চাঁটগাঁইয়া ভাষা
চাঁটগাঁইয়া | |
---|---|
চাঁটগাঁইয়া: চিটাইঙ্গা, চাটগাঁইয়া বুলি | |
![]() | |
উচ্চারণ | [siʈaiŋga] [saʈgaiyaŋ buli] |
দেশোদ্ভব | বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার |
অঞ্চল | চট্টগ্রাম অঞ্চল |
জাতিতত্ত্ব | বাঙালি, রোহিঙ্গা |
মাতৃভাষী | ১ কোটি ৩০ লাখ (২০০৬)[১]
|
পূর্ব নাগরী লিপি (বাংলা বর্ণমালা) | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | ctg |
ভাষাবিদ তালিকা | ctg |
গ্লোটোলগ | chit1275 [২] |
লিঙ্গুয়াস্ফেরা | 73-DEE-aa |
চাঁটগাঁইয়া (চাঁটগাঁইয়া: চাঁটগাঁইয়া বুলি) বা চিটাইঙ্গা হল ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠির একটি সদস্য ভাষা এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা। বাংলা ভাষার সাথে চাঁটগাঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও একে প্রায়ই বাংলা প্রমিত ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদিও ভাষাদ্বয় পারস্পরিক একই অর্থে বোধগম্য হয় না।[৩] তারপরও প্রধানত বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চাঁটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। ২০২০ সালে কানাডাভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০টি কথ্য ভাষার তালিকায় স্থান পায় চাঁটগাঁইয়া ভাষা। যেটি ১ কোটি ৩০ লাখ কথ্য ভাষাভাষী মানুষ নিয়ে পৃথিবীর ৮৮ তম বৃহত্তম ভাষা ও বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভাষার দিক দিয়ে ১ম বৃহত্তম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[১] একই তালিকায় বিশ্বে ৯৭তম স্থানে রয়েছে সিলেটি ভাষা, যেটি বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভাষার দিক দিয়ে ২য় বৃহত্তম ভাষা। চাটগাঁইয়া বুলির নিজস্ব কোন অক্ষর না থাকায় এ ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে বাংলা অক্ষরে আঞ্চলিক ভাষায় লিখতে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। [১]
শ্রেণীবিন্যাস[সম্পাদনা]
চাঁটগাঁইয়া ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-আর্য শাখার পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্যের উপশাখা বাংলা-অসমীয়ের সদস্য। সমগোত্রীয় অন্যান্য ভাষাসমূহ হল সিলেটি, রোহিঙ্গা, বাংলা, অসমীয়া, ওড়িয়া এবং বিহারি ভাষা তাছাড়া ইন্দো-আর্যের হিন্দির সাথে চাঁটগাঁইয়ার পরোক্ষ মিল রয়েছে। অন্যান্য বাংলা-অসমীয়া ভাষাসমূহের মত চাঁটগাঁইয়া পালি ভাষা থেকে এসেছে যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের একটি কল্পিত পূর্বসূরী প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এর উত্তরসূরী।.[৪]
ভৌগলিক বিস্তার[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল প্রধানত চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম জেলা এবং কক্সবাজার জেলার মানুষেরা চাঁটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। ২০২০ সালে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী চাঁটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলা লোকের প্রায় সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ, যেটি সারাবিশ্বে ১০০টি কথ্য ভাষার মধ্যে ৮৮তম বৃহত্তম ভাষা।
ব্যাকরণ[সম্পাদনা]
চাঁটগাঁইয়া ভাষায় ব্যাকরণের ব্যবহার বাংলা ভাষার অনুরুপ তবে উপসর্গ, অনুসর্গ এবং অন্যান্য উপায়ে শব্দের কলেবর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে।
কাজটি গতকাল করেছি >হাম ইয়েন গত হালিয়ে গইজ্জি/গইরগি কাজটি এখন করতেছি >হাম ইয়েন ইয়া গরির কাজটি আগামিকাল করব >হাম ইয়েন হালিয়ে গইজ্জুম/গইরগুম
শব্দ বিন্যাস[সম্পাদনা]
চাঁটগাঁইয়া ভাষার শব্দ বিন্যাস বা বাক্যগঠন হয় কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া ধারায়।
যেমনঃ ইঁতারা(তারা) হাঁমত(কাজে) যার গুঁই(যায়)।
কর্তা | কর্ম | ক্রিয়া |
---|---|---|
অ্যাঁই (আমি) | বাত (ভাত) | হাই (খাই)। |
ইঁতি (সে) | টিবি (টিভি) | চার (দেখছে)। |
ইঁতে (সে) | ছাইরকেলত (সাইকেলে) | চর্যের (চড়ছে)। |
ইঁতারা (তারা) | খ্যালা (খেলা) | খ্যালের (খেলছে)। |
কয়েকটি চাঁটগাঁইয়া শব্দের উদাহরণ[সম্পাদনা]
(একবচন) | (বহুবচন) |
---|---|
কেতি ইয়ান (ক্ষেত টি) | কেতি গিন (ক্ষেত গুলি) |
ফটু ইয়ান (ছবি টি) | ফটু গিন (ছবি গুলি) |
ফাতা উয়া (পাতা টি) | ফাতা গিন (পাতা গুলি) |
তার গান (তার টি) | তার গিন (তার গুলি) |
দুয়ার গান (দরজা টি) | দুয়ার গিন (দরজা গুলি) |
ফা'র গুয়া (পাহাড় টি) | ফা'র গুন (পাহাড় গুলি) |
দেবাল ইয়ান (দেয়াল) | দেবাল ইয়ুন (দেয়াল গুলি) |
কিতাপ উয়া (বই টি) | কিতাপ উন (বই গুলি) |
মানুষ উয়া/ইবা (মানুষ) | মানুষ উন (মানুষ গুলো) |
উগ্গউয়া ফাতা (একটি পাতা) | হদুইন ফাতা (কিছু পাতা) |
এক্কান ফটু (একটি ছবি) | হদিগিন/হদিইয়িন ফটু (কিছু ছবি) |
…---------অথবা---------- … | …----------অথবা----------- … |
ফাতা উগ্গউয়া (একটি পাতা) | ফাতা হদুইন (কিছু পাতা) |
ফটু এক্কান (একটি ছবি) | ফটু হদিইয়িন (কিছু ছবি) |
মরত পোয়া ইতা(ছেলেটি) | মরত পোয়াইন এগুন (ছেলে গুলা) |
মাইয়া পোয়া ইবা(মেয়েটি) | মাইয়া পোয়া এগুন (মেয়গুলো) |
(বাংলা) | (চাঁটগাঁইয়া) |
---|---|
লেবু | হঁজি |
ছাগল | ছল |
মুরগি | কুরি কুরা |
মোরগ | রাতা কুরা |
প্রধান দরজা | মইন দোয়ার |
চালচলন | হাচ্চা হাছিয়ুত/হাছলত |
বাড়ির পিছনে | বারিস/বারির পিছদ্দি |
মই | আটটা |
টাকা | টিঁয়া |
সাঁকো | অঁ |
সকাল | বেইন্না |
সন্ধ্যা | আজইন্না/আজিইন্না |
ভাল | গম |
চাকরি | চঁরি |
বজ্রপাত | টাডাল |
একটু করে | ইক্কিনি গরি |
দাড়াঁন | থিয়/থিঁয়ো |
দক্ষিণ | দইন |
ঝগড়া | হঁইজ্জা |
গোয়ালঘর | গরুর ওরা |
মুরগিরঘর | কুরার আরাইল |
পাকঘর | বসখানা, অলা |
পায়খানা | টাট্টিহানা |
পাগল | পঅল |
হাতি | আতি |
মসজিদ | মছইদ |
বেড়া | টিয়ারা,জলি,বেরা |
ঢেঁড়স | বেরা |
আসমান | আচ্চান |
মেঘ | মেওলা |
সাঁতার | আঁচুর |
বর্তা | বত্তা,চান্নি |
জাম্বুরা | তুরুনজা |
আগামি কাল | আইদ্দে হালিয়া |
তুই | তুই |
আপনি | অনে |
তুমি | তুঁই |
আসল | আছল |
অভদ্র | বেরাইজ্জা |
কলম | হলম |
গম | গিঁও |
চাল | চইল |
ছেলেমেয়ে | পোয়াছা |
খাওয়াদাওয়া | হানাফিনা |
জ্যোৎস্না | জোনাপ্পর |
বৃহস্পতিবার | বিশিদ বার |
শুক্রবার | শুক্কুর বার |
বড় ভাই | বদ্দা |
বাংলা বার মাস চট্টগ্রামের ভাষায়[সম্পাদনা]
(বাংলা) | (চাঁটগাঁইয়া) |
---|---|
বৈশাখ | বৈশাখ |
জৈষ্ঠ | জেড় |
আষাঢ় | আষাঢ় |
শ্রাবন | শন |
ভাদ্র | ভাদঅ |
আশ্বিন | আশ্বিন |
কার্তিক | হাতি |
অগ্রহায়ণ | অঁন |
পৌষ | পৌষ |
মাঘ | মাঘ |
ফাল্গুন | ফৌন |
চৈত্র | চৈত |
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান[সম্পাদনা]
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস সমৃদ্ধ। শেফালী ঘোষএবং শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবকে বলা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞি। এছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার শিল্পী সিরাজুল ইসলাম আজাদ মাইজভান্ডারী গান ও কবিয়াল গান চট্টগ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য। কবিয়াল রমেশ শীল একজন বিখ্যাত কিংবদন্তি শিল্পী। বর্তমানে অনেক পুরোনো গান কে নতুনভাবে করছে তরুণ শিল্পীরা।
চট্টগ্রামের ভাষায় অনেক গান রয়েছে তার মধ্যে কিছু গানের নাম উল্ল্যেখ করা হল
- মন হাছারা মাঝি তোর সাম্পানত চৈত্তাম নয়
- অ জেড়া ফৈরার বাপ
- বাঁশখালি মইশখালি পাল ওড়ায়া দিলে সাম্পান
- সাম্পান কেকুরত
- মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলে
- টেকনাইফফা ফনা সুয়ারি মইশখাইল্লা পান রে
- বাইক্কা টিয়া দে
- আই আইলে এনকা গরর
- হেড মাস্টরে তোয়ারে তোয়ার
- আই ভাত নাহায়ম গোসসা অইয়ম
- যার গরত গাই গরু নাই তারত বেছের দই
- ঘুম যারে বাচা তুই
- সুর্য ওড়েরে ভাই লাল মারি
- ওরেও হালা ভোমরা আই আইজ ফুলর হরা
- হতদিন অইয়েদে বারিত নজাইদ্দে
- অ হালাচান গলার মালা
- পিরিত মানি পুড়ুর পাড়ুর
- নযাইও দুবাই বন্ধু আরে ফেলাই
- যদি সুন্দর এক্কান মন ফাইতাম
- বানু রে অ বানু
- কুতুবদিয়া আর বাড়ি
- নাতিন বরই হা
- রসর হতা হই হই
- কইলজার ভিতর গাথি রাইক্কুম তোয়ারে
- বাইন দুয়ার দি নোয়াইসস তুই
- ও ভাই আরা চাঁটগাইয়া নওজোয়ান
- রইস্যা বন্ধু ছাড়ি গেলগই ।
বর্তমানে চট্টগ্রামের ভাষায় সম্প্রচারিত চ্যানেল সিপ্লাস টিভি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন তে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ Ghosh, Iman (২০২০-০২-১৫)। "Ranked: The 100 Most Spoken Languages Around the World"। Visual Capitalist (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-০৮।
- ↑ হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Chittagonian"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- ↑ "Chittagonian A language of Bangladesh"। Ethnologue: Languages of the World, Sixteenth edition। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Ethnologue (২০০৫)। "Chittagonian, a language of Bangladesh"।