আলমডাঙ্গা উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৫′৪৩″ উত্তর ৮৮°৫৭′১০″ পূর্ব / ২৩.৭৬১৯৪° উত্তর ৮৮.৯৫২৭৮° পূর্ব / 23.76194; 88.95278
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলমডাঙ্গা
উপজেলা
মানচিত্রে আলমডাঙ্গা উপজেলা
মানচিত্রে আলমডাঙ্গা উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৫′৪৩″ উত্তর ৮৮°৫৭′১০″ পূর্ব / ২৩.৭৬১৯৪° উত্তর ৮৮.৯৫২৭৮° পূর্ব / 23.76194; 88.95278 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
জেলাচুয়াডাঙ্গা জেলা
আয়তন
 • মোট৩৬৫ বর্গকিমি (১৪১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট৩,৪৫,৯২২
 • জনঘনত্ব৯৫০/বর্গকিমি (২,৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৯.৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ১৮ ০৭
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

আলমডাঙ্গা উপজেলা বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা ।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের আলমডাঙ্গা উপজেলাটি খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তর্ভুক্ত। আলমডাঙ্গা উপজেলা ২৩°৩৭' উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩°৫০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭' পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৮৯°০০' পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তর পার্শ্বে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলামেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা সদরদামুড়হুদা উপজেলা, পূর্বে কুষ্টিয়া সদর উপজেলাঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা, পশ্চিমে দামুড়হুদা উপজেলামেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা

ইতিহাস[সম্পাদনা]

নামকরণ[সম্পাদনা]

জনশ্রুতি আছে, এক বানভাসি বৃদ্ধা নান্দায় ভাসতে ভাসতে আলমডাঙ্গার কোন এক স্থানে উঠে এসে বলেছিলেন, ‘আলাম ডেঙায়!’ আর সেই থেকে এই জনপদের নাম হয়েছিল ‘আলামডেঙা’, যা কালক্রমে আলমডাঙ্গা নামে পরিচিত পাই। তবে এটা অনেকটাই কিম্বদন্তী। আরেকটি মত আছে যেটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। কথিত আছে আলমডাঙ্গার উপকণ্ঠে আসাননগর এলাকায় আলম ফকির নামে এক সাধক বাস করতেন। তাঁর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয় আলমডাঙ্গা। আসাননগরের কিছু অংশ পার আলমডাঙ্গা নামে পরিচিত, যা আলম ফকির সম্পর্কীয় জনশ্রুতিকে কিছুটা হলেও সমর্থন করে। তবে আলম ফকিরের কোনো কবর বা মাজারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।

মুক্তিযুদ্ধে আলমডাঙ্গা[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা জেলাকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষণা করে সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করলে এ অঞ্চলটি পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেট পয়েন্টে রুপান্তরিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুহুর্মুহু প্রতিরোধ ও সম্মুখ যুদ্ধ লেগেই থাকে। আলমডাঙ্গায় সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধগুলো হচ্ছে- ১. হাড়গাড়ী সুকচা, বাজিদপুর যুদ্ধ- ১৩ আগস্ট, ১৯৭১। এ যুদ্ধে ১জন শহীদ হন, ২. আলমডাঙ্গা সদরে সংঘটিত যুদ্ধ- ১২ নভেম্বর, ১৯৭১। এ যুদ্ধে ৪জন শহীদ হন।

মুক্তিবার্তা (লাল কভার) অনুযায়ী বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলায় মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাঃ ৪৪৮ জন।

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১টি পৌরসভা এবং ১৫ টি ইউনিয়ন রয়েছে ।

পৌরসভা[সম্পাদনা]

ইউনিয়ন[সম্পাদনা]

নদ-নদী[সম্পাদনা]

আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্যতম নদীঃ মাথাভাঙ্গা নদী, কুমার নদ, নবগঙ্গা নদী[২][৩] ভাটুই নদী ও মরা নদী। এছাড়াও এখানে রয়েছে ওয়াবদার খাল, জহুরুলনগর খাল, অণুপনগর খাল প্রভৃতি। এখানকার অন্যতম বিলগুলো হলোঃ গাড়িয়াল বিল, বোয়ালিয়া বিল, বলেশ্বরপুর-হাড়োকান্দি বিল, রাযশাবিল, বেলসাদপুর কাঁঠালিয়া বিল, মনিদহ বিল, চাকিলার বিল, খড়কাটি বিল এবং বৃহৎ জি.কে ক্যানাল প্রভৃতি। এছাড়া ঘোলদাড়ী বাজারে অবস্থিত নীলকুটিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুটির নদী অন্যতম।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

আলমডাঙ্গা উপজেলায় শিক্ষার হার ৫৫.১৪%। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত নিমগ্ন পাঠাগার আলমডাঙ্গা শহরে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব প্রদানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। শিল্প-সাহিত্যের উপর বিভিন্ন সেমিনার ও শিক্ষা প্রোগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমে পাঠাগারটি বোদ্ধা মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে।[৪] [৫] আলমডাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণের জন্য স্বয়ম্ভর পাবলিক লাইব্রেরি নামক একটি অলাভজনক সামাজিক পাঠাগার রয়েছে যা উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।[৬] উপজেলায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো,

কলেজ[সম্পাদনা]

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়[সম্পাদনা]

  • আইলহাশ লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয় (1940)
  • আলমডাঙ্গা সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

(1914 সালে প্রতিষ্ঠিত)

  • আলমডাঙ্গা ব্রাইট মডেল স্কুল (২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • আলমডাঙ্গা গার্লস স্কুল
  • আসমানখালী উচ্চ বিদ্যালয় (1967 সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমী
  • জে এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • বড় গাংনী উচ্চ বিদ্যালয়
  • বশিরা মালিক ডাউকি উচ্চ বিদ্যালয়
  • বাটাপাড়া শিয়ালমারী উচ্চ বিদ্যালয়
  • বেলগাছি উচ্চ বিদ্যালয়
  • ভদুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • ভোগাইল বাগদী উচ্চ বিদ্যালয়
  • ভাংবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  • উজ্জ্বল মডেল স্কুল
  • সি এইচ আর উচ্চ বিদ্যালয়
  • এনায়েতপুর বড়দী আলহাজ্ব মীর খোস্তের আলী

মাধ্যমিক বিদ্যালয়

  • এরশাদপুর একাডেমি
  • ঘোলদাড়ী বাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
  • ঘোলদাড়ী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়

গোকুলখালী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭)

  • হারদী উচ্চ বিদ্যালয়
  • হাটবোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  • হাটবোয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • কায়েতপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (1965 সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • কাটাভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • খাশকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • কুমারী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • মাধবপুর মডেল হাইস্কুল (২০০৩)
  • মুন্সীগঞ্জ একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়
  • মুন্সীগঞ্জ গার্লস স্কুল (বিল্ডিংটি প্রয়াত ফণী ভূষণ পাল S/O প্রয়াত জানকীনাথ পাল-এলাকার প্রাক্তন জমিদার কর্তৃক দান করা)
  • পাইকপাড়া জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (1962)
  • পোলতাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়
  • সায়েন্স প্লাস একাডেমিক কেয়ার
  • সেবাবাগ উচ্চ বিদ্যালয়

কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়[সম্পাদনা]

  • আলমডাঙ্গা সরকারী ডিগ্রী কলেজ
  • আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ
  • ব্রাইট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ
  • ড.আফসের উদ্দিন কলেজ
  • খাসকররা ডিগ্রি কলেজ
  • এম এস জোহা ডিগ্রী কলেজ
  • এম এস জোহা কৃষি কলেজ
  • নিগার সিদ্দিক কলেজ

মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়[সম্পাদনা]

  • আলমডাঙ্গা আলিম মাদ্রাসা
  • আলমডাঙ্গা ইসলামিয়া মাদরাসা
  • আল ইকরা একাডেমী
  • মীর সামসুল আলম ইসলাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  • নিপ্পন জোহা টেকনিক্যাল স্কুল (কারিগরি)
  • নওলামারী আলিম মাদ্রাসা (2000 সালে প্রতিষ্ঠিত)
  • কাবিলনগর আলিম মাদ্রাসা
  • মাদ্রাসাতুত তাকওয়া (আলমডাঙ্গা মাদ্রাসা)[৭]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

১৮৬২ সালে কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে রেল পথে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে আলমডাঙ্গার যোগাযোগ সুবিধাজনক থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩৫টি হাট-বাজার রয়েছে। এ সকল হাটে বিভিন্ন ধরনের পশু, কৃষি পণ্য, তামাক, ভুট্টা প্রভৃতি ব্যাপক আমদানী ঘটে থাকে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ১৫০টি চালের মিল রয়েছে। মিলগুলো থেকে উৎপাদিত চাল উপজেলার অভ্যন্তরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ২৫% লোক ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]

  • আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
  • এম. মকবুল্লার রহমান মুন্সিগঞ্জ, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
  • ব্যরিষ্টার বাদল রশিদ খাসকররা, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা একজন বিশিষ্ট ব্যরিষ্টার এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
  • খোদা বক্স শাহ জাহাপুর, নাগদাহ, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা। একুশে পদক প্রাপ্ত, একজন বিশিষ্ট মরমী সাধক।
  • আব্দুর রাজ্জাক আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সাবেক এমএলএ
  • আহাদ আলী মোল্লা কাজী হায়দার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত
  • কবি গোলাম রহমান
  • আ ফ ম সিরাজ শামজী[৮]
  • মাওলানা ইমদাদুল হক, লেখক ও আলেম
  • মাওলানা আরশাদুল আলম, ইসলামপ্রচারক, সমাজসংস্কারক ও আলেম[৯]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে আলমডাঙ্গা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৫  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  3. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১৩। আইএসবিএন 984-70120-0436-4 
  4. আলমডাঙ্গায় বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপনMathabhangaChuadanga 
  5. আলমডাঙ্গা নিমগ্ন পাঠাগারে নজরুল বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিতSamprotikeeAlamdanga 
  6. "জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস: সৃজনশীলতার চর্চা অবিরাম"দৈনিক প্রথম আলো। ২০২৪-০২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৩ 
  7. |url=https://amar-school.com/list.php?search_type=thana&thana=ALAMDANGA&page=2 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০২৩ তারিখে |title=Schools in Alamdanga |website=https://amar-school.com/list.php?search_type=thana&thana=ALAMDANGA&page=2 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০২৩ তারিখে |publisher=Amar School
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২৩ 
  9. বিস্মৃতপ্রায় মহান সাধক মাওলানা আরশাদুল আলম রহ.Ourislam24Dhaka 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]