আসিয়া বিনতে মুজাহিম
আসিয়া বিনতে মুজাহিম | |
---|---|
(আরবি): آسية | |
![]() আরবি ক্যালিগ্রাফিতে আসিয়ার নাম | |
জন্ম | |
মৃত্যু | |
সমাধি | মিশর |
অন্যান্য নাম | বিবি আসিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | দ্বিতীয় রামেসিস |
পিতা-মাতা | মুজাহিম |
আসিয়া (আরবী: آسية; অর্থ: দুঃখী), পুরো নাম আসিয়া বিনতে মুজাহিম, প্রাচীন মিশরের ফেরআউনের (হিব্রু ফারাও) দ্বিতীয় রামেসিসের স্ত্রী ছিলেন। তিনি অনেক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করে ন্যায়ের পথে অবিচল ছিলেন। পৃথিবীর আরাম-আয়েশকে পদাঘাত করে ঈশ্বরভীতি ও আল্লাহপ্রীতিকে প্রধান্য দিয়েছেন।[১]
আসিয়ার নিকট মুসা[সম্পাদনা]
মিসরের ফেরআউন যখন জানতে পারে তাকে ধ্বংসকারী শিশু বনি ইসরায়েল বংশে অচিরেই জন্ম হবে, তাই সেই সময়ে বনি ইসরায়েল যত শিশু জন্ম হতো তাকেই হত্যা করার আদেশ দিয়ে ছিল। এই সময়ে মুসা এর জন্ম হয়। কুরআনে বলা হয়-
“ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী।” [ সূরা কাসাস, আয়াত-৪]
ফেরআউনের হাত থেকে বাচাঁতে মুসাকে সিন্দুকে ভরে নীল নদিতে ভাসিয়ে দেন তার মাতা। তা ভাসতে ভাসতে ফেরআউনের ঘাটে গিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে। আসিয়া তা দেখে বাচ্চাটিকে কুড়িয়ে নেন। কুরআনে বর্ণিত-
“অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যান। নিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল।” [ সুরা কাসাস, আয়াত-৮ ]
আসিয়ার কোনো সন্তান ছিল না। সিন্দুকে সন্তানটিকে দেখে তার মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। তাকে লালন-পালন করার ইচ্ছে জাগে। একবার ফেরাউন শিশু মুসাকে কোলে নিলে মুসা ফেরাউনের দাড়ি ধরে গালে একটি চড় মারে। এতে ফেরআউন রাগান্বিত হয়ে মুসাকে হত্যা করতে চাইল আসিয়া তাকে হত্যা করতে দেয়নি। কুরআনে বর্ণিত-
"ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না। [ সুরা কাসাস, আয়াত-৯ ]
স্ত্রীর এই আবদারের কাছে ফেরআউন আর আপত্তি করতে পারেনি। এই শত্রুর ঘরেই মুসার লালন-পালন হয়ে ছিল।
মুসার প্রচারকৃত ধর্ম গ্রহণ[সম্পাদনা]
আসিয়া ছিল ধনী পরিবারের মেয়ে। ফেরআউনের সাথে বিয়ে দিলেও সে ফেরআউনের মতো হতে পারেনি। সে ছিল দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরআউনদের মতো অহংকারী ছিল না। সে মুসা ও হারুনের প্রচারকৃত ধর্ম গ্রহণ করেছিল। মুসার ধর্ম গ্রহণ করার কারণে তাকে অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তারপরেও সে তার ধর্ম ত্যাগ করেনি।[৩] আল্লাহ কুরআনে বলেন-
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِلَّذِينَ آَمَنُوا اِمْرَأَةَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ[৪]
অনুবাদ: আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগের ক্ষেত্রে</ref>
ট্যাগ যোগ করা হয়নি[৫]
হাদিসে আসিয়া সম্পর্কে আলোচনা[সম্পাদনা]
- আবু মুসা আশআরী বর্ণনা করেন যে নবি মুহাম্মাদ বলেছেন:
পুরুষদের মধ্যে অনেক পুরুষই পরিপূর্ণ মর্যাদায় পৌঁছেছে, তবে মহিলারা কেউই আছিয়া ও মরিয়ম বিনতে ইমরানের মর্যাদায় পৌঁছেনি এবং আয়েশার মর্যাদা সকল মহিলাদের এমন যেমন সারিদ সকল মধ্যে। [৬]
- ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে নবী মুহাম্মদ মাটিতে চারটি লাকড়ি রেখে বলতে লাগলেন:
তোমরা কী জানো এগুলো কী? সাহাবাগণ বলেছেন যে, আল্লাহ ও তার রাসূলই বেশি জানে:
জান্নাতের মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক বিশিষ্ট হলেন খাদিজা বিনতে খোওয়ালাদ ও ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনাত মুযাহিম ও মরিয়ম বিনতে ইমরান। [৭]
- আনাস বর্ণনা করেন- যে নবী মুহাম্মদ বলেছেন:
বিশ্বের সকল মহিলাদের মধ্যে (মর্যাদাবান হিসেবে) মরিয়ম বিনতে ইমরান,খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট। [৮][৯]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Asiya
- ↑ http://www.sunnipediabd.com/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BF_%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_(%E0%A6%86%E0%A6%83)
- ↑ "Asiya"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-১১।
- ↑ "القرآن الكريم - تفسير القرطبي - تفسير سورة التحريم - الآية 11"। quran.ksu.edu.sa। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৬।
- ↑ ইমাম তিরমিযী এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
- ↑ صحیح بخاری حدیث نمبر 3230، صحیح مسلم حدیث نمبر 2431
- ↑ مسنداحمد حديث نمبر 2663
- ↑ سنن ترمذی حدیث نمبر 3878
- ↑ ইমাম তিরমিযী এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন।