পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস (১৯৪৭–বর্তমান)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস সূচিত হয় ১৯৪৭ সালে। এই বছরই অবিভক্ত ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারতপাকিস্তানভুক্ত হয়। পাকিস্তানের প্রদেশটির নাম হয় পূর্ব বাংলা ও ভারতের অংশটি পশ্চিমবঙ্গ নাম ধারণ করে।[১] ১৯৫০ সালে কোচবিহার রাজ্যটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

সাংস্কৃতিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন যুগ[সম্পাদনা]

বৃহত্তর বঙ্গদেশে সভ্যতার সূচনা ঘটে আজ থেকে ৪,০০০ বছর আগে।[২][৩] এই সময় দ্রাবিড়, তিব্বতি-বর্মি ও অস্ত্রো-এশীয় জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। বঙ্গ বা বাংলা শব্দের প্রকৃত উৎস অজ্ঞাত। তবে মনে করা হয়, ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ যে দ্রাবিড়-ভাষী বং জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল, তারই নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় বঙ্গ[৪] গ্রিক সূত্র থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দ নাগাদ গঙ্গারিডাই নামক একটি অঞ্চলের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সম্ভবত এটি বৈদেশিক সাহিত্যে বাংলার প্রাচীনতম উল্লেখগুলির অন্যতম। মনে করা হয়, এই গঙ্গারিডাই শব্দটি গঙ্গাহৃদ (অর্থাৎ, গঙ্গা যে অঞ্চলের হৃদয়ে প্রবাহিত) শব্দের অপভ্রংশ।[৫] খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে বাংলাবিহার অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে মগধ রাজ্য। একাধিক মহাজনপদের সমষ্টি এই মগধ রাজ্য ছিল মহাবীরগৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের অন্যতম।[৬] মৌর্য রাজবংশের রাজত্বকালে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি মহামতি অশোকের রাজত্বকালে আফগানিস্তানপারস্যের কিছু অংশও এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রাচীনকালে জাভা, সুমাত্রাশ্যামদেশের (অধুনা থাইল্যান্ড) সঙ্গে বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাবংশ অনুসারে, বিজয় সিংহ নামে বঙ্গ রাজ্যের এক রাজপুত্র লঙ্কা (অধুনা শ্রীলঙ্কা) জয় করেন এবং সেই দেশের নতুন নাম রাখেন সিংহল। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও শ্যামদেশে গিয়ে সেখানে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন।

আদিমধ্য ও মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

লালজীউ মন্দির, বিষ্ণুপুর।

খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মগধ রাজ্য ছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি একাধিক ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত সমগ্র বঙ্গ অঞ্চলটিকে একত্রিত করে একটি সুসংহত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ (অধুনা মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি অঞ্চল)। তার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে বঙ্গের ইতিহাসে এক নৈরাজ্যের অবস্থা সৃষ্টি। ইতিহাসে এই সময়টি "মাৎস্যন্যায়" নামে পরিচিত। এরপর চারশো বছর বৌদ্ধ পাল রাজবংশ এবং তারপর কিছুকাল হিন্দু সেন রাজবংশ এই অঞ্চল শাসন করেন। পাল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র (অধুনা পাটনা, বিহার) এবং পরে গৌড় (মালদহ জেলা)। সেন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল নবদ্বীপ (নদিয়া জেলা)। এরপর ভারতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে বঙ্গ অঞ্চলেও ইসলাম ধর্মে প্রসার ঘটে।[৮] বকতিয়ার খলজি নামে দিল্লি সুলতানির দাস রাজবংশের এক তুর্কি সেনানায়ক সর্বশেষ সেন রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাস্ত করে বঙ্গের একটি বিরাট অঞ্চল অধিকার করে নেন। এরপর কয়েক শতাব্দী এই অঞ্চল দিল্লি সুলতানির অধীনস্থ সুলতান রাজবংশ অথবা সামন্ত প্রভুদের দ্বারা শাসিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনানায়ক ইসলাম খাঁ বঙ্গ অধিকার করেন। যদিও মুঘল সাম্রাজ্যের রাজদরবার সুবা বাংলার শাসকদের শাসনকার্যের ব্যাপারে আধা-স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন। এই অঞ্চলের শাসনভার ন্যস্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের হাতে। নবাবেরাও দিল্লির মুঘল সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দিল্লি সালতানাত এবং শাহী বাংলার সুলতানতে সময়, ইওরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য দেশ হিসেবে ধরতো [৯] এরপর, বাংলা মুঘলদের অধিকারে চলে আসে। মুঘল আমলে বাংলা ছিল সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ। মুঘল আমলে, সুবাহ বাংলা সমগ্র সাম্রাজ্যের শতকরা ৫০ ভাগ জিডিপি এর যোগান দিত।,[১০] বাংলা সমুদ্রগামী জাহাজ ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[১১][১২][১৩]মুঘল সাম্রাজ্য আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (জিডিপির) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবাহ বাংলায়,[১০][১৪][১৫] যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের চেয়ে জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।[১৬]

ব্রিটিশ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ বিজয়ের পর

ব্রিটিশ শাসন[সম্পাদনা]

রাজা রামমোহন রায়, "বাংলার নবজাগরণের জনক"
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাংলার বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী; ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদকল্পে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে বঙ্গ অঞ্চলে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে। এই সব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। অবশেষে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করেন। এর পর সুবা বাংলার রাজস্ব আদায়ের অধিকার কোম্পানির হস্তগত হয়।[১৭] ১৭৬৫ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি স্থাপিত হয়। ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (অধুনা মধ্যপ্রদেশ) উত্তরে অবস্থিত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মোহনা থেকে হিমালয়পাঞ্জাব পর্যন্ত সকল ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে।[১৮] ১৭৭২ সালে কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষিত হয়।

বাংলার নবজাগরণব্রাহ্মসমাজ-কেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন বাংলার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সূচনা কলকাতার অদূরেই হয়েছিল। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তি স্বহস্তে গ্রহণ করে। ভারত শাসনের জন্য একটি ভাইসরয়ের পদ সৃষ্টি করা হয়।[১৯] ১৯০৫ সালে ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) অঞ্চলটিকে পূর্ববঙ্গ থেকে পৃথক করা হয়। কিন্তু বঙ্গবিভাগের এই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং ১৯১১ সালে বঙ্গপ্রদেশকে পুনরায় একত্রিত করা হয়।[২০] ১৯৪৩ সালে পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।[২১]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অনুশীলন সমিতিযুগান্তর দলের মতো বিপ্লবী দলগুলি এখানে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলায় ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১৯২০ সাল থেকে এই রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চক্রান্তে ভারত স্বাধীনতা অর্জন ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা দ্বিধাবিভক্ত হয়। হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গ নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যোগ দেয় (এই অঞ্চলটি পরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয় এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে)।[২২]

স্বাধীনোত্তর যুগ[সম্পাদনা]

দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এই ব্যাপক অভিবাসনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৫০ সালে দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়। ১৯৫৫ সালে ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিহারের কিছু বাংলা-ভাষী অঞ্চলও এই সময় পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়, ধর্মঘট ও সহিংস মার্ক্সবাদী-নকশালবাদী আন্দোলনের ফলে রাজ্যের শিল্প পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। এর ফলে এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার যুগের সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। সেই সময় নকশালবাদের সাথে কংগ্রেসের চক্রান্তের ফলে রাজ্যের পরিকাঠামোয় গভীর চাপ সৃষ্টি হয়।[২৩] ১৯৭৪ সালের বসন্ত মহামারীতে রাজ্যে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এরপর তিন দশকেরও বেশি সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শাসনভার পরিচালনা করে।[২৪]

১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ২০০০ সালে সংস্কারপন্থী নতুন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্বাচনের পর রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছোটোবড়ো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটেছে।[২৫][২৬] আবার শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।[২৭][২৮]

২০০৬ সালে হুগলির সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তীব্র গণ-অসন্তোষ দেখা যায়। জমি অধিগ্রহণ বিতর্কের প্রেক্ষিতে সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী কারখানা প্রত্যাহার করে নিলে, তা রাজ্য রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।[২৯] ২০০৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (SEZ) জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে অশান্তির জেরে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন মারা গেলে রাজ্য রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১০ সালের পৌরনির্বাচনে শাসক বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। অবশেষে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়ে রাজ্যের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হয়।

রাজনৈতিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিধানচন্দ্র রায় যুগ (১৯৪৭–১৯৬২)[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালে কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করলে রাজ্যটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। [৩০] ১৯৫৫ সালে চন্দননগরের ফরাসী উপনিবেশ, যেটি ১৯৫০ সালে ভারত সরকারের অধীনে আসে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। সাথে সাথে বিহারের কিছু অঞ্চলও সংযুক্তি লাভ করে।
বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে অনেকগুলি শিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।

যুক্তফ্রন্ট (১৯৬৭)[সম্পাদনা]

১৯৬৭ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সরকারের সিপিআই(এম) প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার লাভ করেন বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখোপাধ্যায়

১৯৬৭ সালে উত্তরবঙ্গে নকশালবাড়িতে সিপিআই(এম) নেতা চারু মজুমদার ও কানু সান্যালের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। সরকার কড়া হাতে আন্দোলন দমন করে। ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে ক্রমাগত মার্ক্সবাদী ও নকশালবাদী পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৬৭-র নভেম্বরে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে। শুরুতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করলেও সেই মন্ত্রিসভা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। যুক্তফ্রন্ট সরকার উৎখাত হওয়ার ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে ২৪-ঘণ্টার এক জোরদার হরতাল সংঘটিত হয়। ঘোষ মন্ত্রিসভার পতনের পর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়।

১৯৬৯-এ রাজ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সর্ববৃহৎ দলরূপে আত্মপ্রকাশ করে।[৩১] কিন্তু সিপিআই ও বাংলা কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থনে অজয় মুখোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে পুনঃবহাল হন। ১৯৭০এর ১৬ই মার্চ তিনি পদত্যাগ করলে রাজ্যে আবার রাষ্ট্রপতি শাসন ফিরে আসে।

সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় যুগ (১৯৭২–১৯৭৭)[সম্পাদনা]

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৭২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং বিজয়ী নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী হন। এই পর্যায়ে, ১৯৭৫ সালে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেন। এই সময়কাল রাজ্যে পুলিশবাহিনীর সঙ্গে নকশালপন্থীদের চরম হিংসাত্মক লড়াই ও শেষ পর্যন্ত আন্দোলন দমনের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। [২৩] ১৯৭৪এ, বসন্তরোগের মহামারীতে হাজারো মানুষের মৃত্যু ঘটে। ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এক বিশাল পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়।

বামফ্রন্ট যুগ (১৯৭৭–২০১১)[সম্পাদনা]

১৯৭৭-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) নেতৃত্বাধীন বামজোট ২৪৩ আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগুরুত্ব অর্জন করে। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রীত্বে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) নেতৃত্বাধীন বামজোট পরবর্তী তিন দশক ধরে রাজ্যের শাসনভার পরিচালনা করে।[৩২]

পরপর পাঁচবার বামফ্রন্ট সরকারকে নেতৃত্ব প্রদানের পর জ্যোতি বসু সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তাঁর উত্তরসূরী হিসাবে নিযুক্ত করেন। পাঁচ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে বামফ্রন্ট আবার ক্ষমতায় আসে।[৩৩]

স্বর্ণ যুগ[সম্পাদনা]

এই সময়ের সরকার তৎকালীন ভাগ চাষী দের আন্দোলন কে সংহতি জানিয়ে কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। অপারেশন বর্গা এবং ভাগ চাষ বিলের মাধ্যমে ভূমি সংস্কার আইন লাগু হয় এবং কৃষি ব্যবস্থায় আমূল উন্নয়ন ঘটে। জমি দার দের হাত থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে প্রকৃত কৃষক দের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে।

মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড ছিলো ১৯৭৯ সালে রাজ্যপুলিশ দ্বারা রচিত ঘৃণ্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ড যেখানে দেশভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী বাঙালি হিন্দুদের সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছিলো।[৩৪]

সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

বানতলা ধর্ষণ মামলা[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালের ৩০ মে গোসাবা রাঙাবেড়িয়া থেকে ফেরার পথে বানতলা রোডে একদল দুষ্কৃতির হাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিক ধর্ষিতা হন। দুষ্কৃতিদের বাধা দিতে গিয়ে একজন আধিকারিক ও তাদের গাড়ির চালক নিহত হন।

পঞ্চায়েত ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

ভারতবর্ষের আইন ব্যবস্থায় যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে তার বাস্তবায়ন ঘটে এই সময়। অসংখ্য প্রান্তিক মানুষ সরকারকে তাদের প্রয়োজনে তাদের দুয়ারে পায়। জনগণ সক্রিয় ভাবে সরকারের ব‍্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।

এছাড়াও এই সময় সরকারি চাকুরীজীবি, কৃষক, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটে। সকলের দৈনিক রোজগার বৃদ্ধি পায়। শ্রমিক , ছাত্ররা ইউনিয়ন এর অধিকার পায়। কৃষিক্ষেত্রে ধানে দেশে প্রথম, সবজিতে প্রথম ও আলুতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রাজ্য।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যুগ (২০০০–২০১১)[সম্পাদনা]

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবর্তনে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন লাভ করে ২০০০ সালে সংস্কারভাবাপন্ন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সহযোগিতায়। ২০০৭-এ, কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় শিল্প-সংক্রান্ত ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে মতান্তরের ফলে[৩৫][৩৬] সশস্ত্র আন্দোলনকারিরা রাজ্যের কিছু জায়গায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সংঘটিত করে।[৩৭][৩৮]

নন্দীগ্রাম হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ইন্দোনেশীয় সালিম গ্রুপের[৩৯] মাধ্যমে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ১০,০০০ একর (৪০ বর্গ কিমি) জুড়ে 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' (SEZ) গঠনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দমন করতে ৪,০০০ সশস্ত্র পুলিশের একটি বাহিনী প্রেরণ করে। পুলিশবাহিনীর গুলিতে অন্ততপক্ষে ১৪ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন আহত হয়।

তৃণমূল যুগ (২০১১–বর্তমান)[সম্পাদনা]

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০১১র নির্বাচনে তৃণমূল ও বাংলা কংগ্রেসের জোট সরকার জয়ী হয়। ২০১৩তে তৃণমূল জাতীয় কংগ্রেসের জোট থেকে বেরিয়ে আসে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এককভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে। এই সময়ে রাজ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী মনোভাব বেড়ে যায় এবং শাসক দল কমিউনিস্টদের দমনে নেমে পড়ে।

