বাংলাদেশে নারী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশে নারী
বেগম রোকেয়া, অভিবক্ত বাংলার একজন উদ্যমশীল লেখিকা এবং সমাজ-কর্মী ছিলেম। তিনি নারীপুরুষের সমতার পক্ষে তার প্রচেষ্টা এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য সুপ্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।
লিঙ্গ বৈষম্য সূচক
মান০.৫১৮ (২০১২)
অবস্থান১০৭তম[১]
মাতৃত্বকালীন মৃত্যু (প্রতি এক লক্ষে)২৪০ (২০১০)
সংসদে নারী১৯.৭% (২০১২)
মাধ্যমিক শিক্ষাসহ ২৫ উর্ধ্ব নারী৩০.৮% (২০১০)
শ্রম ক্ষেত্রে নারী৫৭.২% (২০১১)
বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপ সূচক[২]
মান০.৬৮৪৮ (২০১৩)
অবস্থান১৪৪-এর মধ্যে ৭৫তম

বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক মর্যাদা বহুবছর ধরে সংগ্রাম করে বিশাল প্রাপ্তিকে বুঝানো হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশি নারীরা বৃহদাকারে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। বিগত চার দশকে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, উন্নততর কর্ম প্রত্যাশা, উন্নত শিক্ষা এবং তাদের অধিকার রক্ষার্থে নতুন আইন প্রণয়ন দেখা গেছে। ২০১৩ অনুসারে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই নারী ছিলেন। যদিও বাংলাদেশের সমাজ এখনো পিতৃতান্ত্রিকই রয়ে গেছে।[৩]

২০১১ সালের আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার[৪]। পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০[৫]। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত দেখায় যে ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক মর্যাদা পুরুষের চাইতে যথেষ্ট কম ছিল। নারীদের, প্রথা এবং রীতিনীতির দিক থেকে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অধস্তন করে রাখা হয়েছে; বৃহৎ অংশের ব্যক্তিস্বাধীনতা ধনিদের সুবিধায় অথবা হতদরিদ্রের প্রয়োজনে ছিল।

বেশিরভাগ নারীদের জীবন তাদের পরম্পরার উপর কেন্দ্রীভূত থাকে, এবং তাদের জন্যে বাজারব্যবস্থা, উৎপাদনশীল সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় সরকারে খুব সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। সুযোগের এই অভাবগুলি উর্বর উর্বরতার ধরনগুলির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল, যা পরিবারের সুখ খর্ব করে দেয়, অপুষ্টি এবং সাধারণত শিশুদের দরিদ্র স্বাস্থ্যে সহায়তা করে, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এবং অন্যান্য জাতীয় উন্নয়নে হতাশ করে তুলে। প্রকৃতপক্ষে, প্রান্তিক পর্যায়ে তীব্র দারিদ্র্য নারীদের উপর কঠোর হয়ে উঠে। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মহিলা জনগোষ্ঠীর মধ্যে উন্নত উৎপাদনশীলতার সম্ভাবনাগুলি সীমিতই থেকে যাবে।

১৯৮০ এর দশকের শেষ নাগাদ প্রায় ৮২ শতাংশ নারী গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত। বেশীর ভাগ গ্রাম্য মহিলা, সম্ভবত ৭০ শতাংশ, ছোট কৃষক, ভাড়াটে এবং ভূমিহীন পরিবারে ছিল; অনেকে খন্ডকালিন বা সাময়িক শ্রমিক হিসাবে কাজ করে, সাধারণত ফসল ফলানোর কাজে লাগে, এবং এক ধরনের বা ক্ষুদ্র নগদ মজুরিতে পারিশ্রমিক পায়। ২০ শতাংশের আরেকটি অংশ, বেশিরভাগ দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারে, নৈমিত্তিক শ্রম, কুঁচকানো, ভিক্ষা এবং আয়ের অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত উৎসের উপর নির্ভরশীল; সাধারণত, তাদের আয় পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ছিল। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ নারী প্রধানত পেশাগত, ব্যবসাবাণিজ্য বা বড় মাপের ভূস্বামী শ্রেণীতে থাকেন এবং তারা সাধারণত বাড়ির বাইরে কাজ করে না।

নারীদের অর্থনৈতিক অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল কিন্তু বেশিরভাগই ছিল অস্বীকৃত। গ্রামীণ এলাকার নারীরা বেশিরভাগ ফসল-পূর্ব কাজ করত, যা রান্নাবান্না এবং গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং ছোট বাগানগুলি পালন করার মধ্যে অন্তর্গত ছিল। শহরের মধ্যে নারীরা গার্হস্থ্য ও ঐতিহ্যগত কাজের উপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে তারা ক্রমবর্ধমান উৎপাদন কাজগুলিতে কাজ করে, বিশেষ করে প্রস্তুতকারক গার্মেন্টস শিল্পে। যারা অধিক শিক্ষা নিয়েছে তারা সরকার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব সীমিত ছিল। অব্যাহতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার এবং চুলাভিত্তিক কাজের অবনতি থেকে বোঝা যায় যে আরও অধিক নারী বাড়ির বাইরে কর্মসংস্থান চায়। তদনুসারে, মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ হার ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে যায়, যখন এটি প্রায় ৮ শতাংশে এসে পৌঁছেছিল। ১৯৮০-এর দশকে মহিলা মজুরির হার কম ছিল, সাধারণত পুরুষের মজুরির হারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে।

নারীদের বর্তমান অবস্থান[সম্পাদনা]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

বর্তমানে বাংলাদেশে নারীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছে যদিও গ্রামীণ সমাজে এখনো মেয়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে এবং শিখছে ঘর-সংসারের কাজ।[৬]

যৌনতা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক হওয়ায় নারীরা যৌনতার ক্ষেত্রে পুরুষাধিপত্যতার কবলে পড়েন এবং যৌনতার ক্ষেত্রে নারীদের ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী সবসময়ই পরিলক্ষিত হয়।[৭]

বিবাহ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এখনো অল্পবয়সে মেয়েদের অভিভাবক তাদের বিয়ে দিয়ে দেয় তাদের প্রকৃত সম্মতিকে উপেক্ষা করেই এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতি অনুযায়ী মেয়েদের পালন করতে হয় প্রথাগত ঘর-সংসারের দায়িত্ব। যদিও বাল্যবিবাহের হার আগের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে।[৮]

গর্ভধারণ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সমাজে নারীদের গর্ভধারণ একটি অতি সাধারণ বিষয়, গ্রামে প্রতি ১০০ বিয়ের মধ্যে ৯০টি বিয়েতেই প্রথম বছরেই মা হয়ে যান নারীরা।[৯]

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে এখনো গ্রামীণ নারীরা গর্ভসংক্রান্ত জটিলতা এবং গর্ভকালীন সময়ে অপুষ্টিতে ভোগেন।[১০]

নারীদের মধ্যে প্রথম যারা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের নারীদের সময়পঞ্জিকা[সম্পাদনা]

  • খ্রীঃ পূর্ব ১২০০-৯০: উত্তর ও পশ্চিম ভারতে আর্যদের প্রবেশ শুরু ও মাতৃপ্রাধান্য সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন।
  • খ্রীঃ পূর্ব ৩২৭: মেসেনা অবরোধ যুদ্ধে ভারতীয় নারীদের অস্ত্রধারণ।
  • খ্রীঃ পূর্ব ২০০: পতঞ্জলি কর্তৃক অস্ত্রধারী শক্তিকি সম্প্রদায়ের উল্লেখ।
  • খ্রীঃ পূর্ব ৬০০: ব্রহ্মবাদীদের সভায় বিদূষী নারী গার্গীর প্রশ্ন উত্থাপন।
  • ৯০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ: চর্যাপদে তান্ত্রিক ধারার সাধনমার্গে নারীকে সাধন সঙ্গীনী হিসেবে গ্রহণ।
  • ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ: ডাকের বচন, এ্যালকেমি চর্চায় গ্রামীণ নারী সমাজের অংশগ্রহণ।
  • ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রবেশ, ব্যাপক ধর্মান্তর ও ধর্মান্তরিত বাঙালী নারীদের মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি, দেনমোহর, তালাক ও পুনর্বিবাহের মতো গুরত্বপূর্ণ কিছু অধিকারপ্রাপ্তি।
  • ১৩০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলা মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ, বাংলায় লোকধর্ম ও নারীদেবতা, নারী পুরোহিত শ্রেণীর অভূদ্যয়।
  • ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলন, বৈষ্ণব ধর্মে সর্বস্তরের নারীর সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি, নারী গুরু ও নারী মহান্ত শ্রেণীর উদ্ভব।
  • ১৩৫১-১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দ: ফিরোজ তুঘলক ও সিকান্দর আলী লোদী কর্তৃক বাঙালী মুসলিম নারীর চলাচলের স্বাধীনতা হ্রাস। বোরখা ও ঢাকা গাড়ি ছাড়া মেয়েদের চলাচল নিষিদ্ধ, বাড়িতে জেনানা মহল তৈরি।
  • ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ: মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর রামায়ণ অনুবাদ।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Human Development Report 2014" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। জাতিসংঘ। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪ 
  2. "The Global Gender Gap Report 2013" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। পৃষ্ঠা ১২–১৩। 
  3. "Patriarchy: The deep rooted cultural beliefs that normalise rape"Dhaka Tribune 
  4. Population & Housing Census-2011 (পিডিএফ) (প্রতিবেদন) (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা: Bangladesh Bureau of Statistics। এপ্রিল ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৭ 
  5. