ভারতদক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল তথা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশঅর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল একাধিক বিশালাকার সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, ও শিখ—এই চার বিশ্বধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, ও ইসলাম এদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। বর্তমানে ভারত ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট এক সংসদীয়সাধারণতন্ত্র।
১৯১১ সাল পর্যন্ত কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। একদা ভারতের আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতির কেন্দ্রভূমি কলকাতা মহানগরে ১৯৫৪ সালের পর থেকে তীব্র রাজনৈতিক সংঘাত ও তার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। তবে ২০০০ সালের পর থেকে এই শহর আবার আর্থিক ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয় ও সাংস্কৃতিক হৃতগৌরব অনেকাংশে পুনরাধিকার করে। তবে ভারতের অন্যান্য মহানগরগুলির মতো নগরায়নজনিত দারিদ্র্য, পরিবেশ দূষণ ও যানজটের সমস্যা থেকে কলকাতাও একেবারে মুক্ত হতে পারেনি।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি ভাষায়: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી মোহান্দাস্ কারাম্চান্দ্ গান্ধী) বা মহাত্মা গান্ধী (২রা অক্টোবর, ১৮৬৯ - ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮) অন্যতম প্রধান ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাভশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অবাধ্যতা ঘোষিত হয়েছিল। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
গান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকারীভাবে তাঁর সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে । ২রা অক্টোবর তাঁর জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ই জুনজাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবর-কে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে, গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। ভারতে ফিরে আসার পরে কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বহু বিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। ১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করেন।
মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেটি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূ্লই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাস থাকতেন।
তাজমহল (হিন্দি: ताज महल, উর্দু: تاج محل) ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, এ পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন যারা উস্তাদ আহমেদ লাহুরীর সাথে ছিলেন, যিনি তাজমহলের মূল নকশাকারক হওয়ার প্রার্থীতায় এগিয়ে আছেন।