২০১৬ সাল থেকে বাংলার অর্থনীতিতে ভালো বৃদ্ধি চোখে পড়ে, মমতা ব্যানার্জির একাধিক সামাজিক প্রকল্পে বাংলা আবার এগোতে শুরু করে, ২০২০ সালে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাংলার শেষ দশকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ে, বাংলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে ওঠে, যা বাংলার ভবিষ্যতকে ত্বরান্বিত করে।[নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রশ্নবিদ্ধ]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হারুন-অর-রশিদ (২০১২)। "বঙ্গবিভাগ, ১৯৪৭"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "History of Bangladesh"। Bangladesh Student Association। ২০০৫-১২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  3. "4000-year old settlement unearthed in Bangladesh"। Xinhua। 2006-March।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. James Heitzman and Robert L. Worden, সম্পাদক (১৯৮৯)। "Early History, 1000 B.C.-A.D. 1202"। Bangladesh: A country study। Library of Congress। 
  5. Chowdhury, AM। "Gangaridai"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৮ 
  6. Sultana, Sabiha। "Settlement in Bengal (Early Period)"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। ২০০৭-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-০৪ 
  7. "Shashanka"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  8. "Islam (in Bengal)"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  9. Nanda, J. N (2005). Bengal: the unique state। Concept Publishing Company. p. 10.। ২০০৫। আইএসবিএন 978-81-8069-149-2Bengal [...] was rich in the production and export of grain, salt, fruit, liquors and wines, precious metals and ornaments besides the output of its handlooms in silk and cotton. Europe referred to Bengal as the richest country to trade with. 
  10. "Which India is claiming to have been colonised?"The Daily Star (Opinion)।  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "star" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  11. Junie T. Tong (2016), Finance and Society in 21st Century China: Chinese Culture Versus Western Markets, page 151, CRC Press
  12. John L. Esposito (2004), The Islamic World: Past and Present 3-Volume Set, page 190, Oxford University Press
  13. Ray, Indrajit (2011). Bengal Industries and the British Industrial Revolution (1757-1857), Routledge, আইএসবিএন ১১৩৬৮২৫৫২৫
  14. মুহাম্মদ শাহ আলম (২০১৬)। Poverty From The Wealth of Nations: Integration and Polarization in the Global Economy since 1760স্প্রিঙ্গার সায়েন্স+বিজনেস মিডিয়া। পৃষ্ঠা ৩২। আইএসবিএন 978-0-333-98564-9 
  15. ম্যাডিসন, অ্যাঙ্গাস (২০০৩)। Development Centre Studies The World Economy Historical Statistics: Historical Statistics। ওইসিডি পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ২৫৯–২৬১। আইএসবিএন 9264104143 
  16. লরেন্স হ্যারিসন, পিটার এল. বার্জার (২০০৬)। Developing cultures: case studies। রৌটলেজ। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9780415952798 
  17. Chaudhury, S; Mohsin, KM। "Sirajuddaula"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  18. Fiske, John। "The Famine of 1770 in Bengal"The Unseen World, and other essays। University of Adelaide Library Electronic Texts Collection। ২০০৬-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  19. (Baxter 1997, পৃ. 30–32)
  20. (Baxter 1997, পৃ. 39–40)
  21. Sen, Amartya (১৯৭৩)। Poverty and Famines। Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-828463-2 
  22. Harun-or-Rashid। "Partition of Bengal, 1947"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬ 
  23. (Bennett ও Hindle 1996, পৃ. 63–70)
  24. Biswas, Soutik (২০০৬-০৪-১৬)। "Calcutta's colourless campaign"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ 
  25. Ghosh Roy, Paramasish (২০০৫-০৭-২২)। "Maoist on Rise in West Bengal"VOA BanglaVoice of America। ২০০৭-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১১ 
  26. "Maoist Communist Centre (MCC)"Left-wing Extremist group। South Asia Terrorism Portal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১১ 
  27. "Several hurt in Singur clash"rediff News। Rediff.com India Limited। ২৮ জানুয়ারি ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-১৫ 
  28. "Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid"The Telegraph। ১৫ মার্চ ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-১৫ 
  29. "The Hindu Business Line, 26 November 2006"। ৫ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  30. Dr. Sailen Debnath,ed. Social and Political Tensions In North Bengal since 1947, আইএসবিএন ৮১-৮৬৮৬০-২৩-১.
  31. Indian National Congress had won 55 seats, Bangla Congress 33 and CPI 30. CPI(M) allies also won several seats.ECI: Statistical Report on the 1969 West Bengal Legislative Election
  32. Biswas, Soutik (2006-04-16). "Calcutta's colourless campaign". BBC. Retrieved 2006-08-26.
  33. Bhattacharya,, Snigdhendu (25 April 2011). "Ghost of Marichjhapi returns to haunt". The Hindustan Times. Retrieved 5 August 2013.
  34. "Book Excerpt: 'Countless Were killed, Many Raped,' Say Eyewitnesses of Bengal's Marichjhapi Massacre"। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৯ 
  35. "Several hurt in Singur clash". rediff News. Rediff.com India Limited. 28 January 2007. Retrieved 2007-03-15.
  36. "Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid". The Telegraph. 15 March 2007. Retrieved 2007-03-15.
  37. Ghosh Roy, Paramasish (2005-07-22). "Maoist on Rise in West Bengal". VOA Bangla. Voice of America. Retrieved 2006-09-11.
  38. "Maoist Communist Centre (MCC)". Left-wing Extremist group. South Asia Terrorism Portal. Retrieved 2006-09-11.
  39. For more information on the Salim Group please see Sudono Salim