যোকেবদ
যোকেবদ[ক] (হিব্রু ভাষায়: יוֹכָבֶד Yōḵeḇeḏ বা יוֹכֶבֶד Yōḵāḇeḏ"; আরবি: يوكابد بنت لاوي, প্রতিবর্ণীকৃত: Yūkābid bint Lāwī; গ্রিক: Ιωχαβέδ) ছিলেন পুরাতন নিয়ম অনুসারে লেবির কন্যা[১] এবং মরিয়ম, হারোণ ও মোশির মা। তিনি ছিলেন অম্রমের স্ত্রী ও পিসী।[২] তাঁর জীবন সম্পর্কিত কোনো বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। যিহূদী কিংবদন্তি অনুসারে মোশির মাকে তিবেরিয়া কুলমাতার সমাধিতে সমাহিত করা হয়।[৩]
মুসার জন্ম
[সম্পাদনা]আয়ারেখার গল্পটি বুক অফ এক্সোডাস (২:১-১০) এ বর্ণিত হয়েছে বলে মনে করা হয় - যদিও তার স্পষ্টভাবে এখানে নামকরণ করা হয়নি। (তাঁর নাম প্রথম বুক অফ এক্সোডাস ৬:২০ এ উল্লেখ করা হয়েছে।) তিনি মিশরে বাস করতেন, সেখানে ইস্রায়েলের বংশধররা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। ফেরাউন আদেশ দিয়েছিল যে তাদের সকল ছেলে সন্তান নীল নদে ফেলে দেওয়া হবে, কারণ তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে তারা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তাঁর কনিষ্ঠ সন্তান মুসা যখন জন্মগ্রহণ করে আয়ারেখা তাকে তিন মাস লুকিয়ে রেখেছিল, এরপর আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি একটি ঝুড়ি জলরোধী করেন এবং তাতে শিশুটিকে রাখেন। আয়ারেখা মুসাকে সেই ঝুড়িতে রেখে তা নীল নদে ভাসিয়ে দেন। ঝুড়িটি নদীতে স্নানরত ফেরাউনের কন্যার হাতে পড়ে। বাচ্চাটিকে দেখে তারে মনে সহানুভূতি আসে এবং তিনি তাকে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। বাচ্চাটির "বোন" (মিরিয়াম বলে অনুমান করা হয়) এগিয়ে আসে, তাকে বাচ্চাটিকে লালন-পালনের জন্য একজন হিব্রু মহিলা খুঁজার পরামর্শ দেয়। ফেরাউনের মেয়ে রাজি হয়ে যায় এবং মিরিয়াম তার মাকে ডেকে আনেন, আর বাচ্চাটির যত্ন নেওয়ার জন্য তাকেই নিযুক্ত করা হয়। এইভাবে আয়ারেখা তার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তাঁর পুত্রকে লালন-পালন করেছিলেন এবং তাকে ফেরাউনের কন্যার কাছে নিয়ে এসেছিলেন, ফেরাউনের কন্যা তাকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।[৪] কাহিনিটি মুসার ঘটনার সাথে এখনও প্রচলিত রয়েছে, তিনি বড় হয়ে প্রবাসের নেতা হয়েছিলেন এবং তাঁর লোকদের মিশর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন।
আমরামের সাথে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]বুক অফ নাম্বার অনুসারে আয়ারেখা মিশরে থাকাকালীন লেবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।[১] আমরাম লেবির পুত্র কহাতের ছেলে। এই বর্ণনা মতে আয়ারেখা তার স্বামী আমরামের ফুফু হন। ঘনিষ্ঠ রক্তীয় সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের বিবাহ পরবর্তীতে মুসা আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করেন।[৫] এক্সোডাস ৬:২০ এর মাসোরেটিক পাণ্ডুলিপি অনুসারে আয়ারেখাকে আমরামের পিতার বোন বলা হয়েছে, তবে প্রাচীন অনুবাদগুলি ভিন্ন মত পোষণ করে। সেপ্টুয়াজিন্টের কিছু গ্রীক এবং লাতিন পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে আয়ারেখা ছিলেন আমরামের পিতার চাচাতো বোন এবং অন্যরা বলে যে তিনি আমরামের চাচাতো বোন ছিলেন।[৬] লেবির অ্যাপোক্রিফাল টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে যে লেবির কন্যা হিসাবে লেবির ৬৪ বছর বয়সে যোকেবদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ইহুদি রব্বিদের সাহিত্যে
[সম্পাদনা]তালমুদের কিছু রব্বি শিফ্রাহর সাথে যোকেবদকে সনাক্ত করেছেন, তিনি বুক অফ এক্সোডাস এ বর্ণিত ধাত্রীদের মধ্যে একজন, নতুন জন্মগ্রহণকারী ছেলে সন্তানদের হত্যা করার জন্য ফেরাউনের আদেশ দিয়েছিল।[৭] এটি সনাক্ত করার সময় রব্বিরা সেই বংশগুলি ব্যাখ্যা করে যা বুক অফ এক্সোডাস এ ঈশ্বর ধাত্রীদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে বর্ণনা করেছ[৮]ে যা যাজকত্ব ও রাজকীয়দের মতো ছিল; এই বংশগুলিকে তালমুদিক রব্বীরা যথাক্রমে যোকেবদের পুত্র- যথাক্রমে মুসা এবং হারুনের রূপকধর্মী হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।[৯]
বংশতালিকা
[সম্পাদনা]তেরহ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সারা[১০] | অব্রাহাম | হাগার | হারণ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
নাহোর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইশ্মায়েল | মিল্কা | লোট | যিষ্কা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইশ্মায়েলীয় | ৭ পুত্র[১১] | বথূয়েল | ১ম কন্যা | ২য় কন্যা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইস্হাক | রিবিকা | লাবন | মোয়াবীয় | অম্মোনীয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এষৌ | যাকোব | রাহেল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বিল্হা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইদোমীয় | সিল্পা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
লেয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১. রূবেণ ২. শিমিয়োন ৩. লেবি ৪. যিহূদা ৯. ইষাখর ১০. সবূলূন দীণা (কন্যা) | ৭. গাদ ৮. আশের | ৫. দান ৬. নপ্তালি | ১১. যোষেফ ১২. বিন্যামীন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যাকোব | লেয়া | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
লেবি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গের্শোন | কহাৎ | মরারি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
লিব্নি | শিমিয়ি | যিষ্হর | হিব্রোণ | উষীয়েল | মহলি | মূশি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যোকেবদ | অম্রম | মীশায়েল | ইল্সাফন | সিথ্রি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মরিয়ম | হারোণ | মোশি | সিপ্পোরা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গের্শোম | ইলীয়েষর | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইসলামিক দৃষ্টিতে
[সম্পাদনা]লোহিত সাগর বিভাজন, জ্বলন্ত গুল্ম এবং দশ আদেশের পাশাপাশি: কুরআনে মুসার কাহিনীকে কিছু সংযোজনসহ বিশদ ও সামান্য পার্থক্য সহ বর্ণনা আছে। কুরআনে তাঁর মা যোকেবদ (আরবি: يوكابد ইয়ুকাবিদ) এবং শিশু মুসাকে বাঁচানোর জন্য তাঁর প্রচেষ্টার বিবরণ আছে।[১২]
ইসলামী নবী মুহাম্মদের মা আমিনার গর্ভাবস্থাকালীন অস্বাভাবিক ঘটনার গল্পগুলি[১৩] যোকেবদ যখন মুসাকে বহন করছিলেন তখন তাঁর একই রকম অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করা হয়েছে।[১৪] এই তুলনার তাত্পর্য হিব্রু ঐতিহ্যের সাথে আরবি লোককাহিনীর সম্বন্ধ থেকে উত্স বোঝা যায়।[১৪]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/56/Pedro_Am%C3%A9rico_-_Mis%C3%A9s_e_Jocabed_-_1884.jpg/220px-Pedro_Am%C3%A9rico_-_Mis%C3%A9s_e_Jocabed_-_1884.jpg)
দ্য টেন কমান্ডমেন্টস চলচ্চিত্রে তাকে "যোশেবেল" বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
চরিত্রটি 'জোসেভেদ' নামে ''দ্য প্রিন্স অব ইজিপ্ট'' এর সংক্ষিপ্তসারে উপস্থাপিত হয় এবং এটি ইজরায়েলের প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী অফ্রা হাজা দ্বারা চিত্রিত (এবং সাদৃশ্য) হয়। চলচ্চিত্রে যখন তিনি মুসাকে বহকারি ঝুড়ি নদীর তীরে রাখেন এবং "কোথাও তিনি মুক্ত থাকতে পারেন" বলে মুসাকে রক্ষার জন্য নদীকেও অনুরোধ করেছিলেন তখন তিনি শিশু মুসাকে একটি ঘুমপাড়ানি গান শুনান। অফ্রা চলচ্চিত্রটির ডাবিংয়ের জন্য ১৮ টি ভাষায় (তার মূল হিব্রু সহ) ঘুমপাড়ানি গানটি গেয়েছেন।
টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Numbers
- ↑ Exodus
- ↑ Hebrews
- ↑ Exodus
- ↑ Leviticus
- ↑ Exodus 6:16–20, LXX
- ↑ Exodus
- ↑ Exodus
- ↑ Exodus Rabbah 48:5
- ↑ Genesis 20:12: Sarah was the half–sister of Abraham.
- ↑ Genesis 22:21-22: Uz, Buz, Kemuel, Chesed, Hazo, Pildash, and Jidlaph
- ↑ Roraback, Amanda (২০০৪)। Islam in a Nutshell। Enisen Publishing। পৃষ্ঠা 27।
- ↑ Lassner, Jacob (২০১০)। Islam in the Middle Ages: the origins and shaping of classical Islamic Civilization। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 21।
- ↑ ক খ Lassner, Jacob (২০১০)। Islam in the Middle Ages: the origins and shaping of classical Islamic Civilization। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 31।