ত্রিজটা
ত্রিজটা | |
---|---|
অন্তর্ভুক্তি | রাক্ষসী |
আবাস | লঙ্কা |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা |
|
সহোদর | তরণীসেন |
ত্রিজটা ( সংস্কৃত: त्रिजटा) হল হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের একজন রাক্ষসী (দানব)। লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করার পর তাঁকে সীতাকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।[১] রামায়ণের পরবর্তী রূপান্তরে, ত্রিজটাকে রাবণের ভাই বিভীষণের কন্যা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
রামায়ণে ত্রিজটাকে একজন জ্ঞানী বৃদ্ধ রাক্ষসী হিসাবে দেখানো হয়েছে। সীতার স্বামী রাম সীতাকে উদ্ধার করতে রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর ত্রিজটা রাবণের ধ্বংস এবং রামের বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। যখন সীতা তাঁর স্বামীকে অচেতন অবস্থায় দেখে তাঁকে মৃত বলে ধরে নিয়েছিলেন, তখন ত্রিজটা সীতাকে নিয়ে রাম ও রাবণের যুদ্ধের ময়দান জরিপে যান এবং সীতাকে রামের সুস্থতার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। রামায়ণের পরবর্তী রূপান্তরগুলিতে, ত্রিজটাকে রাবণের ভাই বিভীষণের কন্যা হিসেব দেখানো হয়েছে। পরবর্তী সংস্করণগুলিতে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্করণগুলিতে, তাঁর অনেক বেশি ভূমিকা দেখা যায়।
কিছু সংস্করণে ব্যতিক্রম হিসেবে ত্রিজটাকে রাবণের প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে। অন্যগুলিতে তাঁকে সাধারণত সীতার প্রতিকূল সময়ের বন্ধু এবং অনুগত সঙ্গী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অসংখ্যবার, তিনি সীতাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং তাঁকে বহির্বিশ্বের খবর এনে দিয়েছেন। তিনি সীতাকে আত্মহত্যা থেকেও বিরত করেছেন। রামের বিজয় এবং রাবণের মৃত্যুর পরে, সীতা এবং রাম ত্রিজটাকে প্রচুর পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। যদিও কিছু রামায়ণ অভিযোজনে তাঁকে রামের ভক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্করণে প্রায়শই তাঁকে রামের বানর সেনাপতি হনুমানের স্ত্রী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তিনি হনুমানের একটি পুত্র সন্তানেরও জন্ম দিয়েছেন। তিনি ভারতের বারাণসী এবং উজ্জয়নে স্থানীয় দেবী হিসাবে পূজিত হন।
নামসমূহ
[সম্পাদনা]যদিও ভারতীয়, জাভানিজ এবং বালিনিজ রামায়ণের সংস্করণ তাঁকে ত্রিজটা বলা হয়েছে, তিনি লাওতিয়ান ফ্রা লাক ফ্রা রাম-এ পুনুকে, থাই রামাকিয়েন-এ বেনিয়াকাই (থাই: เบญกาย) এবং মালয় হিকায়াত সেরি রামা-তে দেবী সেরি জালি নামে পরিচিত।[২]
রামায়ণ
[সম্পাদনা]বাল্মীকি রচিত মূল রামায়ণে, ত্রিজটাকে একজন বয়স্ক রাক্ষসী (দানব) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাঁকে দুটি ঘটনায় বিশিষ্টভাবে দেখানো হয়েছে। প্রথমটি মহাকাব্যের পঞ্চম বই সুন্দর কাণ্ডে আছে। অপহৃত রানি সীতা লঙ্কার অশোক বাটিকায় বন্দী। সীতাকে যে রাক্ষসীরা পাহারা দেয়, লঙ্কার রাক্ষস-রাজা রাবণ তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে কোনও উপায়ে সীতাকে রাজি করাতে যাতে তিনি রাবণকে