সন্তোষী মা
সন্তোষী মা | |
---|---|
সন্তুষ্টির দেবী | |
দেবনাগরী | संतोषी माता |
অন্তর্ভুক্তি | দেবী |
আবাস | গণেশলোক |
মন্ত্র | ওঁ শ্রী সন্তোষী মহামায়ে গজানন্দম দায়িনী শুক্রবার প্রিয়ে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে |
অস্ত্র | তরবারি, চালের সোনালী পাত্র ও ত্রিশূল |
বাহন | গাভী (গরু) |
সন্তোষী মা (ইংরেজি: Santoshi Mata) হলেন হিন্দুধর্ম-এর একজন মহাদেবী। সন্তোষী মাকে সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে অভিহিত করা হয়।[১] বিশেষত উত্তর ভারত ও নেপাল-এর মহিলারা সন্তোষী মায়ের পূজা করেন। পুরাণ অনুযায়ী এই সন্তোষী মা-ই হলেন গণেশের মেয়ে এবং শুভ ও লাভের বোন। বার্ষিক ১৬টা শুক্রবার সন্তোষী মা ব্রত নামক এক ব্রত পালন করলে দেবী সন্তুষ্ট হন বলে মানুষের বিশ্বাস।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]ষাটের দশকের শুরুতে সন্তোষী মায়ের প্রথম প্রচার হয়। মৌখিক কথা-কাহিনী, ব্রতের বিবরণী সংবলিত পুঁথি, পোষ্টার ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৭৫ সালে বলিউডের চলচ্চিত্র 'জয় সন্তোষী মা'-র মুক্তির পর পরই তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে; অবশ্য যোধপুরে অনেক আগে থেকেই সন্তোষী দেবীর একটি মন্দির আছে।[২] চলচ্চিত্রটিতে তাঁকে গণেশ দেবতার কন্যা তথা মূল প্রকৃতির এক অংশাবতার হিসেবে দেখানো হয়। দেবীর জন্ম শুক্রবারে পূর্ণিমা তিথিতে হয়, সেহেতু সন্তোষী মার পূজার জন্য শুক্রবার দিনটি শ্রেষ্ঠ। ইনি চতুর্ভূজা, রক্তবস্ত্র পরিহিতা, নিজের চারটি হাতের দুটিতে ত্রিশূল ও তলোয়ার ধারণ করেন ও বাকী দুটি হাতে বরাভয় ও সংহার মুদ্রা ধারণ করেন দেবীর ত্রিশূলপাত তিনটি গুণের (সত্ত্ব,রজ,তম) প্রতীক ও তলোয়ারটি জ্ঞানের প্রতীক। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে সন্তোষী মায়ের কোনো আখ্যানের উল্লেখ নেই যদিও দেবী ভাগবতে পার্বতীর জন্ম শুক্রবারে পূর্ণিমা তিথিতে হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। এর সাথে পার্বতী দেবীর সেই স্বরূপকে চতুর্ভূজা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। ইনি হিমালয়কে দেবীগীতের মাধ্যমে সন্তোষ প্রদান করেন। বৈষ্ণব আদর্শে ভগবতী যোগমায়াকেই বিভিন্ন দেবীর রূপে ভিন্ন ভিন্ন নামে উপাসনা করা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
পূজা পদ্ধতি
[সম্পাদনা]মা সন্তোষীর পূজাতে টক বস্তু, আমিষ দ্রব্য প্রদান নিষেধ । সাধারণত আমিষ দ্রব্যকে তমঃ গুণ সম্পন্ন আহার বলা হয় । টক পদার্থ হল রজগুণী আহার । মিষ্ট দ্রব্য হল সত্ত্ব গুণী আহার । মায়ের ভক্তদের ঐ তম, রজ গুণের ওপরে সত্ত্ব গুণে অধিষ্ঠিত হতে হয় । তাই ভক্তগণ মাকে কেবল মিষ্ট দ্রব্য ভোগে অর্পণ করেন। মায়ের প্রসাদ গো জাতীয় প্রাণীকে অল্প প্রদান করার নিয়ম। কারণ গো মাতা হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য। গো জাতিকে রক্ষা ও ভরন পোষণের জন্য এই নিয়ম । প্রতি শুক্রবারে মায়ের ব্রত করার নিয়ম। মায়ের পূজোতে সরিষার তৈল নিষেধ। ঘিয়ের প্রদীপ দিতে হয়। সরষের তেল রজ গুণী। তাই একাদশী তিথিতে সরিষার তৈল বর্জনীয় । শুক্রবারে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে মায়ের পুজো করতে হবে। তিথি নক্ষত্র দোষ নেই এই পূজাতে। সাধারণত উদ্যাপন ছাড়া এই পুজোতে পুরোহিত লাগে না। সবাই করতে পারবেন । খেয়াল রাখবেন এই দিন গৃহে কোন সদস্য বা যিনি ব্রত পূজা করবেন- ভুলেও যেনো টক পদার্থ না গ্রহণ করেন। অনান্য সদস্য গণ হোটেলে বা রেষ্টুডেন্ট, বিয়ে , অন্নপ্রাশনে খাবেন না। ঘট স্থাপন করবেন বট, কাঁঠাল, পাকুড় পল্লব দ্বারা। আম পল্লব দেবেন না । পূজোতে সব পুষ্পই চলবে। বিল্বপত্র আবশ্যক । ঘটে পুত্তলিকা অঙ্কন করবেন সিঁদুরে ঘি মিশিয়ে। ঘি প্রদীপ পূজাতে ব্যবহার করবেন । ঘটে গোটা ফল হিসাবে কলা দেবেন । এরপর আচমন , বিষ্ণু স্মরণ, আসন শুদ্ধি, সূর্য অর্ঘ, সঙ্কল্প করে গুরুদেব ও পঞ্চ দেবতার পূজা করে মায়ের পূজা করবেন । ধ্যান মন্ত্র প্রনাম মন্ত্র বলবেন । মনের প্রার্থনা মায়ের চরণে জানাবেন। পূজা শেষে মায়ের প্রসাদ গোমাতা কে অল্প দিয়ে নিজে গ্রহণ করবেন । এই ভাবে ১৬ শুক্রবার ব্রত করবেন । ভোগে দেবেন ভেজানো ছোলা ও আঁখের গুড়। ইচ্ছা হলে মিষ্ট ফল নিবেদন করতে পারেন । শুক্রবার যিনি ব্রত করবেন সারা দিন উপবাস থাকবেন । দুধ, ছোলা ঘিতে আলু দিয়ে ভেজে, মিষ্ট ফল, জল গ্রহণ করবেন । অসমর্থ হলে একবেলা উপবাস রেখে অপর বেলা আলু সেদ্ধ, ঘি, আতপ অন্ন গ্রহণ করতে পারেন । ১৬ শুক্রবার ব্রত হলে উদ্যাপন করবেন । উদ্যাপনের দিন ৭ টি বালককে ভোজন করাবেন । খেয়াল রাখবেন সাত বালক যেনো সেই দিন টক বস্তু না খায় । উদ্যাপনের দিন ১৬ টি নিমকী চিনির রসে ডুবিয়ে মায়ের কাছে উৎসর্গ করবেন। ছানা থেকে তৈরী কোন মিষ্টি মাকে দেবেন না। উদ্যাপনের দিন মায়ের কাছে একটি নারকেল ফাটিয়ে নারকেলের জল মায়ের চরণে দেবেন । নারকেল মায়ের সামনে ফাটাবেন এক আঘাতে। ফাটানোর সময় মায়ের নামে জয়ধ্বনি দেবেন । এই ভাবে মা সন্তোষীর ব্রত করুন। দেখবেন মায়ের কৃপায় আপনার জীবন সুখে শান্তিতে ভরে যাবে । মায়ের কৃপায় সব অমঙ্গল, দুঃখ, অশান্তি নষ্ট হবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lutgendorf, Philip (July–Aug 2002)। "A 'Made to Satisfaction Goddess': Jai Santoshi Maa Revisited (Part Two)" (পিডিএফ)। Manushi (131): 24–37। ১৬ মে ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ http://www.makemytrip.com/travel-guide/jodhpur/santoshi-mata-temple-religious.html
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |