বিষয়বস্তুতে চলুন

সিরাজগঞ্জ জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°১৯′৪৮″ উত্তর ৮৯°৩৭′১২″ পূর্ব / ২৪.৩৩০০০° উত্তর ৮৯.৬২০০০° পূর্ব / 24.33000; 89.62000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Sirajganj District থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সিরাজগঞ্জ জেলা
জেলা
উপরে-বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: শাহজাদপুর দরগাহ মসজিদ, যমুনা ইকো পার্ক, বঙ্গবন্ধু সেতু, চায়না ব্যারেজ, নবরত্ন মন্দির, যমুনা নদী, রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, হার্ড পয়েন্ট, চলন বিল
ডাকনাম: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার/তাঁতকুঞ্জ/গো-রাজধানী/দুধের দেশ[]
বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জ জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জ জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°১৯′৪৮″ উত্তর ৮৯°৩৭′১২″ পূর্ব / ২৪.৩৩০০০° উত্তর ৮৯.৬২০০০° পূর্ব / 24.33000; 89.62000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
প্রতিষ্ঠা১৯৮৪
সরকার
 • জেলা প্রশাসকমোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার
আয়তন
 • মোট২,৪৯৭.৯২ বর্গকিমি (৯৬৪.৪৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)[]
 • মোট৩৫,৪৪,০৮০
 • জনঘনত্ব১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৮%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৬৭০০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ৮৮
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা সিরাজগঞ্জ রাজশাহী বিভাগের তৃতীয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের চতুর্থ সর্বোচ্চ উন্নত জেলা শহর এবং একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।সিরাজগঞ্জ জেলার দারিদ্র্যের হার ৬%।[] তাঁতশিল্প এ জেলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে। তা ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের ইকোপার্ক, শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্ক, বাঘাবাড়ি বার্জ মাউনন্টেড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাঘাবাড়ি নদী বন্দর,বাঘাবাড়ি প্যারামাউন্ট বাংলা ট্রাক এনার্জি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্য ও শৈল্পকর্মের নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে।

জেলার ইতিহাস[]

[সম্পাদনা]

প্রাচীন কাল

সপ্তম শতাব্দীর পর থেকেই ময়মনসিংহের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ফরিদপুর বছরের প্রায় আট/নয় মাস পানির নিচে থাকতো। ফলে জনবসতি ছিল কম। এ অঞ্চল থেকে পানি সাগরের দিকে নেমে গেলে বছরের চার পাঁচ মাস সময়ে পাশ্ববর্তী কায়েম অঞ্চল থেকে লোকজন আবাদ বসত চালু রাখার জন্য ভীড় জমাতো। সেই শুকনো মৌসুমে কতিপয় মেহনতি মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে পরবর্তী বছরে প্লাবনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জাংগাল (বাঁধ) তৈরী করত। ফলে জাংগালের মধ্যকার জলাভূমি কিছুকালের মধ্যেই কায়েমী অঞ্চলের আকার ধারণ করত। ধারণা করা হয় সমূদ্রতট থেকে সমতট শব্দটির উৎপত্তি। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর সঙ্গে প্রায়ই ঐক্যমতে ডাঃ কালিদাস নাগ, পিএইচডি তদানিন্তন বঙ্গের পূর্বের নিম্নাঞ্চলকে অর্থাৎ পূর্ব বঙ্গের প্রায় অংশকেই সমতট বলে আখ্যা দিয়েছেন। ময়মনসিংহের অধিকাংশ এলাকাই এই সমতটের অন্তর্গত সমতল ভূমি। শশাঙ্ক ৬১৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গদেশে রাজত্ব করেন, জ্ঞান সমগ্র আর্য্যবর্তে বাঙ্গালীদের সম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন এবং আংশিক সে স্বপ্নকে সফল করেন (R.C. Mojuccedu Bangladesher Itihash-P-31)। পরবর্তী যুগে বাঙ্গালী বংশোদ্ভুত শেরশাহের পুত্র সলিম শাহ শের শাহের মৃত্যুর পর জালাল উদ্দিন খাঁ সলিম শাহ নাম ধারণ পূর্বক দিল্লীর মসনদে আরোহন করেন। তিনিই একমাত্র বাঙালী যিনি দিল্লির মসনদে শেরশাহের পুত্র রূপে আরোহণ করে আট বৎসর রাজত্ব করেন (১৫৪৫-১৫৫৩ খৃঃ)। তিনি পাবনা জেলার চাইমোহর থানার অন্তর্গত সমাজ নামক গ্রামে জন্মলাভ করেন ও প্রতিপালিত হন এবং পরে দিল্লী গমন করে পিতার সহিত মিলিত হন ও শাহী মসনদে আরোহন করেন। পাল রাজাগণের সময় এ অঞ্চলের শাসকদের লাট, চাট, ভাট ইত্যাদি পদ দেয়া হত। সম্ভবত এই ভাট হইতেই বঙ্গদেশের যমুনা নদীর ও রাজমহলের নিম্নেদেশ - পাবনা ও ফরিদপুর অঞ্চল ভাটের দেশ বলে পরিচিত। পাবনা জেলা ও তৎকালে সিরাজগঞ্জ মহকুমায় যে বিরাট চলনবিলের অস্তিত্ব বর্তমান তা দৃষ্টে ও পাবনা জেলার ইতিহাস (রাধা রমন সাহা-১-৩ খন্ড), অধ্যাপক আব্দুল হামিদ এর চলনবিলের ইতিকথা ও প্রমথবিশীর চলনবিল গ্রন্থে যে ঐতিহাসিক বর্ণনা বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়, তৎসঙ্গে হজরত শাহ জালাল (রঃ) জীবনী গ্রন্থ (কৃত চৌধুরী গোলাম আকবর) এর খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের টাঙ্গাইলের ইতিহাস এবং করটিয়া খান পন্নী সাহেবের নিজস্ব ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে রাজমহল পাহাড় হতে টাঙ্গাইলের দক্ষিণে আটিয়া গ্রামের পশ্চিম পাশের লৌহজং নদী পর্যন্ত বিশাল জলধিতল ছিল (আটিয়া শাহী মসজিদ লৌহজং নদীর পূর্বতীরে প্রতিষ্ঠাকাল ১৬০৯)। সম্রাট আকবরের রাজত্ব কালে কাগমারীর দরবেশ হযরত শাহ জালাল (রঃ) এবং তার মামা শাহানশাহ হযরত বাবা আদম (রঃ) কাশ্মিরী এ অঞ্চলে আগমন ও ইসলাম প্রচার করেন। তাঁদের জীবনীতেই বিশাল জলধির মধ্যে চর জাতীয় প্রাচীন ভূমির উল্লেখ পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে শাহজাদপুরে হযরত শাহদৌলা মখদুম (রঃ) সিরাজগঞ্জে হযরত শাহ সিরাজউদ্দিন, নওগাঁতে দাদাপীর, রাজশাহী জেলার বাঘাতে শাহাদৌলা জামী দানেশমন্দ (রঃ) এবং চর মধ্যাহ্ন দ্বীপে বারুহাস ইমামবাড়ী পীর সাহেবের আগমন ঘটে।

মধ্য যুগ

১১৯৩ খৃষ্টাব্দে কুতুব উদ্দিন আইবেক দিল্লী জয় করেন। কুতুব উদ্দিন তার অনুচর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজিকে বাংলা ও বিহার জয় করার জন্য প্রেরণ করেন। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ খৃষ্টাব্দে বাংলা জয় করেন ও এ অঞ্চল মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। এদেশে মুসলিম বিজয়ের ১৪০ বছর পর ইবনে বতুতার সফর নামা এবং ২০০ বছর পর মাহুয়ানের বিবরণ এই দুটো মিলিয়ে দেখলে আমরা খুব সহজেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, মুসলিম বিজয়ের ১৫০ বছরের মধ্যেই সিরাজগঞ্জের অধিবাসীদের জীবনে ইসলাম একটা অপ্রতিরোধ্য ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে এবং ২০০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ যখন চৈনিক দূত মাহুয়ান এদেশে সফর করেন, তখন সিরাজগঞ্জের জনসাধারণের অধিকাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিল। মাহুয়ানের সফরের সময় সিরাজগঞ্জ তথা ভাটি অঞ্চলের জনসাধারণ তখন কেবল মুসলমান হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল তাই নয়, বরং স্বাধীন গোষ্ঠি হিসেবে সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এ অঞ্চলের জনসাধারণ তখন মিথ্যা ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে জানত না। এভাবেই তারা ১৫৩৮ সাল পর্যন্ত স্বাধীনভাবেই বসবাস করছিল। ১৫৩৮ সালে মোঘল বাদশা হুমায়ূন গৌড় দখল করেন (সেপ্টেম্বর ১৫৩৮ খৃষ্টাব্দ)। গৌড়ের সুরম্য প্রাসাদাবলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বাদশা হুমায়ূন খুবই মুগ্ধ হন এবং তিনি এর নাম রাখেন জান্নাতাবাদ।

মুঘল আমল

মুঘল আমলে (১৫৩৮-১৭৪০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত) সুবা বাংলাকে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৯টি সরকারে এবং ৬৮২টি পরগণায় বিভক্ত করা হয়েছিল। সেই সরকার গুলির মধ্যে ‘সরকার বাজুহা’ আকার আয়তনে ছিল অনেক বড়। তৎকালে সরকার বাজুহাকে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ৩২ টি মহলে বিভক্ত করে। সে সময় সরকার বাজুহা মোট রাজস্ব ছিল ৩৫,১৬,৮৭১ দাম যা টাকার হিসেবে ৯,৮৭,৯২১ টাকা (১ টাকা = ৪০ দাম)। সিরাজগঞ্জ জেলাটি সেই সরকার বাজুহার অন্তর্গত হলেও ৩২টি মহলের কোনটির মধ্যে অবস্থিত সেটা ধারণা করা কঠিন। ‘‘সরকার বাজুহার’’ মধ্যে আমাদের অতি পরিচিত মোমেনশাহী, ভাওয়াল বাজু ও ঢাকা বাজু উল্লেখ আছে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ নামে আমরা কোন মহলের নাম দেখি না। সিরাজগঞ্জ যে সরকার বাজুহার মধ্যকার একটি এলাকা এ সম্বন্ধে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ঢাকার কিছু এলাকা এবং ভাওয়ালগড় সহ বৃহত্তর মোমেনশাহী জেলার সমগ্র এলাকাই ছিল সরকার বাজুহার অন্তর্গত। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৮৪৫ সনের পূর্ব পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ ছিল মোমেনশাহী জেলার অন্তর্গত। ঈশা খানের আমলে সাগরের মতো যমুনা নদীর অথৈ পানি ছুটে চলতো এপার থেকে ওপার দশ বার মাইল জুড়ে। সিরাজগঞ্জ শহরটি যেখানে এখন অবস্থিত, সেখানটিতে জনমানুষের বসতি ছিল না সে আমলে। যমুনা নদীর মাঝি মাল্লারা সেখানে কখনো নৌকা ভিড়াতো না। সে এলাকাটি তখন লোকে বলতো ভুতের দিয়ার। এ নিয়ে রয়েছে বহু জনশ্রুতি। রাত্রি হলেই নাকি হাজারে হাজারে লাখে লাখে ভুত সেই দিয়ারে হাজির হত। যদি কোন নৌকা বিপাকে পড়ে সেই ভুতের দিয়ারের ধার কাছ দিয়ে রাত্রিকালে উজান ভাটি চলতো, তাহলে দেখা যেত নৌকার মাঝি মাল্লা চরনদারদের ঘাড় মটকিয়ে রেখেছে ভুতেরা। তবে এখনো সিরাজগঞ্জ আদি শহরটি যে মৌজাতে অবস্থিত, তার নাম বহাল তবিয়তে ভুতের দিয়ার রূপেই টিকে আছে। বর্তমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা এবং সদর ভূমি অফিস, পৌরসভা কার্যালয় ভুতের দিয়ার মৌজায় অবস্থিত।

