বিষয়বস্তুতে চলুন

অপরোক্ষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অপরোক্ষ (সংস্কৃত: अपरोक्ष) একটি সংস্কৃত বিশেষণ, যার অর্থ “যা দৃশ্য নয় বা উপলব্ধি করা যায় না”।[] এই শব্দটির দ্বারা প্রত্যক্ষ অন্তর্জ্ঞানলব্ধ বিদ্যাকে বোঝায়। এই বিদ্যা হল জ্ঞানের সাতটি স্তর বা চিদভাষার শর্তের অন্যতম। এই সাতটি স্তরের প্রথম তিনটি বন্ধনের উৎস এবং শেষ চারটি হল মুক্তিলাভের প্রক্রিয়া তথা গতানুগতিক জ্ঞানের গভীরতাপ্রাপ্তির অনুবর্তন। এটি দুঃখ দূর করে।[] ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী, প্রথাগত জ্ঞানের তিনটি ধরন হল ‘প্রত্যক্ষ’ (প্রায়োগিক), ‘পরোক্ষ’ (গতানুগতিক, বিশ্বজনীন) ও ‘অপরোক্ষ’ (স্বজ্ঞালব্দ)।[] ‘অপরোক্ষ’ হল সর্বোচ্চ শ্রেণির জ্ঞান। যে নৈতিকতা অস্তিত্বের একত্ব থেকে উৎসারিত ‘পরোক্ষ’ জ্ঞানকে রূপান্তরিত করে তার অনুশীলন ব্যতিরেকে অপরোক্ষ জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।[] ‘গুরু-শিষ্য সম্বন্ধ’ (গুরু-শিষ্য পরম্পরা) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই সম্বন্ধে গুরুকে পূর্বেই এই জ্ঞান প্রাপ্ত হতে হয় (অপরোক্ষানুভূতি); কর্মের অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। ‘অপরোক্ষ জ্ঞান’ অর্জনের পর ‘বিদ্যাকর্ম’ সম্পাদিত হয়, যার অঙ্গ হল ‘শ্রবণ’ (শ্রুতি শাস্ত্র শ্রবণ), ‘মনন’ (অনুচিন্তন) ও ‘নিদিধ্যাসন’ (পরব্রহ্মের ধ্যান)।[]

যখন ব্যক্তি চির-উপলব্ধিকৃত সত্ত্বার (তৎ ত্বং অসি) অদ্বৈত প্রকৃতি পুনরায় চিনতে পারেন তখন ‘অপরোক্ষ’ হয় ‘সবিকল্প জ্ঞান’। এই তাৎক্ষণিক জ্ঞান ‘প্রমাণের’ মাধ্যমে পাওয়া যায়। ধ্যানের অনুশীলনের ফলে সকল ‘বিকল্প’ (বিবিধ চিন্তা) দূর হয় এবং ‘নির্বিকল্প’ অর্থাৎ চিন্তাহীন অবস্থায় উপনীত হওয়া যায়। এই নির্বিকল্প অবস্থা হল সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা তথা পরম সত্যের তাৎক্ষণিক উপলব্ধি।[] “সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” (এই সকলই ব্রহ্ম) হল ‘পরোক্ষ’ জ্ঞান, কিন্তু “অহং ব্রহ্মাস্মি”-র অনুধাবনই হল ‘অপরোক্ষ’ জ্ঞান।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Sanskrit Dictionary"। Spokensanskrit de.। 
  2. Swami Krishnanda। The Philosophy of the Panchdasi। The Divine Life Society। 
  3. The Eastern Anthropologist, Vol.49। Ethnographic and Folk Culture Society। পৃষ্ঠা 103। 
  4. Five years of Theosophy। Theosophical Pub. Society। পৃষ্ঠা 138। 
  5. Kedar Nath Ram Nath। Research Journals of Philosophy and Sciences Vol.3। University of Michigan। পৃষ্ঠা 57,71। 
  6. K.N.Subramanian। The Wisdom of Sri Dattatreya। Sura Books। পৃষ্ঠা 80,81। 
  7. "Self Knowledge"। ২০১৪-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-১০