বিষয়বস্তুতে চলুন

কামরুল হাসান

শিল্পী

কামরুল হাসান

জন্ম
আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান

(১৯২১-১২-০২)২ ডিসেম্বর ১৯২১
মৃত্যু২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮(1988-02-02) (বয়স ৬৬)
শহীদ মিনার, ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণহৃদাঘাত
সমাধিকাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ
২৩°৪৪′০৬″ উত্তর ৯০°২৩′৪২″ পূর্ব / ২৩.৭৩৫০৬৩৮° উত্তর ৯০.৩৯৪৯৮১৪° পূর্ব / 23.7350638; 90.3949814
জাতীয়তাবাংলাদেশী
অন্যান্য নামপটুয়া
শিক্ষাচারুকলায় স্নাতক
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশাচিত্রশিল্পী
পরিচিতির কারণবাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
উল্লেখযোগ্য কর্ম
আন্দোলন
দাম্পত্য সঙ্গীমরিয়ম বেগম (বি. ১৯৫৯)
সন্তানসুমনা হাসান
আত্মীয়রুবাবা দৌলা (ভাগ্নী)
পুরস্কার
সম্মাননাবাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (১৯৮৫)
দায়িত্ব
১৯৪৮–১৯৫৯সরকারি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক
১৯৬০–১৯৭৮ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের প্রধান নকশাবিদ
১৯৭১মুজিবনগর সরকারের শিল্পকলা বিভাগের পরিচালক

কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর ১৯২১ - ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) প্রখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তিনি চিত্রাঙ্কন-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কামরুল হাসানকে সবাই শিল্পী বললেও তিনি নিজে 'পটুয়া' নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন।[]

জীবনী

[সম্পাদনা]

কামরুল হাসান কলকাতায় তিনজলা গোরস্তান রোডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস নারেঙ্গ গ্রাম, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ। তার বাবা মুহাম্মদ হাশেম ছিলেন একটি স্থানীয় কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক।[]

শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

কামরুল হাসান কলকাতা মডেল এমই স্কুলে, কলকাতা মাদরাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে এবং পরবর্তীকালে কলকাতা ইন্সটিটিউট অব আর্টসে অধ্যয়ন করেছিলেন।[] তিনি ১৯৪৭ সালে ফাইন আর্টসে পাস করেন। হাসান ভৌত অনুশীলনে খুব কৌতুহলী ছিলেন এবং একটি ভৌত অনুশীলন প্রতিযোগিতায় ১৯৪৫ সালে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় সমসমায়িক অনেক মুসলিম যুবকের মতোই তিনি এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আগমন করেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]
শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত বাংলাদেশের প্রথম পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা (কামরুল হাসান কর্তৃক পরিবর্তীত)

ভারত - পাকিস্তান বিভাগের পরে, কামরুল হাসান ঢাকাতে আসেন, যা ছিল সদ্যস্থাপিত পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। ১৯৪৮ সালে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একত্রে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস (বর্তমানে, ফ‍্যাকাল্টি অফ ফাইন আর্টস) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে প্রগতিপন্থী হাসান অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন যা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিও- এর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।[] কামরুল হাসান ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে শিবনারায়ণ দাস কর্তৃক ডিজাইনকৃত জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপ দেন।

কামরুল হাসান কর্তৃক নকশাকৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোগ্রাম।

জীবিকাসূত্রে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন নকশা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগের শিল্প বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

প্রদর্শনী

[সম্পাদনা]

দেশে-বিদেশে তিনি বহু একক এবং যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একক প্রদর্শনীগুলো হলো : ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ ঢাকা; ১৯৫৭ রেঙ্গুন, মিয়ানমার; ১৯৬৯ পাকিস্তান; ১৯৭৫ ঢাকা; ১৯৭৯ লন্ডন; ১৯৯১ ঢাকা। উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীগুলো হলো : ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৯ ঢাকা, করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি; ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৬টি জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী; ১৯৭৮ জিডিআর; ১৯৮০ ফুকুওকা, জাপান; ১৯৮১ হংকং; ১৯৮৫ মালয়েশিয়া; ১৯৮৭ ভারত; ১৯৮১, ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শায়িত কামরুল হাসানের কবর

কামরুল হাসান জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে 'দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে' স্কেচটির অঙ্কন কার্য সমাপ্ত করার কয়েক মিনিট পরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ তারিখে মারা যান।[] তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মননা

[সম্পাদনা]

শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[][][] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[] এছাড়াও তিনি প্রেসিডেন্ট'স গোল্ড মেডেল (১৯৬৫), বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা (১৯৮৪) ও বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫) সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করেন চিত্রাঙ্কন এ উলেখ্যযোগ্য অবদান এর জন্য।

১৯৯৭ সালের জুনে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ডাকটিকিটে কামরুল হাসানের চিত্রকর্ম তিন কন্যা

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "শতবর্ষে পটুয়া কামরুল হাসান"এনটিভি। ২ ডিসেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৫
  2. 1 2 সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১১৯, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬
  3. Gaibandha, দৈনিক গাইবান্ধা :: Dainik। "একজন কামরুল হাসান এবং একটি দেশের পতাকা"Dainik Gaibandha (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২২
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১২
  5. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম (সম্পাদক)। বাংলাপিডিয়াঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন ৯৮৪-৩২-০৫৭৬-৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
  6. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
  7. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
  8. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]