বৃটিশ আমল

বৃটিশ আমলের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের ৬৮২টি পরগনাকে জেলা হিসাবে গণ্য করা হয়নি। প্রথমে মুসলিম আমলের প্রশাসনিক কাঠামোকে পরিবর্তন করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশের প্রশাসনিক তাগিদ পূরণের উদ্দেশ্যে সারা দেশের মধ্যে মাত্র ৪/৫জন জেলা কালেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। বৃটিশ আমলের প্রথম দিকে নোয়াখালী, রংপুর, ঢাকা, ও মোমেনশাহী এই চারটি জেলা কালেক্টরেটের সাহায্যে বাংলাদেশের মতো একটি বিশাল দেশ শাসন করা হতো। ১৭৮৬ থেকে ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত লর্ড কর্ণওয়ালিসের আমলে সিরাজ আলী চৌধুরী নামে এক সম্ম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন সোহাগপুরে। ১৭৮৭ সালে মোমেনশাহী জেলা স্থাপিত হয়। এই একই বছরে লর্ড কর্ণওয়ালিসের কাছ থেকে বড় বাজু পরগনার সাত আনা হিস্যা সিরাজ আলী চৌধুরী ‘সিরাজগঞ্জ জমিদারী’ নামে পত্তনী লাভ করেন। কিন্তু বৃটিশ আমলের প্রথম দিকে জমিদারের হাতে যেহেতু প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়নি, সেহেতু সিরাজগঞ্জ ছিল মোমেনশাহী জেলার প্রশাসনিক আওতায়; তখন জামালপুর, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতিও মোমেনশাহী জেলার আওতাধীন ছিল। ১৭৯০ সালে মোমেনশাহী জেলার কালেক্টর সাহেব বিশাল মোমেনশাহী জেলার স্থানে স্থানে থানা স্থাপনের তাগিদে ঢাকা রেভিনিউ বোর্ডের কাছে পরানগঞ্জ, কটিয়াদী, চাঁদগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জগনাথগঞ্জ, শের মদন, শের দিবার দিয়া, শের মাচরা প্রভৃতি স্থানের প্রস্তাব পেশ করেন। ১৭৯২ সালের মধ্যে সিরাজগঞ্জসহ ঐসব এলাকায় প্রথম বিলেতি প্যাটার্নের থানা স্থাপিত হয়। ১৮৪৫ সালে মোমেনশাহী জেলায় ধরমচান্দ ঘোষ প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হয়ে আসেন। ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনশাহী জেলার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুইটি মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব করেন। শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, হাজীপুর ও পিংনাসহ ৪ থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা এবং নিকলী, বাজিতপুর, ফতেপুর ও মাদারগঞ্জ এই ৪ থানা নিয়ে হুসেনপুর বা নিকলী মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। ১৮৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সরকার সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর মহকুমা দুইটি স্থাপনের অনুমতি দেন। ফলে ১৮৪৫ সালে বিশাল মোমেনশাহী জেলার অধীনে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ নামে দুইটি মহকুমার সৃষ্টি করা হয়। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা যায়, পরবর্তীকালে মোমেনশাহী জেলাকে বিভক্ত করে ১৮৬৫ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাংগাইল এবং ১৮৮২ সনে নেত্রকোণা মহকুমা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১৮২৮ সালে রাজশাহীর একাংশ নিয়ে পাবনা জেলার পত্তন হয়েছিল। সিরাজগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ১৮৫৫ সালে যমুনা নদীর গতি পরিবর্তনের কারণে সিরাজগঞ্জ থানাকে পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় (পাবনা গেজেট পৃষ্ঠা নং ৪৩)। ১৮৭৫ সালে রায়গঞ্জ থানাকে সিরাজগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করে সিরাজগঞ্জের প্রশাসনিক বিস্তৃতি ঘটানো হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

অবস্থান ও আয়তন

[সম্পাদনা]

রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৪২ কিমি। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২৪°২২' ও ২৪°৩৭' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৬' ও ৮৯°৪৭' পূর্ব দ্রাঘিমা এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের অবস্থান। এ জেলার উত্তরে বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলামানিকগঞ্জ জেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল জেলাজামালপুর জেলা, পশ্চিমে পাবনা জেলা, নাটোর জেলাবগুড়া জেলা। এ জেলার আয়তন ২৪৯৭.৯২ ব: কি.মি.।[]

প্রশাসনিক এলাকা

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান আমলের মহুকুমা সিরাজগঞ্জকে জেলায় উন্নীত করা হয় ১ এপ্রিল ১৯৮৪ সালে। সিরাজগঞ্জের জেলা ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। উপজেলাগুলি হল:

এছাড়াও উপরোক্ত উপজেলা ভিত্তিক থানা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলায় সলঙ্গা থানা, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা, জিআরপি (রেলওয়ে), হাটিকুমরুল হাইওয়ে ও এনায়েতপুর থানা নামে আরো পাঁচটি থানা আছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার পৌরসভা সমূহ

