রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ | |
---|---|
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ | |
জন্ম | বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে | ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬
মৃত্যু | ২১ জুন ১৯৯১ | (বয়স ৩৪)
পেশা | কবি ও সাহিত্যিক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
নাগরিকত্ব | ![]() |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮২), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০) |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০) |
দাম্পত্যসঙ্গী | তসলিমা নাসরিন (বি. ১৯৮২; বিচ্ছেদ. ১৯৮৬) |
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ - ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও গীতিকার। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম "বাতাসে লাশের গন্ধ"।[১] এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে "রুদ্র স্মৃতি সংসদ"।[২]
জন্ম ও শিশুকাল[সম্পাদনা]
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তার পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তিনি বরিশাল আমানত গঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মেঠ গ্রামে। তার বাবার নাম ডাঃ শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম।[৩] উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল কবি রুদ্রর। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বোনের ট্র্যাংক থেকে তিনি ও তার মামাতো ভাইয়েরা মিলে টাকা ধার করেন। কথা ছিল তারা সিনেমা দেখতে যাবেন। কিন্তু সেটি না করে রুদ্র আরেকটি কাজ করলেন। তারা একটি লাইব্রেরি তৈরি করলেন। সেই লাইব্রেরির নাম দেয়া হয়েছিল বনফুল লাইব্রেরি। এছাড়া ছোটবেলায় রুদ্র অনেক অভিমানীও ছিলেন। একটা ঘটনা থেকে তা আঁচ করা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তার স্কুলের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। আবার একই স্কুলের পরিচালনা পরিষদে ছিলেন তার বাবা। নিজের ছেলেকে প্রথম স্থানের পুরস্কার দেয়াটা তিনি সমীচীন মনে করেননি। তিনি ভেবেছিলেন সেটা স্বজনপ্রীতি হতে পারে। অনুষ্ঠান শেষে তিনি অবশ্য অনেক বই কিনে দিয়েছিলেন তার ছেলেকে। কিন্তু রুদ্র তার বাবার দেয়া সব বই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিমান করে।[৪]
যৌবন[সম্পাদনা]
যৌবনে রুদ্র ছিলেন প্রাণবন্ত এবং কিছুটা উচ্ছন্ন। খেয়ালীপনা তার মধ্যে ছিল না। তার চুল ছিল কোঁকরা। তার মুখে ছিল খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। জিন্স পরতেন প্রায় সময়ই। সবসময় আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। তবে কবিতার ক্ষেত্রে তিনি অনেক মনোযোগী থাকতেন। তার এই অস্থির ভাব নিয়ে কবি শামসুল হক বলেছিলেন, "তার মধ্যে যে বাউন্ডুলেপনা ছিল তা তাকে সুস্থির হতে দেয়নি।"[৪]
শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। চার বিষয়ে লেটার মার্ক্স পেয়েছিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।[৩] ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ।[৫]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাদের অন্যতম।[৫] তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং "ভালো আছি ভালো থেকো"সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।[৬]
ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।
প্রকাশিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]
কবিতা[সম্পাদনা]
- উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
- ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১)
- মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬)
- ছোবল (১৯৮৬)
- গল্প (১৯৮৭)
- দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
- মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)[৭]
ছোটগল্প[সম্পাদনা]
- সোনালি শিশির
নাট্যকাব্য[সম্পাদনা]
- বিষ বিরিক্ষের বীজ
বড়গল্প[সম্পাদনা]
- মনুষ্য জীবন
পুরস্কার[সম্পাদনা]
- মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)
মৃত্যু[সম্পাদনা]
তসলিমা নাসরিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরো মুক্ত জীবন যাপন করতে শুরু করেন। তিনি খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করতেন। ঠিক ঠাক সময়ে খেতেন না এবং নিজের শরীরের যত্ন নিতেন না। ফলে তার পাকস্থলিতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ২১ জুন নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।[৪][৫]বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মিঠাখালি মামার বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত কবি।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত - প্রথম আলো"। ২০১৫-০১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ ক খ "কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ"। ১৬ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ক খ গ "গল্পস্বল্প: প্রেম, দাম্পত্য, বিচ্ছেদ- তসলিমাকে নিজের হাতে গড়েছিলেন কবি রুদ্র"। জি। ২৪ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ক খ গ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান; ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৫৭।
- ↑ http://www.bangladeshfirst.com/newsdetails.php?cid=2&scid=0&nid=2447
- ↑ কবি ও কবিতা – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ | শব্দনীড়