বিবাহ করেন। কারণ সীতা তাঁর স্বামী রামের প্রতি বিশ্বস্ত এবং রাবণকে অনড়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। রাবণ চলে যাওয়ার পর, রাক্ষসীরা সীতাকে তাঁর মত পরিবর্তন করতে বাধ্য করার জন্য তাঁকে হয়রান করতে শুরু করে। বয়স্ক ত্রিজাটা এতে হস্তক্ষেপ করেন এবং একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক স্বপ্ন বর্ণনা করেন যা রাবণের ধ্বংস এবং রামের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে।[৩]
স্বপ্নে ত্রিজটা রাম ও তাঁর ভাই লক্ষ্মণকে স্বর্গীয় হস্তী ঐরাবতে চড়ে সীতার কাছে যেতে দেখেন। রাম সীতাকে কোলে নিয়ে আকাশে উঠে যান এবং সীতাকে সূর্য ও চন্দ্র স্পর্শ করতে দেন। তারপর ত্রয়ী লঙ্কায় ফিরে আসেন এবং পুষ্পক বিমানে (রাবণের বায়বীয় রথ) চড়ে উত্তর দিকে উড়ে যান। সেইসময় রাবণ তৈল সিক্ত হয়ে এবং লাল গাত্র বর্ণ নিয়ে মাটিতে পড়ে থাকেন। এরপর রাবণ একটি গাধায় চড়ে দক্ষিণ দিকে চলে যান এবং গোবরের গর্তে পড়ে যান। লাল শাড়ি পরা এক কৃষ্ণবর্ণ মহিলা তাঁকে দক্ষিণ দিকে টেনে নিয়ে যায়। রাবণের পরিবারের অন্য সদস্যরা, যেমন তাঁর ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র ইন্দ্রজিৎ, একই ধরনের পরিণতির মুখোমুখি হন। রাবণের ভাই বিভীষণকে দেখা যায় রাজকীয় সাদা পোশাক পরিহিত হয়ে পুষ্পক বিমানের কাছে একটি চতুর্দন্ত হাতিতে চড়া অবস্থায়। লঙ্কা নগরী সাগরে ডুবে যায় এবং রামের এক বানর বার্তাবাহক নগর পুড়িয়ে দেয়।[১] ত্রিজটা অন্য রাক্ষসীদের পরামর্শ দেন সীতার আশ্রয় নিতে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে; পরিবর্তে, সীতা প্রতিশ্রুতি দেন যে ত্রিজটার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে, তিনি তাঁর এই রাক্ষসী পাহারাদারদের রক্ষা করবেন।[৩]
দ্বিতীয় ঘটনাটি ষষ্ঠ গ্রন্থ যুদ্ধকাণ্ডে পাওয়া যায়। রাম ও তাঁর ভাই লক্ষ্মণ সীতাকে রাক্ষস-রাজের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য বানর সেনা নিয়ে আসেন। যুদ্ধের প্রথম দিনে রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিৎ ভাইদের নাগপাশ (সর্প-বন্ধন) দিয়ে বেঁধে রাখেন এবং ভাইয়েরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাবণ ত্রিজটার সাথে সীতাকে যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে পাঠান। স্বামী মারা গেছেন ভেবে সীতা বিলাপ শুরু করেন, কিন্তু ত্রিজটা তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে দুই ভাই এখনও বেঁচে আছেন। ত্রিজটা সীতার প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রকাশ করেন এবং তাঁকে বলেন যে বন্দিনী সীতার "নৈতিক চরিত্র এবং কোমল স্বভাব" তাঁকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে।[৩]
ত্রিজটা ও বিভীষণ