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ জেলায় মোট ৭টি পৌরসভা রয়েছে। যার মধ্যে চারটি (ক শ্রেণি),দুইটি (খ শ্রেণি) এবং একটি গ শ্রেণি। সিরাজগঞ্জ পৌরসভা জেলার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান পৌরসভা। সিরাজগঞ্জের পৌরসভাগুলো হলো:

জনসংখ্যার এবং অন্যান্য উপাত্ত

[সম্পাদনা]

জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]
লিঙ্গ জনসংখ্যা (জন) মোট জনসংখ্যা (জন)

গণশুমারি-২০২২

সাক্ষরতার হার
পুরুষ ১,৭৭৯,১৭৫ ৩৫,৪৪,০৮০ ৬৮.৮৮%
নারী ১,৭৬৪,৯০৫

ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]
সিরাজগঞ্জ জেলার ধর্মসমূহ[]
ধর্ম শতাংশ
মুসলমান
  
৯৫.৪৭%
হিন্দু
  
৪.৫%
অন্যান্য
  
০.০৩%

২০২২ সালের আদমশুমারির সময় সিরাজগঞ্জে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস।মোট ৯৫.৪৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা। ৪.৫ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা বাকী ০.৩% শতাংশ অন্যন্য ধর্মালম্বী। এ অঞ্চলে বাঙালী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী।

সিরাজগঞ্জ শহর

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ শহর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে এবং ঢাকা শহর হতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শহর। এখানে ১৫টি ওয়ার্ড এবং ৫২টি মহল্লা রয়েছে। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ৪,৫০০০০ এর ও বেশি। সিরাজগঞ্জ শহরকে একসময় কলকাতা ও নারায়ণগঞ্জের সমতুল্য পাট ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হতো। বর্তমানে এটি পাট ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র। এখানকার পাটকলগুলো তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের প্রথম দিককার পাটকলের মধ্যে পড়ে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]

চিত্তাকর্ষক স্থান

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ জেলার চিত্তাকর্ষক স্থানসমূহ হচ্ছে —

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ শিল্প সংস্কৃতিতে অনেককাল থেকে একটি গর্বিত,ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধের জেলার নাম সিরাজগঞ্জ। অনেক জ্ঞাণী-গুণী তাদের অনন্য সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে নিজেরা যেমন অমর হয়ে আছেন তেমনি নিজ জেলা তথা দেশ জাতিকে আগামীর স্বপ্নে উদ্ভাসিত করেছেন। দেশবরেণ্য অনেক কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও নাট্যকারের জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জের পুণ্যভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলাদেশের জাতীয় চারনেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী। জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের সাবেক শিল্পমন্ত্রী আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ, গণিত সম্রাট যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, আন্তর্জাতিক ফখলরবিদ ড. মাযহারুল ইসলাম। যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন। এখানে জন্মগ্রহণ করেন বিজ্ঞান সাহিত্যিক ড. আব্দুল্লাহ আল-মুতি শরফুদ্দিন, বহুভাষাবিদ গোলম মুকসুদ হিলালী। বিশিষ্ট সাংবাদিক, অভিনেতা, চিত্র পরিচালক ফতেহ লোহানী, ফজলে লোহানী ও কামাল লোহানীর জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা এবং বাপ্পি লাহিড়ী।

এছাড়া ও সিরাজগঞ্জের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেন অনল প্রবাহে কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী,কবি রজনীকান্ত সেন, সাহিত্যিক মোহাম্মাাদ বরকতুল্লাহ, নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন, প্রখ্যাত উপন্যাসিক ও গল্পকার মকবুলা মঞ্জুর, কবি সমুগ্র গুপ্ত, গল্পকার শহিদুল জহির, কথাসাহিত্যিক সৈয়দা ইসাবেলা, কথাসাহিত্যিক অনামিকা হক লিলি, কবি নিশাত খান ও নাট্যকার মান্নান হীরা। তারা সবাই প্রয়াত।

এছাড়া ও আরো অনেক কবি,সাহিত্যকের পূণ্যভূমি সিরাজগঞ্জ।

সিরাজগঞ্জের মহান কৃতি সন্তান হলো-

রাজনীতিবিদ:

[সম্পাদনা]

অন্যান্য:

[সম্পাদনা]

এছড়াও যারা এখনো নিরলসভাবে সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেযোগ্য লেখক শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল খালেক, কবি মহাদেব সাহা, জুলফিকার মতিন, মোহন রায়হান, আবু হাসান শাহরিয়ার, খ ম আখতার হোসেন, শ ম শহীদুল ইসলাম, মাসুদ খান, কথাসাহিত্যিক ইসহাক খান, ইমতিয়ার শামীম, ইকতিয়ার চৌধুরী, দিলারা মেসবাহ, মাযহারুল ইসলাম, সুমন্ত আসলাম, মাহফুজা হিলালী, রণজিৎ সরকার, রিপন আহসান ঋতু। লেখক ড. আব্দুল জলিল, আলমগীর নিষাদ, মোস্তাফিজ তালুকদার, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন, লেখক আহমেদ শাহাবুদ্দীন, প্রাবন্ধিক হাসানাত মোবারক, কবি অদ্বৈত মারুত, আওলাদ হোসেন, স্বপন কুমার মণ্ডল, ফরিদুল ইসলাম নির্জন প্রমুখ প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকরা। যারা এখনও শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি এবং দেশ গঠনে নিরলসভাবে কার করে যাচ্ছে ।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

[সম্পাদনা]

যোগাযোগ ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।সিরাজগঞ্জকে বলা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার।যমুনা সেতু হয়ে সিরাজগঞ্জ ওপরেই অবস্থিত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ (ঢাকা-বগুড়া-রংপুর),(ঢাকা-বনপাড়া-রাজশাহী),(ঢাকা-হাটিকুমরুল-পাবনা-দক্ষিনাঞ্চল) মহাসড়ক।প্রতিদিন এ সড়কে ২৫/৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। যোগাযোগ সহজতর এবং উন্নত সড়ক যোগাযোগের জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে চলছে ছয় লেনে উন্নিত করন কাজ।এই চার মহাসড়কের মিলনস্থল হাটিকুমরুলে নির্মান হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক বিশ্বমানের ইন্টারচেঞ্জ।

প্রধান সড়কপথ সমূহ

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জে দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়ক বয়েছে। তা হলো:

নং নাম কোড
০১ ঢাকা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক এন৪০৫ (বাংলাদেশ)
০২ সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়ক আর৫০৭ (বাংলাদেশ)
০৩ সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়ক এন৫ (বাংলাদেশ)
০৪ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক এন৫ (বাংলাদেশ)
০৫ মুলিবাড়ি-কাটাওয়াপদা মহাসড়ক আর৪৫০ (বাংলাদেশ)
০৬ কাটাওয়াপদা-নলকা মহাসড়ক আর৪৫১ (বাংলাদেশ)
০৭ সিরাজগঞ্জ-জামতৈল সড়ক জেড৫৪০৬ (বাংলাদেশ)
০৮ কড্ডা-বেলকুচি-এনায়েতপুর সড়ক জেড৫৪০২ (বাংলাদেশ)
০৯ তাড়াশ-ভূঁইয়াগাতী সড়ক জেড৫০৪১ (বাংলাদেশ)
১০ খুকনী-শাহজাদপুর সড়ক জেড৫৪১০ (বাংলাদেশ)
১১ তাড়াশ-উল্লাপাড়া সড়ক জেড৫০৪৬ (বাংলাদেশ)
১২ তাড়াশ-রাণীরহাট-শেরপুর সড়ক জেড৫০৪৯ (বাংলাদেশ)
১৩ তাড়াশ-সিংড়া সড়ক জেড৫২০৮ (বাংলাদেশ)
১৪ তাড়াশ-গুরুদাসপুর সড়ক জেড৫০৪৩ (বাংলাদেশ)

সড়কপথ

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা,চট্টগ্রাম,রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। সিরাজগঞ্জ শহরে ০২টি বাস টার্মিনাল রয়েছে।

  1. এম এ মতিন পৌর বাস টার্মিনাল
  2. মিরপুর বাস টার্মিনাল

এম এ মতিন বাস টার্মিনালটি জেলা এবং শহরের প্রধান ও বৃহৎ বাস টার্মিনাল। সিরাজগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সহ দেশের বিভিন্ন আন্তঃনগর রুটে দৈনিক ৫ শতাধিক বাস এই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।

