চিদম্বরম নটরাজ মন্দির
নটরাজ মন্দির | |
---|---|
তিল্লৈ নটরাজ কোয়িল | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | কুড্ডালোর জেলা |
ঈশ্বর | নটরাজ (শিব)[১] |
অবস্থান | |
অবস্থান | চিদম্বরম |
রাজ্য | তামিলনাড়ু |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ১১°২৩′৫৮″ উত্তর ৭৯°৪১′৩৬″ পূর্ব / ১১.৩৯৯৪৪° উত্তর ৭৯.৬৯৩৩৩° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | দ্রাবিড় |
সৃষ্টিকারী | চোল |
শিলালিপি | তামিল, সংস্কৃত[৩][৪] |
ভারতের দক্ষিণাংশে তামিলনাড়ুর চিদম্বরমে অবস্থিত নটরাজ মন্দিরটি শিবের নৃৃত্যরত নটেশরূপ স্বয়ং নটরাজকে উৎসর্গীকৃত একটি হিন্দু মন্দির, যা চিদম্বরম নটরাজ মন্দির বা তিল্লাই নটরাজ মন্দির নামেও সমান প্রসিদ্ধ৷[১][৫][৬] শুরুর দিকে এই মন্দিরে শিবমূর্তির সম্পর্কে বেশকিছু পৌরাণিক কাহিনীর প্রচলন হয় এবং সংলগ্ন শহরটির তার তিল্লাই নামটি পায়৷[৫][৭] পরবর্তীকালে তিল্লাই নামটি শিবের চিদম্বরম নামে পরিবর্তিত হয়ে যায়৷ চিদম্বরমনামের আক্ষরিক অর্থ "জ্ঞানের আবহ" বা " যার চিৎ অর্থাৎ মন অম্বরে বা দিগন্তে বিস্তৃৃত"৷ মন্দিরের শিল্পকলা ও স্থাপত্য শৈলী আধ্যাত্মিকতা, সৃৃজনশীলতা এবং দৈবত্বের মিলন ঘটিয়েছে৷[১][৮][৯] মন্দিরগাত্রের কারুকার্য দ্বারা ভরত মুনির বর্ণিত নাট্যশাস্ত্রের ১০৮টি করণকেই ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে, যার দর্শিত মুদ্রাগুলি ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য ভরতনাট্যমকে সমৃৃদ্ধ করেছে৷[১][৫] এই মন্দিরটি পঞ্চভূত স্থলমের অন্যতম প্রতিনিধি শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
চিদম্বরম শহর চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী থাকাকালীন খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে মন্দিরটি শেষবারের মতো পুণর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়, যা এটিকে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রাচীন উদ্বর্তিত ও বর্তমান কার্যকর মন্দিরগুলির একটি করে তুলেছে৷ খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে চোল সাম্রাজ্যের শাসকরা তাদের গৃৃহদেবতা নটরাজ ও তার মন্দির[১০] সংস্কারের পরবর্তী দুই দশক পর থেকে মন্দিরটির ওপর বারংবার বহিরাক্রমণ হওয়া স্বত্ত্বেও তার পুণর্নির্মাণ, সংস্কার ও মন্দির প্রাঙ্গণ বিস্তৃৃত করার কাজ থেমে থাকেনি৷ মন্দিরগুলিকে পোক্ত করে তা টিকিয়ূ রাখার জন্য দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে একাধিক পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং পরবর্তীকালে ঐ একই পদ্ধতিতে তার সংস্কার করা হয়৷[১১] মন্দিরে নটরাজরূপে শিব অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে হিন্দুধর্মের অন্যান্য ধারা যেমন শাক্ত ও বৈষ্ণব ধারাগুলির ভক্তিপুর্বক প্রভাব ও লক্ষ্য করা যায়৷ দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে চিদম্বরম মন্দিরপ্রাঙ্গণে প্রাথমিকভাবে দেবীমূর্তি বা আম্মান প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রাককালর মধ্যে রথসহ সূর্যদেব, গণেশ মূর্তি, মুরুগান, বিষ্ণুর মন্দির, অন্যতম প্রাচীন জলাধার "শিবগঙ্গা জলক্ষেত্র" ছাড়াও বিশালাকৃতি মণ্ডপ, তীর্থযাত্রীদের জন্য সুবন্দোবস্ত ছত্র, দেব-দেবীর মূর্তির জন্য অম্বলম, সভা ও অন্যান্য অট্টালিকা প্রভৃতি নির্মাণ শুরু হয়৷[৬][১২] স্বয়ং শিব এস্থানে নটেশ নটরাজবেশে মন্দিরের স্বর্ণসভা বা "কনক সভা"য় স্বর্ণ প্রকাশক বা "পোন অম্বলম" আনন্দতাণ্ডব রূপে বিরাজমান৷[১৩]
হিন্দুধর্মে শৈব্যধারার লিঙ্গায়েতদের মধ্যে তীর্থযাত্রাকালে শিবের পাঁচটি লিঙ্গম্মন্দির বা শিবপ্রকাশক মন্দিরের মধ্যে একটি হলো চিদম্বরম নটরাজ মন্দির৷ এছাড়াও তামিলনাড়ুতে শিব পঞ্চসভার একটি হলো এই মন্দির৷[১] এছাড়াও শিবরাত্রির দিন নিয়ম মেনে মন্দিরচত্বরে দেবতার নিকট নৃৃত্যকলা প্রদর্শন ও বার্ষিক নৃৃত্যাঞ্জলি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়৷[১৪]
নামকরণের ইতিহাস
[সম্পাদনা]দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের অন্যান্য একাধিক মন্দিরনগরীর মতো চিদম্বরম শহরটিও একটি মন্দিরনগরী৷ শহরটির নাম জনপরিচিতি পেয়েছে শহরের একটি অঞ্চলে এক বিশেষ প্রজাতির গাছের বাহুল্যর জন্য, যা চিদম্বরম নটরাজ মন্দির চত্বর এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলেও প্রচুর পরিমানে দেখা যায়৷ লুক্কাইত দেবমূর্তিও সম্ভবত সেই গাছের বন থেকে খুঁজে পাওয়া যায়৷[১৫] শহরটির পুরাতন নাম তিল্লৈ (বা তিল্লাই) যা মূলত "তিল্লাইবনম" থেকে এসেছে৷ এই তিল্লাই গাছ এক প্রকার লবণাম্বুজ গাছ যা এই অঞ্চল এবং তার আশেপাশের পিচাবরম লবণাম্বুজ অরণ্যের জলাভূমিতে জন্মে থাকে৷ এই তিল্লাই গাছ বাংলার সুন্দরবন অঞ্চলেও জন্মায় যা গেওয়া নামে পরিচিত৷[১৬][১৭]
খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে মন্দির নগরটি চোলদের রাজধানীর মর্যাদা পায়৷ তারাই শহরটিরকে তিল্লাই এর বদলে নতুন চিদম্বরম নাম দেন এবং তাদের কুলদেবতা নটরাজ শিবকে উদ্দেশ্য করে পুরাতন নটরাজ মন্দিরটির সংস্কার করান সংস্কৃত চিদম্বরম অর্থ বিশ্লেষণ ছাড়াও তামিল ভাষায় এর অন্যরকম অর্থ বিশ্লেষণ রয়েছে৷ স্থানীয়রা মনে করেন "চিদম্বরম" শব্দটি তামিল শব্দ "চিত্রাম্বলম" (বা চিত্তাম্বলম) থেকেই এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ জ্ঞানের আবহ বা জ্ঞানের প্রকাশ৷ শব্দ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় "চিত্ত" বা "চিত্থু", যার অর্থ জ্ঞান বা চেতনা এবং "অম্বলম" বলতে এখানে প্রকাশ বা পরিবেশকে বোঝানো হয়েছে৷[৯][১৮] এই যুগ্ম শব্দের মেলবন্ধন নটরাজ শিবকে উদ্দেশ্য করেই এসেছে, কারণ স্থানীয় সংস্কৃতিতে তিনিই মহাজাগতিক নটেশ বা নৃত্যকলার গুরু এবং তিনিই সেই জ্ঞানের প্রকাশক৷[৯] আবার ভাষাবিদ জেমস লোশ্তেফিল্ড "চিদম্বরম" শব্দটির অর্থ "চিন্তা দ্বারা আবৃৃত" হতে পারে বলেও দাবী করেছেন৷[১]
মধ্যযুগীয় একাধিক হিন্দু পুঁথিতে এই শহর এবং মন্দিরের বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায়৷ চিদম্বরম শহর ছাড়াও উল্লিখিত তার একাধিক নামগুলি হলো; পুণ্ডরীকপুরম, ব্যাঘ্রপুরম, শ্রীরামপুরম, পুলিয়ূর, চিত্রকূট ইত্যাদি৷[১৯] এছাড়াও পল্লবযুগের বিভিন্ন নথিপত্রে এবং উত্তর ভারতের একাধিক ধর্মীয় পুঁথিতে চিদম্বরম নটরাজকে কনকসভানাথম, পোন্নম্বলম, ব্রহ্মাস্ত্রপুরী এবং ব্রহ্মাপুরী বলে অভিহিত করা হয়েছে৷[২০]
অবস্থান
[সম্পাদনা]নটরাজ মন্দিরটি ভারতের দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থাত তামিলনাড়ু রাজ্যের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত৷ মন্দিরটি কাবেরী নদীর বামদিকের উপনদী কোল্লিড়ম নদী থেকে ৫ কিলোমটার উত্তরে এবং পূর্বদিকে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত৷ এটি রাজ্যের সদর চেন্নাই থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত৷ সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দরটি হলো ৬০ কিলোমিটার উত্তরে পুদুচেরিতে অবস্থিত পুদুচেরি বিমানবন্দর (আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা সূচক: পিঅনওয়াই, আইসিএও বিমানবন্দর কোড: ভিওপিসি)৷ ৩২ নং জাতীয় সড়ক (পুরানো সংখ্যায়ন: এনএইচ ৪৫এ) চিদম্বরম শহরর ওপর দিয়ে দীর্ঘায়িত৷ তামিলনাড়ু রাজ্য পরিবহন নিগম এবং একাধিক বেসরকারী সংস্থা পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্যের অন্যান্য বৃহত্তর শহরের সাথে এই শহরটির সংযোগ স্থাপন করেছে৷[২১] শহরটি প্রাত্যহিক রেল যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহর ও পর্যটন স্থলের সাথে সরাসরি যুক্ত৷[২২]
চিদম্বরম মন্দির নগরে অবস্থিত নটরাজ মন্দির চত্বর মোটামুটিভাবে ৪০ একর ক্ষেত্রফলে বিস্তৃৃত, যার কেন্দ্রস্থলে একটি বর্গাকার আঙিনাও রয়েছে৷ মন্দির পার্শ্বস্থ রাস্তাগুলি পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণে পরিকল্পনামাফিক অক্ষ বরাবর দীর্ঘায়িত৷ মন্দিরের পরিধির দিকে দ্বিস্তরবিশিষ্ট দেওয়াল এবং তার মাঝে একটি মনোরম উদ্যান রয়েছে৷ মন্দিরের চারদিকে চারটি প্রবেশদ্বার রয়েছে৷[২৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]নটরাজ মন্দিরটির তৈরীর ইতিহাস খুব প্রাচীন কারণ ঐ একই ধরনের মন্দির স্থাপত্যশিল্প ও ভাস্কর্য তৈরীর রীতি সমগ্র দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর নিদর্শন৷ সঙ্গম সংস্কৃতি এবং তার বাহক একাধিক পুঁথিপত্র অনুসারে ঐ একই স্থানে একটি মন্দিরের অস্তিত্বের কথা বলে, যা নটরাজ মন্দির এবং তার প্রাচীনতাকেই দর্শায়৷[৭] কিন্তু খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর প্রামাণ্য একাধিক নথিপত্রে শহরটি চিদম্বরম নামে মোটেও চিহ্নিত ছিলো না৷[২৫] খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে ও সপ্তম শতাব্দীর শুরুর দিকে অপ্পর এবং সম্বদর-এর লেখা বইতেই "চিদম্বরমের নৃত্যরত