[সম্পাদনা]রামায়ণে, ত্রিজটা ছাড়াও সীতার আরও কয়েকজন রাক্ষসী হিতৈষী রয়েছে। রামের বানর -সেনানায়ক, হনুমান–কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সীতাকে খুঁজে বের করার জন্য। হনুমান লঙ্কায় সীতাকে খুঁজে বের করেন। সীতা তখন হনুমানকে বলেছিলেন যে বিভীষণের (রাবণের ভাই যিনি যুদ্ধে রামের পক্ষে ছিলেন) স্ত্রী তাঁর কন্যা কলাকে পাঠিয়েছিলেন (রামায়ণের অন্যান্য সংস্করণে, নন্দ বা অনলা নামে পরিচিত) সীতাকে রামের কাছে সমর্পণ না করার জন্য রাবণের অভিপ্রায় ঘোষণা করতে। বিজ্ঞ মন্ত্রী অবিন্ধ্য ও বিভীষণের পরামর্শের বিপরীতে গিয়ে তিনি একাজ করেছিলেন। রাবণ যখন সীতাকে রামের একটি অলীক চ্ছিন্ন মুণ্ড দেখিয়েছিলেন, তখন আরেক হিতৈষী সরমা সীতাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। তিনি সীতাকে রামের মঙ্গল সংবাদ এবং সেনাবাহিনীর সাথে তাঁর লঙ্কায় প্রবেশের কথাও জানান। রামায়ণের কিছু সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে যে সীতার সাথে সাক্ষাতের পরে হনুমান কিভাবে লঙ্কায় আগুন ধরিয়েছেন, সেকথাও সরমা সীতাকে বলেছিলেন। কিছু সংস্করণে বর্ণনা করা হয়েছে, রাবণ যখন সীতাকে হত্যা করার চেষ্টা করেন তখন রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন। পরবর্তীকালে রাম-কেন্দ্রিক সাহিত্যে, সরমাকে বিভীষণের স্ত্রী হিসেবে নিরূপণ করা হয়, আর ত্রিজটাকে তাঁর কন্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।[৪]
তামিল মহাকাব্য কাম্বা রামায়ণ, রামায়ণে গোবিন্দরাজের ভাষ্য (ভূষণ), ওড়িয়া বলরামদাস রামায়ণ, জাভানীয় কাকাউইন রামায়ণ এবং মালয়ের সেরি রামা সব প্রকাশনাতেই ত্রিজটাকে বিভীষণের কন্যার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই প্রবণতাটি দেখা গেছে সাধারণত রামায়ণ পরবর্তী সাহিত্যে।[৫] যদিও রামায়ণে গোবিন্দরাজের ভাষ্য বলে যে মহাকাব্য অনুযায়ী ত্রিজটা বিভীষণের কন্যা, কিন্তু ত্রিজটা বয়স্ক হওয়ার কারণে মূল মহাকাব্যের এই ভাষ্যকে গোল্ডম্যান "অদ্ভুত" বলে মনে করেন।[৬]
কয়েকটি লেখায় ত্রিজটাকে বিভীষণের কন্যা ব্যতীত অন্য সম্পর্কে রাখা হয়েছে। আনন্দ রামায়ণ এবং একনাথের মারাঠি ভাবার্থ রামায়ণে ত্রিজটাকে যথাক্রমে বিভীষণের স্ত্রী এবং বোন (অতএব রাবণেরও বোন) হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।[৫] জৈন সংস্করণ, সমঘদাস গণির বাসুদেবহিন্দীতে বলা হয়েছে, ত্রিজটা রাবণ, বিভীষণ, কুম্ভকর্ণ এবং শূর্পণখার বোন।[৭] ভট্টিকাব্যের জয়মঙ্গলের ভাষ্যতেও ত্রিজটাকে রাবণের বোন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[৮]
ত্রিজটা ও সীতা
[সম্পাদনা]পরবর্তী সাহিত্যে, ত্রিজটা সেই ভূমিকা পালন করেন যা মূল রামায়ণে কলা, সরমা এবং মন্দোদরী পালন করেছিলেন।[৯] তিনি রামায়ণের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্করণে আরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন,[১০] বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ান পুনঃকথন কাকাউইন রামায়ণ-এ।[১১]
রাম উপাখ্যানে (মহাভারত মহাকাব্যে রামের আখ্যান), সীতা হনুমানকে জানান যে ত্রিজটা অবিন্ধ্য থেকে রামের মঙ্গল সম্পর্কিত একটি বার্তা তাঁর কাছে নিয়ে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন রাম ও লক্ষ্মণ শীঘ্রই তাঁকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করতে আসবেন। এইভাবে মূল রামায়ণে কলাকে অর্পিত ভূমিকাটি ত্রিজটা গ্রহণ করেছিলে।[১২] রঘুবংশ, সেতুবন্ধ, বলরামদাস রামায়ণ, কাকাউইন রামায়ণ এবং সেরি রাম এই সব সংস্করণেই পূর্বের সরমাকে অর্পিত ভূমিকায় ত্রিজটাকে রাখা হয়েছে, যেখানে রামের মায়াময় ছিন্ন মুণ্ডের সত্যতা সীতার কাছে প্রকাশিত হয়। প্রসন্নরাঘব-এ দেখা যায় সরমার পরিবর্তে ত্রিজটা সীতাকে লঙ্কা পোড়ানোর কথা জানান।[১২] বলরামদাস রামায়ণ অনুযায়ী, রাবণকে অশোক বাটিকায় সীতাকে হত্যা করতে বাধা দিয়ে ত্রিজটা সীতার ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন; এই ভূমিকাটি মূলত মন্দোদরীকে দেওয়া হয়েছিল। যখন রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর প্রতিহিংসাপরায়ণ রাবণ তাঁর বন্দীকে বধ করতে ছুটে এসেছিলেন। তখন ত্রিজটা আবার সীতার জীবন রক্ষা করেন। রামায়ণে, রাবণের একজন মন্ত্রী সুপার্শ্ব তাঁকে থামিয়ে দেন, অন্যান্য সংস্করণগুলিতে এই কাজটি করানো হয়েছিল বিভিন্নভাবে অবিন্ধ্য বা মন্দোদরীকে দিয়ে।[১২]
মূল মহাকাব্যে যে কাজ গুলি অন্যদের করতে দেখা গেছে, পরবর্তী সাহিত্যে ত্রিজটাকে কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কিছু নতুন উপাদান যুক্ত করে ত্রিজটাকে একটি বড় ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। রামায়ণে, হনুমানের সাথে সাক্ষাতের ঠিক আগে, আত্মহত্যার চিন্তা সীতার মনে আসে, কিন্তু তিনি সে চেষ্টা করেন নি। প্রসন্নরাঘব-এ, রাবণ সীতার সাথে দেখা করতে আসার আগে ত্রিজটা এবং সীতা একটি "বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথনে" নিযুক্ত হন। রাবণের প্রস্থানের পর, সীতা ত্রিজটাকে নিজের আত্মহত্যার অভিপ্রায়ের কথা বলেন এবং ত্রিজটাকে একটি কাঠের চিতা তৈরি করতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন। ত্রিজটা অবশ্য অস্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি কাঠ নেই।[১৩] কাকাউইন রামায়ণ আরও বর্ণনা করে যে, সীতা যখন রাম ও লক্ষ্মণের অলীক ছিন্ন মস্তক দেখেন, তখন তিনি একটি চিতা প্রস্তুত করেন। ত্রিজটা সীতার সাথে মৃত্যু বরণ করতে প্রস্তুত হন, কিন্তু প্রথমে তিনি পিতা বিভীষণকে এ সংবাদ জানাতে যান। রামের সুস্থতার খবর নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। পরে, রাম এবং লক্ষ্মণকে ইন্দ্রজিতের নাগপাশ দ্বারা আবদ্ধ দেখে, সীতা ত্রিজটাকে আবার একটি চিতা তৈরি করার নির্দেশ দেন, কিন্তু ত্রিজটা নিজের পিতার কাছ থেকে সত্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা স্থগিত রাখেন এবং অবশেষে রামের জীবিত থাকার খবর নিয়ে ফিরে আসেন।[১১]
রামায়ণের অনেক রূপান্তরে ত্রিজটা ও সীতার মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ও সাহচর্য বর্ণনা করে। ত্রিজটা দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পূরণ করেন: তিনি সীতাকে সান্ত্বনা দেন এবং যুদ্ধের ঘটনা ও রামের কল্যাণ সম্পর্কে ক্রমাগত সীতাকে জানাতে থাকেন। ইন্দ্রজিৎ রাম ও লক্ষ্মণকে দ্বিতীয়বার আহত করার পর ত্রিজটা সীতার দুঃখকে শান্ত করার জন্য কি করেছেন তার বর্ণনা পাওয়া যায় বলরামদাস রামায়ণে। রাজশেখরের বালরামায়ণে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংবাদ আনার জন্য ত্রিজটা দুটি রাক্ষসকে নিযুক্ত করেন। আনন্দ রামায়ণ বর্ণনা করে যে, লক্ষ্মণের শঙ্খধ্বনি শুনে সীতা ত্রিজটাকে অনুরোধ করেন কী ঘটেছে তা জানতে। ত্রিজটা লক্ষ্মণের হাতে ইন্দ্রজিতের মৃত্যুর খবর পান এবং সীতাকে জানান।