ত্রিমূর্তি
ত্রিমূর্তি | |
---|---|
মহাবিশ্ব ও অস্তিত্বের প্রাণী সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও ধ্বংসের সর্বোচ্চ দেবতা | |
অন্তর্ভুক্তি | |
আবাস | |
মন্ত্র | ওঁ ত্রিদেবায় নমঃ |
অস্ত্র |
|
বাহন | |
সঙ্গী | ত্রিদেবী বিশেষভাবে: |
ত্রিমূর্তি শব্দের অনুবাদসমূহ | |
---|---|
বাংলা | ত্রিমূর্তি |
সংস্কৃত | त्रिमूर्ति |
ইংরেজি | Three forms or Trinity |
গুজরাটি | ત્રિમૂર્તિ |
হিন্দি | त्रिमूर्ति |
জাভীয় | ꦠꦿꦶꦩꦸꦂꦠꦶ |
কন্নড় | ತ್ರಿಮೂರ್ತಿ |
মালয়ালম | ത്രിമൂർത്തികൾ |
মারাঠি | त्रिमूर्ती |
নেপালি | त्रिमूर्ति |
ওড়িয়া | ତ୍ରିମୂର୍ତ୍ତି |
পাঞ্জাবি | ਤ੍ਰੀਮੂਰਤੀ |
তামিল | மும்மூர்த்தி |
তেলুগু | త్రిమూర్తులు |
হিন্দুধর্মের প্রবেশদ্বার |
ত্রিমূর্তি (সংস্কৃত: त्रिमूर्ति) বা ত্রিদেব হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ তিন দেবতা,[১][২][৩][৪][৫] সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও ধ্বংসের মহাজাগতিক কার্যগুলিকে দেবতাদের ত্রয়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সাধারণত ব্রহ্মা স্রষ্টা, বিষ্ণু রক্ষক এবং শিব বিধ্বংসী।[৬][৭]
কিংবদন্তি যোগী দত্তাত্রেয়কে প্রায়শই বিষ্ণুর ২৪ অবতারের মধ্যে একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, কিন্তু শিব ও ব্রহ্মার পাশাপাশি একক তিন মাথার শরীরে।[৮] হিন্দুধর্মের ওঁ প্রতীককে ত্রিমূর্তীর ইঙ্গিত বলে মনে করা হয়।[৯] ত্রিদেবী হলেন প্রধান দেবত্রয় "ত্রিমূর্তি"র তিনজন পত্নী।[১০]
ক্রমবিকাশ
[সম্পাদনা]৪র্থ থেকে ১২শ শতক খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৌরাণিক যুগে উত্তর-বৈদিক ধর্মের উত্থান এবং রমেশচন্দ্র মজুমদার যাকে "সমন্বয়ী হিন্দুধর্ম" বলে অভিহিত করেছেন তার বিবর্তন দেখেছে।[১১]
এই সময়কালের কোন একজাতীয়তা ছিল না, এবং পুরানো বৈদিক বিশ্বাসের ঐতিহ্যের অবশিষ্টাংশের আকারে নৈষ্ঠিক ব্রাহ্মণ্যবাদ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ধর্মের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিল, বিশেষ করে শৈবধর্ম, বৈষ্ণবধর্ম, এবং শাক্তধর্ম যেগুলি নৈষ্ঠিক ধারার মধ্যে থেকেও স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করেছিল।[১২] এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নৈষ্ঠিক এবং সাম্প্রদায়িক রূপের মধ্যে সম্প্রীতির মনোভাব।[১৩] এই পুনর্মিলনের চেতনা সম্পর্কে, রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন যে:
এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিব্যক্তিটি ত্রিমূর্তীর ধর্মতাত্ত্বিক ধারণায় পাওয়া যায়, অর্থাৎ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের তিনটি রূপে পরম ঈশ্বরের প্রকাশ...কিন্তু প্রচেষ্টাটিকে মহান সাফল্য হিসাবে গণ্য করা যায় না, কারণ ব্রহ্মা কখনই শিব বা বিষ্ণুর সাথে তুলনীয় উচ্চতা অর্জন করেননি, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রায়ই ত্রিমূর্তিকে তাদের নিজস্ব সাম্প্রদায়িক দেবতার তিনটি প্রকাশ হিসাবে কল্পনা করত, যাকে তারা ব্রহ্ম বা পরম বলে মনে করত।[১৪]
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে এক সত্তা হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়ে কূর্মপুরাণে জোরালোভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ১.৬ ব্রহ্মকে ত্রিমূর্তি হিসেবে পূজা করার কথা উল্লেখ করে; ১.৯ বিশেষ করে তিনটি দেবতার ঐক্যকে বোঝায় এবং ১.২৬ একই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।[১৫]
পুরাণে ধারণাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে:
স্রষ্টা নিজেকেই সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু নিজেই পাল্য এবং পালক, হরি স্বয়ং প্রলয়কালে নিজেকে উপসংহৃত করেন এবং সংহারও করেন। হরি স্বয়ং ব্রহ্মা হয়ে জগৎ সৃষ্টি করেছেন, বিষ্ণুরূপে জগৎ পালন করেন এবং রূদ্ররূপে কল্পান্তে প্রভু জগৎ সংহার করেন।
— গরুড় পুরাণ, ৪।১১,১২
ত্রিমূর্তি ধারণার প্রতি পাশ্চাত্যের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে, ঐতিহাসিক আর্থার লেভেলিন বাশাম ত্রিমূর্তিটির পটভূমি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে:
বিষ্ণু ও শিবকে যেভাবে কল্পনা করা হয়েছে এবং পূজা করা হয়েছে সেভাবে হিন্দু ঐতিহ্য ব্রহ্মাকে পরম দেবতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কিনা তা নিয়ে অবশ্যই সন্দেহ আছে।[১৬]
ত্রিমূর্তি ধারণাটি মৈত্রী উপনিষদেও রয়েছে, যেখানে তিন দেবতাকে তাঁর তিনটি সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[১৭]
ত্রিমূর্তি মন্দির
[সম্পাদনা]৯ম শতাব্দীর প্রধান তিনটি টাওয়ার প্রম্বানান ত্রিমূর্তি মন্দির কমপ্লেক্স, ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম হিন্দু মন্দির সাইট।
ত্রিমূর্তির বিভিন্ন স্থানান্তরের জন্য নিবেদিত মন্দিরগুলি খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম দিকে দেখা যায় এবং এখনও কিছু মন্দির রয়েছে যেখানে ত্রিমূর্তি সক্রিয়ভাবে পূজীত হয়।
- বাড়োলি ত্রিমূর্তি মন্দির
- এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ
- মিত্রানন্দপুরং ত্রিমূর্তি মন্দির
- প্রাম্বানান মন্দির
- পশ্চিম চালুক্য স্থাপত্য
- থ্রিপায়া ত্রিমূর্তি মন্দির
- তিরুমূর্তি পাহাড়
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Trimurti" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে. Random House Webster's Unabridged Dictionary.
- ↑ Grimes, John A. (১৯৯৫)। Ganapati: Song of the Self। SUNY Series in Religious Studies। Albany: State University of New York Press। আইএসবিএন 0-7914-2440-5।
- ↑ Jansen, Eva Rudy (২০০৩)। The Book of Hindu Imagery। Havelte, Holland: Binkey Kok Publications BV। আইএসবিএন 90-74597-07-6।
- ↑ Radhakrishnan, Sarvepalli (Editorial Chairman) (১৯৫৬)। The Cultural Heritage of India। Calcutta: The Ramakrishna Mission Institute of Culture।
- ↑ Winternitz, Maurice (১৯৭২)। History of Indian Literature। New Delhi: Oriental Books Reprint Corporation।
- ↑ For quotation defining the trimurti see Matchett, Freda. I real all the three deities are avatar of Shiva. The Brahma is "Swetamber"(one who wears white clothes), Maha Vishnu is "Pitamber" (one who wears yellow/red/orange clothes) and the Shiva is "Digamber/Vaagamber"(one who doesn't wears any cloth, only the skin of tiger). "The Purāṇas", in: Flood (2003), p. 139.
- ↑ For the Trimurti system having Brahma as the creator, Vishnu as the maintainer or preserver, and Shiva as the destroyer. see Zimmer (1972) p. 124.
- ↑ Mhatre, Sandeep। "Datta Sampradaay and Their Vital Role"। Swami Samarth temple। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Young Scientist: A Practical Journal for Amateurs। Industrial Publication Company.। ১৮৫২।
- ↑ Bahubali। "Tridevi – the three supreme Goddess in Hinduism"। Hindufaqs.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০১।
- ↑ For dating of Puranic period as c. CE 300–1200 and quotation, see: Majumdar, R. C. "Evolution of Religio-Philosophic Culture in India", in: Radhakrishnan (CHI, 1956), volume 4, p. 47.
- ↑ For characterization as non-homogeneous and including multiple traditions, see: Majumdar, R. C. "Evolution of Religio-Philosophic Culture in India", in: Radhakrishnan (CHI, 1956), volume 4, p. 49.
- ↑ For harmony between orthodox and sectarian groups, see: Majumdar, R. C. "Evolution of Religio-Philosophic Culture in India", in: Radhakrishnan (CHI, 1956), volume 4, p. 49.
- ↑ For quotation see: see: Majumdar, R. C. "Evolution of Religio-Philosophic Culture in India", in: Radhakrishnan (CHI, 1956), volume 4, p. 49.
- ↑ For references to Kūrma Purana see: Winternitz, volume 1, p. 573, note 2.
- ↑ Sutton, Nicholas (২০০০)। Religious doctrines in the Mahābhārata (1st সংস্করণ)। Delhi: Motilal Banarsidass Publishers। পৃষ্ঠা 182। আইএসবিএন 81-208-1700-1।
- ↑ "Brahma, Rudra, and Vishnu are called the supreme forms of him. His portion of darkness is! Rudra. His portion of passion is Brahma. His portion of purity is Visnu"—Maitri Upanishad [5.2]
উৎস
[সম্পাদনা]- Basham, A. L. (১৯৫৪)। The Wonder That Was India: A Survey of the Culture of the Indian Sub-Continent Before the Coming of the Muslims। New York: Grove Press।
- Courtright, Paul B. (১৯৮৫)। Gaṇeśa: Lord of Obstacles, Lord of Beginnings। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-505742-2।
- Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-43878-0।
- Flood, Gavin, সম্পাদক (২০০৩)। The Blackwell Companion to Hinduism। Malden, MA: Blackwell Publishing। আইএসবিএন 1-4051-3251-5।
- Zimmer, Heinrich (১৯৭২)। Myths and Symbols in Indian Art and Civilization। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-01778-6।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |