নিত্যকর্ম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেদ পাঠশালার ছাত্ররা তামিলনাড়ুর নাচিয়ার কোভিল, কুম্বকনম -এ সন্ধ্যাবন্দনম্ করছে।

নিত্যকর্ম (সংস্কৃত: नित्यकर्म) হলো সেই কর্ম বা আচার যা প্রতিদিন সম্পাদন করা প্রয়োজন।[১] এটি মূলত বাধ্যতামূলক বৈদিক কর্তব্যকে বোঝায় যা দৈনন্দিন অনুশীলনের জন্য নির্ধারিত।[২][৩] এটি হল নিসিদ্ধকর্ম ও কাম্যকর্ম সহ মীমাংসা দর্শন দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ তিনটি আচারিক কর্মের মধ্যে একটি।[৪] এটি শৈবসিদ্ধান্ত দর্শনেও বৈশিষ্ট্যযুক্ত।[৫]

নিত্যকর্ম হলো পরম পবিত্র কর্ম, আর শরীরই হচ্ছে ধর্মের মূল আধার - 'শরীরম্ আদ্যং খলু ধর্মসাধনম্'। এটি দুটি সংস্কৃত শব্দ নিয়ে গঠিত- নিত্য (সর্বদা) ও কর্ম (আচরণ বা কর্তব্য)। [৬] এটির অর্থ শুধু দৈনন্দিন কর্তব্য নয়, এতে নিয়মিত বা পর্যায়ক্রমিক নির্ধারিত কার্যক্রম বা দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৬]

শ্রেণিবিভাগ[সম্পাদনা]

শাস্ত্রে নিত্যকর্মসমূহকে ছয় ভাগে ভাগ করেছে। যথা: প্রাতঃকৃত্য, পূর্বাহ্ণকৃত্য, মধ্যাহ্নকৃত্য, অপরাহ্নকৃত্য, সায়াহ্নকৃত্য ও রাত্রিকৃত্য।

প্রাতঃকৃত্য[সম্পাদনা]

সূর্য ওঠার পূর্বে বা আগে ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপরে পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসতে হয়। এরপর ঈশ্বর বা দেব-দেবীদের স্মরণ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়।

প্রাতঃকৃত্য মন্ত্রসমূহ[সম্পাদনা]

  • বিছানায় বসে: ব্রহ্ম মুরারি স্ত্রিপুরান্তকারী ভানুঃ শশী ভূমিসুতো বুধশ্চ শুক্র শনি রাহু কেতুস্তু কুর্বন্তু সর্বে মম সুপ্রভাতম।।
  • অতপর পূর্বমুখী হয়ে মাটি স্পর্শ করে: ওঁ প্রিয়দত্তায়ৈ ভূম্যৈ নমঃ।
  • ঘর থেকে বের হয়ে: ওঁ জবা কুসুম সস্কাংশ কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহষ্মি দিবাকরম্।

পূর্বাহ্ণকৃত্য[সম্পাদনা]

প্রাতঃকৃত্যের পরে এবং দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত যেসব কাজ করা হয় তাই পূর্বাহ্ণকৃত্য। পূর্বাহ্ণকৃত্যসমূহ হলো: প্রার্থনা, উপাসনাপূজা

প্রার্থনামূলক মন্ত্র[সম্পাদনা]

হিন্দুধর্মে অনেক ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত, ভগবদ্গীতা, শ্রীশ্রীচণ্ডী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরের স্তব ও প্রার্থনামূলক অনেক মন্ত্রশ্লোক রয়েছে।

বৈদিক সাহিত্য[সম্পাদনা]

ঋগ্বেদ

ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।

সর্বলোকের প্রকাশক সর্বব্যাপী সবিতা মণ্ডল জগৎ প্রসবকারী সেই পরম দেবতার বরেণ্য জ্ঞান ও শক্তি ধ্যান করি; যিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি প্রদান করেছেন।

সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাত।
স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বা অত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গলম্।।

পরম পুরুষ বা ঈশ্বরের সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু ও সহস্র চরণ। তিনি জগৎকে সর্বত্র অতিক্রম করে দশ অঙ্গুলি পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে অবস্থান করেন।

— ঋগ্বেদ, ১০.৯০.১[১২][১৩]

যজুর্বেদ

দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষন্তাম্। মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।
মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে।।

হে ঈশ্বর, আমাকে এমন দৃঢ় কর যাতে সকল প্রাণী আমাকে বন্ধুর চোখে দেখে। আমিও তাদের বন্ধুর চোখে দেখি। আমরা সকলেই যেন পরস্পরকে বন্ধুর চোখে দেখি।

উপনিষদ[সম্পাদনা]

বৃহদারণ্যক উপনিষদ

অসতো মা সদ্গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।
ওঁ শান্তি, শান্তি, শান্তি।

অসত্য থেকে সত্যের দিকে নিয়ে যাও।
অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাও।
মৃত্যু থেকে আমাদের অমরত্বের দিকে নিয়ে যাও।
ওঁ শান্তি, শান্তি, শান্তি।

ঈশোপনিষদ

ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্।।

ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু অনিত্য বস্তু আছে, তা ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত। উত্তমরূপ ত্যাগের সঙ্গে ভোগ করবে, কারও ধনে লোভ করবে না।

— ঈশোপনিষদ, স্তোত্র ১[১৭][১৮]

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ

যস্মাৎ পরং নাপরমস্তি কিঞ্চিদ্
যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কিঞ্চিৎ।
বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেক -
স্তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম্।।

যা থেকে উৎকৃষ্ট আর কিছু নেই, যা থেকে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই, যে অদ্বিতীয় পরমাত্মা বৃক্ষের ন্যায় নিশ্চলভাবে স্বমহিমায় বিরাজিত, সেই পরমপুরুষের দ্বারাই সমস্ত জগৎ পরিব্যাপ্ত।

গোপালতাপনী উপনিষদ

কেশব ক্লেশহরণ নারায়ণ জনাৰ্দ্দন।
গোবিন্দ পরমানন্দ মাং সযুদ্ধর
মাধব॥

হে কেশব, হে ক্লেশ বিনাশকারী, হে নারায়ণ, হে জনার্দন, হে গোবিন্দ-পরমানন্দ, হে মাধব আমাকে উদ্ধার কর।

ভগবদ্গীতা[সম্পাদনা]

न हि ज्ञानेन सदृशं पवित्रमिह विद्यते। तत्स्वयं योगसंसिद्ध: कालेनात्मनि विन्दति॥ ३८ ॥

ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।
তৎ স্বয়ং যোগসংসিদ্ধঃ কালেনাত্মনি
বিন্দতি।।

এই জগতে জ্ঞানের তুল্য পবিত্র আর কিছু নেই। যোগসিদ্ধগণ যথাসময়ে সে জ্ঞানকে নিজ আত্মাতে অনুভব করেন।

পরবর্তী শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে,

श्रद्धावाँल्ल‍भते ज्ञानं तत्परः संयतेन्द्रियः। ज्ञानं लब्ध्वा परां शान्तिमचिरेणाधिगच्छति॥ ३९ ॥

শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ।
জ্ঞানং লব্ধা পরাং পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি।।

শ্রদ্বাবান, একনিষ্ঠ এবং জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে থাকেন। জ্ঞান লাভ করার পর শীঘ্র তিনি পরম শান্তি পেয়ে থাকেন।

শ্রীশ্রীচণ্ডী[সম্পাদনা]

প্রার্থনামূলক মন্ত্র হিসেবে শ্রীশ্রীচণ্ডীর উল্লেখযোগ্য স্তোত্রগুলো নিন্মে দেয়া হলো:

সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থ - সাধিকে শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোস্তুতে।।

হে দেবী শিবের পত্নী সকল মঙ্গলে তুমি মঙ্গল স্বরূপা, কল্যাণদাত্রী, সর্বসিদ্ধি প্রদায়িনী, আশ্রয়দাত্রী, ত্রিনয়না, গৌরবর্ণা, নারায়ণী তোমাকে প্রনাম জানাই।

সর্বভূতা যদা দেবী
স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী।

ত্বং স্তুতা স্তুতয়ে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ।।

তুমি সর্বস্বরূপা দেবী, তুৃমি স্বর্গ এবং মুক্তি দান করে থাক। কাজেই তোমাকে স্তব করতে হলে কোন শ্রেষ্ঠ বা পরম বাক্য তোমার স্তবের জন্য যোগ্য হবে।

সর্বভূতা যদা দেবী
স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী।

ত্বং স্তুতা স্তুতয়ে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ।।

তুমি সর্বস্বরূপা দেবী, তুৃমি স্বর্গ এবং মুক্তি দান করে থাক। কাজেই তোমাকে স্তব করতে হলে কোন শ্রেষ্ঠ বা পরম বাক্য তোমার স্তবের জন্য যোগ্য হবে।

মধ্যাহ্নকৃত্য[সম্পাদনা]

পূর্বাহ্ণের পরে অর্থাৎ স্নান, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া এবং বিশ্রাম করা হলো মধ্যাহ্নকৃত্য।

মধ্যাহ্নকৃত্য মন্ত্রসমূহ[সম্পাদনা]

স্নান মন্ত্র (যেকোনো সময়)
  • স্নানের পূর্বে: ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরি সরস্বতী।
    নর্ন্মদে সিন্ধো কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।।
  • স্নানের সময়: ওঁ কুরুক্ষেত্রং গয়া গঙ্গা প্রভাসপুষ্করাণি চ।
    তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি প্রাতঃস্নানকালে ভবন্ত্বিহ।।
    অথবা, ওঁ শংনো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে।
    শংয়োরভি স্রবন্তু নঃ।। (ঋগ্বেদ ১০.৯.৪)
বিশ্রাম নেয়ার মন্ত্র
  • শান্তানি পূর্ব রূপাণি শান্তংনোস্তু কৃতাকৃতম্।
    শান্তং ভূতং চ ভব্যঞ্চ সর্বমেব শমস্তুনঃ।। (অথর্ববেদ ১৯.৯.২)

অপরাহ্নকৃত্য[সম্পাদনা]

দুপুরের পর এবং সায়াহ্নের পূর্ব পর্যন্ত যে কাজ করা হয়, তাকেই অপরাহ্নকৃত্য বলা হয়। এ সময়ে বিনোদনমূলক কাজ করা উচিত।

সায়াহ্নকৃত্য[সম্পাদনা]

সায়াহ্ন মানে সন্ধ্যা। সন্ধ্যাকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হয়। তারপর স্তব-স্তুতি বা ভক্তিমূলক গান গেয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে।

রাত্রিকৃত্য[সম্পাদনা]

সন্ধ্যার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কাজকে রাত্রিকৃত্য বা নৈশকৃত্য বলা হয়। এ সময় অধ্যায়ন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করা হয়। তারপর ঘুমাতে হয়।

রাত্রিকৃত্য মন্ত্রসমূহ[সম্পাদনা]

শয়নের পূর্বে মন্ত্র
  • বিছানায় বসে: ওঁ যজ্জাগ্রতো দূর মুদৈতি দৈবং তদুসুপ্তস্য।
    তষ্মে মনঃ শিব সংকল্প মস্ত।।
  • ঘুমানোর সময়ে: ওঁ শ্রী পদ্মনাভায় নমো নমঃ।
    অথবা, ত্বয়ি রাত্রি বসামসি স্বপিষ্যামসি জাগৃহি।
    গোভ্যোনঃ শর্ম য়চ্ছাশ্বেভ্যঃ পুরুষেভ্য।।
    (অথর্ববেদ ১৯.৪৭.৯)

কর্মসমূহ[সম্পাদনা]

হিন্দু মন্দিরে "পঞ্চামৃত" সহ অভিষেকের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

হিন্দুধর্মে নিত্যকর্মের তালিকা ও পদ্ধতি সম্প্রদায়ের উপর নির্ভরশীল। নিন্মে নিত্যকর্মের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

  • স্নানযাত্রা: স্নান (অভিষেক) ; যে দেবতার উপাসনা করা হয় তাঁর স্নান করানো।[২৩]
  • সন্ধ্যাবন্দনা: দিনের উদ্বোধনী ও বন্ধের সময়ে সম্পাদিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান।[৬] সন্ধ্যাবন্দনা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান যা ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দুদের দ্বিজ সম্প্রদায় দ্বারা করা উচিত।[২৪][২৫]
  • উপাসনা: বৈবাহিক আগুন জ্বলন্ত রাখা।[৬] উপাসনা হল একটি যজ্ঞ যা বিবাহীত দীক্ষিত হিন্দুদের দ্বারা প্রতিদিন সম্পাদিত হয়।[২৬]
  • প্রার্থনা: প্রার্থনা হিন্দুধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়; এটি হিন্দু উপাসনার সময় অনুশীলন করা হয় এবং এটি ভক্তি প্রকাশ। মন্ত্র জপ হিন্দুধর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপাসনা। যোগ ও ধ্যানকেও ভক্তিমূলক সেবার রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • অগ্নিহোত্র: উত্তপ্ত দুধের নৈবেদ্য।[৬] অগ্নিহোত্র কঠোর রীতি অনুসারে পবিত্র আগুনে ঘি ঢালার যজ্ঞকে বোঝায়, এবং শরৌত ঐতিহ্য অনুসারে তাদের দ্বারা প্রতিদিন দুবার উত্তপ্ত দুধের নৈবেদ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।[২৭]
  • দেবতার্চনা: পূজা ; গৃহে বা মন্দিরে নিত্যপূজা, উৎসব উপলক্ষে বিশেষ পূজা অথবা যাত্রা বা কার্যারম্ভের পূর্বে কৃত পূজা ইত্যাদি।[২৮]

প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থের লেখক, পরাশরের মতে, ছয়টি কাজকে নিত্যকর্ম বলে গণ্য করা হয়:[২৯]

পঞ্চ নিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

পঞ্চ নিত্যকর্ম সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ, "প্রত্যেক হিন্দুর পাঁচটি চিরস্থায়ী কর্তব্য।"[৩৩] এই মহৎ ধর্মীয় নীতি অনুসারে জীবন যাপন করে, আমরা আমাদের ধর্মীয় জীবনকে আধ্যাত্মিক করি এবং আমাদের নিজস্ব ঐশ্বরিক স্বরূপ উপলব্ধি করি।[৩৩] পঞ্চ নিত্যকর্মগুলো হলো:

  1. উপাসনা: বাড়িতে বা মন্দিরে বেদীতে পূজা।[৩৩]
  2. উৎসব: পবিত্র দিন।[৩৩]
  3. ধর্ম: পুণ্যময় জীবন যাপন।[৩৩]
  4. তীর্থযাত্রা: দর্শনের মাধ্যমে পবিত্র ব্যক্তিদের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও অনুপ্রেরণা লাভের লক্ষ্যে শিশুদের পবিত্র স্থান ও মন্দিরগুলিতে তীর্থযাত্রা করার মূল্য প্রকাশ করা হয়।[৩৩]
  5. সংস্কৃতি: আচারউত্তরণের আচার[৩৩]

আরও কিছু নিত্যকর্ম ও আচার মন্ত্র[সম্পাদনা]

নিত্যকর্ম ও আচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মন্ত্র[৩৪]
ক্ষেত্র মন্ত্র
কাজ শুরুর মন্ত্র ওঁ তৎ সৎ (তিন বার)
যাত্রা মন্ত্র ওঁ শ্রী বামনায় নমঃ
অথবা
ওঁ স্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিক।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্ততে।।
অথবা
দুর্গা, দুর্গা, দুর্গা
শৌচাগারে প্রবেশে মন্ত্র (যেকোনো সময়) ওঁ আজ্ঞা কুরু বসুন্ধরা
আহার মন্ত্র (যেকোনো সময়)
  • শুরুতে: ওঁ অন্নপতেহন্নস্য নো দেহ্যনমীবাস্য শুষ্মি নঃ।
    প্র-প্রদাতারং তারিষ ঊর্জং নো দেহী দ্বিপদে চতুষ্পদে।। (যজুর্বেদ ১১। ৮৩)
    অথবা, ওঁ শ্রী জনার্দ্দনায় নমঃ।
  • শেষে: ওঁ মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ ইৎস তস্য।
    নার্য়মণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।। (ঋগ্বেদ ১০।১১৭।৬)
    অথবা, ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
অধ্যয়ন মন্ত্র ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।।
অথবা, ওঁ মেধাং মে বরুনো দাদাতি মেধাগ্নিঃ প্রজাপতিঃ।
মেধামিন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ মোধাং দাতা দাদাতি মে স্বাহা।।
সু-সংবাদে মন্ত্র ওঁ য একবর্ণ বহূধা শক্তি যোদাগ বর্ণান্ অনেকান নিহিতার্থে দধ্যাতি।
বিচৈতি চান্তে বিশ্বামাদৌ স দেবঃ স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনক্তু।।
অথবা
ওঁ শুভ মস্তু ।
ওঁ শুভ ভবতু।।
দুঃ-সংবাদে মন্ত্র ওঁ আপদং অপবাদশ্চ অপসরঃ।।
মৃত্যু-সংবাদে মন্ত্র প্রেহি প্রেহি পথিভিঃ পূর্ব্যেভির্য়ত্রা নঃ পূর্বে পিতরঃ পরেয়ুঃ।
উভা রাজানা স্বধয়া মদন্তা য়মং পশ্যাসি বরুণং চ দেবং।।
(ঋগ্বেদ ১০.১৪.৭)
অথবা
সং গচ্ছস্ব পিতৃভিঃ সং য়মেনেষ্টাপূর্ত্তেন পরমে ব্যোমন্।
হিত্বায়াবদ্যং পুনরস্তমেহি সং গচ্ছস্ব তন্বা সুবর্চাঃ।
(ঋগ্বেদ ১০.১৪.৮)
অথবা
ওঁ তস্য আত্মানস্য সদ্গতি ভব।
অথবা
দিব্যান্ লোকান স্ গচ্ছতু।
জন্মসংবাদে মন্ত্র ওঁ আয়ুষ্মান ভব (ছেলের ক্ষেত্রে)
ওঁ আয়ুষ্মতী ভবঃ (মেয়ের ক্ষেত্রে)
বিপদের মন্ত্র ওঁ মধুসুদনায় নমঃ
গৃহে প্রবেশেকালে মন্ত্র ওঁ বাস্তুপুরুষায় নমঃ
বিবাহসংবাদে মন্ত্র ওঁ প্রজাপতায় নমঃ
ঔষধ সেবনকালে মন্ত্র ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু
মৃত্যুকালে মন্ত্র ওঁ তৎ সৎ
অথবা
ওঁ নারায়ণ
খারাপ স্বপ্ন দেখলে মন্ত্র ওঁ গোবিন্দায় নমঃ
প্রিয়া সঙ্গমের মন্ত্র ওঁ রাধায় নয়ঃ
ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রা মন্ত্র পূর্বাপরং চরতো মায়য়ৈতৌ শিশুক্রীড়ান্তৌ পরিয়াতৌ অর্ণবম্।
বিশ্বান্যো ভুবনাবিচষ্ট ঋতুরণ্যো বিদধৎ জায়সে নবঃ।। (অথর্ববেদ ৭.৮১.১)
বাড়ি থেকে পদব্রজে গমন মন্ত্র কৃষ্ণ কেশব, কৃষ্ণ কেশব, কৃষ্ণ কেশব ত্রাহি মাং।
রাম রাঘব, রাম রাঘব, রাম রাঘব রক্ষ মাং।।
যানবাহন আরোহনকালে মন্ত্র ওঁ নারায়ণ
কোন কারণে ভীত হলে মন্ত্র রাম, রাম, রাম
অথবা
ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু
কারো কুকর্ম সম্পর্কে শুনলে মন্ত্র রাম, রাম, রাম
অথবা
ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু
প্রবাসে যাওয়ার মন্ত্র ওঁ ত্রিবিক্রম
রোগ হতে আরগ্য মন্ত্র ওঁ প্রসীদ পরমানন্দ প্রসীদ পরমেশ্বর।
আধি-ব্যাধি ভূজাঙ্গনে দষ্টং মামুদ্ধর প্রভো।।
যুদ্ধকালে মন্ত্র ওঁ চক্রধর
বনপথে গমনকালে মন্ত্র ওঁ নৃসিংহদেব
অগ্নিভয়ে মন্ত্র ওঁ জকলাশায়িনম্
বিবাহ মন্ত্র ওঁ প্রজাপতে
পর্বত আরোহন মন্ত্র ওঁ রঘুনন্দনম
কোন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ মন্ত্র দুই হাত জোড় করে বুকের কাছে হাত নিয়ে এসে "নমস্কার"
তারপরে,
নমস্তে অস্তু আয়তে নমো অস্তু পরায়তে
নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠত আসীনায়োততে নমঃ।। (অথর্ববেদ ১১.২.১৫)
সর্বকার্যে মন্ত্র হরে কৃষ্ণ
অথবা
ওঁ মাধব
জলপান করার মন্ত্র ওঁ ইদমাপঃ প্রবহত য়ৎ কিষ্ণ দুরিতং ময়ি।
য়দ্বাহমভিদুদ্রোহ য়দ্বাশেপ উতান্তম্।। (ঋগ্বেদ ১.২৩.২২)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ruhela, Satya Pal (২০০০)। The spiritual philosophy of Sri Shirdi Sai Baba। Diamond Pocket Books (P) Ltd.। পৃষ্ঠা 82। আইএসবিএন 81-7182-090-5 
  2. Grimes, John A. (১৯৯৬-০১-০১)। A Concise Dictionary of Indian Philosophy: Sanskrit Terms Defined in English (ইংরেজি ভাষায়)। SUNY Press। পৃষ্ঠা 211। আইএসবিএন 978-0-7914-3067-5 
  3. Besser-Jones, Lorraine; Slote, Michael (২০১৫-০২-২০)। The Routledge Companion to Virtue Ethics (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 978-1-135-09668-7 
  4. Cush, Denise; Robinson, Catherine; York, Michael (২০১২-০৮-২১)। Encyclopedia of Hinduism (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 505। আইএসবিএন 978-1-135-18979-2 
  5. Flood, Gavin; Flood, Professor of Hindu Studies and Comparative Religion Gavin (জুলাই ২০২০)। The Oxford History of Hinduism: Hindu Practice (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 245। আইএসবিএন 978-0-19-873350-8 
  6. Nitya Karma
  7. The Rig Veda, Mandala 3, Hymn 62, Translated by Ralph T.H. Griffith, Wikisource
  8. Rig Veda Book 3 Hymn 62, sacred-texts.com
  9. "Rig Veda: Rig-Veda, Book 3: HYMN LXII. Indra and Others."www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৯ 
  10. "Gayatri Mantra"OSME 
  11. "Gayatri Mantra"OSME 
  12. Rig Veda Book 10 Hymn 90, Sacred Texts, Hinduism
  13. Rig-Veda, Book 10, HYMN XC. Puruṣa, Translated by Ralph T.H. Griffith, [1896], at sacred-texts.com
  14. The Texts of the White Yajurveda, BOOK THE THIRTY-SIXTH, Translated by Ralph T.H. Griffith, [1899], at sacred-texts.com, p. 291
  15. Ancient vedic prayer World Prayers Society (2012)
  16. Derrett, J. Duncan M. (২০০৯)। "An Indian metaphor in St John's Gospel"। Journal of the Royal Asiatic Society9 (2): 271–86। জেস্টোর 25183679ডিওআই:10.1017/S1356186300011056 
  17. Śrī Īśopaniṣad, Mantra 1, Śrīla Prabhupāda
  18. Book the Fortieth White Yajurveda, Ralph Griffith (Translator), page 304-308
  19. The Science of Shvetashvatara Upanishad, Indiadivine.org
  20. Bhagavad Gita Chapter 4 : Jñāna Karm Sanyās Yog, Verse 38, Holy Bhagavad Gita
  21. Bhagavad-gītā, Chapter Four, Verse 38, Vedabase.io
  22. Bhagavad-gītā, Chapter Four, Verse 39, Vedabase.io
  23. "Monier Williams Online Dictionary"www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০২ 
  24. Dvija, Encyclopedia Britannica (2014)
  25. Manilal Bose (১৯৯৮)। Social and Cultural History of Ancient India। Concept। পৃষ্ঠা 55–56। আইএসবিএন 978-81-7022-598-0 
  26. Aupasana from Hindu Dharma
  27. Knipe, David M. (২০১৫)। Vedic Voices: Intimate Narratives of a Living Anthra Tradition। Oxford: Oxford University Press। 
  28. Lindsay Jones, সম্পাদক (২০০৫)। Gale Encyclopedia of Religion11। Thompson Gale। পৃষ্ঠা 7493–7495। আইএসবিএন 0-02-865980-5 
  29. Monier-Williams, Sir Monier (১৮৯১)। Brāhmanism and Hindūism: Or, Religious Thought and Life in India, as Based on the Veda and Other Sacred Books of the Hindūs (ইংরেজি ভাষায়)। J. Murray। পৃষ্ঠা 158। আইএসবিএন 978-81-7755-873-9 
  30. Sinha, Jadunath (২০১৬-০১-০১)। Indian Philosophy Volume 1 (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 872। আইএসবিএন 978-81-208-3651-8 
  31. Uskokov, Aleksandar (২০২২-০৯-২২)। The Philosophy of the Brahma-sutra: An Introduction (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 104। আইএসবিএন 978-1-350-15003-4 
  32. Madan, T. N. (২০১০-১১-০৩)। The T.N. Madan Omnibus: The Hindu Householder (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 386। আইএসবিএন 978-0-19-908831-7 
  33. "Panch Nitya Karmas"। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২১ 
  34. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নির্বাচিত শ্লোক সংকলন, পরিশিষ্ট ৪, দৈনন্দিন নিত্যকর্ম ও আচার পালনেরক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মন্ত্র, পৃ. ৩৫-৪৬।

উৎস[সম্পাদনা]

  • শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নির্বাচিত শ্লোক সংকলন, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৫ম পর্যায়, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশকাল ডিসেম্বর ২০২০, মুদ্রণে ফরাজী প্রেস এন্ড পাবলিকেশন।