প্রদোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রদোষ বা প্রদোষম্‌ বলতে মূলত বৈকালিক সন্ধ্যা কে বোঝানো হয়। এই সন্ধ্যাকালেই প্রদোষব্রত করা হয়, যা হিন্দু সনাতন ধর্মের একমাত্র পরমেশ্বর শিবের একটি বিশেষ পূজানুষ্ঠান। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই ব্রতপূজা অনুষ্ঠিত হয়।[১] এটিকে প্রদোষ ব্রত বলা হয়। হিন্দুরা সূর্যাস্তের আগের ও পরের দেড় ঘণ্টা সময়কে বিশেষ পবিত্র মনে করেন। প্রদোষ ব্রতে সারা দিন উপবাস করে ওই বিশেষ সময়ে শিবের পূজা করা হয়।[২] পূজক রুদ্রাক্ষবিভূতি দ্বারা ত্রিপুণ্ড্র তিলক ধারণ করে অভিষেক, চন্দন, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য দিয়ে শিবের পূজা করেন।

নাম ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

পঞ্জিকায় "প্রদোষ" কথাটি একটি বিশেষ তিথির নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রদোষ কল্পদোশার পুত্র। তার নীশিত ও ব্যুষ্ঠ নামে দুই ভাই ছিল। এই তিনটি নামের অর্থ যথাক্রমে রাত্রির সূচনা, মধ্যভাগ ও অন্ত।[৩]প্রতি অমাবস্যার দিন থেকে প্রতি পূর্ণিমা দিনকে বলা হয় "শুক্লপক্ষ" এবং প্রতি পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত দিনগুলিকে "কৃষ্ণপক্ষ" বলা হয়। প্রতি মাসে এবং প্রতি পক্ষের সময় ত্রয়োদশী (চান্দ্র পাক্ষিকের ১৩তম দিন) ও দ্বাদশী (চান্দ্র পাক্ষিকের ১২তম দিন) শেষ হওয়ার সময়টিকে প্রদোষ বলা হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক পক্ষের দ্বাদশীর শেষ ও ত্রয়োদশীর সূচনার অংশটিকে "প্রদোষ" বলা হয়।[৪][৫] দক্ষিণ ভারতের সব শিবমন্দিরে প্রদোষে শিবের বাহন নন্দীর পূজা হয়। এই সময় নন্দীর পিঠে আরোহী শিব-পার্বতীর উৎসব মূর্তিগুলি নিয়ে মন্দির চত্বরে শোভাযাত্রা বের হয়।[৬]

কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

বৃষভবাহন বা নন্দীর পিঠে অধিষ্ঠিত শিব-পার্বতীর মূর্তি

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দেবতারা অসুরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রদোষকালে শিবের কাছে গিয়েছিলেন।[৭] এক ত্রয়োদশী তিথিতে তারা কৈলাশ পর্বতে যান। শিবের বাহন নন্দী তাদের সহায়তা করেন। শিব অসুর বধ করে দেবতাদের সাহায্য করেন। সেই থেকে মন্দিরে ত্রয়োদশীতে নন্দী-সহ শিবের পূজার রীতি চালু হয়।[৮]

শনি প্রদোষ[সম্পাদনা]

প্রদোষ তিথিটি শনিবার পড়লে সেটিকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।[৯] ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনীতে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরে শনি প্রদোষ বিশেষভাবে উদ্‌যাপিত হয়।[৯]

কিংবদন্তি অনুসারে, উজ্জয়িনীর রাজা চন্দ্রসেন ছিলেন শিবভক্ত। তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক মণি পেয়েছিলেন। চন্দ্রসেনের শত্রু রাজা রিপুদমন ও রাজা সিংহাদিত্য এই মণির লোভে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন।[১০] এই সময় চন্দ্রসেন শিবপূজা করছিলেন। শ্রীখর নামে এক কৃষকপুত্র রাজার মুখের শিবের নাম শুনে তার কাছে আসেন। কিন্তু রাজরক্ষীরা তাকে সরিয়ে দেন। শহরের বাইরে শিপ্রা নদীর তীরে শ্রীখর শিবের নাম করতে থাকেন। বৃধি নামে এক পুরোহিত সেই খবর জানতে পেরে নিজের পুত্রগণের অনুরোধে শিপ্রা নদীর তীরে শিবের নাম করতে যান। এই সময় শত্রু রাজারা উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। এই সময়টি ছিল শনিবার ও ত্রয়োদশী তিথি।[১০] ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত অদৃশ্য অসুর দূষণের সাহায্যে তারা উজ্জয়িনী লুণ্ঠন করে শিবভক্তদের আক্রমণ করেন। ভক্তদের আকূতি শুনে শিব মহাকালের রূপে উপস্থিত হন এবং চন্দ্রসেনের শত্রুদের ধ্বংস করেন।[১১] শ্রীখর ও বৃধির অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে রাজ্যের প্রধান দেবতারূপে অবস্থান করতে সম্মত হন। সেই থেকে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে শিব ও পার্বতী উজ্জয়িনীতে অবস্থান করছেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, শনি প্রদোষ ব্রত করলে শিবভক্তেরা মৃত্যুভয় ও রোগব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পান এবং প্রচুর ধনসম্পত্তি লাভ করেন।[১২]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]