তিরুভেটকলম পশুপথেশ্বর মন্দির

স্থানাঙ্ক: ১১°২৩′২৯″ উত্তর ৭৯°৪৩′১০.৭″ পূর্ব / ১১.৩৯১৩৯° উত্তর ৭৯.৭১৯৬৩৯° পূর্ব / 11.39139; 79.719639
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশুপথেশ্বর মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
ঈশ্বরপশুপথেশ্বর (শিব) এবং সত্গুনাম্বল (পার্বতী)
অবস্থান
অবস্থানচিদাম্বরম
রাজ্যতামিলনাড়ু
দেশভারত
স্থানাঙ্ক১১°২৩′২৯″ উত্তর ৭৯°৪৩′১০.৭″ পূর্ব / ১১.৩৯১৩৯° উত্তর ৭৯.৭১৯৬৩৯° পূর্ব / 11.39139; 79.719639
স্থাপত্য
ধরনদক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্য

তিরুভেটকলম পশুপথেশ্বর মন্দির হলো ভারতের তামিলনাড়ুর কুড্ডালোর জেলার চিদাম্বরমে অবস্থিত শিবের একটি হিন্দু মন্দির। এখানে শিবকে পশুপথেশ্বর হিসাবে পূজা করা হয়। এখানে শিবের স্ত্রী সত্গুনাম্বল এবং নল্লা নায়কী নামে পরিচিত। মন্দিরটি আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্সের ভিতরে অবস্থিত।

মন্দির কমপ্লেক্সটি দুই একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। এর সমস্ত মন্দিরগুলি কেন্দ্রিক আয়তক্ষেত্রাকার প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। কমপ্লেক্সটিতে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যার মধ্যে পশুপথেশ্বর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

মন্দিরে সকাল ৬:০০ থেকে বিভিন্ন সময়ে তিনটি দৈনিক আচার হয়। সারা বৎসর বেশ কিছু বাৎসরিক উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়। তামিল নববর্ষ চিত্তিরাই (এপ্রিল মাসে) এই মন্দিরে প্রতি বছর পালিত একটি বিশিষ্ট উৎসব।

মূল কমপ্লেক্সটি চোলদের দ্বারা নির্মিত বলে মনে করা হয়। ১৯১৪ সালে কানাডুকাথানের এ. পেথাপেরুমাল চেত্তিয়ার দ্বারা এটি পাথর দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল।

কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

মন্দিরের ভিতরের দৃশ্য

হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের পাণ্ডব রাজপুত্র অর্জুন শিবকে খুশি করার জন্য এই স্থানে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। একদিন অর্জুন তাকে আক্রমণ করার জন্য একটি বন্য শূকরকে দ্রুতগতিতে আসতে দেখেন। তিনি যখন শুয়োরটিকে একটি তীর দিয়ে বধ করেছিলেন, তখন অন্য একজন শিকারীও দাবি করেছিলেন যে তিনিই প্রথম পশুটিকে বধ করেন। দুজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হয়। অর্জুন শিকারীকে তীর দিয়ে আক্রমণ করেন, যার প্রভাব বিশ্বের সমস্ত প্রাণী অনুভব করেছিল। শিকারী অর্জুনকে পায়ের আঙুল দিয়ে ছুঁড়ে ফেললে, তিনি কৃপা সমুদ্রে গিয়ে পড়েন। অর্জুনের বুঝতে সময় লেগেছিল যে শিকারীরূপী শিব তাকে আক্রমণ করেছিলেন। শিবের সহধর্মিণী পার্বতী অর্জুনের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন তার স্বামীকে আঘাত করার জন্য। কিন্তু শিব তাকে শান্ত করেন। উভয়েই অর্জুনকে বর দিয়েছিলেন, পশুপথম নামক অস্ত্র। যেহেতু শিব এই স্থানে পশুপথম প্রদান করেছিলেন, তাই তিনি পশুপথেশ্বর নামে পরিচিত হন।[১] পেরিয়াপুরানম, নয়নমারদের এগারো শতকের সংকলনে থিলাই নটরাজ মন্দির হয়ে আসার পর সাম্বান্ডারের স্থান পরিদর্শন করার বিবরণ রয়েছে।[২]

স্থাপত্য[সম্পাদনা]

পশুপথেশ্বর মন্দির আন্নামালাই নগরে অবস্থিত। এই স্থানটির দূরত্ব চিদাম্বরম থেকে ২ কিমি (১.২ মা)। এটি আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অবস্থিত। মন্দিরটির পূর্ব দিকে একটি তিন স্তর বিশিষ্ট রাজা গোপুরম রয়েছে, যার চারপাশে কেন্দ্রীভূত আয়তাকার দেয়াল রয়েছে। মুখ্য মণ্ডপ এবং অর্থ মণ্ডপ নামে একটি স্তম্ভ বিশিষ্ট হলের মধ্য দিয়ে গর্ভগৃহের কাছে যাওয়া হয়। দেবীর মন্দির দক্ষিণমুখী মুখ্য মণ্ডপে অবস্থিত। গর্ভগৃহে লিঙ্গম (শিবের একটি রূপ) আকারে প্রধান দেবতা অবস্থিত। লিঙ্গমের চারপাশে একটি প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। গর্ভগৃহের দিকের কক্ষের স্তম্ভগুলিতে বিভিন্ন হিন্দু কিংবদন্তিের চিত্রিত ভাস্কর্য রয়েছে। স্তম্ভযুক্ত কক্ষগুলিতে অর্জুনের তপস্যা করার কিংবদন্তি ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।[১] এখানে চুল খোলা অবস্থায় পার্বতীর একটি ছবি একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। শিবের কাছ থেকে পশুপথম নামক অস্ত্র পাওয়া অর্জুনের ধাতু মূর্তিটি মন্দিরের ভিতরে রয়েছে।[৩]

ধর্মীয় গুরুত্ব ও উৎসব[সম্পাদনা]

মন্দিরের ভিতরের দৃশ্য

অষ্টম শতাব্দীর তামিল শৈব সাধক কবি সাম্বানদার, প্রথম তিরুমুরাই হিসাবে সংকলিত তেভারামের দশটি পদে উচিনাথরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।[৪] যেহেতু মন্দিরটি তেভারামে পূজনীয়, তাই এটিকে ২৭৬টি মন্দিরের মধ্যে পদাল পেট্রাস্থলম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, শৈব ধর্মশাস্ত্রে যার উল্লেখ পাওয়া যায়। মন্দিরটি কাবেরী নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। মন্দিরটিকে ভৈরব মন্দিরও বলা হয়। এই মন্দিরে ঋষি অগস্ত্য ও বাল্মীকির কৃপা প্রাপ্তি হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। দেবী শিবকামি আম্মানের মূর্তিটিতে তার বন্ধু বিজয়া এবং সরস্বতীর সাথে খেলা করার দৃশ্যে চিত্রিত হয়েছে।[৫]

মন্দিরের পুরোহিতরা উৎসবের সময় এবং প্রতিদিনের নিত্যপূজা (আচার অনুষ্ঠান) করেন। মন্দিরের আচার দিনে তিনবার করা হয়; কালসাঁথি সকাল ৮:০০ টায়, উচিকালম বেলা ১২:০০ টায় এবং সায়ারক্ষই সন্ধ্যা ৬:০০ টায়। প্রতিটি আচারে আবার চারটি ধাপ রয়েছে। সেগুলি হলো অভিষেক (পবিত্র স্নান), অলঙ্গারাম (সজ্জা), নৈভেথানম (খাদ্য নৈবেদ্য) এবং দীপা আরাদানাই (প্রদীপ জ্বালিয়ে) উচিনাথর। সোমাভারম মতো সাপ্তাহিক আচার সোমবার) এবং শুক্রাভারম(শুক্রবার), পাক্ষিক আচার যেমন প্রদোষম, এবং মাসিক উৎসব যেমন অমাবস্যা (অমাবস্যা দিন) আছে।তেমনি আবার রয়েছে কিরুথিগাই, পূর্ণিমা (পূর্ণিমার দিন) এবং সাথুর্থি। তামিল নববর্ষ তামিল মাসে চিত্তিরাই (এপ্রিল) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। মে-জুন মাসে বৈকাসি ভিসাগাম, জুন-জুলাইয়ের সময় আনি থিরুমঞ্জনম, পুরাত্তসির সময় নবরাত্রি, আইপাসির সময় অন্নবিশেকম, মারগাঝির সময় তিরুভাদিরাই এবং কার্তিকাই সোমাভারম মন্দিরে পালিত অন্যান্য উৎসব উল্লেখযোগ্য।[৫][১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. R., Dr. Vijayalakshmy (২০০১)। An introduction to religion and Philosophy - Tévarám and Tivviyappirapantam (1st সংস্করণ)। Chennai: International Institute of Tamil Studies। পৃষ্ঠা 372–3। 
  2. S., Ponnuswamy (২০১৫)। Sekkizhar's Periya Puranam। Giri Trading Agency Private Limited। পৃষ্ঠা 152। আইএসবিএন 9788179506851। ৩০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০২৩ 
  3. Ayyar, P. V. Jagadisa (১৯৯৩)। South Indian Shrines: Illustrated (2nd সংস্করণ)। New Delhi: Asian Educational Service। পৃষ্ঠা 244। আইএসবিএন 81-206-0151-3 
  4. Tirugnanasambandar Tevaram, I: 39: 3
  5. "Sri Pasupatheeswarar temple"। Dinamalar। ২০১৪। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৭