[১৪] তুলসীদাসের রামচরিতমানসেও দেখানো হয়েছে ইন্দ্রজিতের মৃত্যু সংবাদ ত্রিজটা সীতার কাছে প্রকাশ করেছেন।[১৫] পাঠ্যের অন্য একটি পর্বে, যুদ্ধের শেষ দিনে তাঁরা দুজন রাম ও রাবণের মধ্যে আসন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। সীতা উদ্বিগ্ন যে দশ মাথাওয়ালা রাবণ অপরাজেয় এবং জাদুর সাহায্যে তিনি নিজের ছিন্ন মস্তকগুলিকে পুনরায় সংস্থাপন করতে পারেন। ত্রিজটা সীতাকে আশ্বস্ত করেন যে রাক্ষস-রাজার হৃদয়ভেদী একটি তীর নিক্ষেপ করে রাম রাবণকে বধ করবেন।[১৪] পাঠ্যটি জোর দেয় যে ত্রিজটা রামের ভক্ত, তাঁর এই বৈশিষ্ট্যটি ভবার্থ রামায়ণেও পাওয়া যায়।[১৫]
কাকাউইন রামায়ণ বলে যে, সীতা যখন তাঁর ৩০০ রাক্ষসী রক্ষক দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন, তখন শুধুমাত্র ত্রিজটা তাঁকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন, তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন এবং তাঁর সাথে খেলা করেছিলেন।[১৬] সেরি রাম-এ, ত্রিজটা (এখানে "দেউই সৃজাতি" বলা হয়েছে) লঙ্কায় সীতার হেফাজতের দায়িত্বে রয়েছেন। সীতা রাবণকে বলেন যে তাঁর স্বামী জীবিত থাকাকালীন তিনি রাবণের বিয়ের প্রস্তাব বিবেচনাও করবেন না এবং রাবণের হাতে তাঁর ছিন্ন মুণ্ড দেখলেই বিশ্বাস করবেন যে তিনি মারা গেছেন। সীতাকে প্রতারণা করার জন্য, রাবণ দুটি মুণ্ড নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেন এবং ঘোষণা করেন যে সে দুটি রাম ও লক্ষ্মণের। কিন্তু ত্রিজটা তাঁকে থামিয়ে দেন এবং পরের দিন আবার আসতে বলেন। ত্রিজটা মুণ্ডগুলি সীতার কাছে নিয়ে আসেন। সীতা আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু ত্রিজটা তাঁকে সত্য যাচাই না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। সীতার ছোরা বহন করে, তিনি রামের সাথে দেখা করেন এবং বিনিময়ে রামের কাছ থেকে সীতার বোনা একটি কোমরবন্ধ পান। হনুমান তাঁকে লঙ্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন রাবণ এলে, ত্রিজটা তাঁকে তাঁর প্রতারণার জন্য তিরস্কার করেন এবং তাঁকে জানান যে আগের দিন রামের সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল। ক্রুদ্ধ রাবণ ত্রিজটাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে তিনি দৌড়ে গিয়ে সীতার আশ্রয় নেন। সীতা সমস্ত দোষ নিজের স্কন্ধে নেন। ত্রিজটাকে তাঁর দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং সীতাকে একটি লোহার দুর্গে স্থানান্তরিত করা হয়। দুর্গটি রাবণের একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।[১৭]
রাবণের প্রতিনিধি হিসেবে ত্রিজটা
[সম্পাদনা]যদিও ত্রিজটাকে সাধারণত একটি ইতিবাচক আলোতে চিত্রিত করা হয়েছে, রামায়ণের প্রাথমিক জৈন সংস্করণগুলি হয় তাঁকে উপেক্ষা করেছে, নয়তো তাঁকে রাবণের প্রতিনিধি হিসাবে রাক্ষসীর রূপ দিয়েছে। স্বয়ম্ভুদেবের পৌমাক্রিউ, সেইসাথে হেমচন্দ্রের যোগশাস্ত্র এবং রামায়ণ বলে যে হনুমান সীতার সাথে দেখা করে তাঁকে রামের স্বাক্ষর-আংটি দেখান। সীতা আনন্দিত হন; ত্রিজটা তাঁর গুরু রাবণকে এই কথা জানান। হেমচন্দ্র জোর দেন যে ত্রিজটার কাজ ছিল রাবণের নির্দেশে সীতাকে "প্রলোভিত" করা। কৃত্তিবাসী রামায়ণ, সম্ভবত জৈন আখ্যান দ্বারা প্রভাবিত, এখানে রাবণকে বিয়ে করার এবং লঙ্কার রানি হিসাবে শাসন করার জন্য সীতার কাছে ত্রিজটা আবেদন জানিয়েছে; এই সংস্করণে সীতার বন্ধু হিসেবে কাজ করেছেন সরমা।[১১]
