বাংলাদেশের ভাষা
বাংলাদেশ ভাষা | |
---|---|
সরকারী ভাষা(সমূহ) | বাংলা |
উল্লেখযোগ্য বেসরকারী ভাষাসমূহ | চিটাইঙ্গা |
আঞ্চলিক ভাষা(সমূহ) | সিলেটি, চাকমা |
প্রধান অভিবাসী ভাষা(সমূহ) | বিহারি, বর্মী, রোহিঙ্গা |
সাধারণ কীবোর্ড লেআউট(সমূহ) | ![]() |
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলা ভাষা বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় ভাষা।[১] প্রায় ৯৯% বাংলাদেশির মাতৃভাষা বাংলা। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ও বিশ্বের অন্যতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ অনুযায়ী, বৈদেশিক সম্পর্ক ব্যতীত অন্যান্য সকল সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার আবশ্যিক করেছে।[২] বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র একভাষী রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বসবাস করে এমন বাংলাদেশি আদিবাসীগণ তাদের নিজ নিজ ভাষা (যেমন চাকমা, মারমা ইত্যাদি) ভাষায় কথা বলে।[৩] এছাড়াও বাংলাদেশে যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং সিলেট অঞ্চল এর ভাষা আদর্শ বাংলা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। স্বাধীনতা পূর্ব পর্যন্ত চাটগাঁইয়া ভাষা নাস্তালিক হরফে লিখা হতো।
বাংলাদেশ ও বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলের ভাষা[সম্পাদনা]
এথ্নোলগ-এর ২১ তম সংস্করণ (২০১৮) অনুসারে বাংলাদেশে ৪১ টি ভাষা প্রচলিত আছে সবকটি ভাষাই জীবিত। নিচের সারণিতে এগুলির বিবরণ দেয়া হল।
ভাষার নাম | ভাষাভাষীর সংখ্যা | অবস্থান | উপভাষা | শ্রেণীকরণ |
---|---|---|---|---|
অসমীয়া | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |||
আরাকানীয় | ২ লক্ষ | দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ; পার্বত্য চট্টগ্রাম | মারমা (পাহাড়ি), রাখাইন (উপকূলীয়) | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, লোলো-বর্মী, বর্মী, দক্ষিণ বর্মী |
আশো চিন | ১৪২২ (১৯৮১ আদমশুমারি) | পার্বত্য চট্টগ্রাম | চট্টগ্রাম, লেমিয়ো, মিনবু, সাইংবাউন, সান্দোওয়ে, থায়েতমিয়ো | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, দক্ষিণী, শো |
উসুই | ৪ হাজার | পার্বত্য চট্টগ্রাম | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, শ্রেণীকরণ নেই | |
ওয়ার | ১৬ হাজার | উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে ভারতের সাথে সীমান্তে | অস্ট্রো-এশীয়, মন-খমের, উত্তর মন-খমের, খাসীয় | |
ওঁরাও / কুরুখ/কোঙ্কণী ভাষা | ১৬৫,৬৮৩ | রাজশাহী বিভাগ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা | বরাইল সাদরি, নুরপুর সাদরি, উচাই সাদরি, মকান টিলা সাদরি | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বিহারি |
কক বরক | ১ লক্ষ | জামাতিয়া, নোয়াতিয়া, রিয়াং, হালাম, দেববর্ম | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, ঝিংপো-কোনিয়াক-বোডো, কোনিয়াক-বোডো-গারো, বোডো-গারো, বোডো | |
কুরুখ | দ্রাবিড়, উত্তর | |||
কোচ | বানাই, হারিগায়া, সাতপারিয়া, তিনতেকিয়া, ওয়ানাং | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, ঝিংপো-কোনিয়াক-বোডো, কোনিয়াক-বোডো-গারো, বোডো-গারো, কোচ | ||
খুমি চিন | ১১৮৮ (১৯৮১ আদমশুমারি) | খিমি, য়িন্দি, খামি, ন্গালা | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, দক্ষিণী, খুমি | |
খাসি | মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ | খাসি (চেরাপুঞ্জি), লিঙন্গাম | অস্ট্রো-এশীয়, মন-খমের, উত্তর মন-খমের, খাসীয় | |
গারো | ১ লক্ষ | ময়মনসিংহ, টাংগাইল, শ্রীপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, সিলেট, ঢাকা | আবেং, আচিক | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, ঝিংপো-কোনিয়াক-বোডো, কোনিয়াক-বোডো-গারো, বোডো-গারো, গারো |
চাক | সাড়ে ৫ হাজার | আরাকান নীল পাহাড়, বান্দরবান, ইত্যাদি | নেই | |
চাকমা | ৩ লক্ষের বেশি | পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম শহর | ৬টি উপভাষা আছে | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া |
চাটগাঁইয়া | ১ কোটি ৪০ লক্ষ | চট্টগ্রাম বিভাগ ও আরাকান রাজ্য | রোহিঙ্গা, চাকমা | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া |
তঞ্চঙ্গ্যা | ১৭,৬৯৫ | পার্বত্য চট্টগ্রাম | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |
তিপ্পেরা | ১ লক্ষ | পার্বত্য চট্টগ্রাম | ৩৬টি উপভাষা | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, শ্রেণীকরণ নেই |
দারলং | ৯০০০ | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, মধ্য | ||
প্নার | ৪ হাজার | উত্তর-পূর্বে ভারতের সাথে সীমান্তে; জাফলং, তামাবিল, জৈন্তাপুর | অস্ট্রো-এশীয়, মন-খমের, উত্তর মন-খমের, খাসীয় | |
পাংখু | ২২৭৮ (১৯৮১ আদমশুমারি) | বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, মধ্য | |
ফালাম চিন | চোরেই, জান্নিয়াত | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, উত্তর | ||
বর্মী | ৩ লক্ষ | মায়ানমার সীমান্তে | বোমাং | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, লোলো-বর্মী, বর্মী, দক্ষিণ বর্মী |
বাংলা | ২৬ কোটির বেশি | কেন্দ্রীয়, পশ্চিমী (খারিয়া ঠার, মাল পাহাড়িয়া, সারাকি), দক্ষিণ-পশ্চিমী বাংলা, উত্তর বাংলা (কোচ, শ্রীপুরী), রাজবংশী, বাহে, পূর্ব বাংলা (পূর্ব কেন্দ্রীয়, সিলেটি), হাইজং, দক্ষিণ-পূর্বী বাংলা (চাকমা), গান্ডা, ভাঙ্গা | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |
বাওম চিন | ৫৭৩৩ (১৯৮১ আদমশুমারি) | পার্বত্য চট্টগ্রাম | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, মধ্য | |
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী | ৪০ হাজার | রাজার গাং, মাদই গাং | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |
ভারতীয় প্রতীকী ভাষা | বধিরদের প্রতীকী ভাষা | |||
মুন্ডারি | হাসাদা, লাতার, নাগুরি, কেরা | অস্ট্রো-এশীয়, মুন্ডা, উত্তর মুন্ডা, খেরওয়ারি, মুন্ডারি | ||
ম্রু | ৮০ হাজার | পার্বত্য চট্টগ্রামের ২০০টি গ্রামে | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, ম্রু | |
মিজো | ১ হাজার | মিজো পাহাড়, চট্টগ্রাম, সিলেট | রালতে, দুলিয়েন, নগেলতে, মিজো, লে | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, মধ্য |
মেগাম | ৬৮৭২ | উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশ | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, ঝিংপো-কোনিয়াক-বোডো, কোনিয়াক-বোডো-গারো, বোডো-গারো, গারো | |
মৈতৈ | ১৫ হাজার | সিলেট | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, মৈতৈ | |
রংপুরী | ১.৫ কোটি | বাহে | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |
শেন্দু | ১ হাজার | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, দক্ষিণী, শো | ||
সাঁওতালি | দেড় লক্ষ | কারমালি, কমরি-সাঁওতালি, লোহারি-সাঁওতালি, পাহারিয়া, মাহালি মাঁঝি | অস্ট্রো-এশীয়, মুন্ডা, উত্তর মুন্ডা, খেরওয়ারি, সাঁওতালি | |
সিলেটি | ১ কোটি | সিলেট বিভাগ | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |
হাকা চিন | ১২৬৪ | ক্লাংক্লাং, জোখুয়া, শোনশে | চীনা-তিব্বতী, তিবতী-বর্মী, কুকি-চিন-নাগা, কুকি-চিন, মধ্য | |
হাজং | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, পূর্ব অঞ্চল, বাংলা-অসমীয়া | |||
হো | অস্ট্রো-এশীয়, মুন্ডা, উত্তর মুন্ডা, খেরওয়ারি, মুন্ডারি |
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "৩৷ রাষ্ট্রভাষা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৬।
- ↑ "বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭"। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৬।
- ↑ ফকির, এ বি এম রেজাউল করিম (ডিসেম্বর ২০১০)। "Language Situation in Bangladesh"। The Dhaka University Studies। ৬৭: ৬৬–৭৭।
আরো পড়ুন[সম্পাদনা]
- * ইউনেস্কো, "Bangladesh: Some endangered languages (information from Ethonologue, UNESCO)", জুন, ২০১০।