বিষয়বস্তুতে চলুন

সুগন্ধা শক্তিপীঠ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুগন্ধা শক্তিপীঠ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবরিশাল জেলা
উৎসবশিব চতুর্দশী
অবস্থান
অবস্থানশিকারপুর
দেশবাংলাদেশ
সুগন্ধা শক্তিপীঠ বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
সুগন্ধা শক্তিপীঠ
বাংলাদেশে অবস্থান
স্থানাঙ্ক২২°৪৯′৪৩″ উত্তর ৯০°১৫′৩০″ পূর্ব / ২২.৮২৮৬° উত্তর ৯০.২৫৮৪° পূর্ব / 22.8286; 90.2584
পীঠের দেবী উগ্রতারা

সুগন্ধা শক্তিপীঠ বাংলাদেশের বরিশালের ১০ মাইল উত্তরে শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত।[]হিন্দু মন্দিরটি শক্তিপীঠসমূহের অন্যতম।[]

এখানকার ভৈরব ত্র্যয়ম্বক, যার মন্দিরটি ঝালকাঠি থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে পোনাবালিয়ায় অবস্থিত। পোনাবালিয়া সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত শমরাইল গ্রামের অন্তর্গত।[] হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

প্রধান উৎসব হচ্ছে শিব-চতুর্দশী।

এছাড়াও মহাযোগী স্বামী দয়ানন্দ অবধূত এই পোনাবালিয়ার ভৈরব মন্দিরে কঠোর শিবসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। বর্তমানে এই ভৈরব মন্দিরটি শিববাড়ি নামে বিখ্যাত এবং শৈব অবধূতমার্গীগণের মিলনক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।

গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।[] এখানে দেবী জগদম্বা সতী দেবীর নাসিকা পতিত হয়েছিল । ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে এই শক্তিপীঠের নাম পাওয়া যায় । শিবচরিতে ও পীঠনির্ণয়তন্ত্রে এই সতী পীঠের কথা আছে ।

শক্তি দেবী ও ভৈরব

[সম্পাদনা]

ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে লেখা আছে –

সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা । ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা॥

এখানে দেবী সুনন্দা ও ভৈরব ত্র্যম্বক।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় পোনাবালিয়া ও সামরাইলের পাশ দিয়ে পবিত্র সুগন্ধা নদী প্রবাহিত হতো । কিন্তু কালের করাল গ্রাসে আজ সে নদী নাব্যতা, স্রোত হারিয়ে ক্ষীণ স্রোতা হয়েছে- যার নাম সোন্ধ । তবে মা কিন্তু এখনও আছেন। সুগন্ধা নদীর পূর্ব পাড়ে দেবীপীঠ পশ্চিম পাড়ে দেবীর ভৈরব ত্র্যম্বকেশ্বর বিরাজমান । একসময় এখানে গভীর জঙ্গল ছিল। দিনেরবেলাতেও লোকজন যেতে ভয় পেতেন । সেই সময় শিকারপুরের খুব ধনী ভূস্বামী শ্রীরাম রায় একদিন স্বপ্নে মহাদেবের আদেশ পেলেন । মহাদেব স্বপ্নে তাকে জানালেন–

“ তোমার রাজত্বের সামরাইলে জঙ্গলে এক ঢিপির মধ্যে আমি অবস্থান করছি। তুমি সেখান হতে আমাকে উদ্ধার করো। তোমার মঙ্গল হবে।”

স্বপ্ন দেখা মাত্রই পরদিন রাম রায় প্রচুর লোকজন নিয়ে সেই জঙ্গলে তল্লাশি করতে গেলেন । সে সময় জঙ্গলে কিছু রাখাল বালক গোরু চড়াচ্ছিল্ল। অত লোকজন পাইক পেয়াদা দেখে রাখাল বালক গণ ভয় পেয়ে পালাতে উদ্যত হলে রাম রায় অভয় দিয়ে বলল- “ওহে রাখাল বালক গন। আমাকে দেখে ভীত হয়ে পালানোর দরকার নেই, আমি এখানে জঙ্গলের মধ্যে কেবল একটি অলৌকিক ঢিপির খোঁজ করতে এসেছি।” রাখাল বালক গণ এইরকম একটা অলৌকিক ঢিপির সন্ধান জানতো । তারা একটা ঘটনা বলল। ঘটনা টা এই । রাখাল দের গোরু গুলো আগের মতো আর দুগ্ধ প্রদান করছিল না। গোরুর মালিক ভাবল রাখাল রাই নিশ্চয়ই দুধ চুরি করে গোরু চড়ানোর সময় । একদিন গোরুর মালিক ভাবল হাতে নাতে চোর গুলোকে ধরবে । তারপর রাজার কাছে নালিশ জানাবে । এই ভেবে একদিন মালিক রাখাল দের পিছু নিলো চুপিসারে । জঙ্গলে গোরু গুলো যখন তৃন খাচ্ছিল্ল- মালিক লুকিয়ে দেখছিল। হঠাত মালিক দেখলো গোরু গুলো একে একে জঙ্গলে ঢুকে একটা উচু ঢিপিতে নিজেরাই বাঁট থেকে দুধ দিচ্ছে। মালিক ভাবল গোরু গুলো এমন করছে কেন? ঐ ঢিপিতে কি আছে ? ভেবে মালিক নিজে জঙ্গলের শুকনো কাঠ খড় জোগার করে ঐ ঢিপিতে আগুন ধরিয়ে দিলো । লেলিহান আগুনের শিখা যখন লকলক করে উঠছিল- মালিক দেখলো একটি কৃষ্ণ বর্ণা বালিকা সেই ঢিপি থেকে দৌড়ে পাশে জলাশয়ে প্রবেশ করলো । রাখাল দের কাছে এই শুনে ধনী রাম রায় সেই ঢিপির কাছে পৌছে খনন করার আদেশ দিলো। খনন করতেই লিঙ্গ মূর্তি বের হল । রাম রায় ভাবল এই লিঙ্গ তিনি গৃহে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে নিত্যসেবা করবেন । কিন্তু আশ্চর্য কত শত লোক মিলেও সেই লিঙ্গ তুলতে পারলো না । সেইদিন রাতে ভগবান ভোলানাথ আবার রাজাকে স্বপ্নে বললেন- ‘আমাকে ঐখানেই প্রতিষ্ঠা করো । মনে রাখবে আমার বিহারের স্থানে কোনো আচ্ছাদন থাকবে না।’ বিত্তশালী রাম রায় সেই ভাবেই বাবাকে স্থাপন করে নিত্য পূজার ব্যবস্থা করলেন ।

অপরদিকে আর একটি ঘটনা । শিকারপুর গ্রামে পঞ্চানন চক্রবর্তী নামে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বাস করতো । সে ছিল সৎ, ধার্মিক, মানব প্রেমিক। একদা স্বপ্নে মা কালী তাকে দর্শন দিয়ে বললেন- “সুগন্ধার গর্ভে আমি শিলারূপে বিরাজিতা আছি। তুমি আমাকে সেখান থেকে তুলে এনে প্রতিষ্ঠা ও পূজোর ব্যবস্থা করো।” চক্রবর্তী মশাই সেই স্বপ্নাদেশে দেখানো জায়গা থেকে মায়ের পাষাণ মূর্তি তুলে প্রতিষ্ঠা ও নিত্য পূজা করতে লাগলেন । গ্রামের লোকেরা এসে যে যা পারে- তাই দিয়ে মায়ের সেবা করতে লাগলো ।

মূর্তি

[সম্পাদনা]

কথিত আছে যে ৬১৭ সনে জনৈক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নদীগর্ভ থেকে দেবী উগ্রতারার মূর্তি উদ্ধার করেন । তাকেই দেবী সুগন্ধা রূপে পূজা করা হয় । দেবী খড়্গ, খেটক, নীলপদ্ম, নর মুণ্ডের কঙ্কাল ধারণ করে আছেন । মাথার ওপর কার্ত্তিক, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, গণেশ বিরাজমান । ১২৯১ সনে (১৮৮৫ সালে) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় সেই মূর্তি স্থানীয় মুসলমানদের দ্বারা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল । এরপর ১৩১৯ সনে (১৯১৩ সালে) আদি মূর্তির আদলে গঠিত প্রতিভূ মূর্তি স্থাপিত হয় ।[] সেই মূর্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা খণ্ডিত হয়েছিল ।[] বর্তমানের মূর্তি আধুনিক কালের নির্মিত ।

মন্দির

[সম্পাদনা]

সুগন্ধা শক্তিপীঠের দেবীর প্রাচীন মন্দির এখন আর নেই। এখন যেটা আছে সেটা নবনির্মিত ।

বৌদ্ধ তন্ত্রে তারা সাধনার বিশেষ প্রণালী দেখা যায়- সেই মতেই তারা মায়ের উপাসনা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Sugandha Shakti Peeth (Bangladesh)"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১২ 
  2. বাংলাপিডিয়া থেকে প্রবন্ধ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে
  3. "www.vedarahasya.net/docs/Shakti.pdf" (পিডিএফ)। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. http://www.sacred-texts.com/tantra/maha/maha00.htm
  5. Puttundu, Vrindabanchandra (২০০০)। Brihattara Bakarganjer Itihas 
  6. গুপ্ত, সুমন (২০১৫)। বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে। ২০৯এ, বিধান সরণি, কলকাতা - ০০৬: দীপ প্রকাশন। আইএসবিএন ৯৭৮৯৩৮৪৫৬১৪১৩ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)