রাজবন বিহার
রাজবন বিহার বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে বনভান্তে লংগদু এলাকা থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাঙামাটি আসেন। বনভান্তে এবং তার শিষ্যদের বসবাসের জন্য ভক্তকূল এই বিহারটি নির্মাণ করে দেন। চাকমা রাজা দেবাশিষ রায়ের তত্ত্বাবধানে রাজবন বিহার রক্ষণাবেক্ষনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়।[১] প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান[২] অনুষ্ঠিত হয়। রাজবন বিহার বাংলাদেশের অন্যতম বৌদ্ধ তীর্থ স্থান।
অবস্থান
[সম্পাদনা]রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিহারটি অবস্থিত হলেও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল এখানে অনুপস্থিত। কাকচক্ষু জলে ঘেরা কাপ্তাই হ্রদ আর সবুজ বনানীর ছায়ায় অবস্থিত রাজবন বিহার। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চ ঘাট থেকে জলপথে এবং স্টেডিয়ামের পাশ্ববর্তী সড়ক পথে পাঁচ মিনিটেই বিহারে পৌঁছানো যায়। পর্যটকদের বিহার চত্ত্বরে মাথায় টুপি, বোরকা কিংবা ঘোমটা এবং পায়ে সেন্ডেল, জুতা ইত্যাদি পরে প্রবেশ নিষেধ।
নির্মাণ
[সম্পাদনা]শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে বর্তমান রাজবন বিহারে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য আমন্ত্রণ (ফাং) করে আনার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে কোন এক অতি পবিত্রক্ষণে রাজ পরিবারের সম্মতি নিয়ে প্রবীণতম ব্যক্তি কুমার কোকনাদাক্ষ রায়ের নেতৃত্বে উদ্যান উন্নয়ন বাের্ডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা বাবু সমর বিকাশ চাকমা, বাবু স্নেহ চাকমা, বাবু অরুন চাকমা, ডাঃ হিমাংশু বিমল দেওয়ান, অদ্যুৎ দেওয়ান, মিসেস সুদীপ্তা দেওয়ান, বাবু বঙ্কিম চন্দ্র চাকমা সহ রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ লংগদু তিনটিলায় গমন করেন। তখন লংগদু তিনটিলায় একমাত্র নন্দপাল ভান্তে ছিলেন বনভান্তের একনিষ্ঠ সেবক ও প্রধান সহকারী ভিক্ষু। তখন বনভান্তের শাসনে নন্দপাল ভান্তে ব্যতীত কোন ভিক্ষু ছিলেন না তবে, কিছু সংখ্যক শ্রামণ ছিলেন। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে দর্শন ও তার ধর্মোপদেশ শ্রবনের জন্য আসলেও তদানীন্তন রাঙ্গামাটি শহরের শিক্ষিত চাকমা বৌদ্ধরা খুব কমই ধৰ্মশ্রবন ও ধর্মাচরণে আগ্রহ প্রকাশ করত। তাছাড়া শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে তেমন দর্শন করতে আসতেন না। হয়তাে বনভান্তে রাঙ্গামাটির শিক্ষিত চাকমা বৌদ্ধদের এরূপ ধর্মের প্রতি অনাস্থাভাব দেখে মনে মনে ব্যথিত হতেন। এরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কুমার কোকনাদাক্ষ রায়ের নেতৃত্বে উল্লেখিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ফুলের প্লেট নিয়ে ফাং বা আমন্ত্রণ করলে বনভান্তে রাজ বনবিহারে অবস্থান করার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অবশেষে তারা নিরুপায় হয়ে শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তের সাথে পরামর্শ করেন। শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তে “আপনারা নিরাশ হবেন না, আগামীকাল সকালে আপনারা আসবেন এবং আমি আপনাদের সাথে থাকবাে এই বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। তারা খুশি হয়ে সেদিন তথায় রাত্রি যাপন করেন। পরদিন সকাল বেলা তারা শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তেকে সঙ্গে নিয়ে বনভান্তের নিকট উপস্থিত হন। শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তে বনভান্তেকে বন্দনা পূর্বক বলেন, শ্রদ্ধেয় ভান্তে! রাঙ্গামাটিতে অবস্থানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলে ভালাে হয়। রাঙ্গামাটি শহর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী এবং সকল দিক থেকে যােগাযােগের সুবিধা আছে। ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে এবং বৌদ্ধধর্মে শিক্ষিত লােকেরা তাড়াতাড়ি বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। স্বদ্ধৰ্ম উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে এভাবে শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তে বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে ফাং গ্রহণ করতে অনুরােধ জানান, শ্রদ্ধেয় বনভান্তে কিছুটা নমিত হয়ে ফাং গ্রহণে সম্মতি দেন। তারা সকলে সানন্দে রাঙ্গামাটিতে প্রত্যাবর্তন করে এই শুভ সংবাদ প্রচার করলেন। এ খবর পেয়ে রাজমাতা আরতি রায় রাঙ্গামাটিতে বনবিহার নির্মাণার্থে রাজবাড়ীর পশ্চিম দিকে মােট ২৬ একর বিস্তৃত এক বিরাট পাহাড়ী ভূমি দান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে রাজবন বিহার নির্মাণের সময় নতুন বিহার বা মন্দির। সংরক্ষণে এবং তত্ত্বাবধানের জন্য বনভান্তের অনুমতিক্রমে শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তেকে নিয়ে আসা হয়। তিনি রাজবন বিহারে অবস্থান করে বিহার নির্মাণের কাজ ও যাবতীয় দিক-নির্দেশনা দেন। তার তত্ত্বাবধানে রাজবন বিহারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলে। বসবাসের উপযােগী হয়ে গেলে বর্ষাবাসের শেষে মহাসমারােহে শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে রাজবন বিহারে নিয়ে আসা হয়। শ্রদ্ধেয় বনভান্তে ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে অবস্থান করতে শুরু করেন । শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে সহযােগীতার পাশাপাশি রাজবন বিহারের সার্বিক উন্নয়নে তত্ত্বাবধানের গুরুদায়িত্ব সব সময় শ্রদ্ধেয় নন্দপাল ভান্তের উপর ন্যাস্ত থাকত। এই গুরু দায়িত্ব তিনি যমচুগ যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত পালন করেছিলেন। রাঙ্গামাটিতে সুন্দর ছায়াঘেরা মনােরম প্রকৃতির মাঝে নীল হ্রদের জলরাশি বেষ্টিত রাজবন বিহার প্রতিষ্ঠার পর হতে দ্রুত পার্বত্য বৌদ্ধ সমাজ থেকে বৌদ্ধ-অপসংস্কৃতি ও রীতি- নীতি দূরীভূত হয়ে রাঙ্গামাটি বৌদ্ধ সমাজে পুণ্য কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আগ্রহ ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিকামী কুলপুত্রদের সংখ্যা বনভান্তের শাসনে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর সফল স্বরূপ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় সাতান্নটির অধিক শাখা বনবিহার এবং ভারতের ত্রিপুরা, অরুণাচল, মিজোরাম, গােহাটি ও বুদ্ধগয়া সহ ২০টির অধিক ছােট-বড় শাখা বনবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চিত্রসংগ্রহ
[সম্পাদনা]-
আর্যশ্রাবক বনভন্তের মূর্তি
-
আর্যশ্রাবক বনভন্তের সংরক্ষিত শবদেহ
-
রাজবন বিহারের অতিথিশালা
-
রাজবন বিহারের নির্মিত হচ্ছে বিশ্বশান্তি প্যাগোডা
-
বুদ্ধ মুর্তি
-
রাজবন বিহার
-
রাজবন বিহারে উপাসনারত পূণ্যার্থী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ http://rajbanavihara.org/rajbanavihara/history ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে রাজবন বিহারের ইতিহাস
- ↑ http://dhammainfo.com/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুন ২০১৪ তারিখে ধর্মইনফো
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |