কালাভুনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালাভুনা
গরুর মাংসের কালাভুনা
অন্যান্য নামহালা ভুনো (চাঁটগাঁইয়া)
ধরনতরকারি
প্রকারপ্রধান
উৎপত্তিস্থলচট্টগ্রাম[১], বাংলাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যচট্টগ্রাম, সিলেট,রাজশাহী[২], খুলনা[৩], ঢাকা [৪]
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলীবাংলাদেশ (চাঁটগাঁইয়া)
পরিবেশনগরম
প্রধান উপকরণখাসি বা গরুর মাংস, বাংলাদেশী মসলা

কালাভুনা (চাঁটগাঁইয়া: হালা ভুনো) গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরী চট্টগ্রামের রন্ধনশৈলীর একটি ঐতিহ্যবাহী মাংসের তরকারি যা বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশেই বিখ্যাত ও জনপ্রিয়।[১][৫] কারো কারো মতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালাভুনা রান্না করতে প্রয়োজন হয় অনেক রকমের মসলা। হরেক রকম মসলার সংমিশ্রণে রান্না করার ফলে মাংস ভুনায় কালো রং আসে বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে কালাভুনা।[৬] তবে এ তথ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। যারা এটা রান্না করেন তাদের মুখ থেকেই শুনা গেছে, এ রান্নায় বিশেষ কোন আলাদা মসলা ব্যাবহার করা হয় না। প্রকৃত বিষয় হল, এ দেশে মাংসের সংরক্ষন ব্যাবস্থা তেমন ছিল না (এদেশে ফ্রিজ এর আবির্ভাব হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি) । কুরবানীর সময়ে অনেক মাংস জমা হত কিন্তু সংরক্ষন ব্যাবস্থা বলতে বারবার মাংস জ্বাল দিয়ে তা সংরক্ষন করা হত । এ প্রক্রিয়ায় মাংসে কোন অণুজীব থাকলেও তা মারা যায়, (সাধারণত এ অণুজীবগুলোই মাংসের পচনের জন্য দায়ী)। কিন্তু বার বার মাংস গরম করার ফলে জলীয় অংশ কমে গিয়ে মাংস শুকিয়ে কালো বর্ণের হয়ে যেত। কিন্তু এর ফলে সে মাংসের স্বাদ বেড়ে যেত। কালো রং জন্য এটা মুখে মুখে কালা ভূনা হিসেবে পরিচিতি পায়। এটাই সে কালাভূনার ইতিবৃত্ত। এতে স্পেশাল কিছু মসলা ব্যাবহার হয় এ তথ্য সত্য নয়,। সাধারণত যে মসলা মাংস রান্নায় নিয়মিত ব্যাবহার করা হয় ( পেঁয়াজ রসুন্, আদা, জিরা , ধনিয়া, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, গোল মরিচ, মরিচ, হলুদ, সরষের তেল ইত্যাদি) কালাভূনাতেও এর অতিরিক্ত কিছু দেয়া হয় না। মসলার পরিমানও রাধুনির ইচ্ছেয় রদবদল হয়, এক্ষেত্রে ধরা বাধা কোন রেসিপিও ছিল না । ঈদের পরে, দিনের পর দিন জ্বাল দিতে দিতেই এ মাংসের স্বাদ বেড়ে যেত, এ প্রসেসে শুকিয়ে কালো হয়ে যাওয়া এ মাংসটাই কালাভূনা নামে খ্যাতি পেয়ে গেছে এবং এখন শুধু ঈদ নয়, অন্য পার্টিতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঈদ কিম্বা মেজবান ছাড়াও বিয়ে, রমজানে সাহরি বা ইফতারেও কালাভুনা একটি পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছে। সাধারণত ভাত, পরোটা, নান রুটি কিংবা রুটির সাথে কালাভুনা খাওয়া হয়।

উপকরণ[সম্পাদনা]

গরু বা খাসি দুটোরই মাংস দিয়ে কালা ভুনা তৈরি করা হলেও গরুর মাংসের কালাভুনা বা বীফ কালাভুনাই বেশি জনপ্রিয়।কালো ভুনা ধাপে ধাপে মসলা দিয়ে রান্না করতে হয়। এতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ নিম্নরূপ:

উপকরণ[৭]:

প্রস্তুতপ্রণালী[সম্পাদনা]

প্রথমে পেঁয়াজ কুঁচি এবং কাঁচা মরিচ বাদে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ ও ধনে গুড়াসহ অন্যান্য মসলা দিয়ে মাংস মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দেয়া হয়। তারপর চুলায় মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রান্না করতে করতে কিছুক্ষণ পরপর নাড়া হয়। মাংস থেকে পানি বের হলে সেই পানি কষিয়ে নিয়ে তাতে আরো কিছু পরিমাণ গরম পানি দিয়ে চুলার আঁচ মৃদু করে রান্না করা হয়। এভাবে কষাতে থাকলে মাংস নরম ও রং কালচে হয়ে উঠে এবং মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ হয়। মাংসের তেল ওপরে উঠে এলে অন্য একটি ফ্রাইপ্যানে সরিষার তেল, পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, শুকনা মরিচ দিয়ে ফোড়ন দেয়া হয়। তখনো মাংস মৃদু আঁচে চুলায় রান্না করা হয়। এতে সমস্ত মশলার স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ মাংসের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে মাংসের রং কালো হতে থাকে। তখন ঘণটুকরা করে কাটা পেঁয়াজ, আস্ত কাঁচা মরিচ, গরম মসলা গুঁড়া, জৈন, জায়ফল–জয়ত্রীগুঁড়া, ভাজা জিরার গুঁড়া ছড়িয়ে দিয়ে ঢেকে রাখা। তারপর কিছুক্ষণ রান্নার পর প্রস্তুত হয় খাবারটি।[৭][৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আঞ্চলিক খাবারের স্বাদে..."বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  2. "কালাভুনার স্বাদ নিতে খুলনার চিটাগাং দরবারে"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৯ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  3. "পাঁচ ভাই'য়ের চালের রুটি ও কালাভুনা"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২০-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  4. "ঢাকায় চাটগাঁইয়া স্বাদ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  5. "Bangladesh cuisine part I - delectable and diverse"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  6. "রেসিপি: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গরুর কালাভুনা"বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৯-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  7. "চেনা মসলার স্বাদে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫ 
  8. "ঘরেই গরুর মাংসের কালাভুনা!"বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৯-০৪-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৫