ইবাদি ইসলাম
| ইসলাম |
|---|
| বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
| ইবাদি ইসলাম | |
|---|---|
| الإباضية al-ʾIbāḍiyya | |
গালালা ইবাদি মসজিদ, জেরবা, তিউনিসিয়া | |
| ধরন | ইসলামের শাখা |
| প্রকারভেদ | খারিজিবাদ |
| ধর্মতত্ত্ব | একেশ্বরবাদ |
| অঞ্চল | ওমান আলজেরিয়া (মা'জাব) লিবিয়া (নাফুসা) তিউনিসিয়া (জেরবা) তানজানিয়া (জানজিবার) |
| প্রবর্তক | আব্দুল্লাহ ইবনে ইবাদ |
| উৎপত্তি | আনু. ৬৯২ সাধারণাব্দ বসরা |
| সদস্য | আনু. ২.৭২ মিলিয়ন[১] – ৭ মিলিয়ন[২] |
ইবাদি ইসলাম বা ইবাদিবাদ (আরবি: الإباضية, প্রতিবর্ণীকৃত: al-ʾIbāḍiyya, আরবি উচ্চারণ: [alʔibaːˈdˤijja]) হল ইসলামের একটি শাখা, যা খলিফা আলী ইবন আবী তালিবের বিরোধিতাকারী খারিজি বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে উৎপত্তিলাভ করেছিল।[৩] এটি একটি মধ্যপন্থী উপধারা,[৪][৫] যা সময়ের পরিক্রমায় টিকে থেকেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইবাদি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটিয়েছে।[৩] এই উপধারার অনুসারীদের ইবাদি বলা হয় এবং তারা নিজেদের আহলুল হক ওয়াল ইস্তিকামা (আরবি: أهل الحقّ والاستقامة) তথা সত্য ও সততার লোক বলে পরিচয় দেন। সমসাময়িক ইবাদিরা অনেক সময় তাদের খারিজি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে থাকেন।[৬] ইবাদিরা প্রধান দুই মুসলিম সম্প্রদায় সুন্নি ও শিয়াদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম।[৭] বর্তমানে ইবাদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে ওমানে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এছাড়াও আলজেরিয়া (মা'জাব), তিউনিসিয়া (জেরবা), লিবিয়া (নাফুসা ও জুয়ারা) এবং তানজানিয়ায় (জাঞ্জিবার) অল্প পরিমাণে ইবাদি ইসলাম চর্চিত হয়।[৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পটভূমি
[সম্পাদনা]ইবাদিরা খারিজিদের একটি মধ্যপন্থী শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যারা ইসলামের একটি উপদল হিসেবে মুহাক্কিমা ও হারুরিয়াদের থেকে আলাদা হয়েছিল। এই গোষ্ঠীগুলো প্রথম ফিতনার (ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধ) সময় আলী ইবন আবী তালিবের পক্ষে ছিল, কিন্তু খ্রীষ্টীয় ৬৫৭ সালে সিফফিন যুদ্ধে সালিশ মেনে নেওয়াতে তারা আলীর বিরোধিতা করে। ইবাদিদের দৃষ্টিকোণ থেকে মুহাক্কিমারাই ছিলেন একমাত্র দল যারা ন্যায়সঙ্গত ইসলামি ইমামত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল—যেমনটি ছিল আবু বকর, উমর, উসমানের শাসনের প্রথম ছ’ বছর এবং আলীর শাসনের প্রাথমিক পর্বে।[৮][৯]
মুহাক্কিমাদের সামরিক প্রচেষ্টা শেষ হয় আলী ইবন আবী তালিবের বাহিনীর হাতে ৩৭ হিজরি/৬৫৮ খ্রীষ্টাব্দে নহরওয়ানের যুদ্ধে সংহারের মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তীতে হাসান ইবনে আলীর বাহিনী ও মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের বাহিনীর হাতে আন-নাখিলাতে আরেকটি পরাজয়ের মাধ্যমে। এরপর উমাইয়া শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা সকল প্রকারের বিরোধিতা দমনে মনোনিবেশ করে। এ কারণে, মুহাক্কিমা-ঘেঁষা অনুরাগীরা—যাদের প্রারম্ভিক ইবাদি সাহিত্যে ‘আল-মুসলিমুন’ বা ‘জামাআত আল-মুসলিমীন’ নামে ডাকা হত—গোপনে তাদের বিশ্বাস ও ধর্মচর্চা করতে বাধ্য হয়।
নহরওয়ান যুদ্ধ থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন উরওয়া ইবন উদাইয়া এবং তার ভাই আবু বিলাল মিরদাস। তাঁরা বসরায় ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং তাদের নিষ্ঠার জন্য পরিচিত হন। তারা ‘জামাআত আল-মুসলিমিনের’ প্রধান সদস্য হয়ে ওঠেন। আবু বিলাল ছিলেন বসরায় বিশেষ প্রভাবশালী এবং তিনি ছিলেন তিনজনের একজন যারা মুয়াবিয়া কর্তৃক নিযুক্ত বসরা, খোরাসান ও সিজিস্তানের গভর্নর জিয়াদ ইবন আবিহির প্রথম খুৎবার সময় প্রকাশ্যে মত প্রকাশ করেছিলেন।
আবু বিলাল ও জাবির ইবন জাইদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তাঁরা প্রায়ই একসাথে সময় কাটাতেন। তাঁরা একসাথে আয়িশার কাছে গিয়েছিলেন এবং উটের যুদ্ধের ঘটনায় তাঁর ভূমিকার জন্য তাকে ভর্ৎসনা করেন। এই সময় মুহাক্কিমা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে জাবিরের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। জাবির ছিলেন আল-আজদ গোত্রের একজন পণ্ডিত ও ধার্মিক ব্যক্তি—যেটি ছিল মুহাক্কিমাদের শেষ নির্বাচিত নেতা আব্দুল্লাহ ইবন ওয়াহ্ব আর-রাসিবির গোত্রও। জাবির মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করেন। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ কৌশল উমাইয়া কর্তৃপক্ষের সন্দেহ এড়িয়ে ইসলামি শিক্ষাকে সংরক্ষণ ও প্রচার করতে সহায়তা করে। বসরায় একজন বিশিষ্ট মুফতির অবস্থান তাঁকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ করে দেয়।
ইবাদি মতবাদ বসরায় জাবির ইবন জায়েদের শিক্ষার ভিত্তিতে একটি মধ্যপন্থী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইবাদিদের মতে (সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পরে) জাবিরই ছিলেন তাঁদের প্রথম ইমাম। সিফফিন যুদ্ধের পর খারিজিরা উমাইয়া ও আলীপন্থীদের বিরুদ্ধে বারবার সংঘর্ষে জড়ায় এবং স্থানীয় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। খ্রীষ্টীয় ৬৮০ সালে দ্বিতীয় ফিতনার পর খারিজিরা চারটি প্রধান দলে বিভক্ত হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই চরমপন্থী ছিল। এদের মধ্যে ইবন আল-আজরাকের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী ছিল যারা এমন কিছু মতবাদ প্রচার করে যা জাবির ইবন জায়েদ ও আব্দুল্লাহ ইবন ইবাদ প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা প্রাচীন মুহাক্কিমা মতবাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখেন।[১০]
খারিজি আন্তঃবিভাজন
[সম্পাদনা]খারিজিবাদের ইবাদি ধারার সূচনা হয় ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কা অবরোধের পর, যখন দ্বিতীয় মুসলিম গৃহযুদ্ধ চলছিল। আব্দুল্লাহ ইবন ইবাদ ছিলেন বসরার খারিজি গোষ্ঠীর একজন সদস্য, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন নাফি ইবনুল আজরাক। তাঁরা প্রথমে মক্কার উমাইয়া-বিরোধীদের সমর্থন করলেও পরে হতাশ হয়ে পড়েন, কারণ মক্কার খলিফা আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মৃত খলিফা উসমানের ব্যাপারে নিন্দা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান। হতাশ হয়ে তাঁরা বসরায় ফিরে যান এবং উমাইয়া গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবন জিয়াদের হাতে বন্দি হন।
পরে যখন বসরা উমাইয়া শাসন উৎখাত করে এবং ইবনুল জুবায়েরকে সমর্থন জানায় (৬৮৩ সালের শেষদিকে বা ৬৮৪ সালের শুরুতে), খারিজি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর, ইবনুল আজরাক অনেক খারিজিকে খুজিস্তান প্রদেশের আহওয়াজে নিয়ে যান এবং বসরাবাসীদের মুশরিক আখ্যা দেন। কিন্তু ইবন ইবাদ বসরায় থেকে যান এবং তাদের পক্ষে যুক্তি দেন যে, বসরাবাসীরা মুশরিক নয় বরং কেবল “আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারকারী” (কুফর নি‘মাহ), যা তুলনামূলকভাবে হালকা অপরাধ। তিনি বলেন, সত্যিকার মুসলিমরা এদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে।
ইবন ইবাদ অন্যান্য চরমপন্থী খারিজিদের বিরোধিতা করেন। তিনি সুফরি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ইবনুস সাফফারের মতামত প্রত্যাখ্যান করেন এবং বায়হাসিয়া সম্প্রদায়ের নেতা আবু বায়হাসের সাথেও মতানৈক্যে জড়ান, যাঁর মতবাদ ছিল ইবনুল আজরাকের চরমপন্থার কাছাকাছি।
ইবাদিরা খারিজি চরমপন্থার দুটো মূল বিষয়ে স্পষ্টভাবে ভিন্নমত পোষণ করেছিল:
- খুরুজ (বিদ্রোহ): নাফি ইবনুল আজরাক বলেন যে, হিজরত (দেশান্তরগমন) বা খুরুজ (সশস্ত্র বিদ্রোহ) বাধ্যতামূলক এবং মুসলিম বিরোধীরা দারুল হারব বা যুদ্ধের ভূমিতে বাস করে। তিনি যারা বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে না (আল-কাআ’দাহ) তাদের মুশরিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ইবাদিরা মনে করত মুসলিম বিরোধীরা কুফফার নি‘মাহ (আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকারকারী) — মুশরিক নয়। তাঁরা বিশ্বাস করত হিজরত বাধ্যতামূলক নয়, মুসলিমরা তাদের মাঝে বসবাস করতে পারে এবং যারা লড়াইয়ে অংশ নেয় না, তাদের ক্ষমা করা যেতে পারে।
- বিরোধী মুসলিমদের প্রতি মনোভাব: আজরাকিরা তাদের বিরোধী মুসলিমদের মুশরিক হিসেবে গণ্য করত, যার ফলে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা, মালমত্তা লুণ্ঠন বৈধ মনে করত। এমনকি তাদের নারীদের বিয়ে করা বা উত্তরাধিকার গ্রহণও নিষিদ্ধ ছিল। ইবাদিরা এসব চর্চাকে ইসলামবিরোধী হিসেবে নিন্দা করে। জাবির ইবন জায়েদ ও আব্দুল্লাহ ইবন ইবাদ এইসব চরমপন্থী মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন এবং সুফরিয়া, নাজদাত প্রভৃতি অন্যান্য মৌলবাদী খারিজি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন।[১১]
ইবাদিরা নাফি ও অন্যান্য চরমপন্থীদের মতবাদকে বিপজ্জনক বিদআত (ধর্মে নতুন সংযোজন) হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রাচীন ইবাদি সাহিত্য যেমন সালিম ইবন জাখওয়ানের সিরাহতে এই চরমপন্থার বিরুদ্ধে অবস্থান প্রতিফলিত হয়।
বসরায় জাবির ইবন জায়েদের নেতৃত্বে একটি মধ্যপন্থী খারিজি মতবাদ গড়ে ওঠে, যা ইবন আব্বাসের শিক্ষায় প্রভাবিত ছিল। এই মতবাদ ইবাদি দাঈদের মাধ্যমে ওমান, ইয়েমেন, হাজরামাউত, খোরাসান ও উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ৬৯১ সালে উমাইয়ারা বসরা পুনরুদ্ধার করলে ইবাদি নেতারা কিৎমান (বিশ্বাস গোপনকরণ) চর্চা শুরু করেন।[১২]
ওমানি ইমামত
