বাঙালি নদী

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫১′ উত্তর ৮৯°৩৪′ পূর্ব / ২৪.৮৫০° উত্তর ৮৯.৫৬৭° পূর্ব / 24.850; 89.567
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাঙালি নদী
বাঙালী নদী
বাঙালী নদী
বাঙালী নদী
দেশ বাংলাদেশ
অঞ্চলসমূহ রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ
জেলাসমূহ গাইবান্ধা জেলা বগুড়া জেলা, সিরাজগঞ্জ জেলা
উৎস কাটাখালী নদী (গাইবান্ধা)
মোহনা হুরাসাগর নদী
দৈর্ঘ্য ১৮৩ কিলোমিটার (১১৪ মাইল)

বাঙালি নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৮৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৪৩ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক পাথরাজ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৯।[১] ২০০৭ সালে নদীটি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে যমুনা নদীর সঙ্গে নদীটির মিশে যাবার আশঙ্কায়। এর ফলে এলাকার ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তন হতে পারে।[২][৩]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

বর্তমানের যমুনাতিস্তা নদীর গতিপথ ১৭৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে তৈরি হয়। এই বন্যা সমগ্র অঞ্চলের নদীভিত্তিক মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন করে দেয়। ১৭৮৭ সালের আগে ব্রহ্মপুত্র নদী ময়মনসিংহের ভিতর দিয়ে ভৈরব বাজারে এসে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হত। বন্যার পর, ব্রহ্মপুত্র গতি পরিবর্তন করে এবং যমুনা নামে পদ্মায় পতিত হতে থাকে। তিস্তা নদীও তার গতি পরিবর্তিত করে। ধারণা করা হয় বাঙালি নদীর জন্মও ১৭৮৭ সালের বন্যার পর কেননা বাঙালি নদীর প্রধান উৎস তিস্তা ও যমুনার বর্তমান গতিপথ ১৭৮৭ সালের আগে ছিল না।[২]

এলাকা[সম্পাদনা]

বাঙালি নদীর উৎপত্তি নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী থেকে। উৎস থেকে নদীটি ঘাঘট নামে গাইবান্ধায় প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধায় এসে এটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়- একটি শাখা পশ্চিমে ঘাঘট নামে প্রবাহিত হয়ে শেরপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে পড়ে; অপর শাখা বাঙালি নামে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়ে বগুড়ায় আবারো দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এই শাখা দুটি যথাক্রমে যমুনা ও করতোয়ায় গিয়ে পড়ে।

বাঙালি নদীর অনেক শাখা নদী আছে যথা: বেলাল, মানস, মধুখালি, ইছামতি, ভলকা এবং অন্যান্য। এই শাখাগুলো শীতের মৌসুমে শুকিয়ে যায়।

সাম্প্রতিককালে তিস্তা নদীর প্রবাহ দূর্বল হয়ে যাওয়ায়, যমুনা বাঙালি নদীর পানির প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওয়াজেদ মনে করেন "যমুনা নদী বাঙালির প্রাথমিক উৎস।" অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানী এ মতকে সমর্থন করেছেন।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে, উত্তর বঙ্গে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত হতে থাকে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল বগুড়ারংপুর, যা বাঙালি নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত। তবে নদীর নামকরণ বাঙালি (বাংলার মানুষ) পিছনে এটিই কারণ কিনা তা পরিষ্কারভাবে জানা যায় নি।[২]

সাম্প্রতিক সমস্যা[সম্পাদনা]

বিজ্ঞানীরা বাঙালি নদীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, নদী-ভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছর যমুনা নদী, বাঙালি নদীর দিকে ৮০ মিটার এগিয়ে আসছে। ২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৩০০ মিটার দুরত্ব নদী দুটিকে পৃথক করে রেখেছে। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি দুটি নদী একসাথে মিশে যায় তবে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ১০০,০০০ হেক্টর এলাকা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাবে। পানি বগুড়া-নগরবাড়ি সড়ক ধ্বংস করে দেবে এবং ফলশ্রুতিতে যমুনা নদীর উপর অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সেতু অকেজো হয়ে যাবে।[২] এটি বাঙালি নদী সংলগ্ন সমভূমির বার্ষিক বন্যার হার বাড়িয়ে দেবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী"। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ১৫৩-১৪৪। আইএসবিএন 984-70120-0436-4 
  2. Sharkar, Torun (7 September), "নদীর নামও বাঙালি", Onno Alo, Prothom Alo, পৃষ্ঠা 2  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য)
  3. Khan, Moazzem Hossain (২০০৭-০৫-২৩)। "Death toll rises to 564: Flood in some dists likely to deteriorate"The New Nation (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]