  • সিরাজগঞ্জ থেকে বিভাগীয় শহরের দুরত্ব-
শহরের নাম সড়ক দুরত্ব (কি.মি.)
ঢাকা সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-টাঙ্গাইল-ঢাকা ১১০
চট্রগ্রাম সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-টাঙ্গাইল-ঢাকা-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম ৩৭৫.৪
রাজশাহী সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-নাটোর-রাজশাহী ১৩২.৫
সিলেট সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-টাঙ্গাইল-টঙ্গী-নরসিংদী-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট ৩৩৮.৬
রংপুর সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর ১৮০
খুলনা সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঈশ্বরদী-যশোর-খুলনা ২৯২.৯
ময়মনসিংহ সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-এলেঙ্গা-ময়মনসিংহ ১২৩.৭
বরিশাল সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-টাঙ্গাইল-মাওয়া-পদ্মাসেতু-ভাঙ্গা-বরিশাল ৩০৩.১


  • সিরাজগঞ্জ শহর থেকে জেলার ৭টি উপজেলা এবং ৩টি থানায় খুব সহজে সড়ক পথে পৌছানো যায়। সিরাজগঞ্জ সদর থেকে চৌহালি উপজেলা উপজেলা ব্যাতিত সব উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। নদী কেন্দ্রিক হওয়ায় চৌহালির সাথে যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ। শহর থেকে এনায়েতপুর নেমে নৌপথে চৌহালি যেতে হয়। যার দুরত্ব প্রায় ৪০/৪৫ কিলোমিটার। এছাড়া সড়ক পথে যমুনা সেতু, টাঙ্গাইল হয়ে প্রায় ৯০ কিলোমিটার ঘুরে চৌহালী সদরে পৌছানো যায়।


  • সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ৮টি উপজেলা শহরের দুরত্ব:-


উপজেলা শহরের নাম সড়ক দুরত্ব (কি.মি.)
কামারখন্দ উপজেলা সিরাজগঞ্জ-কড্ডা-জামতৈল ১৩.২
বেলকুচি সিরাজগঞ্জ-কড্ডা-সয়দাবাদ-বেলকুচি ২০.২
রায়গঞ্জ সিরাজগঞ্জ-হাট প্ঙ্গাসী-রায়গঞ্জ ২০.৪
কাজীপুর উপজেলা সিরাজগঞ্জ-পিপুলবাড়িয়া-কাজিপুর ২৭.১
উল্লাপাড়া উপজেলা সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-উল্লাপাড়া ২৯.৭
তাড়াশ সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-সলঙ্গা-তাড়াশ ৪০.১
শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-উল্লাপাড়া-শাহজাদপুর ৪৭
চৌহালি উপজেলা সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি-এনায়েতপুর-চৌহালি (এনায়েতপুর থেকে চৌহালী নৌপথ) ৩৫
  • সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে থানা শহরের দুরত্ব:-
থানা সড়ক দুরত্ব
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা সিরাজগঞ্জ-মুলিবাড়ি-সয়দাবাদ-বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম ১২.৭
সলঙ্গা থানা সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-সলঙ্গা ২২.৮
এনায়েতপুর থানা সিরাজগঞ্জ-কড্ডা-সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর ২৮.৫


  • সিরাজগঞ্জে থেকে বিভিন্ন জেলার দুরত্ব দুরত্ব-
শহরের নাম সড়ক দুরত্ব (কি.মি.)
বগুড়া সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া ৭৭.৮
পাবনা সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-পাবনা ১০০.৫
নাটোর সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বনপাড়া- নাটোর ৮৭.৭
নওগাঁ সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-নওগাঁ ১২০.৯
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-নাটোর-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৮৩.২
দিনাজপুর সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর ২১৩.৫
যশোর সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঈশ্বরদী-ঝিনাইদহ-যশোর ২১৮.২
টাঙ্গাইল সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-এলেঙ্গা-টাঙ্গাইল ৪৫.১
কুমিল্লা সিরাজগঞ্জ-যমুনা-এলেঙ্গা-ঢাকা-কুমিল্লা ২২৯.৯
গাইবান্ধা সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-গোবিন্দগঞ্জ-গাইবান্ধা ১০৩.৪
জয়পুরহাট সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-জয়পুরহাট ১১২.৯
কুড়িগ্রাম সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-গোবিন্দগঞ্জ-কুড়িগ্রাম ২১৯.৪
লালমনিরহাট সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-গোবিন্দগঞ্জ-লালমনিরহাট ২১১.৯
নীলফামারী সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-নীলফামারী ২৩১.৫
ঠাকুরগাঁও সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও ২৭০.৩
পঞ্চগড় সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল-বগুড়া-দিনাজপুর-পঞ্চগড় ২৯১.৬
কক্সবাজার সিরাজগঞ্জ-যমুনা সেতু-এলেঙ্গা-ঢাকা-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ৫২০.৫

