গর্গ মুনি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গর্গ
(দেবনাগরী লিপি : गर्ग)
সন্তানগার্গ্য
আত্মীয়মহর্ষি ভরদ্বাজ (পিতা)
সুশীলা (মাতা)
দ্রোণাচার্য (অর্ধভ্রাতা)
দেববর্ণিনী ও কাত্যায়নী (ভগিনী)

গর্গ মুনি হলেন প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগের অন্যতম সম্মানীয় একজন ঋষি৷ তিনি তৎকালে আয়ুর্বেদের একজন উল্লেখযোগ্য পৃৃষ্ঠপোষক ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন৷ গর্গ সংহিতার রচয়িতা গর্গ মুনিকে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রাচীন ১৮ জন পণ্ডিতের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্বজ্জন হিসাবে গণ্য করা হয়৷[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

গর্গ মুনি ছিলেন ঋক বেদের অন্যতম ঋষি ও পণ্ডিত মহর্ষি ভরদ্বাজ এবং তার স্ত্রী সুশীলার পুত্র৷ তিনি জন্মগতভাবে ক্ষত্রিয়গুণের অধিকারী ব্রাহ্মণ যোদ্ধা ছিলেন, তার মাতা ছিলেন ক্ষত্রকুলকন্যা ও পিতা একজন ব্রাহ্মণ ঋষি৷[২] বিষ্ণুপুরাণ মতে ঋষি ভরদ্বাজ একদিন হতির্ধান নামক স্থানে গঙ্গা স্নানে গেলে রূপযৌবন সম্পন্না মদদৃপ্তা অপ্সরা ঘৃতাচির সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে জন্ম হয় দ্রোণাচার্যের৷[৩] একারণে গর্গ এবং দ্রোণ পরষ্পরের অর্ধভ্রাতা৷ এছাড়া তার দুই ভগিনী ছিলেন যথা দেববর্ণিনী এবং কাত্যায়নী৷ তার ভগিনীদ্বয় যথাক্রমে ঋষি বিশ্রবাযজ্ঞবল্ক্যকে বিবাহ করেন৷

মহাভারতে বর্ণিত আছে যে মহর্ষি ভরদ্বাজ তার পুত্র দ্রোণকে অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী করে তোলেন, যা তাকে পরবর্তীকালে একজন যোগ্য ব্রাহ্মণ যোদ্বা করে তুলেছিলো৷ তিনি মহাভারতের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ পঞ্চপাণ্ডবকৌরবদের তথা অর্জুন, ভীম, দুর্যোধন প্রভৃৃতিদের অস্ত্রাদি শিক্ষাদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ অপরদিকে গর্গ একজন শুদ্ধ ব্রাহ্মণ হয়ে ব্রহ্মত্ব অর্জনের পথ গ্রহণ করন৷ তিনি যুদ্ধর বদলে নিজেকে সাহিত্যচর্চা ও সাধনার পথে অর্পিত করেন৷[৪]

গর্গ মুনির স্ত্রীয়ের নাম ও বিবরণ সম্পর্কে স্পষ্টধারণা না থাকলেও তার গার্গ্য নামে এক পুত্রসন্তান ছিলো বলে জানা যায়৷ গার্গ্য অথর্ববেদের একাধিক শ্লোকের দ্রষ্টা এবং কালযাবনের পিতা ছিলেন৷

অবদান[সম্পাদনা]

বেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃৃষ্টিভঙ্গি হলো জ্যোতির্বিদ্যা বিচার এবং গর্গ ছিলেন এই বিষয়ক মুখ্য প্রবর্তকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান৷ ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা পদ্ধতি একাধিক প্রাচীন পুঁথিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে, তার মধ্যে নারদ সংহিতা, গর্গ সংহিতা, ভৃৃগু সংহিতা, অরুণ সংহিতা, রাবণ সংহিতা, বরাহী সংহিতা প্রভৃৃৃতি উল্লেখযোগ্য৷ এদের মধ্যে গর্গ সংহিতাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ষড়ভগ্নাঙ্কের বিষয়ে রচিত৷

তার অন্যতম রচিত কীর্তি গর্গপুরাণে জ্যোতির্বিদ্যায় শর্ত ও নিয়মাবলী সবিস্তারে লিপিবদ্ধ রয়েছে৷ গর্গ বাস্তুশাস্ত্রেও অবদান রেখেছেন৷ তিনি কৃত্তিকা নক্ষত্রগুচ্ছসহ আরো সাতাশটি নক্ষত্র সম্পর্কে বিস্তারিত করেন৷ জ্যোতিঃশাস্ত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৃৃত্তিকা নক্ষত্রগুচ্ছের সাথে সাতাশ নক্ষত্রের প্রথম নক্ষত্র হিসাবে তিনি অশ্বিনীকে পৃৃথক করেন৷

গর্গ ও কৃষ্ণ[সম্পাদনা]

গর্গ সংহিতা পুস্তকটি শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নয়, এটিতে শ্রীকৃষ্ণের জীবন সম্বন্ধ্যে লেখা রয়েছে৷ কৃষ্ণের চরিত্রের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এখানে৷ কিন্তু পুস্তকটিতে কৃৃষ্ণের প্রচলিত বর্ণিত কাহিনীর একটি স্থানে পার্থক্য লক্ষ করা যায়৷ তিনি এখানে কৃৃষ্ণ ও তার বাল্যসখী রাধার বিবাহের কথার বর্ণনা করেছেন৷ গর্গ মুনি শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসাবে কৃৃষ্ণাগ্রজ বলরামকে উল্লেখ করেছেন৷[৫]

শ্রীকৃৃষ্ণের পিতা রাজা বসুদেব কৃৃষ্ণের জন্মের কিছু মাসের মধ্যেই গর্গ মুনির সান্নিধ্যে আসেন এবং তাকে অনুগ্রহ করেন তিনি যেন গোকুলে নন্দ ঘোষের বাড়ীতে গিয়ে তার পুত্রের ভবিষ্যত পর্যালোচনা করেন৷ এবং মথুরাতে কংসের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় এই অনুগ্রহ করার জন্য ক্ষমা চান৷ গর্গ যাদবকুলের হয়ে প্রচারের একজন নামজাদা প্রচারক ছিলেন৷ একারণেই তিনি নন্দ ও যশোদার বাড়ীতে বিশেষ অতিথি হিসাবে পদার্পণ করেন৷ নবজাতকদ্বয়ের নামকরণকালে তার থেকে অনুমতি চাইলে তিনি রোহিণীর পুত্রকে বলরাম এবং যশোদার পুত্রকে কৃষ্ণ নামকরণ করেন৷

তিনি সদ্যোজাত বালকদ্বয়ের ভবিষ্যত কীর্তি ও মহত্বের কথা তাদের পিতা-মাতাকে জানান৷ তিনি নন্দ ঘোষকে তাদের পরবর্তী জীবনে আসন্ন সমস্যাগুলির সম্বন্ধ্যেও অবগত করান৷ তিনি তাকে জানান যে ভবিষ্যতে বারবার বিভিন্ন দৈত্য-দানব তার ওপর আক্রমণ করবে এবং তাদের উভয়কে যেমনভাবে সম্ভব প্রতিরক্ষা করার কথাও বলেন৷

"কৃষ্ণ" নামটির তাৎপর্য বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নবজাত বালককে দেওয়া এই কৃৃষ্ণ নামটি তিনি পট্টীশ্বরম নামক স্থানে (বর্তমানে তামিলনাড়ু রাজ্যের তাঞ্জাবুর জেলাতে অবস্থিত) দীর্ঘ বৎসর যাবৎ তপস্যার মাধ্যমে এক পরম শক্তি দ্বারা প্রদত্ত৷[৬]

প্রভাব ও উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

বর্তমান উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আলমোড়া জেলার একটি পবিত্রবন পাণ্ডুখোলি থেকে নির্গত গগাস নদীটির নাম গর্গ মুনির নাম অনুসারে৷[২] নদীটি অন্যান্য চৌদ্দটি উচ্চপ্রবাহ নদীর মতো ৫০ কিলমিটার প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রবাহের পূর্বেই পশ্চিম রামগঙ্গা নদীর প্রবাহের সাথে মিলিত হয়েছে৷

আলমোড়া জেলার দুনাগিরি হলো একটি ঐতিহাসিক ও পর্যটনস্থল, এখানে গর্গ মুনি তার আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন

মাক্স মুলার তার বিবৃতিতে গর্গ সংহিতা ও তার ব্যহারের কথা উল্লেখ করেন এবং ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতিতে নক্ষত্রগণনা ও তার প্রভাবকে বিস্তৃৃত করন৷[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://www.radha.name/digital-books/sastras-acharyas-and-swamis/samhitas-sutras/garga-samhita
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Rishi Garga নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. "The Early Life of Drona"। ApamNapat। ২৯ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০০৪ 
  4. Kisari Mohan Ganguli (১৮৮৩–১৮৯৬)। "The Mahabharata"। Sacred texts। ১৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৯ 
  5. "Garg Muni"। Sagarworld। ২৫ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮ 
  6. "(Karthigai Deepam Festival) Beejakshara of Maharishi Garga and Kucchara"। Agasthiar.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮ 
  7. Friedrich Max Müller (১৮৬২)। On Ancient Hindu Astronomy and Chronology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 37–60।