ভরদ্বাজ মুনি
ভরদ্বাজ মুনি भारद्वाज | |
---|---|
উপাধি | মহর্ষি |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
ধর্ম | সনাতন ধর্ম |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুশীলা |
সন্তান | গর্গ মুনি, দ্রোণাচার্য এবং দেববর্ণিনী |
পিতামাতা | |
আত্মীয় | কচ, রেবতী, কেশরী |
ভরদ্বাজ মুনি (সংস্কৃত: भरद्वाज, আইএএসটি: Bharadvāja) বা ভরদ্বাজ, বৃহস্পত্যা, প্রাচীন ভারতের অন্যতম সম্মানিত বৈদিক ঋষি (মহর্ষি) ছিলেন, যিনি একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট চিকিৎসকও ছিলেন। মূলত প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য পুরাণ এবং ঋগ্বেদে তার অবদান, তৎকালীন ভারতীয় সমাজকে দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[২][৩][৪] তিনি এবং তার ছাত্র পরিবারকে ঋগ্বেদের ষষ্ঠ বইয়ের লেখক হিসাবে মনে করা হয়।[৫] ভরদ্বাজ ছিলেন ব্রাহ্মণ যোদ্ধা দ্রোণাচার্যের জনক,[৬] দ্রোণাচার্য হলেন মহাভারতের এক প্রধান চরিত্র, যিনি পাণ্ডব এবং কৌরব উভয় রাজকুমারদেরই প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি মহাভারতের এক কিংবদন্তি যোদ্ধা অশ্বত্থামার পিতামহ ছিলেন। দ্রোণাচার্য ও অশ্বত্থামা দুজনেই কৌরবদের পক্ষ নিয়ে মহাভারতের বিভিন্ন যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ভরদ্বাজকে চরক সংহিতাতেও উল্লেখ করা হয়েছে, যেটি প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসকদের পাঠ্য ছিল। মহর্ষি ভরদ্বাজকে "ভেষজ ঔষধের জনক" (আয়ুর্বেদ) হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তিনি সপ্তর্ষি (সাতজন মহান ঋষি বা মহর্ষি)র অন্যতম এক ঋষি।[৭]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বৈদিক গ্রন্থগুলিতে তার পুরো নাম ভরদ্বাজ বৃহস্পত্যা, নামের শেষ অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে তিনি ঋষি বৃহস্পতির পুত্র। তার মা ছিলেন উতথ্য ঋষির স্ত্রী মমতা। উতথ্য ছিলেন বৃহস্পতির বড় ভাই।[১] তিনি ঋগ্বেদ এবং শতপথ ব্রাহ্মণ পুস্তকে চারবার উল্লিখিত সাত ঋষির মধ্যে একজন, এরপরে তিনি মহাভারত এবং পুরাণ এ, সম্মানিত হয়েছেন।[৮] পরবর্তীকালের পুরাণকথার মধ্যে তিনি বৈদিক ঋষি অত্রির পুত্র বলে অভিহিত হন।[২]
বৌদ্ধ পালি ভাষায় লেখা দিঘা নিকায়া র মত গ্রন্থে, তেভিজ্জা সূত তার সময়ে বুদ্ধ ও বৈদিক পণ্ডিতদের মধ্যে আলোচনার বর্ণনা দিয়েছেন। বুদ্ধ দশ জন ঋষির নাম নিয়েছিলেন, তাঁদের "প্রাথমিক ঋষি" সম্বোধন করেছিলেন এবং প্রাচীন যুগে যেগুলি তার যুগে সংগৃহীত এবং জপ করা হত সেগুলির রচয়িতা এবং সেই দশটি ঋষির মধ্যে রয়েছেন ভরদ্বাজ।[৭][৯][ভ ১]
প্রাচীন হিন্দু চিকিৎসা গ্রন্থ চরক সংহিতায় বলা হয়েছে, ভরদ্বাজ, দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিখেছিলেন, তিনি আবেদন করে বলেছিলেন "খারাপ স্বাস্থ্য মানুষের আধ্যাত্মিক যাত্রা অনুসরণে মানুষের দক্ষতাকে ব্যাহত করছে"। এই আবেদন জানানোর পরে, ইন্দ্রদেব চিকিৎসার জ্ঞানের পদ্ধতি এবং বৈশিষ্ট্য উভয় বিষয়েই শিক্ষাদান করেন।[১০][১১]
ভরদ্বজ শব্দটি সংস্কৃতে "ভর(দ) এবং ভজ(ম)" "থেকে সংশ্লেষিত, একত্রে যার অর্থ "লালন পালন করা"।[১২]
ভরদ্বাজকে ব্রাহ্মণ জাতের ভরদ্বাজ গোত্রের স্থাপক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৪] ভরদ্বাজ প্রভারা ঋষির সারিতে তৃতীয় স্থানে আছেন (অঙ্গিরাসা, বার্হস্পত্য, ভরদ্বাজ) এবং ভরদ্বাজ গোত্রীয়দের মধ্যে প্রথম, অন্য দুই ঋষিও তাঁদের নিজ নিজ নামের গোত্রের প্রবর্তক হয়েছিলেন।
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ The Buddha names the following as "early sages" of Vedic verses, "Atthaka (either Ashtavakra or Atri), Vamaka, Vamadeva, Vessamitta (Visvamitra), Yamataggi, Angirasa, Bharadvaja, Vasettha (Vashistha), Kassapa (Kashyapa) and Bhagu (Bhrigu)".[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Roshen Dalal (২০১০)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books। পৃষ্ঠা 86–87। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6।
- ↑ ক খ George M. Williams (২০০৮)। Handbook of Hindu Mythology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 82–83। আইএসবিএন 978-0-19-533261-2।
- ↑ Roshen Dalal (২০১০)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6।
- ↑ ক খ Barbara A. Holdrege (২০১২)। Veda and Torah: Transcending the Textuality of Scripture। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 229, 657। আইএসবিএন 978-1-4384-0695-4।, Quote: "Bharadvaja (Vedic seer)..."
- ↑ Stephanie Jamison; Joel Brereton (২০১৪)। The Rigveda: 3-Volume Set। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 1680–1681। আইএসবিএন 978-0-19-972078-1।
- ↑ http://www.sacred-texts.com/hin/vp/vp076.htm
- ↑ ক খ Sanjana, Darab Dastur Peshotan (১৮৯৮)। "17. Gotama in the Avesta"। Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain। Cambridge University Press। 30 (2): 391–394। ডিওআই:10.1017/s0035869x00025417।
- ↑ Barbara A. Holdrege (২০১২)। Veda and Torah: Transcending the Textuality of Scripture। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 229–230, 243–244। আইএসবিএন 978-1-4384-0695-4।
- ↑ ক খ Maurice Walshe (২০০৫)। The Long Discourses of the Buddha: A Translation of the Digha Nikaya। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 188–189। আইএসবিএন 978-0-86171-979-2।
- ↑ Ariel Glucklich (২০০৮)। The Strides of Vishnu: Hindu Culture in Historical Perspective। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 141–142। আইএসবিএন 978-0-19-531405-2।
- ↑ Kaviratna ও Sharma 1913, পৃ. ii–iii, 1–3 (Volume 1 of 5)।
- ↑ Thaneswar Sharma (১৯৯১)। The Bharadvājas in Ancient India। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 58–60। আইএসবিএন 978-81-208-0639-9।
গ্রন্থপঞ্জী
[সম্পাদনা]- Kaviratna, Avinash C.; Sharma, P. (১৯১৩)। The Charaka Samhita 5 Vols.। Sri Satguru Publications। আইএসবিএন 81-7030-471-7।