মূর্ত্তি"কে ভগবান শিবের রূপ হিসাবে উল্লেখ করার প্রমাণ পাওয়া যায়৷[২৫] স্কন্দ পুরাণের "সূত সংহিতা" অধ্যায়ের অনুচ্ছেদে এবং খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীতে রচিত একাধিক পুঁথিতে চিদম্বরমের নৃত্যরত মূর্ত্তির উল্লেখ রয়েছে৷ বর্তমানে নটরাজ মন্দিরের একটি উদ্বর্তিত অংশের প্রাচীনতা বিচার করে আদি চোলযুগের কথা উঠে এসেছে৷ চোল সাম্রাজ্যেরই প্রাচীন রাজধানী ছিলো এই চিদম্বরম শহরটি এবং নটরাজ শিব ছিলেন তাদের কুলদেবতা৷ চিদম্বরম মন্দিরটি চোলদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো৷ দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য মন্দির নগরীগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোল রাজধানী তাঞ্জোরে স্থানান্তরিত করেন এবং সেখানে খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দী নাগাদ শিবকে উদ্দেশ্য করে বৃহদীশ্বর মন্দির নির্মাণ করান৷ এটি বর্তমানে ভারতের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহের একটি৷[৭][২৬][২৭]
নটরাজ শিব এবং তার প্রশান্ত আনন্দ তাণ্ডব রূপ হিন্দু শিল্প-সংস্কৃতির একটি প্রাচীনতম ধারণা৷ "তত্ব নিধি" সহ একাধিক হিন্দু বইতে তার এই রূপের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে শিব তাণ্ডবের সাতটি রূপ এবং তাদের আধ্যাত্মিক প্রতীকের বিবরণ আছে৷ আবার "কাশ্যপ শিল্প" প্রাচীন বইটিতে ১৮ টি নৃত্যরূপসহ মূর্তিতাত্ত্বিক বিবরণ, মুদ্রার নির্দেশ এবং ভরত মুনির বর্ণিত প্রাচীন নাট্য শাস্ত্র গ্রন্থের ১০৮ টি ভিন্ন মুদ্রা, তার গুরুত্ব এবং অন্যান্য সূক্ষ্মতা লিপিবদ্ধ রয়েছে৷ পরিত্রান এবং নটরাজ শিবের ভাস্কর্য ভারতীয় অপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে কিছু রয়েছে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে তৈরী এবং অন্যান্য বেশির্ভাগ পুরাতাত্ত্বিক মূর্তিই আইহোল এবং বাদামী গুম্ফামন্দিরে পাওয়া গিয়েছে৷[২৮][২৯][note ১]
এই ঐতিহ্যশালী ঐতিহাসিক চিদম্বরম নটরাজ মন্দিরটি কবে তৈরী, কার আমলে তৈরী তার ইতিহাস কোথাও লিপিবদ্ধ না থাকায় বিষয়টি আজ অবধি স্পষ্ট নয়৷ ষষ্ট শতাব্দীর প্রথম মন্দির সংস্কারের কথা বাদ দিলে সবচেয়ে প্রথম মন্দিরটির সংস্কারের লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে শুরুর দিকে প্রথম আদিত্য চোলের আমলে এরপর আবার মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায় ঐ শতকেই চোলরাজ প্রথম পরন্তকের আমলে৷[২][১০][note ২] চোল রাজাদের কাছে নটরাজ ছিলেন তাদের কুলনায়ক বা কুলদেবতা এবং তাকে কেন্দ্র করেই চোলদের রাজধানী চিদম্বরম গঠন করা হয়েছিলো৷[৩২] ঐসময়ের প্রাপ্ত শিলালেখ বা নথিপত্রের প্রমাণ থেকে এটা ভালভাবে আন্দাজ করা যায় যে চোল নেতৃত্ব এবং চিন্তাভাবনায় শিবভক্তি এবং হিন্দুধর্মের আগম শিক্ষার বেশ গুরুত্ব ছিলো৷[২]
৯০৭ থেকে ৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চোলরাজ প্রথম পরন্তকের রাজত্ব চলাকালীন সময় থেকে প্রাপ্ত তাম্রলিপিতে তিনি নিজেকে "নটরাজ শিবের চরণকমলের সেবক সামান্য পতঙ্গ বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি নটরাজের উদ্দেশ্যে সোনার পাটের তৈরী স্থান, হেমসভা, চিৎসভা, হিরণ্যসভা এবং কনকসভা তথা মন্দিরের অন্যান্য একাধিক মন্ডপ ও পূণ্যার্থীদের জন্য পান্থশালা নির্মাণ করেছিলেন৷ তাকে "পোন বেইণ্ডা পেরুমল" বলে ধরা হয়, যার আক্ষরিক অর্থ "সেই মহাবীর যিনি স্বর্ণাবরক", যিনি চিদম্বরম মন্দিরকে স্বর্ণাবৃত করছিলেন৷[৩৩] চোলরাজ প্রথম আদিত্য এবং প্রথম পরন্তক উভয়েই মন্দিরের দেওয়ালে শিল্প ভাস্কর্যের মাধ্যমে মাহাত্য বিবৃৃতির বদ্ধ পরিকর ছিলেন৷ তারা দক্ষিণ ভারতে পুরানো ইটে গাঁথনি এবং কাঠের পরিকাঠামো সংকুল বিপুল সংখ্যক মন্দিরকে নতুন আকর্ষনীয় রূপ দিতে ও নতুন মন্ডপ তৈরীতে করতে সচেষ্ট ছিলেন৷[৩৪]
৯৮৫ থেকে ১০১৩ খ্রিষ্টাব্দ অবধি চলাকালীন প্রথম রাজরাজ চোলের শাসনকালে রাজ্যসভায় "তেবরম" সম্বন্ধ্যে সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতাংশ জানার পর তিনি নায়ন্মারের ৬৩ টি মন্ত্রোদ্ধটি উদ্ধারে উৎসাহ দেখান৷[৩৫] তিনি নটরাজ মন্দিরের প্রধান পুজারী নম্বিয়াণ্ডার নম্বির সাহায্যপ্রার্থী হন৷[৩৬] এটা বিশ্বাস করা হয় যে দৈব মধ্যবর্ত্তিতার সাহায্যে নম্বিয়াণ্ডার নম্বি একাধিক লিপি উদ্ধার করেন৷ তিল্লাই নটরাজ মন্দিরের পরিপার্শ্বের দ্বিতীয় কক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাডিজাম পাতায় লেখা এই হস্তলিপি উদ্ধারকালেই সাদা পিঁপড়ে দ্বারা আধখাওয়া অবস্থাতে ছিলো৷[৩৫][৩৬] মন্দিরের দিক্ষীত ব্রাহ্মণরা কিছু ক্ষেত্রে রাজরাজ চোলের সাথে মতবিরোধ করে এবং তারা দাবী করেন যে "নালবর" তথা চতুর্সন্যাসী তিরুনাবুক্করসর আদি অনুমতি না দিলে ও তাদের পদধুলি না পড়লে তারা মন্দিরের দিব্যদরজা এবং কক্ষগুলি খুলতে দেবেন না৷ রাজরাজ চোল ধূর্ততার সাথে চতুর্সন্যাসীর মূর্ত্তি নির্মাণ করান এবং মূর্ত্তিগুলিকে সুসজ্জিত পদযাত্রা করা মন্দিরে আনয়ন করেন৷ এভাবে তিনি পণ্ডিতদের সাথে তর্কে জয়ী হন বলে শোনা যায়৷[৩৫][৩৭] এই ঘটনার পর থেকে রাজরাজ চোল "তিরুমুরৈ কণ্ড চোলন" অর্থাৎ তিরুমুরাইয়ের রক্ষণকর্তা নাম পান৷[৩৭]
চিত্রসমূহ
[সম্পাদনা]-
নটরাজ মন্দিরের ভাস্কর্য
-
দেবতা ও তার বাহনসহ ভাস্কর্য
-
হস্তীখচিত ক্ষয়প্রাপ্ত ভাস্কর্য
-
সহস্র স্তম্ভযুক্ত নটরাজ নাটমন্দির
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: A-M। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 147। আইএসবিএন 978-0-8239-3179-8।
- ↑ ক খ গ Karen Pechilis Prentiss (২০০০)। The Embodiment of Bhakti। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 100–101। আইএসবিএন 978-0-19-535190-3।
- ↑ B. Natarajan; Balasubrahmanyan Ramachandran (১৯৯৪)। Tillai and Nataraja। Mudgala Trust। পৃষ্ঠা 24, 255–257, 473–474।, Quote: "A local Sanskrit inscription found on the eastern wall..."
- ↑ E Hultsch (১৯৮৩)। South Indian Inscriptions: Tamil inscriptions of Rajaraja, Rajendra-Chola, and others in the Rajarajesvara Temple at Tanjavur। Government Press। পৃষ্ঠা 231।
- ↑ ক খ গ Constance Jones; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 978-0-8160-7564-5।
- ↑ ক খ Harle 1994, pp. 321-323
- ↑ ক খ গ Pal 1988, p. 19
- ↑ Donald Frederick Lach; Edwin J. Van Kley (১৯৯৩)। South Asia। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 1002–1003। আইএসবিএন 978-0-226-46754-2।
- ↑ ক খ গ Chidambaram, Encyclopædia Britannica
- ↑ ক খ Harle 1994, pp. 292–304, 311–313
- ↑ Harle 1994, p. 321
- ↑ Pal 1988, p. 36
- ↑ Ca Ve 1985
- ↑ Tracy Pintchman (২০০৭)। Women's Lives, Women's Rituals in the Hindu Tradition। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 194–195। আইএসবিএন 978-0-19-803934-1।
- ↑ Reddy, 2013, p. 10
- ↑ T. A. Gopinatha Rao, Kalyan Kumar Dasgupta. (1971). Elements of Hindu iconography, Volume 1, Part 1. pp.43
- ↑ Rajarajan, R.K.K. (২০১৮)। "If this is Citambaram-Nataraja, then where is Tillai-Kūttaṉ? An Introspective Reading of Tēvāram Hymns"। History, Culture and Archaeological Studies Recent Trends, Commemoration Volume to Prof. M.L.K. Murthy, Vol. II: 613–634।
- ↑ B., Natarajan (১৯৭৪)। The city of the cosmic dance: Chidambaram। Orient Longman। পৃষ্ঠা 14।
- ↑ Ayyar 1993, পৃ. 204।
- ↑ Sakkottai Krishnaswami Aiyangar (১৯৯১)। South India and Her Muhammadan Invaders। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 108–109। আইএসবিএন 978-81-206-0536-7।
- ↑ Urban Infrastructure report (২০০৮)। Conversion of City Corporate Plan into Business Plan (PDF) (প্রতিবেদন)। Tamil Nadu Urban Infrastructure Financial Services Limited। পৃষ্ঠা 23।
- ↑ "Chidambaram railway routes"। Navlinks Indian Railways। ২০১৭। ২১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ John Loud (২০০৪)। The Rituals of Chidambaram। Institute of Asian Studies। পৃষ্ঠা 7–8। আইএসবিএন 978-81-87892-20-5।
- ↑ Pal 1988, p. 262
- ↑ ক খ Hermann Kulke; Dietmar Rothermund (২০০৪)। A History of India। Routledge। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 978-0-415-32920-0।
- ↑ Michell, George (১৯৮৮), The Hindu Temple: An Introduction to Its Meaning and Forms, Chicago: University of Chicago Press, পৃষ্ঠা 145–148, আইএসবিএন 0-226-53230-5
- ↑ Thanjavur, Encyclopædia Britannica
- ↑ S.R. Balasubrahmanyam 1971, পৃ. 287-305।
- ↑ Michell, George (২০১৭)। Badami, Aihole, Pattadakal। Jaico (Reprinted, Orig Year: 2011)। পৃষ্ঠা 92–93, 101–105। আইএসবিএন 978-81-8495-600-9।
- ↑ S.R. Balasubrahmanyam 1971, পৃ. 288-289।
- ↑ Srinivasan, Sharada (২০০৪)। "Shiva as 'cosmic dancer': On Pallava origins for the Nataraja bronze"। World Archaeology। Informa UK Limited। 36 (3): 432–450। ডিওআই:10.1080/1468936042000282726821।
- ↑ Dehejia 1990, pp. 97-101
- ↑ S.R. Balasubrahmanyam 1971, পৃ. 3।
- ↑ S.R. Balasubrahmanyam 1971, পৃ. 3-19।
- ↑ ক খ গ Culter 1987, p. 50
- ↑ ক খ Cort 1998, p. 178
- ↑ ক খ Vasudevan 2003, pp. 109-110
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "note" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="note"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি