কাঠের ব্লকের ছাপা
কাঠের ব্লক এর ছাপা হচ্ছে কাঠের ব্লক ব্যবহার করে লেখা, আকৃতি কিংবা ছবি ইত্যাদি ছাপার একটি পদ্ধতি৷ পদ্ধতিটির উদ্ভব হয় চীন দেশে। এটা পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত৷ প্রথমদিকে এটি বস্ত্রশিল্পে বহুল ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে এটি ছাপার কাজেও ব্যবহৃত হয়৷
সীল ও স্ট্যাম্প
[সম্পাদনা]কাঠের ব্লক এর ব্যবহারের পূর্বে বিভিন্ন ছাপার কাজে সীল এবং স্ট্যাম্প ইত্যাদি ব্যবহৃত হত৷ সবচেয়ে প্রাচীন সীল এর নমুনা পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় সভ্যতায়৷ মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বৎসরেরও পূর্বে সিলিন্ডার আকৃতির গোলাকার সীল ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ এছাড়া ইটের উপর মার্ক বা চিহ্ন করার জন্য ব্যবহৃত বেশ কিছু প্রায় অক্ষত স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে, যেগুলো ২২৭০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের৷[১]
পদ্ধতি
[সম্পাদনা]কাঠের ব্লক দিয়ে ছাপার ক্ষেত্রে যে অংশটুকু সাদা দেখাবে, তা কেটে নেয়া হয়৷ বাকী অংশটুকু, যা ছাপা হবে, তার উপর কালি লাগিয়ে কাগজ বা কাপড়ের উপর ছাপ দেয়া হয়৷ এ ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷ পদ্ধতিগুলো হল:
স্ট্যাম্পিং
[সম্পাদনা]এ ক্ষেত্রে কাগজ বা কাপড়ের উপর কালি মাখানো কাঠের ব্লক স্থাপন করা হয় এবং ব্লক এর উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ছাপার কাজ সম্পন্ন করা হয়৷
রাবিং
[সম্পাদনা]এ ক্ষেত্রে কালি মাখানো কাঠের ব্লকটি টেবিলের উপর রাখা হয়। তারপর কগজ বা কাপড় এর উপর রেখে শক্ত কিছু যেমন সমান কাঠ দ্বারা কাগজ বা কাপড়ের উপর ঘষে ছাপার কাজ সম্পন্ন করা হয়৷
প্রেস এ ছাপানো
[সম্পাদনা]এ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে ছাপার জন্য প্রেস এ কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হয়৷ প্রাথমিকভাবে এ ধরনের ব্যবহার শুধুমাত্র এশিয়াতেই দেখা গেলেও পরবর্তীকালে ইউরোপেও এর ব্যবহার দেখা যায়৷ ইউরোপে ১৪৬৫ সালে এরকম প্রেস এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, যার সাথে আধুনিক সময়ের গুটেনবার্গ ধরনের প্রেস এর সাথে মিল রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে অবশ্য রঙিন ছাপার কাজও করা হয়৷
কাঠের ব্লক এর রঙিন ছাপার কাজ
[সম্পাদনা]প্রথমদিককার কাঠের ব্লকের রঙিন ছাপার কাজের উদাহরণ হলো- চীনের হান ডাইন্যাস্টি সমময়কালের চীনা সিল্কের উপর ছাপার কাজ৷ এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের রং ব্যবহার করা হয়েছে৷ এ ধরনের কাজের মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ১৬৩৩, ১৬৭৯ এবং ১৭০১ সালের রঙিন ছাপার কাজ৷[২]
কাঠের ব্লক এর ছাপার ইতিহাস
[সম্পাদনা]এশিয়াতে উদ্ভব
[সম্পাদনা]সিল্কের উপর প্রথমদিককার কাঠের ব্লক এর ছাপার যে সকল নমুনা এখনও টিকে আছে, সেগুলো চীন দেশের হান ডাইন্যাস্টি সময়কালের(২২০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব সময়কালের)৷[৩] এগুলো ফুলের ছবিসহ তিনটি রঙে ছাপা হয়৷ এটা স্পষ্ট যে কাঠের ব্লক এর মাধ্যমে ছাপার কাজ ইউরোপের অনেক পূর্বেই এশিয়াতে প্রচলিত হয়৷
চীন ও কোরিয়ায় ছাপানো প্রথমদিকের বই
[সম্পাদনা]চীন দেশে কাঠের ব্লক এর ছাপার কাজ এর সাথে বৌদ্ধ ধর্মের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ এর কারণ হচ্ছে ধর্মানুসারীরা বিভিন্ন শ্লোক বা ধর্মবাণী চর্চা ও প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করত৷
জাপানী কাঠের ব্লক এর ছাপা
[সম্পাদনা]প্রথমদিককার কাঠের ব্লক এর ছাপার কাজ সম্পর্কে যা জানা গেছে, তা হল ৭৬৪-৭৭০ সালের৷ এ সময় সম্রাজ্ঞী শুটকুর নির্দেশে ক্ষুদ্রাকায় ছাপানো স্ক্রোল সংবলিত দশ লক্ষ ছোটো আকৃতির কাঠের প্যাগোডা তৈরি করা হয়৷ এ স্ক্রোলগুলো সাধারণত ২.৪ ইঞ্চি চওড়া এবং ১৭.৭ ইঞ্চি দীর্ঘাকৃতির ছিলো৷[৪]
১৫ শতকের ইউরোপ
[সম্পাদনা]কাঠের ব্লক এর ছাপানো বই, যেখানে একটি পৃষ্ঠায় ছাপানোর জন্য লেখা এবং ছবি সংবলিত একটি ব্লক ব্যবহার করা হয়, তা ইউরোপে প্রথম দেখা যায় ১৫ শতকের মাঝামাঝিতে৷
কাগজ ব্যতীত অন্যান্য উপাদান
[সম্পাদনা]কাঠের ব্লক এর ছাপার কাজ কাগজে ছাড়াও ফেব্রিক, চামড়া, দেয়ালপত্রিকা ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Schoyen collection"। schoyencollection।
- ↑ "Shi zhu zhai shu hua pu"। cam.ac.uk।
- ↑ "Medieval Arabic Tarsh: A Forgotten Chapter in the History of Printing , Journal of the American Oriental Society 107" (পিডিএফ)। p. 427-438। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "TRANSLATIONS OF THE KORAN"। answering-islam।
- ↑ "created 2003 - 2005 Early Card painters and Printers in Germany, Austria and Flanders (14th and 15th century)"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০।