[সম্পাদনা]জাবির ইবনে জায়েদকে অবশেষে ইবাদিদের প্রথম ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যদিও এটি ছিল কিৎমান অবস্থায়।[১৩] মুহম্মদের সাহাবীদের বর্ণনা বিষয়ে ইবনে জায়েদের সমালোচনা ইসলামি আইনের ইবাদি ব্যাখ্যার কাঠামো গঠন করে।[১৩] সুন্নি ও শিয়াদের বংশীয় উত্তরাধিকারের বিপরীতে ইবাদি ইমামের পদ ছিল নির্বাচিত এবং এটি একচেটিয়া ছিল না, পৃথক সম্প্রদায়কে তাদের ইমাম নির্বাচন করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল।[১৪][১৫] এই ইমামেরা রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সামরিক কার্যাবলি সম্পাদন করতেন।[১৬]

৭৪৫ সালে তালিবুল হক হাদরামাউতে প্রথম ইবাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরের বছর উমাইয়া খিলাফতের হাত থেকে ইয়েমেন দখল করেন। এরপর ইবাদি বিদ্রোহ হেজাজ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং আবু হামজা আল-মুখতার মক্কা ও মদিনা জয় করেন। এর জবাবে খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান ৪০০০ সৈন্যের বাহিনী নিয়ে অভিযান চালান এবং প্রথমে মক্কায়, তারপর ইয়েমেনের সানায় এবং অবশেষে ৭৪৮ সালে পশ্চিম হাদরামাউতের শিবামে ইবাদিদের পরাজিত করেন।[১৭] আবু হামজা ও ইবন ইয়াহিয়াকে হত্যা করে প্রথম ইবাদি রাষ্ট্র ধ্বংস করে ফেলা হয়।[১৮][১৯] উমাইয়াদের কেন্দ্রস্থল বিলাদ আশ-শামে সমস্যার কারণে তারা ইবাদিদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করে, যার ফলে ইবাদিরা শিবামে একটি সম্প্রদায় ধরে রাখতে সক্ষম হয়।[১৭]
৭৫০ সালে ওমানে দ্বিতীয় ইবাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু ৭৫২ সালে নবগঠিত আব্বাসীয় খিলাফত কর্তৃক দখল হয়ে যায়। ৭৯৩ সালে আবার একটি ইবাদি ইমামত প্রতিষ্ঠা পায়, যা শতাব্দীকাল ধরে টিকে ছিল।[১৮] ৮৯৩ সালে আব্বাসীয়রা ওমান পুনর্দখল করলেও তাদের কর্তৃত্ব নামমাত্র ছিল, আর ইবাদি ইমামরা প্রকৃত ক্ষমতা ধরে রাখেন।[২০] পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আবারও ইবাদি ইমামত প্রতিষ্ঠা পায়।[২১] ইবাদিরা এখনও আধুনিক ওমানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী এবং রাজপরিবারের সদস্যরাও ইবাদি।[২২]
পরবর্তী সম্প্রসারণ
[সম্পাদনা]
ইবাদি তাবলিগি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য সফলতা আসে।[২২] ৭৫৭ সালে তারা ত্রিপোলি দখল করে এবং পরের বছর কাইরুয়ান জয় করে। ৭৬১ সালে আব্বাসীয় সেনারা তাদের উৎখাত করলে তারা তাহারতের রুস্তমীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে, যা ৯০৯ সালে ফাতিমীয় খিলাফতের কাছে পরাস্ত হয়। আজও ইবাদি সম্প্রদায় লিবিয়ার নাফুসা পাহাড়, তিউনিসিয়ার জারবা দ্বীপ এবং আলজেরিয়ার মা'জাব অঞ্চলে টিকে আছে।[২৩] পূর্ব আফ্রিকার জাঞ্জিবারেও ইবাদিদের বসবাস রয়েছে।[২২] এছাড়া পারস্য, ভারত, মিশর, সুদান, স্পেন ও সিসিলিতেও ইবাদি মিশনারি কর্মকাণ্ড পৌঁছে গিয়েছিল, তবে সেসব অঞ্চলে এখন আর ইবাদি সম্প্রদায় নেই।[২৪]
৯০০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ ইবাদিবাদ সিন্ধু, খোরাসান, হাদরামাউত, জুফফার, ওমান ইমামত, মস্কৎ, নাফুসা পর্বতমালা, কেশম ও হরমোজগানে এবং ১২০০ সালের মধ্যে তা পৌঁছে যায় আন্দালুস, সিসিলি, মা'জাব ও সাহেলের পশ্চিমাঞ্চলে।[১৩] ১৪শ শতকে ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন হাদরামাউতে ইবাদি প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন, যদিও বর্তমানে সেখানে আর এই সম্প্রদায় নেই।[২৫]
ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চা
[সম্পাদনা]ইবাদিদের মতে তাদের তাদের মজহব মূলধারার ইসলামি মজহবগুলোর পূর্ববর্তী এবং কিছু পশ্চিমা অমুসলিম লেখক এর সাথে একমত। বিশেষত, ডোনাল্ড হাওলির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, ইবাদিবাদকে ইসলামের একটি প্রাথমিক এবং অত্যন্ত সনাতন ব্যাখ্যা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।[১৪]
ইবাদি ধর্মতত্ত্ব
[সম্পাদনা]ইবাদি ধর্মতত্ত্বের বিকাশ ঘটে সম্প্রদায়টির ওলামা ও ইমামদের কাজের মাধ্যমে, যাদের ইতিহাস, জীবন ও ব্যক্তিত্ব ইসলামের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।[২৬] ইবাদি তত্ত্ব বোঝা যায় ইবনে ইবাদ, জাবির ইবনে জায়েদ, আবু উবাইদা, রাবি ইবনে হাবিব এবং আবু সুফিয়ান প্রমুখের রচনাবলি থেকে। বসরা ইবাদি সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়।[২৭] দক্ষিণ আরবে বিভিন্ন ইবাদি জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠে, পাশাপাশি ওমান, উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব আফ্রিকায় তাদের ভিত্তি ছিল।[২৭]
কালামশাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ইবাদি আকীদা অনেকাংশে মুতাজিলাদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে কদর বা নিয়তির প্রশ্নে বড় পার্থক্য রয়েছে।[২৮] মুতাজিলা মতবাদের মতো এবং আধুনিক সুন্নিদের বিপরীতে ইবাদিরা বিশ্বাস করে যে:
- মানুষের আল্লাহ্ সম্পর্কিত জ্ঞান যুক্তির মাধ্যমে সহজাত, শেখা নয়। সুতরাং কুরআনের কোনো আয়াত মানবীয় যুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হলে সেটিকে যুক্তির আলোকে রূপকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, সরাসরি গ্রহণ করা যাবে না। ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে তকলীদ বা কোনো আলেম বা মানবীয় কর্তৃপক্ষের অনুসরণ করা নিষিদ্ধ। এই মতামত সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যেও প্রচলিত। যদিও শিয়াদের কাছে তকলীদ ধর্মীয় অনুশীলন শেখার উপায় হিসেবে বৈধ, বিশ্বাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি অনুমোদিত নয়। [২৯]
- আল্লাহের গুণাবলি তাঁর সত্তা থেকে পৃথক নয়। দয়া, ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ইত্যাদি গুণাবলি আসলে আল্লাহর একক সত্তাকে বর্ণনার বিভিন্ন দিক, আলাদা কোনো গুণ নয়।[৩০]
- কিছু ইবাদি বিশ্বাস করে যে, কুরআনকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে। যদিও তারা স্বীকার করে যে "মৌলিক বাণী" তাঁর সত্তার একটি রূপক বর্ণনা, তারা মনে করে কুরআন তাঁর সত্তার অভিন্ন নয়; বরং এটি তাঁর সত্তার একটি সৃষ্ট নিদর্শন। অন্যদিকে, সুন্নিরা বিশ্বাস করে কুরআন শাশ্বত এবং অসৃষ্ট।[৩১] তবে প্রাচীন ইবাদিদের বিশ্বাস ছিল যে, কুরআন না সৃষ্ট, না অসৃষ্ট; আর সমসাময়িক কিছু ওমানি ইবাদি সুন্নি অবস্থান গ্রহণ করেছে।[৩২][৩৩]
- সুন্নি ও শিয়াদের মতোই তারা কুরআনে আল্লাহকে শারীরিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত করে বর্ণনা করা আয়াতগুলোকে প্রতীকী অর্থে ব্যাখ্যা করে। সুতরাং আল্লাহর হাত, মুখ, সিংহাসন বা অন্য কোনো শারীরিক বৈশিষ্ট্য নেই, কারণ তাঁকে মানবীয় ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না এবং তিনি ভৌত নন।[৩৪] ফলে তারা বিশ্বাস করে যে মুসলমানরা কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে পাবে না—এই দৃষ্টিভঙ্গি শিয়াদের সঙ্গে মিললেও সুন্নিদের বিপরীত।[৩৫] একইভাবে, ইবাদিরা বিশ্বাস করে যে মানুষের আমল বিচার করার জন্য আল্লাহ যে পাল্লার কথা বলেছেন তা রূপক, কারণ কাজের ওজন মাপা সম্ভব নয়।[৩৪]
কিন্তু মুতাজিলাদের বিপরীতে ইবাদিরা আশআরি ধর্মতত্ত্বের অনিয়তকারণবাদ অবস্থান অনুসরণ করে, যেখানে বলা হয় সমস্ত ঘটনা সরাসরি আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। যা কার্যকারণের নিয়ম বলে প্রতীয়মান হয়—যেমন আগুনে ধোঁয়া উৎপন্ন হওয়া—তা কেবল আল্লাহর সৃষ্টির ইচ্ছার কারণে ঘটে; প্রথমে তিনি আগুন সৃষ্টি করেন, তারপর ধোঁয়া। এমনকি এক ইবাদি আলেম বলেছেন, এই একটি পার্থক্যই মুতাজিলাদের সুন্নিদের চেয়েও বেশি ভ্রান্ত প্রমাণ করে।[৩৬]
ইবাদি আইনশাস্ত্র
[সম্পাদনা]ইবাদি ফিকহ বা শরীয়তভিত্তিক আইন সুন্নি ও শিয়া ফিকহ ঐতিহ্যের মতোই মৌলিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তবে ইবাদিরা তকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ প্রত্যাখ্যান করে এবং ইজতিহাদ বা স্বতন্ত্র যুক্তি-অনুসন্ধানের গুরুত্বকে জোর দেয়। সমসাময়িক ইবাদিরা মনে করে যে, কোনো মুসলমান যদি সঠিক মতামতে পৌঁছানোর আন্তরিক চেষ্টা করার পর একটি ভুল ইজতিহাদি মতামতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে, তবে তার অনুসরণ করা বৈধ; তবে অতীতে বিলুপ্ত কিছু ইবাদি উপদল মনে করত যে ভুল মতামত ধারণকারীরা কাফির।[৩৭] প্রাথমিক যুগের অনেক ইবাদি কিয়াস বা অবরোহী যুক্তিকে শরীয়তের উৎস হিসেবে অস্বীকার করেছিল, তবে বর্তমানে ইবাদি আলেমদের কাছে কিয়াসের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।[৩৮]
ইবাদিদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইমামুল কিতমান পর্যায়টি মহানবী মুহাম্মদের মক্কাকালীন জীবনের সঙ্গে তুলনীয়, যখন স্বাধীন কোনো মুসলিম জনসমাজ ছিল না যা ইসলামি আইন কার্যকর করতে পারত। তাই হুদুদ শাস্তি ইমমুল কিতমানের সময়ে স্থগিত থাকে, তবে ধর্মত্যাগ, ধর্মোবমাননা এবং হত্যার শাস্তি ব্যতীত। এছাড়া বৈধ শাসনকর্তা ইমাম না থাকলে ইবাদিরা জুমার নামাজ আদায় করে না।[৩৯]
শিয়াদের মতো, তবে সুন্নিদের বিপরীতে, ইবাদিরা মনে করে যে কোনো দম্পতি যদি জিনা (অবৈধ যৌন সম্পর্ক) করে, তবে তারা পরবর্তীতে একে অপরকে বিয়ে করতে পারবে না।[৪০]
রমজানে রোজা রাখার সময় ইবাদিরা মনে করে যে কোনো কারণে গোসল ফরজ হলে, সেই দিনের রোজা শুরু হওয়ার আগে গোসল করা আবশ্যক; অন্যথায় সেই দিনের রোজা অকার্যকর হবে। তারা বিশ্বাস করে যে বড় গুনাহ করা রোজা ভঙ্গ করার সমতুল্য। রমজানের পর কাজা রোজা রাখার ক্ষেত্রে ইবাদিরা মনে করে যে কাজা অবশ্যই ধারাবাহিক হতে হবে; অথচ সুন্নি ও শিয়ারা মনে করে কাজা রোজা ধারাবাহিক বা অ-ধারাবাহিক যেভাবেই হোক আদায় করা যাবে।[৪০]
শিয়া এবং কিছু মালিকি সুন্নিদের মতো ইবাদিরা নামাজে হাত ভাঁজ না করে শরীরের পাশে নামিয়ে রাখে। জোহর ও আসরের নামাজে ইবাদিরা শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করে, অন্য মুসলমানদের মতো অতিরিক্ত আয়াত পাঠ করে না। তারা ফাতিহা শেষ করার পর আমীনও বলে না। ইবাদিরা ভিন্ন ভূখণ্ডে অবস্থান করলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করে—যদিও তারা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করুক—যতক্ষণ না তারা দেশটিকে নিজের নতুন আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করে; অথচ সুন্নিদের মতে নির্দিষ্ট সময় পর ভ্রমণকালীন নামাজ সংক্ষিপ্ত করার বিধান শেষ হয়ে যায় এবং পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হয়।[৩৯]
ইবাদি হাদিসশাস্ত্র
[সম্পাদনা]ইবাদিদের প্রধান হাদিস সংগ্রহ, অর্থাৎ নবী মুহম্মদ থেকে বর্ণিত বাণী ও ঐতিহ্যসমূহ, হল দ্বাদশ শতকের তরতীবুল মুসনদ, যাতে মোট ১,০০৫টি হাদিস রয়েছে।[৪১]:২৩১ তরতীব চারটি গ্রন্থে বিভক্ত। প্রথম দুটি গ্রন্থে রয়েছে জাবির ইবনে জায়েদ কর্তৃক বর্ণিত মুত্তাসিল সনদসমূহ; জাবির ছিলেন নবী মুহম্মদের স্ত্রী আয়িশার শিষ্য। তৃতীয় গ্রন্থে রয়েছে অষ্টম শতকের খারিজি আলেম রাবি বিন হাবিব আল-ফারাহিদির মাধ্যমে সংরক্ষিত হাদিসসমূহ, যা জামিউস সহীহ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত এবং সাধারণত জাবির ইবনে জায়েদের সূত্রে প্রাপ্ত। চতুর্থ গ্রন্থ একটি সংযোজনী, যাতে রয়েছে পরবর্তী ইবাদি আলেম ও ইমামদের উক্তি ও কাহিনী।[৪১]:২৩২–২৩৩
অধিকাংশ ইবাদি হাদিসের ইসনাদ বা বর্ণনার শৃঙ্খল খুবই সংক্ষিপ্ত। বলা হয় এগুলো জাবির ইবনে জায়েদ থেকে তার ছাত্র আবু উবাইদা মুসলিম ইবনে আবি কারিমার কাছে এবং সেখান থেকে রাবির কাছে পৌঁছোয়। রাবি ৭৮৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর সংরক্ষিত বর্ণনাগুলো জামিউস সহীহতে অন্তর্ভুক্ত হয়। চার শতাব্দী পর এগুলোকে পুনর্গঠন করে তরতীব আল-মুসনদ আকারে সংকলিত করা হয়। ইবাদি মতবাদের বিশেষজ্ঞ জন সি. উইলকিনসন উল্লেখ করেছেন যে এই সনদ-শৃঙ্খল "কোনো সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে টেকে না" এবং এটি সম্ভবত একটি কৃত্রিম প্রচেষ্টা, যাতে ইবাদিদের হাদিস সংগ্রহকে প্রাচীনতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।[৪১]:২৩৪ অধিকাংশ ইবাদি হাদিসই প্রচলিত সুন্নি হাদিস সংকলনে পাওয়া যায়, কেবল অল্প কিছুতে খারিজি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।[৪১]:২৩৩ সমসাময়িক ইবাদিরা প্রায়ই প্রচলিত সুন্নি হাদিস সংকলনকেও স্বীকৃতি দেয়।[৪২]
সুন্নি ও শিয়া ইসলামের বিপরীতে, ইবাদি ইসলাম—বিশেষত ওমানে, যেখানে সুন্নি প্রভাব দুর্বল ছিল—ঐতিহ্যগতভাবে হাদিস অধ্যয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।[৪১]:২৩৯
আধ্যাত্মবাদ ও সুফিবাদ
[সম্পাদনা]প্রচলিত সুন্নি ইসলামের বিপরীতে, তবে আধুনিক সালাফি আন্দোলনের মতো, ইবাদিরা সুফি তরিকা[৪৩] মানে না এবং ওলি-আউলিয়াদের ভক্তি বা সম্মান প্রদর্শন প্রত্যাখ্যান করে। ঐতিহাসিকভাবে, সুফিদের মতাদর্শ ইবাদি সাহিত্যে সুপ্রশংসিত ছিল না[৩২] এবং ইবাদি ওলামা যেমন আল-মুনজিরি সুফিবাদবিরোধী গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[৪৪]
তবে সুন্নি সুফিবাদের অনুরূপ আধ্যাত্মিক ভক্তিমূলক চর্চা ঐতিহ্যগতভাবে কিছু ইবাদি আলেমের দ্বারা চর্চিত হত, যাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও সুন্নি সুফিদের মতোই কারামত (অলৌকিক ক্ষমতা) আরোপ করা হত। আধুনিক ইবাদিরা এসব অনুশীলন ইবাদি আকীদার সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন। কারও মতে, এগুলো ইবাদি বিশ্বাসে অবাঞ্ছিত অনৈবাদি প্রভাব, আবার অন্যরা এসব চর্চা পালন ও শিক্ষা দিয়ে আসছেন।[৪৫]
প্রারম্ভিক ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]ইবাদিরা সুন্নিদের মতোই আবু বকর ও উমর ইবনুল খাত্তাবকে সঠিকভাবে পরিচালিত খলিফা হিসেবে গণ্য করে।[৪৬][৯] তারা উসমান ইবন আফফানের শাসনের প্রথম অংশকে ন্যায়পরায়ণ মনে করে, আর দ্বিতীয় অংশকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বজনপ্রীতি ও ধর্মদ্রোহিতায় প্রভাবিত বলে মনে করে।[৪৬] তারা আলী ইবন আবী তালিবের খিলাফতের প্রথম অংশকে সমর্থন করে এবং শিয়াদের মতো আয়িশার বিদ্রোহ ও প্রথম মুয়াবিয়ার বিদ্রোহকে অগ্রহণযোগ্য মনে করে। তবে তারা মনে করে যে, সিফফিনের যুদ্ধে সালিশ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আলী নেতৃত্বের অযোগ্য হয়ে যান এবং নহরওয়ানের যুদ্ধে খারিজিদের হত্যা করার জন্য তাঁকে নিন্দা করে। আধুনিক ইবাদি তাত্ত্বিকেরা উসমান, আলী ও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিক খারিজি বিরোধিতাকে সমর্থন করে।[৪৭]
তাদের বিশ্বাসমতে পরবর্তী বৈধ খলিফা এবং প্রথম ইবাদি ইমাম ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন ওয়াহবুর রাসিবী, যিনি মুয়াবিয়ার সাথে সালিশ মেনে নেওয়ার কারণে আলীর বিরোধিতা করা খারিজিদের নেতা ছিলেন এবং নহরওয়ানে আলীর হাতে নিহত হন।[৪৭] ইবাদিরা বিশ্বাস করে যে ‘‘ইসলামের বংশাবলি’’ (Nasab al-Islām) নহরওয়ানে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিদের দ্বারা সংরক্ষিত হয়েছিল, যেমন হুরকুস ইবন জুহাইর আস-সাদী, এবং তা পরবর্তীতে ইবাদি ইসলাম হিসেবে বিকশিত হয়, যা ইসলামের প্রকৃত রূপ।[৪৮]
ইবাদি ইমামত ও রাজনৈতিক তত্ত্ব
[সম্পাদনা]সুন্নি সঠিকভাবে পরিচালিত খিলাফত তত্ত্ব এবং শিয়া ঐশ্বরিকভাবে মনোনীত ইমামত তত্ত্বের বিপরীতে ইবাদি ইসলামের নেতা—যাদের ইমাম বলা হয়—পুরো মুসলিম বিশ্ব শাসন করতে বাধ্য নন; মুসলিম সম্প্রদায়গুলো নিজেদের শাসন করতে সক্ষম বলে ধরা হয়।[১৭][৯] ইবাদিরা এ বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে যে মুসলিম সমাজের নেতা অবশ্যই কুরাইশ গোত্র থেকে হতে হবে। এটি সুন্নি ও শিয়াদের সেই বিশ্বাস থেকে ভিন্ন, যেখানে ধারণা করা হয় যে শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন মাহদী, যিনি নবী মুহম্মদের গোত্র কুরাইশ এবং পরিবার আহলুল বাইত থেকে বংশোদ্ভূত হবেন।[৮][৯] বরং একজন ইবাদি ইমামের দুটি প্রধান যোগ্যতা হল: তিনি যেন সমাজের মধ্যে সবচেয়ে পরহেজগার ও ফিকহে সবচেয়ে বিজ্ঞ হন; এবং ইবাদি সমাজকে যুদ্ধ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রক্ষা করার মতো সামরিক জ্ঞান রাখেন।[৪৯] ওমানি প্রথায় ইসলামি,আইনি বিজ্ঞানে পারদর্শী ইমামকে ‘‘শক্তিশালী’’ (qawī) হিসেবে গণ্য করা হয়, আর যার মূল দক্ষতা সামরিক হলেও কোনো প্রকার বিদ্যাবত্তা নেই তাকে ‘‘দুর্বল’’ (ḍaʻīf) বলা হয়। দুর্বল ইমাম শক্তিশালী ইমামের মতো স্বতন্ত্রভাবে রায় দিতে পারেন না; তাকে অবশ্যই ওলামা বা বিদ্বজ্জনদের সাথে পরামর্শ করতে হয়।[৪৯] দুর্বল ইমাম কেবলমাত্র চরম প্রয়োজনে নিযুক্ত হন, যখন সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে।[৫০]
সমকালীন ইবাদিরা ধর্মের চারটি ‘‘অবস্থা’’ (masālik ad-dīn) বজায় রাখে, যা হল ভিন্ন-ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত চার প্রকার ইমাম।[৫১][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] ‘‘গোপনীয়তার ইমাম’’ (imām al-kitmān) হচ্ছেন একজন আলেম যিনি রাজনৈতিক নীরবতায় ‘‘শাসন’’ করেন এবং ইবাদি সম্প্রদায় প্রকাশ্যে নিজেদের প্রকাশ করতে না পারলে তাকিয়া অনুশীলন করেন।[৫২] কিছু ক্ষেত্রে এমনকি যদি কোনো ইমাম উপস্থিত নাও থাকেন, তবুও কিতমান অবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। তখন ইবাদি ওলামা ইমামের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রুস্তমীয় ইমামত ৯০৯ সালে পতনের পর উত্তর আফ্রিকার ইবাদিদের ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় এভাবেই কেটেছে,[৫৩] যা তাদের ওমানি সহধর্মীদের থেকে ভিন্ন, যারা সময়ে সময়ে ইমামত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত।[৫৪]
দ্বিতীয় অবস্থা, ‘‘বিনিময়ের ইমাম’’ (imām al-shārī) হচ্ছেন ইবাদি ইমাম, যারা অসহনীয় অত্যাচারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে নিজেদের জীবনকে দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরতে উত্তম মর্যাদা অর্জনের চেষ্টা করেন এবং এর মাধ্যমে একটি ইবাদি রাষ্ট্র গঠন করতে চান।[৪৯][৫৫] উদাহরণস্বরূপ, বসরার প্রাথমিক খারিজি নেতা আবু বিলাল মিরদাস, যিনি পরবর্তীতে ইবাদিয়া মতানুসারে ‘‘বিনিময়ের ইমামের’’ প্রতিরূপ হিসেবে গণ্য হন। একজন সম্ভাব্য ইমামুশ শারী ন্যূনতম চল্লিশ জন অনুসারী না পাওয়া পর্যন্ত সামরিক পদক্ষেপ শুরু করতে পারেন না; যুদ্ধ শুরু হলে তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয় যতক্ষণ না মাত্র তিনজন অনুসারী অবশিষ্ট থাকে। ইমামুশ শারী ও তার অনুসারীদের জন্য একটি কঠোর তপস্বী জীবনযাত্রা আবশ্যক। আবু বিলালের নিম্নোক্ত বক্তৃতায় এর প্রতিফলন পাওয়া যায়:[৫৬]
তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর পথে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে যাচ্ছ, দুনিয়ার কোনো সম্পদ অর্জন করার বাসনা ছাড়াই। তোমাদের এ জীবনের প্রতি কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই এবং তোমরা এতে ফিরে যাবে না। তোমরা তপস্বী, এ জীবনের প্রতি ঘৃণাকারী, আর পরকালের প্রতি আগ্রহী। তোমাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তা অর্জনের চেষ্টা করছ: বেরিয়ে যাচ্ছ কেবল মৃত্যুর উদ্দেশ্যে, আর কিছু নয়। সুতরাং জেনে রাখো, তোমরা [ইতোমধ্যেই] নিহত এবং এ জীবনে আর কোনো প্রত্যাবর্তন নেই; তোমরা আল্লাহর দিকে অগ্রসর হচ্ছ এবং সৎপথ থেকে ফিরবে না যতক্ষণ না তাঁর সাথে মিলিত হও। যদি এটাই তোমাদের উদ্দেশ্য হয়, তবে ফিরে যাও এবং এই জীবনের প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষাগুলো শেষ করে এসো, ঋণ পরিশোধ করো, নিজেকে মুক্ত করো, পরিবারকে বিদায় দাও এবং তাদের জানিয়ে দাও যে তোমরা আর কখনো ফিরে আসবে না।[৫৬]
তৃতীয় অবস্থা, ‘‘গৌরবের ইমাম’’ (imām al-zuhūr) হচ্ছেন সক্রিয় ইবাদি রাষ্ট্রের শাসক ইমাম। প্রথম দুই খলিফা আবু বকর ও উমরকে ইমামুজ জুহুরের আদর্শ মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। একজন শাসক ইমাম যদি পাপ করে বসেন তবে তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে; এর ইবাদি উদাহরণ হল তৃতীয় খলিফা উসমানের হত্যাকাণ্ড এবং আলীর বিরুদ্ধে খারিজিদের বিদ্রোহ, যেগুলোকে তারা পাপী শাসকের বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরোধ হিসেবে দেখে।[৫৭]
সবশেষে, ‘‘প্রতিরক্ষার ইমাম’’ (imām al-difā') অবস্থায় বিদেশি আক্রমণের সময় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন ইমাম নিয়োগ করা হয়। হুমকি দূর হলে তাকে অপসারণ করা হয়।[৫০]
বিস্তার
[সম্পাদনা]এ মতবাদের অনুসারীরা ওমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওমানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অফিসিয়াল সংস্করণ হলো ইবাদিজম। ওমান ছাড়া পূর্ব আফ্রিকা, আলজেরিয়ার মা'জাব উপত্যকা, লিবিয়ার নাফুস পাহাড় এবং তিউনিসিয়াতে জেরবা দ্বীপে এ মতাবলম্বী মানুষ বাস করে।
সুন্নিদের দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]খারেজি মতবাদের সাথে এর মিল রয়েছে বলে সুন্নিরা ইবাদিদের খারেজি বলে।
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণীত, এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জেরানা নামক স্থানে দেখা করেন। জেরানা নামক স্থানটি হল সেই জায়গা যেখানে রাসুল মুহাম্মদ হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মাল বণ্টন করছিলেন। সাহাবী বেলাল এর কাপড়ের উপর রুপার টুকরা গুলো রাখা ছিল। নবীজি সেইখান থেকে মুষ্টি বদ্ধ ভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোক বললঃ- “হে মুহাম্মদ আপনি আল্লাহ্কে ভয় করুন ও ইনসাফ করুন”।
রাসুল (সা.) বলেনঃ ধ্বংস তোমার জন্য।আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে? আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার পর এমন কোন ব্যক্তি পাবে না যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায় পরায়ণ হবে।সাথে সাথে ওমর (মতান্তরে খালিদ বিন ওয়ালিদ) বলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনি অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিককে হত্যা করি। মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "না, আমি আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই । যদি এমন কর তবে মানুষ বলবে আমি আমার সাহাবীদের হত্যা করি"।ঐ লোক চলে যাওয়ার পর, তিনি আরও বলেন, "এই লোকটা ও তার কিছু সঙ্গী থাকবে যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়"।[ মুসলিম শরীফ ][নাসায়ী শরীফ পৃষ্ঠা ৩০৮]
এই লোকের বংশধর ও অনুসারীরাই হচ্ছে খারেজি।এরা কেমন হবে কি করবে রাসুলুল্লাহ (সা) এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলে যান।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]- সুলাইমান আল বারুনী
- আহম্মদ বি হামাদ, ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি
- কাবুস বিন সাঈদ, ওমানের সুলতান
- নুরী আবু শাহমিয়ান, লিবিয়ার রাজনীতিবিদ
- মুফতি জাকারিয়া, আলজেরিয়ার লেখক
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Robert Brenton Betts (৩১ জুলাই ২০১৩)। The Sunni-Shi'a Divide: Islam's Internal Divisions and Their Global Consequences। Potomac Books। পৃ. ১৪–১৫। আইএসবিএন ৯৭৮১৬১২৩৪৫২২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "7 ملايين أباضي .. ما هو أسلوبهم في الدين والحياة والزواج؟"। العربية (আরবি ভাষায়)। ২ জুন ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২২।
- 1 2 3 Simonen, Katariina (২০২১), Simonen, Katariina (সম্পাদক), "Ibadi Islam and the Imamate Tradition", Ancient Water Agreements, Tribal Law and Ibadism: Sources of Inspiration for the Middle East Desalination Research Centre – and Beyond? (ইংরেজি ভাষায়), Cham: Springer International Publishing, পৃ. ৫৩–৮৩, ডিওআই:10.1007/978-3-030-85218-4_3, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-০৩০-৮৫২১৮-৪, সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২৫
- ↑ John L. Esposito, সম্পাদক (২০১৪)। "Ibadis"। The Oxford Dictionary of Islam। Oxford: Oxford University Press। ২০ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
Ibadis [:] subsect of Khariji Islam founded in the eighth century. Has its strongest presence in Oman, but is also found in North Africa and various communities on the Swahili Coast.
- ↑ Lewicki, T. (১৯৭১)। "al-Ibāḍiyya"। Lewis, B.; Ménage, V. L.; Pellat, Ch.; Schacht, J. (সম্পাদকগণ)। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume III: H–Iram। Leiden: E. J. Brill। পৃ. ৬৪৮–৬৬০।
{{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি}}: অজানা প্যারামিটার|lastauthoramp=উপেক্ষা করা হয়েছে (|name-list-style=প্রস্তাবিত) (সাহায্য); অবৈধ|ref=harv(সাহায্য) - ↑ Hoffman 2012, পৃ. 3।
- ↑ "The Sunni-Shia Divide | Council on Foreign Relations"। www.cfr.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০২৫।
- 1 2 Diana Darke, Oman: The Bradt Travel Guide, pg. 27. Guilford: Brandt Travel Guides, 2010. আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪১৬২৩৩২০
- 1 2 3 4 উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;haw200নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Uzi Rabi, The Emergence of States in a Tribal Society: Oman Under Saʻid Bin Taymur, 1932-1970, pg. 5. Eastbourne: Sussex Academic Press, 2006. আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪৫১৯০৮০৪
- ↑ Wilferd Madelung, "ʿAbd Allāh ibn Ibāḍ and the Origins of the Ibāḍiyya", in Barbara Michalek-Pikulska and Andrzej Pikulski (eds.), Authority, Privacy and Public Order in Islam: Proceedings of the 22nd Congress of L'Union Européenne des Arabisants et Islamisants (Leuven: Peeters, 2006), pp. 51–58.
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 12–13।
- 1 2 3 Donald Hawley, Oman, pg. 199.
- 1 2 Donald Hawley, Oman, pg. 201. Jubilee edition. Kensington: Stacey International, 1995. আইএসবিএন ০৯০৫৭৪৩৬৩৬
- ↑ J. R. C. Carter, Tribes in Oman, p. 103. London: Peninsular Publishers, 1982. আইএসবিএন ০৯০৭১৫১০২৭
- ↑ A Country Study: Oman, chapter 6 Oman – Government and Politics, section: Historical Patterns of Governance. US Library of Congress, 1993. Retrieved 2006-10-28
- 1 2 3 Daniel McLaughlin, Yemen and: The Bradt Travel Guide, p. 203. Guilford, Connecticut: Brandt Travel Guides, 2007. আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪১৬২২১২৫
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 13।
- ↑ Wellhausen 1901, পৃ. 52–53।
- ↑ Lewicki 1971, পৃ. 652।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 14–16।
- 1 2 3 Lewicki 1971, পৃ. 653।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 13–14।
- ↑ Lewicki 1971, পৃ. 653, 656–657।
- ↑ McLaughlin, Daniel (২০০৮)। Yemen। Bradt Travel Guides। পৃ. ২০৪। আইএসবিএন ৯৭৮১৮৪১৬২২১২৫।
- ↑ Madelung, Wilferd (২০১৪)। "Early Ibāḍī Theology"। Schmidtke, Sabine (সম্পাদক)। The Oxford Handbook of Islamic Theology। খণ্ড ১। United Kingdom: Oxford University Press। পৃ. ২৪২–২৫২। ডিওআই:10.1093/oxfordhb/9780199696703.013.004।
- 1 2 Ziaka, Angeliki (২০১৪)। "Introduction"। Ziaka, Angeliki (সম্পাদক)। On Ibadism। Germany: Georg Olms Verlag AG। পৃ. ১১। আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৪৮৭-১৪৮৮২-৩।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 34।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 36–37।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 37–38।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 40–41।
- 1 2 al-Shueili, Sulayman. "The Ibad. ı Approach to the Methodology of Qur’anic Exegesis." The Muslim World 105 (2015).
- ↑ أحمد بن حمد بن سليمان الخليلي، الحق الدامغ 84 ـ 85 (بتصرف)، مطابع النهضة 1409هـجرية،
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 36।
- ↑ Muhammad ibn Adam Al-Kawthari (২৩ আগস্ট ২০০৫)। "Seeing God in dreams, waking, and the afterlife"। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 34–35।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 41–42।
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 42।
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 43।
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 44।
- 1 2 3 4 5 Wilkinson, J. C. (১৯৮৫)। "Ibāḍi Ḥadīth: an Essay on Normalization"। Der Islam। ৬২ (2): ২৩১–২৫৯। ডিওআই:10.1515/islm.1985.62.2.231। এস২সিআইডি 161344596।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Hoffman 2012, পৃ. 3–4।
- ↑ Hoffman, Valerie (২০১৩)। "The Ibadis"। Rippin, Andrew (সম্পাদক)। The Islamic World। Routledge। পৃ. ২৩৫–২৪৫। আইএসবিএন ৯৭৮১১৩৬৮০৩৪৩৭।
- ↑ O'Fahey, R.S. and Vikør, K.S., 1996. A Zanzibari waqf of books: the library of the Mundhirī family. Sudanic Africa, 7, pp.5-23.
- ↑ Hoffman, Valerie (২০১৫)। "Mysticism, Rationalism and Puritanism in Modern Omani Ibadism (18th–Early 20th Century)"। The Muslim World। ১০৫ (2): ২৫১–২৬৫। ডিওআই:10.1111/muwo.12091।
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 7।
- 1 2 Hoffman 2012, পৃ. 10।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 43।
- 1 2 3 Hussein Ghubash (২০১৪)। Oman - The Islamic Democratic Tradition। Routledge। পৃ. ৩৫। আইএসবিএন ৯৭৮১১৩৫০৩৫৬৬২।
- 1 2 Gaiser 2010, পৃ. 137।
- ↑ Gaiser 2010।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 13।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 76।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 10।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 13–14।
- 1 2 Gaiser 2010, পৃ. 107।
- ↑ Gaiser 2010, পৃ. 46।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Gaiser, Adam B. (২০১০)। Muslims, Scholars, and Soldiers: The Origin and Elaboration of the Ibadi Imamate Traditions। Oxford University Press। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯৭৩৮৯৩-৯।
- Gaiser, Adam (২০২১)। "Ibāḍiyya"। Fleet, Kate; Krämer, Gudrun; Matringe, Denis; Nawas, John; Rowson, Everett (সম্পাদকগণ)। Encyclopaedia of Islam, THREE। Brill Online। ডিওআই:10.1163/1573-3912_ei3_COM_30614। আইএসএসএন 1873-9830।
- Hoffman, Valerie Jon (২০১২)। The Essentials of Ibadi Islam। Syracuse: Syracuse University Press। আইএসবিএন ৯৭৮০৮১৫৬৫০৮৪৩।
- Wellhausen, Julius (১৯০১)। Die religiös-politischen Oppositionsparteien im alten Islam (জার্মান ভাষায়)। Berlin: Weidmannsche buchhandlung। ওসিএলসি 453206240।