চট্টেশ্বরী মন্দির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চট্টেশ্বরী মন্দির
প্রবেশ দ্বার
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাচট্টগ্রাম
অবস্থান
অবস্থান২০ চট্টেশ্বরী সড়ক, মেহেদীবাগ
দেশবাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২২°২১′১০″ উত্তর ৯১°৪৯′৩৪″ পূর্ব / ২২.৩৫২৭৫° উত্তর ৯১.৮২৬০৫° পূর্ব / 22.35275; 91.82605
স্থাপত্য
প্রতিষ্ঠার তারিখ১৮শ শতাব্দীর

চট্টেশ্বরী কালী মায়ের বিগ্রহ মন্দির বাংলাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম। জনশ্রুতি মতে, প্রায় ৩০০-৩৫০ বছর পূর্বে আর্য ঋষি যোগী ও সাধু সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে চট্টেশ্বরী দেবীর প্রকাশ ঘটে। এটি বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী সড়কে তিন পাহাড়ের কোনে অবস্থিত।

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।

পুরান অনুসারে[সম্পাদনা]

চট্টেশ্বরী কালী মন্দির সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। সারা পৃথিবীতে সনাতন ধর্মের ৫১ পীঠের একটি চট্টেশ্বরী কালী মন্দির । দেশ-বিদেশের বহু সনাতন ধর্মের অনুসারীরা প্রতি বছর চট্টেশ্বরী কালী মন্দির পরিদর্শনে আসেন ও সেখানে দেবীর সন্তুষ্টির জন্য পূজা অর্চনা দিয়ে থাকেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের বাইরেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন সময়ে এ কালী মন্দির দর্শন করেন। সানতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, দেহত্যাগের পর দেবী সতীর শরীর যে ৫১ খণ্ড হয়ে যায় তার পাঁচটি খন্ড বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য অংশগুলো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান ও চীনে পড়ে।

শক্তি দেবী ও ভৈরব[সম্পাদনা]

দেবী চট্টেশ্বরী হলেন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা তথা কালী মাতার রূপ বিশেষ। মূল রাস্তা থেকে একটু উঁচুতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মধ্যের বাঁধানো চত্বরটির বামদিকে কালী মায়ের মন্দির ও ডানদিকে শিব ঠাকুরের মন্দির। যেটি একটি ভৈরবের প্রতীক , যা মাতা সতীর কুণ্ডকে প্রতিরক্ষা দান করে। শিব মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি কুন্ড।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথ

চট্টেশ্বরী মন্দিরের প্রথম কালী মাতার প্রতিমা নিয়ে কিংবদন্তি রয়েছে। ধর্মগ্রন্থ ও সেবাইতের ধারণা অনুযায়ী স্বপ্নাদিষ্ট কালীমাতার একটি নিমকাঠের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন খ্রিষাণগীর নামে জনৈক মহারাজ। মূর্তিটি দক্ষিণকালীর। যাঁর পুজো করলে জাগতিক ও পারমার্থিক সবরকম ফললাভ ও মনস্কামনা পূর্ন হয়।চট্টেশ্বরী মাতার সাধনা শুরু করেন চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালি থানার সরোয়াতলি গ্রামের অধিবাসী সাধক রামসুন্দর দেবশর্মণ। সাধনার পাশাপাশি মায়ের পুজোও নিয়মিত চলতে থাকে। কথিত আছে কবি নবীন চন্দ্র সেন (তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) এই সেবাপুজোর জন্য রামসুন্দর দেবশর্মণকে নগদ ৫০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা এই মন্দিরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মন্দিরের সেবায়েতের বাড়ি ও বিগ্রহ বিনষ্ট করা হয়।[২] শ্রীচট্টেশ্বরী মাতার প্রাচীন নিমকাঠের মূর্তিটি খণ্ডবিখণ্ড করেছিল। এরপর মূর্তিটির যে অংশগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, সেগুলি জোড়া দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর মন্দিরের সেবায়েত ডাঃ তারাপদ অধিকারী তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য মন্ত্রী তরুণ কান্তি ঘোষ এবং সনাতন ধর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতায় কষ্টি পাথরের কালী মাতার প্রতিমা ও শ্বেত পাথরের শিব বিগ্রহ পুনঃনির্মান করেন, যাতে ও বাংলাদেশ সরকারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে।

বিগ্রহ[সম্পাদনা]

চট্টেশ্বরী মন্দিরে দেবী কালীর বিগ্রহ

মায়ের শান্ত শ্রী। করুণাঘন দৃষ্টি। শ্রী চট্টেশ্বরীর বর্তমান মূর্তিটি কষ্টিপাথরের। শ্বেতপাথরের শিব মায়ের শ্রীচরণতলে। দামি দামি অলংকার শোভিতা মাতৃমূর্তি। নিত্যপুজো হয়।

পূজা[সম্পাদনা]

শ্যামাপুজো এই মন্দিরের প্রধান উৎসব।প্রতিদিন ভোর ৫টায় মন্দির খোলে। বন্ধ হয় রাত ১১টায়। দুপুরে ঘণ্টা দেড়েক মন্দির বন্ধ থাকে। বিজয়বাবুর পরিবারেরই চার-পাঁচজন পূজারি। ভক্তরা এই মন্দিরে মানতও করেন। শ্যামাপুজো এই মন্দিরের সবথেকে বড় উৎসব। আগে পুজোয় তিনশোর ওপর ছাগবলি হত। এখন বলির সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]