বিষয়বস্তুতে চলুন

গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ
غیاث الدین اعظم شاہ
সুলতান-ই-বাঙ্গালা
বাংলাদেশের সোনারগাঁওয়ে গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের সমাধি
বাংলার সুলতান
রাজত্ব১৩৯০–১৪১১
পূর্বসূরিসিকন্দর শাহ
উত্তরসূরিসাইফউদ্দিন হামজা শাহ
জন্মঅজানা
মৃত্যুআনু. নভেম্বর ১৪১১
সোনারগাঁও, শাহী বাংলা
সমাধি
রাজবংশইলিয়াস শাহী রাজবংশ
ধর্মইসলাম

গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ (ফার্সি: غیاث الدین اعظم شاہ; শাসনকাল: ১৩৯০–১৪১১) ছিলেন ইলিয়াস শাহী রাজবংশের তৃতীয় সুলতান।[] তিনি তৎকালীন বাংলার সুপরিচিত সুলতানদের অন্যতম ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আজম শাহ। সিংহাসন আরোহণের পর তিনি গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ নাম ধারণ করেন।

বৈদেশিক সম্পর্ক

[সম্পাদনা]

তিনি যুদ্ধর চেয়ে মিত্রতা ও কূটনীতির মাধ্যমে রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি চীনের মিং সাম্রাজ্যের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, পারস্যের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদদের সাথে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং আসামকে জয় করেছিলেন।[] শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি কামরূপের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অঞ্চল জয়ের চেয়ে শাসন সুসংহত করার প্রতি তার মনোনিবেশ বেশি ছিল। জৌনপুরের খাজা জাহানের নিকট তিনি দূত ও উপহার প্রেরণ করেন।[] সমকালীন চৈনিক সম্রাট ইয়ং লির সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ১৪০৫, ১৪০৮ ও ১৪০৯ সালে তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন।[] ইয়ং লিও তার কাছে দূত ও উপহার পাঠান। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মক্কামদিনায়ও দূত প্রেরণ করেন।[] এই দুই স্থানে গিয়াসিয়া মাদ্রাসা নামক দুটি মাদ্রাসা নির্মাণে তিনি আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন।[] তার শাসনামলে জমিদার রাজা গণেশ নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।[]

সাহিত্যে আগ্রহ

[সম্পাদনা]

গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ পণ্ডিত ও কবিদের সমাদর করতেন। পারস্যের কবি হাফিজের সাথে তার পত্রবিনিময় হত। বাঙালি মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর তার বিখ্যাত রচনা ইউসুফ জুলেখা এ সময়ে সম্পন্ন করেন। এসময় কৃত্তিবাসের রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করা হয়।[]

কবি হাফিজকে বাংলায় নিমন্ত্রন করার জবাবে তিনি সুলতানকে একটি গজল রচনা করে পাঠান।

"শক্কর শিকন শওন্দ হমাঃ তূতিয়ানে হিন্দ।
যী কন্দে ফারসী কেঃ ব-বঙ্গালাঃ মী রওদ॥
হাফিয যে শওকে মজ্‌লিসে সুলতানে গিয়াস্‌দীন।
গাফিল ম-শও কেঃ কারে তূ আয নালাঃ মী রওদ॥"
হিন্দ এর তোতা হবে মিষ্টি-মুখো সকল-ই,
ফারসীর মিছরী যবে বাঙ্গালায় চলিছে।
হে হাফিয! গিয়াসুদ্দীন শাহের সভার বাসনা
ছেড়ো না, কাজ তোমারি কাঁদা-কাটায় চলিছে।[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১৪১১ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে তার মাজার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সুলতানি আমলের অন্যতম দৃশ্যমান নিদর্শন, যা সোনারগাঁও উপজেলার শাহচিলাপুরে  অবস্থিত।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Sen, Sailendra. (২০১৩)। Textbook of medieval indian history.। Primus Books। আইএসবিএন 93-80607-34-2ওসিএলসি 822894456 
  2. Ahmed, Salahuddin (২০০৪)। Bangladesh: Past and Present (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। আইএসবিএন 978-81-7648-469-5 
  3. "Ghiyasuddin Azam Shah in Banglapedia"। ২৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ 
  4. Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib - Nitish Sengupta - Google Books
  5. "আজম শাহ"onushilon.org। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৫ 
  6. "গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ্ এর মাজার, নারায়ণগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন"। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]
  • অতুলচন্দ্র রায়, প্রনবকুমার টট্টোপাধ্যায়। ভারতের ইতিহাস 
  • মজুমদার, রমেশচন্দ্র। বাংলাদেশের ইতিহাস 
পূর্বসূরী
সিকান্দার শাহ
বাংলার সুলতান
১৩৯০–১৪১০
উত্তরসূরী
সাইফউদ্দিন হামজা শাহ