সিদ্ধাশ্রম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সিদ্ধাশ্রম (Siddhāśrama; দেবনাগরী :सिद्धाश्रम; জনপ্রিয়ভাবে জ্ঞানগঞ্জ নামে পরিচিত) একটি রহস্যময় আশ্রম। লোকবিশ্বাস মতে, সিদ্ধাশ্রম হিমালয়ের গভীরে এক অদৃশ্য ভূমিতে অবস্থিত যেখানে মহা যোগী, সাধুসিদ্ধ ঋষিরা বাস করেন। এই স্থানটি তিব্বতিদের দ্বারা শম্ভলের রহস্যময় ভূমিরূপেও সম্মানিত।[১] অপর এক ঐতিহ্য অনুসারে, সিদ্ধাশ্রম কৈলাস পর্বতের নিকটবর্তী তিব্বত অঞ্চলে অবস্থিত।[২] যদিও যেকোন সাধু, সন্ন্যাসী, ইয়েতি, সন্ন্যাসী ও যোগী যে কোন নামে 'সিদ্ধাশ্রম'কে চিনতে পারেন বা বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের বিশ্বাস অনুসারে বিভিন্ন উপাসনা বা সাধনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে।এই অলৌকিক ভূমির প্রসঙ্গ চার বেদ ও বহু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। সিদ্ধাশ্রমকে আধ্যাত্মিক যাত্রায় একটি ঐশ্বরিক স্থান হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এও বিশ্বাস করা হয় যে এই ব্রহ্মাণ্ডে ঐশ্বরিক কার্যসমূহ প্রকাশ করার সময় আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যোগীরা সিদ্ধাশ্রমের সাথে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখেন। তারা নিয়মিত এটি পরিদর্শন করেন। সিদ্ধাশ্রমকে আধ্যাত্মিক চেতনার ভিত্তি, দেবত্বের হৃদয় ও মহান্ ঋষিদের সংযমক্ষেত্ররূপে বিবেচনা করা হয়। এভাবে সিদ্ধাশ্রমকে একটি অত্যন্ত দুর্লভ ঐশ্বরিক স্থান হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে যে সাধনা পদ্ধতির মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম করে তথা সাধনা পথ অনুসরণ করে এই দুষ্প্রাপ্য স্থানে প্রবেশ করার অলৌকিক শক্তি লাভ করা সম্ভব। সিদ্ধাশ্রমকে হিমালয়ের গভীরে একটি গোপন ও রহস্যময় ভূমি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে মহান সিদ্ধ যোগী, সাধু এবং ঋষিরা এখানে বাস করেন। সিদ্ধাশ্রমকে প্রাচীন সাধু, ঋষি ও উচ্চকোটির যোগীদের আশ্রম বলে মনে করা হয়। সিদ্ধাশ্রমের উল্লেখ বহু ভারতীয় মহাকাব্য, বেদ, উপনিষদপুরাণ, ঋগ্বেদ (সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ) আদি বৈদিক শাস্ত্রে রয়েছে। সিদ্ধাশ্রমকে আলোকিত ও জ্ঞানদীপ্ত মানুষ বা সিদ্ধদের সমাজ বলে মনে করা হয়। যিনি সাধনায় উচ্চ স্তরে পৌঁছেছেন তিনি গুরুর কৃপা অবলম্বন করে রহস্যময় সিদ্ধাশ্রমে পৌঁছাতে পারে। বিশ্বাসীগণ গুরুকে এই স্থানেরই একজন বলে মনে করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, এই আশ্রমটি মানস সরোবরকৈলাসের নিকটে অবস্থিত। সিদ্ধ যোগীসন্ন্যাসীরা এই স্থানে হাজার হাজার বছর ধরে তপস্যা করছেন। এও বিশ্বাস করা হয় যে এই স্থানটি খালি চোখে দেখা যায় না। শুধুমাত্র ধ্যান ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক অনুশীলনের পরেই দর্শন করা যায় যেমনটি অনেকে বিশ্বাস করেন। স্বামী বিশুদ্ধানন্দ পরমহংস সর্বপ্রথম জনসমক্ষে এই স্থানের কথা বলেছিলেন। শৈশবে কিছু দক্ষ সাধু তাকে সেখানে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘ বছর ধরে তিনি জ্ঞানগঞ্জ আশ্রমে সাধনা করেন। হিন্দুধর্মের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে মহর্ষি বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, কণাদ, পুলস্ত্য, অত্রি, মহাযোগী গোরক্ষনাথ, শ্রীমদ শঙ্করাচার্য, ভীষ্ম, কৃপাচার্যকে সেখানে শারীরিক আকারে বিচরণ করতে দেখা যায় ও তাদের উপদেশ শোনার সৌভাগ্যও হয়। অনেক সিদ্ধ যোগী, যোগিনী, অপ্সরা, দেবদূত, সাধুদের এই স্থানে ধ্যান ও বিচরণ করতে দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। কথিত হয় যে, যারা সেখানে গিয়েছিলেন তারা বলেন, সিদ্ধাশ্রমে বাগানের সুন্দর ফুল, গাছপালা, পাখি, সিদ্ধ-যোগ হ্রদ, ধ্যানরত সাধু ইত্যাদি অনেক দর্শনীয় বিষয় রয়েছে যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এই কিংবদন্তি স্থানের সঠিক অবস্থান অজানা কারণ বিশ্বাস করা হয় যে জ্ঞানগঞ্জ সুকৌশলে মানুষের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করেছে (স্বেচ্ছায় নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে) যা আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা নির্ণয়যোগ্য নয়। কেউ কেউ এও বিশ্বাস করেন যে জ্ঞানগঞ্জ বাস্তব জগতের ভিন্ন সমতলে বিদ্যমান। তাই স্যাটেলাইট দ্বারা শনাক্ত করা যায় না।[ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ]

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে[সম্পাদনা]

রামায়ণ, মহাভারতপুরাণে সিদ্ধাশ্রমের (আক্ষরিক অর্থেঃ সিদ্ধদের আশ্রম) উল্লেখ রয়েছে। বাল্মীকি রামায়ণে বলা হয়েছে, সিদ্ধাশ্রমে বিশ্বামিত্রের আশ্রম ছিলো। এখানেই বিষ্ণুর পূর্ববর্তী আশ্রম ছিল, যখন তিনি বামন অবতার রূপে আবির্ভূত হওয়ার পরে তিনি এই আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন।[৩] বিশ্বামিত্র রামলক্ষ্মণকে সিদ্ধাশ্রমে নিয়ে যান যেসব রাক্ষস তার যজ্ঞকর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তাদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে।[৪] নারদ পুরাণে (পূর্ব, ১/২৫), সিদ্ধাশ্রমকে ঋষি সূতের আশ্রম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫]

সাম্প্রতিক রচনাসমূহে[সম্পাদনা]

আধুনিক যুগে, সিদ্ধাশ্রমের কথা সর্বপ্রথম পন্ডিত গোপীনাথ কবিরাজ উল্লেখ করেছেন।[৬] স্বামী নাদানন্দের "অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান অবধূত" বইতেও এর উল্লেখ রয়েছে।[৭][৮][৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Gyanganj - Land of The Undying In Himalayas | Holidify"www.holidify.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২২ 
  2. "Gyanganj: A Mysterious Land of Immortals"Tour My India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২২ 
  3. Vyas, R.T. (ed.) (১৯৯২)। Vālmīki Rāmāyaṇa, Text as Constituted in its Critical Edition। Oriental Institute, Vadodara। পৃষ্ঠা 40। 
  4. "Valmiki Ramayana - Bala Kanda Chapter 29"। ১৫ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২৩ 
  5. "Shri Naradiya Mahapuranam, Purvabhagam." (পিডিএফ)। Maharishi University of Management website। ২০০৮-০৭-০৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১২ 
  6. Kaviraj, Gopinath (২০১৩-০১-০১)। GYANGANJ ( in bangala ) Publication Of Prachi Publication (Bengali ভাষায়)। publisher। 
  7. Nadananda, Avadhoota (২০১৬-১০-১০)। Autobiography of an Avadhoota - Part I (English ভাষায়)। GuruLight। 
  8. "Avadhoota Nadananda"My Dattatreya (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২২ 
  9. Nadananda, Avadhoota (২০১৭-০১-১৪)। Autobiography of an Avadhoota - Part II (English ভাষায়)। GuruLight।