রহিমউল্লা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রহিমউল্লা
জন্ম?
মৃত্যু১৮৬১
আন্দোলনকৃষক বিদ্রোহ

রহিমউল্লা বা শহীদ রহিমউল্লাহ (? - ১৮৬১) সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ তথা নীল বিদ্রোহের প্রখ্যাত নেতা ও শহীদ।[১][২]

বিদ্রোহের সূচনা[সম্পাদনা]

সুন্দরবনের বারইখালী অঞ্চলে কৃষকদের প্রধান ছিলেন রহিমউল্লাহ। তিনি কৃষকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এসময় মোরেল জমিদারের অত্যাচারী ম্যানেজার ডেনিস হেলির লাঠিয়াল বাহিনী সাধারণ প্রজাদের ওপর জুলুম ও লুঠতরাজ চালাতো। রহিমউল্লাহ নিজে দুর্দান্ত লাঠিয়াল ছিলেন। তিনি এই সকল জুলুমবাজির প্রতিরোধ করেন সাহসের সাথে ও প্রতিরোধ দল গড়ে তোলেন।[৩] ১৮৬১ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় গুনী মামুন তালুকদার নামক এক বিত্তবান জমিদার হেলির সাহায্যে জমি দখলের চেষ্টা করে কৃষকদের নীল চাষে বাধ্য করায় রহিমউল্লাহ বাধা দেন এবং প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। হেলির লাঠিয়াল সর্দার রামধন মালো মারা গেলে জমিদার বাহিনী পলায়ন করে।[২]

সম্মুখ যুদ্ধ ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

এই ঘটনার কয়েকদিন পরে ডেনিস হেলি প্রতিশোধার্থে গভীর রাত্রে অতর্কিত তার বাড়ি আক্রমণ করে। সাথে ছিল ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী। রহিমউল্লাহ পুর্বেই অনুমান করেছিলেন যে তার বাড়ি আক্রান্ত হতে পারে। বাড়ীর চারিদিকে পরিখা কেটে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বিপুল সংখ্যক বন্দুকধারী ও লাঠিয়ালদের সাথে রহিমউল্লাহ ও তার সাথীদের ভয়াবহ খন্ডযুদ্ধ হয় সারারাত ধরে। রহিমউল্লা নিজেই বন্দুক হস্তে লড়াই করেন। গুলি ফুরিয়ে গেলে বাড়ির মেয়েদের রুপোর বালা চূর্ন করে গুলির কাজ চালানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিদ্রোহী রহিমউল্লাহ। উভয় পক্ষে সতেরো জন নিহত ও বহু আহত হয়। রহিমউল্লাহ ও অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহীদের মৃতদেহগুলি জংগলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলে হেলির লোকজন। বাড়ির মহিলাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়।[১][৪]

তদন্ত[সম্পাদনা]

এই ভয়ংকর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন তদানীন্তন খুলনার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। নিজেই মোরেলগঞ্জে গিয়ে হেলিকে দোষী সাব্যস্ত করে দীর্ঘ রিপোর্ট দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। হেলি পলায়ন করলে তার নামে গ্রেপ্তারি পরওয়ানাও জারী করেছিলেন তিনি। তৎকালীন আমলে বঙ্কিমচন্দ্রকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়ার ব্যবস্থা ও ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিল ডেনিস হেলি। পনেরো বছর এই মামলা চলে এবং যশোর দায়রা আদালতে একজনের ফাঁসি, ৩৪ জনের দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। দুর্ভাগ্য হেলিকে কেউ সনাক্ত করতে না পারায় সে মুক্তি পেয়েছিল।[১] পরবর্তীতে জানা যায়, এই ডেনিস হেলি আসামে বজ্রপাতে মারা যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গনতান্ত্রিক সংগ্রাম, সুপ্রকাশ রায় (১৯৭২)। সুন্দরবন অঞ্চলের বিদ্রোহ। কলকাতা: ডিএনবিএ ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৩৪১। 
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, প্রথম খন্ড (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪৬৩। 
  3. "মোড়েলগজ্ঞ এর ইতিহাস!!!"Golperjhuri.com। ২০২১-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫ 
  4. "নীল বিদ্রোহের সুতিকাগার চৌগাছা"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারী ২০১৮