যুদ্ধের পর
[সম্পাদনা]অসংখ্য রামায়ণ রূপান্তরে লিপিবদ্ধ হয়েছে সীতা ও রামের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ত্রিজটাকে প্রচুর পুরস্কৃত প্রদান।[১৮] মহাভারত সংস্করণে, ত্রিজটা যুদ্ধের শেষে রামকে প্রতিশ্রুতি স্বরূপ রামের কৃষ্ণ অবতারে তিনি সুভদ্রা রূপে তাঁর বোন হবেন এই পুরস্কারে সম্মানিত হন।[১২]
বালরামায়ণ উল্লেখ করা হয়েছে যে যুদ্ধের পরে, পুষ্পক বিমানে সীতাকে তাঁর রাজ্য অযোধ্যায় নিয়ে যাবার সময় ত্রিজটা তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। রাম অযোধ্যায় ফিরে যাওয়ার জন্য পুষ্পক বিমান ব্যবহার করেন। আনন্দ রামায়ণে, ত্রিজটা এবং সরমা উভয়েই পুষ্পক বিমানে অযোধ্যায় যাত্রা করেন। পরে, যখন সীতা লঙ্কা পরিদর্শন করেন, তখন তিনি সরমাকে ত্রিজটার সাথে এমন আচরণ করতে বলেন যে আচরণ তিনি সীতার সাথে করবেন।[১৪] কাকাউইন রামায়ণে উল্লেখ করা হয়েছে যে কিভাবে সীতা অযোধ্যায় ত্রিজটাকে তাঁর বিশ্বস্ত সহচর এবং সান্ত্বনাদাত্রী ও দুবার তাঁর জীবন রক্ষাকর্ত্রী হিসাবে সমৃদ্ধ উপহার দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।[১৯]
অযোধ্যায় ত্রিজটার উপস্থিতির উল্লেখ পাওয়া যায় সবচেয়ে প্রাচীন ভারতীয় পাণ্ডুলিপি পৌমাক্রিউ-তে। অনেকে ধারণা দেন যে, সীতার নির্বাসন এবং পরবর্তীকালে রাম ও তাঁর পুত্রদের মধ্যে যুদ্ধের পর, সীতাকে রাম গ্রহণ করবেন। ত্রিজটা এবং লঙ্কাসুন্দরীকে লঙ্কা থেকে ডাকা হয় সীতার সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্য এবং তাঁরা উভয়েই সীতার পবিত্রতা বিশ্বকে বোঝানোর জন্য অগ্নিপরীক্ষার পরামর্শ দেন।[১৪]
থাই রামাকিয়েনে, হনুমান বিভীষণকে (এখানে ফিপেক বলা হয়) সাহায্য করেন একটি রাক্ষসকে হত্যা করতে। হনুমান তারপর ত্রিজটাকে (বেঞ্চকাই) বিবাহ করেন; তাঁদের মিলনের ফলে বানরের মাথাওয়ালা একটি রাক্ষস পুত্রের জন্ম হয়, যার নাম অসুরপদ। মালয় সংস্করণে, মহান যুদ্ধের পর, বিভীষণ অনুরোধ করেন যে হনুমান যেন তাঁর কন্যা ত্রিজটাকে (সেরি জাতি) বিয়ে করেন। হনুমান সম্মত হন এই শর্তে যে তিনি তাঁর সাথে মাত্র এক মাস থাকবেন। হনুমান যখন রামের সাথে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে রওনা হন, ত্রিজটা তাঁর পুত্র হনুমান তেগাঙ্গার (আসুরপদ) জন্ম দেন।[২০] জাভানীয় এবং সুদানীয় ওয়েয়াং পুতুল ঐতিহ্যও ত্রিজটাকে হনুমানের স্ত্রী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।[২১]
স্মরণ এবং মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]ত্রিজটাকে প্রয়োজনের সময় সীতার বন্ধু এবং অনুগত সঙ্গী হিসাবে স্মরণ করা হয়। রাম সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ ক্যামিল বুল্কে ত্রিজটার চরিত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন:
বিংশ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কবিরা, যাঁরা রাম-কাহিনীর পুনঃকথন করেছেন, তাঁরা সীতার প্রতি ত্রিজটার বন্ধুত্বের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করেছেন। [...] [ত্রিজটা] সেই কবিদের হৃদয় জয় করেছিলেন, এবং তাঁদের মাধ্যমে, যাঁরা রাম-কাহিনির সাথে পরিচিত হয়েছেন তাদের হৃদয় জয় করেছেন। [...] রামায়ণের কবিরা [...] নম্র ত্রিজটাকে অমরত্বের বর দিয়েছিলেন। ত্রিজটার স্বপ্নের চেয়ে ভারতে আর কোন স্বপ্নই বেশি পরিচিত নয়, তিনি লক্ষাধিক মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন একজন সত্যিকারের বন্ধুর আদর্শ হিসেবে, কারণ তিনি সীতাকে তাঁর অন্ধকার সময়ে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন: প্রয়োজনের সময় যিনি বন্ধু প্রকৃতপক্ষে তিনিই বন্ধু।[১৮]
বারাণসীর সবচেয়ে বিশিষ্ট মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে ত্রিজটাকে (এই অঞ্চলে ত্রিজটা বলা হয়) উৎসর্গ করা একটি মন্দির আছে। স্থানীয় কাহিনী অনুসারে, ত্রিজটা সীতার সাথে অযোধ্যায় যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সীতা বলেছিলেন যে তাঁকে অযোধ্যায় যেতে দেওয়া হবে না কারণ তিনি একজন অসুর। সীতা তাঁকে বারাণসীতে গিয়ে মোক্ষ (মুক্তি) অর্জনের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাঁকে দেবী হিসাবে পূজিত হবার আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। স্থানীয় দেবী হিসেবে ত্রিজটা প্রতিদিনের পূজা প্রাপ্ত হন। তাঁকে তুষ্ট করতে ফুল ও সবুজ শাকসবজি দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয়, যে মহিলারা টানা সাতটি বুধবার তাঁর মন্দিরে উপাসনা করবেন তাঁরা বংশধর পাবেন এবং তাঁদের পরিবারে দেবীর প্রতিরক্ষামূলক আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। কার্তিক পূর্ণিমা, হিন্দু কার্তিক মাসের শেষ দিন এবং এর পরের দিন (মার্গশীর্ষ মাসের প্রথম দিন), অনেক ভক্তরা মন্দিরে ভিড় করেন। বিশ্বাস করা হয় যে কার্তিক পূর্ণিমায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে প্রণাম করার পরে তাঁর মন্দিরে যাঁরা উপাসনা করেন দেবী তাঁদের সকলের ইচ্ছা পূরণ করবেন। মার্গশীর্ষের প্রথম দিনে, যে সমস্ত উপাসক কার্তিক মাসের পূর্ববর্তী মাসে একটি ব্রত (উপবাস) পালন করেছিলেন তাঁরা দশাশ্বমেধ ঘাটে ত্রিজটার নাম করে গঙ্গা স্নানের মাধ্যমে ব্রত শেষ করেন। স্থানীয় ধর্মানুসারে যে রাম ত্রিজটাকে একটি বর দিয়েছিলেন: যাঁরা ব্রত পালন করার পরে তাঁর সম্মানে স্নান করেন না তাঁরা তাঁর উপবাস থেকে অর্জিত সমস্ত যোগ্যতা (পুণ্য) হারাবেন।[২২]
উজ্জয়িনীর বলবীর হনুমান মন্দিরের চত্বরে ত্রিজটার একটি মন্দিরও রয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমা থেকে শুরু করে ৩ দিনের জন্য দেবীকে বিশেষ পূজা দেওয়া হয়।[২৩]
তেলুগুর সীতা পুরানামুতে, রামস্বামী চৌদারি ত্রিজটাকে দ্রাবিড় বিভীষণ এবং আর্য গন্ধর্ব সরমার কন্যা হিসাবে চিত্রিত করেছেন। অর্ধ-আর্য ত্রিজটাকে বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যা দেওয়া হয়, যিনি নিজের কাকা রাবণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং সীতাকে সাহায্য করেন। ভাইয়ের প্রতি বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা এবং রামের প্রতি আনুগত্যের জন্যও তাঁর আর্য স্ত্রীকে দায়ী করা হয়।[২৪]
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Mani pp. 792–93
- ↑ Bose p. 359
- ↑ ক খ গ Bulcke pp. 104–5
- ↑ Bulcke pp. 105–7
- ↑ ক খ Bulcke pp. 107–8
- ↑ Goldman p. 422
- ↑ Shah p. 63
- ↑ Leonardi p. 80
- ↑ Bulcke p. 105
- ↑ Nagar p. 389
- ↑ ক খ গ Bulcke p. 110
- ↑ ক খ গ ঘ Bulcke p. 108
- ↑ Bulcke pp. 108–9
- ↑ ক খ গ ঘ Bulcke p. 109
- ↑ ক খ Nagar p. 364
- ↑ Bulcke pp. 110–111
- ↑ Bulcke pp. 111–112
- ↑ ক খ Bulcke p. 112
- ↑ Bulcke p. 111
- ↑ "Kam 2000"। ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ "Houten wajangpop voorstellende Trijata" (ওলন্দাজ ভাষায়)। Tropenmuseum। ১০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৪।
- ↑ Pintchman pp. 41–42
- ↑ Dharma Desk (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "हनुमानजी का सैकड़ों साल पुराना मंदिर, यहां हैं दो चमत्कारी प्रतिमाएं"। Dainik Bhaskar। Ujjain: D B Corp Ltd.। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ Rao pp. 176–77
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Leodardi, G. G. (১৯৭৩)। Bhaṭṭikāvyam। Brill। আইএসবিএন 90-04-03555-9।
- The Ramayana Revisited। Oxford University Press। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-19-803763-7।
- Bulcke, Camille (২০১০)। "Sita's Friend Trijata"। Rāmakathā and Other Essays। Vani Prakashan। পৃষ্ঠা 104–112। আইএসবিএন 978-93-5000-107-3।
- Goldman, Robert P.; Goldman, Sally J. Sutherland (১৯৯৬)। The Ramayana Of Valmiki: Sundarakāṇḍa। The Ramayana Of Valmiki: An Epic Of Ancient India। Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-06662-0।
- Kam, Garrett (২০০০)। Ramayana in the Arts of Asia। 시사영어사। আইএসবিএন 978-0-07-115785-8।
- Mani, Vettam (১৯৭৫)। Puranic Encyclopaedia: A Comprehensive Dictionary With Special Reference to the Epic and Puranic Literature। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 792–793। আইএসবিএন 0-8426-0822-2।
- Nagar, Shanti Lal (১৯৯৯)। Genesis and Evolution of the Rāma Kathā in Indian Art, Thought, Literature, and Culture: From the Earliest Period to the Modern Times। B.R. Publishing Company। আইএসবিএন 978-81-7646-084-2।
- Pintchman, Tracy (২০০৫)। Guests at God's Wedding: Celebrating Kartik among the Women of Benares। SUNY Press। আইএসবিএন 978-0-7914-6595-0।
- Rao, Velcheru Narayana (১ জানুয়ারি ২০০১)। "The Politics of Telugu Ramayanas"। Questioning Ramayanas: A South Asian Tradition। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-22074-4।
- Shah, Umakant P. (২০০৩)। "Ramayana in Jaina Tradition"। Asian Variations in Ramayana: Papers Presented at the International Seminar on 'Variations in Ramayana in Asia: Their Cultural, Social and Anthropological Significance', New Delhi, January 1981। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 978-81-260-1809-3।