রেল পথ

[সম্পাদনা]

রেল সিটি খ্যাত সিরাজগঞ্জ।উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বৃটিশ-ভারত আমলে যমুনা অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ শহরটিকে গড়ে তোলা হয়েছিল রেলসিটি হিসেবেই।

শহরের বুক চিরে বের হওয়া দু’টি রেলসড়ক যমুনার তীরে গিয়ে শেষ হয়। শহরের মাঝখানে ছিল রায়পুর, সিরাজগঞ্জ বাজার, সিরাজগঞ্জ ঘাট ও বাহিরগোলা চারটি রেলওয়ে স্টেশন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জ ঘাট রেলওয়ে স্টেশনবাহিরগোলা রেলওয়ে স্টেশন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনরায়পুর রেলওয়ে স্টেশন এ একটি মাত্র আন্তঃনগর সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচল করে।

বহুল প্রত্যাশিত সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মান হলে সিরাজগঞ্জের হারানো রেল সিটির গৌরব আবার ফিরে পাবে মর্মে আশা করা যায়।সেই সাথে এই অঞ্চলের জনগণ এবং অর্থনিতি ও ত্বরান্বিত হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলার রেল স্টেশন সমূহ

নং স্টেশনের নাম প্লাটফর্ম অবস্থান পরিসেবা
০১ শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন সদানন্দপুর,কড্ডা, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চালু
০২ জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন জামতৈল, কামারখন্দ
০৩ উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
০৪ বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন ৪ টি(নির্মানাধীন) যমুনা সেতু পশ্চিম সিরাজগঞ্জ
০৫ সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন সিরাজগঞ্জ
০৬ সিরাজগঞ্জ রায়পুর রেলওয়ে স্টেশন রায়পুর সিরাজগঞ্জ
০৭ সলপ রেলওয়ে স্টেশন সলপ,উল্লাপাড়া উপজেলা
০৮ লাহিড়ী মোহনপুর রেলওয়ে স্টেশন লাহিড়ী মোহনপুর, উল্লাপাড়া উপজেলা
০৯ কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে স্টেশন কালিয়া হরিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা বন্ধ (প্রস্তাবিত সিরাজগঞ্জ জংশন)
১০ বাহিরগোলা রেলওয়ে স্টেশন সিরাজগঞ্জ পৌরসভা বন্ধ
১১ সিরাজগঞ্জ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন সিরাজগঞ্জ সদর বন্ধ

আকাশ পথ

[সম্পাদনা]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

নদ-নদী

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তাঞ্চলের প্রবেশদ্বার এবং তাঁতকুঞ্জ নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে সিরাজগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪ 
  3. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  4. "জেলার পটভূমি"sirajganj.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৬ 
  5. "ভৌগোলিক পরিচিতি"www.sirajganj.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৬ 
  6. জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২: প্রাথমিক প্রতিবেদন [Census and Household Census 2022: Preliminary Report] (পিডিএফ)Bangladesh Bureau of Statistics 
  7. "মুক্তধারা"। ১৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৩ 
  8. দি ডেইলি সান পত্রিকার প্রতিবেদন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০১৩ তারিখে, প্রকাশকাল: ২৭ নভেম্বর ২০১১; পরিদর্শনের তারিখ: ১৪ মার্চ ২০১২
  9. "সাবেক এমপি গাজী আতাউর রহমানের ইন্তেকাল"দৈনিক ইত্তেফাক। ২২ নভেম্বর ২০১৭। ২২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২০ 
  11. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" চিরঅন্তরালে সুচিত্রা সেনbdnews24.com। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  12. "কথা সাহিত্যিক নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন"weeklysonarbangla.net। ২৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]