু, জাম ইত্যাদি ফলের প্রচুর ফলন হয়।[২০] এছাড়া কাজু বাদাম বর্তমানে রাঙ্গামাটির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে।[২১]

ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের হাতে তৈরী পোশাক
শিল্প কারখানা

রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী কাগজ কল এবং দেশের বৃহত্তম পানি বিদ্যুত কেন্দ্র কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র। এছাড়া রয়েছে রেয়ন কল, ঘাগড়া বস্ত্র কারখানা, উপজাতীয় বেইন শিল্প, বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প, হাতির দাঁত শিল্প ইত্যাদি।[২২]

যোগাযোগ ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।

ভাষা ও সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

সরকারি ভাষা ও কথ্য ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলিত। স্থানীয় চাটগাঁইয়ারা চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে চাকমা, মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খিয়াং, খুমি, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে।[২৩]

পার্বত্যাঞ্চলে চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু উৎসব এবং ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসবের নাম বৈসু। বাংলা মাসের চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দুদিন ও পহেলা বৈশাখ এই তিনদিন ধরে চলে বিঝু[২৪] এবং বৈসু উৎসব।[২৫]

পত্র পত্রিকা

[সম্পাদনা]

রাঙ্গামাটি জেলা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের একটি তালিকা নিচে দেয়া হল:[২৬]

পত্রিকা/ম্যাগাজিনের নামসম্পাদক
দৈনিক গিরিদর্পণএ কে এম মকছুদ
দৈনিক পার্বত্য বার্তামিসেস শহীদ আবদুর রশীদ
দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামফজলে এলাহী
দৈনিক রাঙ্গামাটিআনোয়ার আল হক

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]

[২৭]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

[সম্পাদনা]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৪
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০
  3. 1 2 3 4 "রাঙ্গামাটি জেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org
  4. https://web.archive.org/web/20151208044832/http://www.bbs.gov.bd/WebTestApplication/userfiles/Image/National%20Reports/Union%20Statistics.pdf
  5. https://en.parbattanews.com/population-census-2022-a-cht-demographic-analysis/ [অনাবৃত ইউআরএল]
  6. https://bbs.gov.bd/site/page/2888a55d-d686-4736-bad0-54b70462afda/-
  7. 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; rangamati.gov.bd নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. "জেলার পটভূমি - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ১৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  9. http://www.rangamati.gov.bd মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
  10. মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাঃ রাঙ্গামাটি জেলা
  11. বিশ্বাস, পিনাকী (মার্চ ২০২২)। জ্ঞানাদার ডায়েরি থেকে। কলকাতা: ছাপাখানা প্রকাশন। পৃ. ৫৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৯৫৫৮১৭-৫-৭{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বছর (লিঙ্ক)
  12. "উপজেলা ও ইউনিয়ন - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  13. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd
  14. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯
  15. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  16. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  17. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  18. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  19. "ভৌগোলিক পরিচিতি - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ৪ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  20. "রাঙ্গামাটির ব্যবসা বাণিজ্য - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  21. "রাঙ্গামাটির অর্থনীতিতে কাজুবাদাম - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  22. "রাঙ্গামাটির শিল্প - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  23. "ভাষা ও সংস্কৃতি - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  24. "বিঝু উৎসব - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  25. ত্রিপুরা, ধন রঞ্জন। "বৈসু: ত্রিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব"মানবকণ্ঠ। ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ {{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতিতে খালি অজানা প্যারামিটার রয়েছে: |7= (সাহায্য)
  26. "পত্র পত্রিকা - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  27. "দর্শনীয়স্থান - রাঙ্গামাটি জেলা - রাঙ্গামাটি জেলা"www.rangamati.gov.bd। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  28. 1 2 3 4 5 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; কৃতী ব্যক্তিত্ব নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

বাংলাপিডিয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন