বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশী ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দলিল, পতাকা, রাষ্ট্রীয় প্রতীক, জাতীয় সঙ্গীত ও স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন সরকারি জাতীয় প্রতীক রয়েছে, যেগুলো স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় গৃহীত হয়। এগুলো ছাড়া আরও কিছু জাতীয় প্রতীক রয়েছে। যেমন: জাতীয় পাখি, জাতীয় পশু, জাতীয় ফুল ও জাতীয় গাছ ইত্যাদি।

জাতীয় পতাকা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা (লাল-সবুজের পতাকা নামেও পরিচিত) ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়েছিল। এটি একটি সবুজ ক্ষেত্রের উপর একটি লাল বৃত্ত নিয়ে গঠিত, যার উত্তোলন দিকে সামান্য অফসেট, যাতে পতাকাটি উড়ন্ত অবস্থায় কেন্দ্রিক দেখায়। লাল বৃত্তটি বাংলায় উদীয়মান সূর্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দানকারী শহীদদের প্রতীক বহন করে। পতাকার সবুজ ক্ষেত্রটি বাংলাদেশের বিস্তৃত সতেজ ভূমির প্রতীক। পতাকাটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি করে নকশা করা, যাতে লাল বৃত্তের ভিতরে একটি হলুদ মানচিত্র ছিল। ১৯৭২ সালে মানচিত্রটি মুছে ফেলা হয়। পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়। বেসামরিক পতাকাবাহী ও নৌ পতাকাবাহী স্থানে যথাক্রমে একটি লাল ও একটি সাদা ক্ষেত্রের উপর জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়।

জাতীয় প্রতীক[সম্পাদনা]

সরকারী সিলমোহর[সম্পাদনা]

জাতীয় সঙ্গীত[সম্পাদনা]

আমার সোনার বাংলা গানের প্রথম দশ লাইন হলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, যার রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গৃহীত হয়েছিল। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। গানটি রচিত হয়েছিল শিলাইদহের বাউল গায়ক গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির সুরের অনুষঙ্গে। সরলা দেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে তার শতগান সংকলনে গগন হরকরা রচিত গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেক স্বদেশী গানের সুরই এই স্বরলিপি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছিল, যার মধ্যে এটি ছিল একটি। ১৯০৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২ ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের সাক্ষরে গানটি মুদ্রিত হয়। একই বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও গানটি মুদ্রিত হয়েছিল। গানটির প্রথম যন্ত্রসংগীতে সুর করেন সমর দাস এবং এর ইংরেজি অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান

জাতীয় রণসঙ্গীত[সম্পাদনা]

জাতীয় পাখি[সম্পাদনা]

জাতীয় পাখি দোয়েল। পাখিটি গড়ে প্রায় ১৫ বছর বাঁচে।পাখিটি দেখতে চমৎকার। পাখিটি একইসাথে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে ,গ্রামে এবং শহরে সব জায়গাতেই দেখা যায়।

জাতীয় ফল[সম্পাদনা]

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। একটি রসাল ও সুস্বাদু ফল হিসেবে কাঁঠাল বিখ্যাত।

জাতীয় ফুল[সম্পাদনা]

পানিতে ভাসমান, সাদা রঙের শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। জাতীয় ফুল সাধারণত প্রতীকিভাবে একটি দেশের স্বতন্ত্র ভৌগোলিক পরিচিতি তুলে ধরে। শাপলা ফুল নানা রঙের দেখা যায় যেমনঃ গোলাপী, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি, শুধুমাত্র সাদা শাপলাই এ দেশের জাতীয় ফুল। এই ফুলে ৪-৫টি বৃতি থাকে ও ১৩-১৫টি পাপড়ি থাকে। টাকা, পয়সা, দলিল ইত্যাদিতে প্রতীক আকারে শাপলার জলছাপ থাকে।

জাতীয় মাছ[সম্পাদনা]

ইলিশ হলো বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। ইলিশ মাছের শরীর আয়তাকার এবং চাপা। মাথা সরু এবং চোখ বড়। লেজ দ্বিখণ্ডিত। ইলিশ মাছের পিঠের রং নীলচে ধূসর এবং পেটের রং সাদা। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল , পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়

জাতীয় বৃক্ষ[সম্পাদনা]

জাতীয় বৃক্ষ হলো আম গাছ।আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬মি: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। ২০১০ সালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়। মূলত ফল হিসেবে আমের জনপ্রিয়তা, দেশের সর্বত্র আম গাছের সুপ্রাপ্যতা, গাছটির কাঠের উপযোগিতা, আম বাগানের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ (১৭৫৭ সালের পলাশীর আমবাগানের যুদ্ধ, ১৯৭১ সালের মুজিবনগর আমবাগানে মুক্তিযুদ্ধের শপথ, জাতীয় সংগীতে আমবাগানের উল্লেখ) ইত্যাদি বিবেচনায় এনে আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষ ঘোষণা করা হয়।

জাতীয় পশু[সম্পাদনা]

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশে জাতীয় পশু। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গায়ের রং হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয় এবং ডোরার রং হয় গাঢ় খয়েরি থেকে কালো। পেট সাদা ও লেজ কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা। লেজসহ একটি পুরুষ বাঘের দৈর্ঘ্য ২১০-৩১০ সেন্টিমিটার এবং নারী বাঘের দৈর্ঘ্য ২৪০-২৬৫ সেন্টিমিটার। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস বাংলাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে রয়েছে।

জাতীয় খেলা[সম্পাদনা]

হাডুডু বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ।

জাতীয় বন

সুন্দরবন বাংলাদেশে জাতীয় বন সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। সুন্দরবন বিশ্বের ২য় বড় বন। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন।

জাতীয় নদী

যমুনার নদী উপত্যকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি হল সিন্ধু গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে গঙ্গা ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অতি উর্বর পললসমৃদ্ধ 'গঙ্গা-যমুনা দোয়াব' অঞ্চল। প্রায় ৫৭,০০০,০০০ মানুষ যমুনার জলের উপর নির্ভরশীল।

অন্যান্য প্রতীকসমূহ[সম্পাদনা]

শিরোনাম প্রতীক ও টীকা
দাপ্তরিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
রাষ্ট্র ধর্ম বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের সমমর্যাদা ও সমঅধিকার আছে।[১]
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান
জাতীয় বীর মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
ঐতিহাসিক বীর নবাব সিরাজউদ্দৌলা
দলিলাদি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা
জাতীয় নরত্বারোপ বাংলা মা/(বঙ্গমাতা)
জাতীয় পঞ্জিকা বঙ্গাব্দ
জাতীয় পোশাক শাড়ীকোর্তা
স্তনপায়ী প্রাণী গঙ্গা নদী শুশুক
জাতীয় উদ্যান ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম
জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দির
পর্বত কিওক্রাডাং
জাতীয় যাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর
জাতীয় গ্রন্থাগার বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগার
জাতীয় স্লোগান- জয় বাংলা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান"। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]