মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুধর্ম
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
3,338,214 (2020) মার্কিন জনসংখ্যার 1% (ধর্ম গবেষণা ইনস্টিটিউট ডেটা ২০১৬)[১] মার্কিন জনসংখ্যার 1% (পিউ রিসার্চ সেন্টার ডেটা ২০১৫)[২] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
হিন্দুধর্ম | |
ভাষা | |
পবিত্রs সংখ্যাগরিষ্ঠ কথ্য ভাষা | |
সম্পর্কিত জাতিগত গোষ্ঠী | |
দেশ অনুযায়ী হিন্দুধর্ম |
---|
পূর্ণাঙ্গ তালিকা |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুধর্ম চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম ।[৩] যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১%।[৪] এদের অধিকাংশই ভারতীয় আমেরিকান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ক্যারিবিয়ান ও অন্যান্য এশীয় দেশ থেকে আগত অভিবাসী এবং তাদের বংশধরেরা। এছাড়া খুব অল্প সংখ্যক কিছু ধর্মান্তরিত হিন্দুও আছেন।[৫]
উনিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের আসা-যাওয়া থাকলেও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশানালিটি সার্ভিসেস (এনআইএস) অ্যাক্ট অফ ১৯৬৫ পাস হওয়ার আগে সেদেশে হিন্দুদের উপস্থিতি নগন্যই ছিল।
সম্প্রতি, হিন্দু-আমেরিকানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়গুলির চেয়ে উচ্চতর আর্থসামাজিক স্তরে বসবাস করে। তাদের আয়ের মাত্রা সর্বোচ্চ ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও অনেক উচ্চস্তরের।[৬][৭] হিন্দুধর্মের বিভিন্ন ধারণা―যেমন কর্মবাদ, পুনর্জন্মবাদ ও যোগসাধনা―এখন মূলধারার মার্কিন জনসাধারণের কাছে সুপরিচিত।[৮] ২৪% আমেরিকান হিন্দুধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী।[৯]
জনপরিসংখ্যান
[সম্পাদনা]ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর রিপোর্ট[১০] অনুযায়ী সেদেশের মোট হিন্দুর সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন; যা মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ০.৫%। অন্য একটি সূত্রের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের জনসংখ্যা ২.৪ মিলিয়ন।[১১] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু-জনসংখ্যা বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম। এশীয় আমেরিকানদের ১০% হিন্দু ধর্মাবলম্বী।[১২]
আমেরিকান হিন্দুদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক আয় উচ্চস্তরের। ৪৮% আমেরিকান হিন্দুরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হারও এদের মধ্যে কম।[১৩][১৪] পিউ রিসার্চ সেন্টারের ফোরাম-এর ধর্ম ও নাগরিক জীবন সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রের মতে, ৪৮% আমেরিকান হিন্দুর পারিবারিক আয় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি। ৭০% অন্তত ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার আয় করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।[৬][৭]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে শিকাগোর ওয়ার্ল্ড’স পার্লামেন্ট অফ রিলিজিয়ন-এ ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি দুই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন এবং শিকাগো, ডেট্রয়েট, বস্টন ও নিউ ইয়র্কে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ১৯০২ সালে স্বামী রামতীর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনিও দুই বছর সেদেশে থেকে বেদান্ত দর্শন প্রচার করেন।[১৫] ১৯২০ সালে পরমহংস যোগানন্দ বস্টনে আয়োজিত ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ রিলিজিয়াস লিবারালস-এ ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৫ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু অভিনিবেশকারীর সংখ্যা ছিল নগণ্য। প্রথম দিকে পর্যটক, ছাত্র ও ব্যবসায়ীরাই আসত। ১৯০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনের বেলিংহামের দাঙ্গা প্রমাণ করে যে সেকালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ও হিন্দুরা নিরাপদ ছিলেন না। তা সত্ত্বেও নানা পেশার মানুষ সেদেশে থেকে কাজ করতেন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশানালিটি সার্ভিসেস (এনআইএস) অ্যাক্ট অফ ১৯৬৫ পাস হওয়ার পর হিন্দু অভিনিবেশকারীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা খুলে যায়।
১৯৬০-এর দশকেই মার্কিন কাউন্টার-কালচার আন্দোলনের জেরে স্বামী প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠিত ইসকন সহ অন্যান্য নব্য-হিন্দু আন্দোলনগুলি বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে। অন্যান্য প্রভাবশালী ভারতীয় হিন্দু ধর্মপ্রচারকেরা হলেন চিন্ময় ও মহর্ষি মহেশ যোগী।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাঁর সম্মানে মার্কিন কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনের শুরুতে সংস্কৃত ভাষায় (হিন্দি ও ইংরেজি সহ) প্রার্থনা পাঠ করা হয়। পাঠ করেছিলেন ভেঙ্কটাচালপতি সমুদ্রালা। ওহিওর কংগ্রেসম্যান শেরোড ব্রাউনের উদ্যোগে এই সংস্কৃত প্রার্থনা পাঠ করা হয়েছিল।[১৬] ২০০৭ সালের ১২ জুলাই মার্কিন সেনেটে নেভাডার হিন্দু চ্যাপলেইন রাজান জেড অন্য একটি হিন্দু প্রার্থনা পাঠ করেন।[১৭] এই নিয়ে কিছু বিতর্কও হয়।[১৮] ২০০৯ সালের দীপাবলি উৎসবে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন।
হিন্দু মন্দির
[সম্পাদনা]বেদান্ত সোসাইটি ১৯০৬ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের ব্যবহারোপযোগী কিছু উপাসনালয় স্থাপন করেছিল। তবে সেগুলি ঠিক শাস্ত্রবিহিত মন্দির ছিল না। সেদেশের সবচেয়ে পুরনো প্রথাগত হিন্দু মন্দির হল মহাবল্লভ গণপতি দেবস্থানম। নিউ ইয়র্ক সিটির ফ্লাসিং-এর হিন্দু টেম্পল সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার মালিকানাধীন এই মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯৭৭ সালের ৪ জুলাই। বর্তমানে মন্দিরটি সংস্কার করে আরও বড়ো করা হয়েছে।[১৯]
হিন্দু টেম্পল সোসাইটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার মালিকানাধীন কালাবাসাসের ম্যালিবু হিন্দু মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটি ১৯৮১ সালে স্থাপিত।
টেক্সাসের সবচেয়ে পুরনো মন্দির হল শ্রীরাসেশ্বরী রাধারাণী মন্দির। এটি অস্টিনের রাধামাধব ধামে অবস্থিত।[২০] মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃপালু মহারাজ। এটি পাশ্চাত্যের অন্যতম বড়ো[২১] এবং উত্তর আমেরিকায় বৃহত্তম হিন্দু মন্দির।[২২][২৩][২৪]
মিশিগানের পন্টিয়াকের পরাশক্তি মন্দির একটি শাক্ত মন্দির।[২৫] এটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত।[২৬]
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Cox, Daniel; Jones, Ribert P. (৯ জুন ২০১৭)। America's Changing Religious Identity। 2016 American Values Atlas। Public Religion Research Institute।
- ↑ "America's Changing Religious Landscape"। Pew Research Center। মে ১২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১৫।
- ↑ YorkMay 13, IANS New; May 13, 2015UPDATED:; Ist, 2015 19:39। "Hindu population up in US, becomes fourth-largest faith"। India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১৭।
- ↑ Religious Landscape Survey, Pew Forum on Religion & Public Life, February 2008, © 2008 Pew Research Center
- ↑ "Hinduism in North America"। obo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১৭।
- ↑ ক খ "Hindu-Americans Rank Top in Education, Income"। অক্টোবর ১৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- ↑ ক খ "Hindu-Americans Rank Top in Education, Income"। সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- ↑ "Americans turn to Hindu beliefs"। মার্চ ৫, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- ↑ "We Are All Hindus Now"। ডিসেম্বর ১৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসে ১, ২০১২।
- ↑ http://www.state.gov/g/drl/rls/irf/ International Religious Freedom Report 2004
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Asian Americans: A Mosaic of Faiths"। The Pew Forum on Religion & Public Life। Pew Research Center। ১৯ জুলাই ২০১২। ১৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Study Shows, Hindus Have Lowest Divorce Rate and Highest Education Level in America"। The Chakra। জুন ১৩, ২০১১। জানুয়ারি ১৮, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৮, ২০১২।
- ↑ "US Hindus have higher education and lowest divorce rate"। The Global Indian। অক্টোবর ৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৮, ২০১২।
- ↑ Arora, R.K. (1978), Swami Ram Tirath, his life and works, page 56, Rajesh Publications, New Delhi, India
- ↑ For the first time, a Hindu priest will pray before US Congress, rediff.com, 14 September 2000.
- ↑ "California Senate opened with Hindu prayer for first time"। Asian Tribune। ২০০৭-০৮-২৯। ২০০৭-০৯-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৪।
- ↑ Boorstein, Michelle (২০০৭-০৭-২৭)। "Hindu Groups Ask '08 Hopefuls to Criticize Protest"। The Washington Post।
- ↑ Official website of the Flushing temple.
- ↑ India today international. Volume 1, Issues 1–8. Living Media International. 2002.
- ↑ Vedic Foundation Inaugurated at Barsana Dham, Austin ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ আগস্ট ২০১১ তারিখে. Retrieved Dec 15th, 2011.
- ↑ Ciment, J. 2001. Encyclopedia of American Immigration. Michigan: M.E. Sharpe
- ↑ Hylton, H. & Rosie, C. 2006. Insiders' Guide to Austin. Globe Pequot Press.
- ↑ Mugno, M. & Rafferty, R.R. 1998. Texas Monthly Guidebook to Texas. Gulf Pub. Co.
- ↑ "Parashakthi (Eternal Mother) Temple"। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Honoring the eternal Divine Mother"। India Abroad। ২০১১-১২-৩০।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- The Council of Hindu Temples of North America (CHTNA) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মার্চ ২০১৮ তারিখে
- Hindu Youth Network
- Hindu Temples in USA[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Vivekananda Vedanta Society-Chicago
- State-wise list of Hindu Temples in USA with photos and addresses
- South Asian Pioneers in California, 1899–1965
- Parashakthi Eternal Mother Temple
- Bhatia, Sunill. (2007). American Karma: Race, Culture, and Identity in the Indian Diaspora. আইএসবিএন ০-৮১৪৭-৯৯৫৯-০
টেমপ্লেট:North America in topic টেমপ্লেট:Demographics of the United States