জন গিলগুড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জন গিলগুড
John Gielgud
১৯৭৩ সালে গিলগুড
জন্ম
আর্থার জন গিলগুড

(১৯০৪-০৪-১৪)১৪ এপ্রিল ১৯০৪
সাউথ কেনসিংটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২১ মে ২০০০(2000-05-21) (বয়স ৯৬)
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক
পুরস্কারপূর্ণ তালিকা

স্যার আর্থার জন গিলগুড ওএম সিএইচ (ইংরেজি: Arthur John Gielgud, /ˈɡlɡʊd/; ১৪ এপ্রিল ১৯০৪ - ২১ মে ২০০০) ছিলেন একজন ইংরেজ অভিনেতা ও মঞ্চ পরিচালক। তার কর্মজীবনের ব্যাপ্তি ছিল আট দশক। রাফ রিচার্ডসনলরন্স অলিভিয়ের সাথে তিনি তিনজন অভিনেতার একজন, যিনি বিংশ শতাব্দীর বেশির ভাগ সময় ব্রিটিশ মঞ্চে কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন। টেরি পরিবারের সদস্য গিলগুড ১৯২২ সালে ফিলিস নেলসন-টেরি কোম্পানিতে তার প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে মঞ্চ বিষয়ে পড়াশুনার পর তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত শেকসপিয়রীয় নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন।

গিলগুড তার কর্মজীবনের প্রথমার্ধে চলচ্চিত্রকে তেমন গুরুত্বের সাথে নেননি। যদিও তিনি ১৯২৪ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং দ্য গুড কম্প্যানিয়ন্স (১৯৩৩) ও জুলিয়াস সিজার (১৯৫৩) চলচ্চিত্র দিয়ে সাফল্য অর্জন করেন, তিনি ষাটের দশকের পূর্বে চলচ্চিত্র নিয়মিত হননি। গিলগুড ১৯৬৪ সালে বেকেট চলচ্চিত্রে সপ্তম লুই চরিত্রের জন্য তার প্রথম একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে এলিজাবেথ চলচ্চিত্র পর্যন্ত ষাটের বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে আর্থার চলচ্চিত্রে হবসন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার চলচ্চিত্রের কর্মজীবনে তিনি একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও দুটি বাফটা পুরস্কার লাভ করেন।

পুরস্কারের প্রতি উদাসীন হওয়া স্বত্বেও গিলগুড অস্কার, এমি, গ্র্যামি ও টনি পুরস্কার লাভের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি তার কর্মজীবনের শুরু থেকে তার কণ্ঠ ও শেকসপিয়রীয় কাব্যে তার দখলের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে তিনি শতাধিক বেতার ও টেলিভিশন নাটক সম্প্রচার করেন এবং দশটি শেকসপিয়রীয় নাটকসহ বহু নাটকের বাণিজ্যিক রেকর্ডিং করেন। তার সম্মাননার মধ্যে রয়েছে ১৯৫৩ সালে নাইটহুড এবং তার নামানুসারে গিলগুড থিয়েটারের নামকরণ। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সালে তিনি রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টের সভাপতি ছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

গিলগুড লন্ডনের সাউথ কেনসিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফ্রাঙ্ক হেনরি গিলগুড (১৮৬০-১৯৪৯) এবং মাতা কেট টেরি-গিলগুড (জন্মনাম টেরি-লুইস, ১৮৬৮-১৯৫৮)। কেট ছিলেন ফ্রাঙ্কের দ্বিতীয় স্ত্রী। গিলগুড তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় এবং তিন পুত্রের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তার বড় ভাই লুইস রেডক্রস ও ইউনেস্কোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন এবং অপর ভাই ভাল বিবিসি বেতার নাটকের প্রধান ছিলেন। তার ছোট বোন এলিয়ানর বহু বছর গিলগুডের একান্ত সহকারী ছিলেন।[১] পিতার দিক থেকে গিলগুড লিথুয়ানীয় ও পোলীয় বংশোদ্ভূত। তার উপনাম লিথুয়ানিয়ার একটি গ্রাম গেলগোদিস্কিস থেকে রাখা হয়।[১] গিলগুডরা নিয়েমেন নদীর তীরবর্তী গিলগুদৎজিস্কি দুর্গের মালিক ছিল, কিন্তু ১৮৩০-৩১ সালে রুশ শাসনামলে বিদ্রোহের ফলে তাদের সম্পত্তি দখল হয়ে যায়।[ক] গিলগুডের পিতা ফ্রাঙ্কের পিতামহ জ্যান গিলগুড তার পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে শরণার্থী হিসেবে আগমন করেন।[৩] ফ্রাঙ্কের মাতামহী ছিলেন বিখ্যাত পোলীয় অভিনেত্রী আনিয়েলা আসৎজেরগেরোয়া।[২]

ফ্রাঙ্ক মঞ্চে নাটকে অভিনয়শিল্পীসমৃদ্ধ টেরি পরিবারে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী তাদের বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মঞ্চে অভিনয় করতেন। তিনি ছিলেন অভিনেত্রী কেট টেরি কন্যা এবং এলেন, ফ্রেডমারিয়োঁ টেরি, মেবল টেরি-লুইস এবং এডিথ ও এডওয়ার্ড গর্ডন ক্রেইগদের সাথে মঞ্চ রাজবংশের একজন।[৫] ফ্রাঙ্কের মঞ্চের প্রতি কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না এবং সারাজীবন সিটি অব লন্ডনে স্টকব্রোকার হিসেবে কাজ করেন।[৬]

১৯১২ সালে আট বছর বয়সে গিলগুড তার বড় ভাইয়ের সাথে সুরির হিলসাইড প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। খেলাধুলায় আগ্রহ না থাকা স্বত্ত্বেও তিনি বিদ্যালয়ে ক্রিকেট ও রাগবিতে সুনাম অর্জন করেন।[৭] ক্লাসে তিনি গণিত অপছন্দ করতেন, ধ্রুপদে ভাল ছিলেন এবং ইংরেজি ও ঈশ্বরত্ব বিষয়ে অসাধারণ ছিলেন।[৮] হিলসাইডে তিনি নাটকে আগ্রহ বোধ করেন, এবং স্কুলে কয়েকটি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে জুলিয়াস সিজারে মার্ক অ্যান্থনি এবং দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিসে শাইলক।[৯]

হিলসাইড থেকে লুইস ইটন কলেজ এবং ভাল রাগবি স্কুলে পড়ার বৃত্তি লাভ করেন, যদিও তাদের একাডেমিক কোন অর্জন ছিল না। জন এই ধরনের কোন বৃত্তি পান নি।[১০] তাকে দিবাকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলে পাঠানো হয়।[খ] তিনি পরবর্তীতে বলেন যে, সেখানে তার ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটারে প্রবেশের সুযোগ মিলে।[১২] তিনি সেখানে সারাহ বের্নহার্টের অভিনয়, অ্যাডেলিন গিনের নৃত্য এবং গীতিমঞ্চে আলবার্ট শেভালিয়ে, ভেস্টা টিলি ও ম্যারি লয়েডদের পরিবেশনা দেখতেন।[১২] স্কুলটির গায়কদল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের বিভিন্ন কার্যে সঙ্গীত পরিবেশন করত, যা ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি তার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।[১৩] খসড়া চিত্রাঙ্কনে তার দক্ষতা ছিল এবং তিনি একসময় দৃশ্য নকশাকার হিসেবে সম্ভাব্য কর্মজীবন গড়ার কথাও ভাবেন।[১৪]

কিশোর গিলগুডের পিতা তাকে কনসার্টে নিয়ে যেতেন, গিলগুড তা পছন্দ করতেন, এবং চিত্রশালা ও জাদুঘরে নিয়ে যেতেন, যাতে তিনি খুব বিরক্ত হতেন।[১৫] তার পিতামাতা দুজনেই নিয়মিত মঞ্চনাটক দেখতে যেতেন, কিন্তু তাদের সন্তানদের অভিনয় কর্মজীবন গড়ার উৎসাহ প্রদান করতেন না।[১৬] ১৯২১ সালে ওয়েস্টমিনস্টার ছাড়ার সময়, গিলগুড অভিনয়ের শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদানের জন্য তার পিতামাতাকে বোঝান এবং বলেন যে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে যদি তিনি স্বাবলম্বী হতে না পারেন তবে তিনি কোন দাপ্তরিক কাজে যোগ দিবেন।[১৭]

প্রথম অভিনয়[সম্পাদনা]

সতের বছর বয়সে গিলগুড অভিনেতা ও নির্দেশক স্যার ফ্রাঙ্ক বেনসনের স্ত্রী কনস্ট্যান্স বেনসন পরিচালিত একটি প্রাইভেট নাট্য স্কুলে ভর্তি হন।[১৮] তার প্রথম দিনে লেডি বেনসন তাকে বলেছিলেন তিনি রিকেটস রোগওয়ালা বিড়ালের মত হাঁটেন। গিলগুড বলেন, "এটা আমার আত্মসম্মানবোধে লেগেছিল, তবুও তা ভালো ছিল।"[১৯] এই স্কুলে ভর্তির পূর্বে ও পরে তিনি কয়েকটি আনাড়ি মঞ্চনাটকে কাজ করেন,[২০] এবং ১৯২১ সালের নভেম্বরে তিনি একটি পেশাদার কোম্পানির হয়ে তার প্রথম কাজ করেন। কিন্তু তিনি কোন পারিশ্রমিক পাননি। তিনি ওল্ড ভিসে ফিফথ হেনরি নাটকে হেরাল্ড চরিত্রে অভিনয় করেন। তার মাত্র এক লাইন সংলাপ ছিল এবং তিনি বলেন যে তাও তিনি খুবই বাজেভাবে উচ্চারণ করেছিলেন।[২১] তাকে সেই মৌসুমের বাকি সময় কিং লিয়ার, ওয়াট টাইলারপিয়ার গিন্ট নাটকের অতিরিক্ত শিল্প হিসেবে রাখা হয়। এসব নাটকে তার কোন সংলাপ ছিল না।[২২]

গিলগুডের পরিবারের মাধ্যমেই তার প্রথম বড় কাজ মিলে। ১৯২২ সালে তার ভাই ফিলিস নেলসন-টেরি তাকে জে. বি. ফ্যাগানের দ্য হুইল নাটকের সফরে সাময়িক চরিত্রে ও সহকারী মঞ্চ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজের প্রস্তাব দেন।[গ] গিলগুড এই প্রস্তাবে রাজি হন।[১] একজন সহকর্মী তার উদ্দেশ্যে বলেন যুবকটির প্রতিভা ছিল, কিন্তু পদ্ধতিগত অভিনয়ের অভাব ছিল। তাই তিনি তাকে রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। গিলগুড এই একাডেমির বৃত্তি লাভ কররেন এবং ১৯২৩ সালে কেনেথ বার্নস, হেলেন হাই ও ক্লদ রেইন্সের নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[২৩]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. গিলগুড এই সময়কে ১৮৩০ বলে উল্লেখ করেন,[২] এবং তার জীবনীকার জোনাথন ক্রোয়াল তা ১৮৩১ বলে উল্লেখ করেন।[৩] ইতিহাসবিদ সোলিয়াস সুজিয়েদেলিস এই বিদ্রোহ নভেম্বর ১৮৩০ থেকে নভেম্বর ১৮৩১ পর্যন্ত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন।[৪]
  2. তিনি বোর্ডিং স্কুলে অল্প কিছুদিন ছিলেন, কিন্তু তিনি তার পিতামাতাকে বোঝান যে তিনি বাড়ি থাকতে চান, কারণ স্কুল মাত্রম তিন মাইল দূরে অবস্থিত।[১১]
  3. Phyllis Neilson-Terry was Gielgud's first cousin once removed, being a first cousin of his mother.[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Morley, Sheridan; Robert, Sharp (জানুয়ারি ২০১১)। "Gielgud, Sir (Arthur) John (1904–2000)" (অনলাইন সংস্করণ)। Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press। ২১ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন)
  2. গিলগুড (১৯৭৯), পৃ. ২২
  3. ক্রোয়াল (২০১১), পৃ. ৮-৯
  4. Sužiedėlis, p. 134
  5. গিলগুড (১৯৭৯), পৃ. ২২২–২২৩
  6. ক্রোয়াল (২০১১), পৃ. ১০
  7. গিলগুড (২০০৪), পৃ. ৫–৬
  8. ক্রোয়াল (২০১১), পৃ. ১৬
  9. ক্রোয়াল (২০১১), পৃ. ১৭–১৮
  10. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৩৪
  11. ক্রোয়াল (২০০০), পৃ. ১৯–২০
  12. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৩৬
  13. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৩৭
  14. হেম্যান, পৃ. ১৩
  15. মর্লি, পৃ. ৩৪
  16. গিলগুড (১৯৬৫), পৃ. ৩১
  17. গিলগুড (১৯৭৯), পৃ. ৪৮
  18. হেম্যান, পৃ. ১৮
  19. "Profile – The old master of rhetoric and robes", দি অবজারভার, ১৪ এপ্রিল ১৯৭৪, পৃ. ৯।
  20. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৪১
  21. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৪৫–৪৬
  22. গাই, পৃ. ৬৪৩; ও গিলগুড (২০০০), পৃ. ৪৬
  23. গিলগুড (২০০০), পৃ. ৫১

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]