বিষয়বস্তুতে চলুন

নাভি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নাভি
মানবদেহে সম্মুখভাবে মাঝ বরাবর তলপেটের ‍ঠিক ওপরভাগে ‘নাভি’ অবস্থিত।
বিস্তারিত
পূর্বভ্রূণনাভিরজ্জু
ডক্টাস ভেনোসাস[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ধমনীআম্বিলিক্যাল ধমনী
শিরাআম্বিলিক্যাল ভেইন
শনাক্তকারী
লাতিনআম্বিলিকাস
মে-এসএইচD014472
টিএ৯৮A01.2.04.005
টিএ২261
এফএমএFMA:61584
শারীরস্থান পরিভাষা

নাভি মানব দেহের বহিরাঙ্গের একটি বিশেষ স্থান। মাতৃগর্ভে থাকা কালে মানব ভ্রূণে যে নাড়ির মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে খাদ্য সংবাহিত হয় শিশুর জন্মকালে তা কেটে ফেলা হয় এবং একটি প্যাঁচ দিয়ে কাটা মুখ বন্ধ করা হয়। এই সুস্পষ্ট অংশটি মানবদেহের তলপেটের ঠিক ওপরে চিরকাল দৃশ্যমান থাকে এবং নাভি নামে আখ্যায়িত। চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলা হয় আম্বিলিকাস। সকল স্তন্যপায়ী প্রাণী যাদের জন্ম মাতৃ জরায়ুতে তাদের নাভী থাকে।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি'র ভিট্রুভিয়ান ম্যান-এর এই অঙ্কনে নাভি হল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।

পেটকে দৃশ্যত চতুর্ভুজগুলিতে পৃথক করার জন্য নাভি ব্যবহার করা হয়।[]

নাভি হল পেটের উপর একটি বিশিষ্ট দাগ, মানুষের মধ্যে এর অবস্থান তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নাভির স্তরে কোমরের চারপাশের ত্বক দশম বক্ষস্থিত মেরুদণ্ডের স্নায়ু (টি১০ ডার্মাটোম) দ্বারা সরবরাহ করা হয়। নাভিটি সাধারণত এল৩ এবং এল৪ মেরুদণ্ড এর সংযোগস্থলের সাথে সম্পর্কিত একটি উল্লম্ব স্তরে থাকে,[] এল৩ এবং এল৫ কশেরুকার মধ্যে মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক তারতম্য রয়েছে।[]

প্রাপ্তবয়স্ক নাভির কিছু অংশের মধ্যে রয়েছে "নাভির অবশিষ্টাংশ" বা "নাভির অগ্রভাগ", যা নাভির বিচ্ছিন্নতার ফলে প্রায়শই বেরিয়ে আসা দাগ। এটি নাভির কেন্দ্রে অবস্থিত, যাকে কখনও কখনও "বোতাম" বলা হয়। নাভির অবশিষ্টাংশের চারপাশে "নাভির কলার" থাকে, যা ঘন তন্তুযুক্ত নাভির বলয় দ্বারা গঠিত হয়। নাভির কলারকে ঘিরে থাকে পেরিয়াম্বিলিক্যাল ত্বক। নাভির ঠিক পিছনে থাকে নাভির কর্ড থেকে তৈরি একটি পুরু তন্তুযুক্ত নাড়ি, যাকে ইউরাকাস বলা হয়, যা মূত্রাশয় থেকে উৎপন্ন হয়।[]

আকৃতি

[সম্পাদনা]

নাভি প্রতিটি ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র কারণ এটি একটি দাগ, এবং বিভিন্ন সাধারণ রূপকে চিকিৎসাবিদরা শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।[][]

  • আউটি: যে নাভিতে নাভির অগ্রভাগ পেরিয়ামবিলিকাল ত্বকের পাশ দিয়ে বেরিয়ে থাকে তাকে আউটি বলা হয়। মূলত যে কোনও নাভি যা অবতল নয়। কমপক্ষে ১৯ বছর বয়সী ১০০৮ জন ব্যক্তির উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪৯% এর আউটি আছে।[]
    • ঘূর্ণিত/সর্পিল: একটি বিরল রূপ যেখানে নাভির দাগ আক্ষরিক অর্থেই ঘূর্ণায়মান আকৃতি ধারণ করে।
    • বিভক্ত: ছড়িয়ে থাকা নাভির দাগ বাইরের দিকে প্রসারিত হয়, কিন্তু একটি ফাটল দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত হয় যা নাভির দাগের আংশিক বা সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এই রূপটি দেখতে কফি বিনের মতো।
    • প্রসারণ: নাভির কর্ডের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, যা সম্পূর্ণ নাভির দাগকে প্রকাশ করে।
    • বৃত্ত: যদিও নাভির কর্ডের অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ অংশ নাভির কলারের বাইরে অবস্থিত, গিঁটের কেন্দ্রে একটি গভীর ফাটল থাকে। বিভক্ত আউটির বিপরীতে, এই আকারে ফাটলটি কেন্দ্রীয়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং নাভির কর্ডের অবশিষ্টাংশের বাইরে কোনও দিকে প্রসারিত হয় না, অনেকটা 'ডোনাট' আকৃতির মতো।[]
  • ইনি: এমন একটি নাভি যার নাভির অগ্রভাগ পেরিউম্বিলিক্যাল ত্বকের বাইরে বেরিয়ে আসে না। যে কোনও নাভি যা অবতল।
    • গোলাকার: গোলাকার নাভি সম্পূর্ণরূপে বৃত্তাকার, কোনও আবরণ ছাড়াই।
    • উল্লম্ব আকৃতির: কিছু নাভি লিনিয়ার অ্যালবা এর সাথে আরও দীর্ঘায়িত ফাঁপা সমান্তরাল আকারে উপস্থিত থাকে।
    • ডিম্বাকার: এই আকারে তিনটি রূপ রয়েছে; উচ্চতর আবরণ, নিম্নতর আবরণ, কোনও আবরণ নেই।
    • টি-আকৃতির: নাম অনুসারে, দাগটি T-আকৃতির এবং বিভিন্ন পরিমাণে উচ্চতর আবরণ থাকতে পারে।
    • অনুভূমিক: দাগটি খুব কম দেখা যায় কারণ টেন্ডিনাস ইন্টারসেকশন এর প্রাকৃতিক রেখাগুলি দাগের উপর ভাঁজ করে।
    • বিকৃত: যে কোনও নাভি যা অন্য কোনও বিভাগের সাথে ভালভাবে খাপ খায় না।

চিকিৎসাশাস্ত্রীয় তাৎপর্য

[সম্পাদনা]

নাভির যত্ন

[সম্পাদনা]

নবজাতকের নাভির প্রযত্ন

[সম্পাদনা]

অসুখ-বিসুখ

[সম্পাদনা]

নাভীসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যা

[সম্পাদনা]

নাভিতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং নাভিমূলে পুঁজ দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাকে চিকিৎসাশাস্ক্রীয় ভাষায় বলা হয় ওমফ্যালাইটিস। এর প্রতিকার হিসাবে ডাক্তাররা রোগীকে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

শল্যচিকিৎসা

[সম্পাদনা]

নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

সমাজ ও সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

নাভির নিচে শাড়ী

[সম্পাদনা]

প্রাচীন চিত্রকলায় দৃশ্যমান নাভি সহ অনাবৃত পেটের নারীদেহ প্রায়শঃ দেখা যায়। তবে ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীরা শাড়ী সাধারণতঃ এমনভাবে পরে যেন নাভি ঢেকে থাকে। তবে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের শুরুর দিকে নাভির নিচে শাড়ী পরার ফ্যাশন চালু হয়। ধনী পরিবারের কিছু মেয়ে, অভিনেত্রী ও মডেলদের মধ্যে শুরু হলেও নাভির নিচে শাড়ী পরা বিস্তার লাভ করে। এটা শুধু নাভিকে অনাবৃত করার জন্য নয়, পেটের যতটা সম্ভব দৃশ্যমান রাখার জন্যও অনেকে শাড়ী অনেক নামিয়ে পরতে শুরু করে।

যৌন তাৎপর্য

[সম্পাদনা]

নাভির প্রতি যৌনাকর্ষণ এক প্রকারের বস্তুকাম হিসেবে পরিগণিত। তবে পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানী ডেসমণ্ড মরিস-এর মতে অনেক পুরুষের কাছে নাভি নারীর যোনীর প্রতীক। আর তাই নাভির যৌনাকর্ষণ রয়েছে।

তান্ত্রিক সাধনা ও নাভি

[সম্পাদনা]

তন্ত্র সাধনায় বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষের মধ্যে জীবাত্মা ঘুমন্ত থাকে এবং সাধানার মাধ্যমে তাকে জাগাতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় নাভিমূলের ভূমিকা রয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, ‘‘যখন সংসারে মন থাকে, তখন, লিঙ্গ, গুহ্য ও নাভি মনের বাসস্থান, মনের চতুর্থ ভূমি হৃদয়, তখন প্রথম চৈতন্য হয়েছে। তখন আর নিচের দিকে মন যায় না। মনের পঞ্চম ভূমি কণ্ঠ। মন যার কণ্ঠে উঠেছে, তার ঈশ্বরীয় কথা বই অন্য কোনও কথা শুনতে বা বলতে ভাল লাগে না। মনের ষষ্ঠ ভূমি কপাল। সেখানে অহর্নিশি ঈশ্বরীয় রূপ দর্শন হয়। শিরোদেশে সপ্তম ভূমি। সেখানে মন গেলে ব্রহ্মের প্রত্যক্ষ দর্শন মেলে।’’ তন্ত্র-সাধনার উদ্দেশ্য হলো মানব মনকে নাভি সহ প্রথমোক্ত তিন অধিষ্ঠান থেকে মুক্ত করা। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মনঃসংযম । তন্ত্র সাধনায় নাভি-চক্রকে মনিপুর বলা হয়ে থাকে।

গ্যালারি

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Anatomy & Physiology"। Openstax college at Connexions। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৬, ২০১৩ 
  2. Ellis, Harold (২০০৬)। Clinical Anatomy: Applied Anatomy for Students and Junior Doctors। New York: Wiley। আইএসবিএন 1-4051-3804-1 [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  3. O'Rahilly, Ronan; Müller, Fabiola; Carpenter, Stanley; Swenson, Rand (২০০৪)। "Abdominal walls"Basic Human Anatomy: A Regional Study of Human Structure। Dartmouth Medical School। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  4. Khati, Nadia J.; Enquist, Erik G.; Javitt, Marcia C. (১৯৯৮)। "Imaging of the Umbilicus and Periumbilical Region"। Radiographics18 (2): 413–4। 
  5. Shiffman, Melvin (২০১৭)। "7.3"। Adult Umbilical Reconstruction: Principles and Techniques। Switzerland: Springer। পৃষ্ঠা 53। আইএসবিএন 978-3-319-43885-6 
  6. Mohamed, Fahmy (২০১৮)। Umbilicus Types and Shapes। Egypt: Springer। পৃষ্ঠা 105–8। ডিওআই:10.1007/978-3-319-62383-2_22 
  7. Meier, Donald E.; OlaOlorun, David A.; Omodele, Rachael A.; Nkor, Sunday K.; Tarpley, John L. (২০০১)। "Incidence of Umbilical Hernia in African Children: Redefinition of 'Normal' and Reevaluation of Indications for Repair"World Journal of Surgery25 (5): 645–8। ডিওআই:10.1007/s002680020072পিএমআইডি 11369993 
  8. Stephen Cullen, Thomas (১৯১৬)। "2"। Umbilicus। Australia: W.B.Saunders Company। পৃষ্ঠা 1.1-1.7। আইএসবিএন 978-0-7334-2609-4 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]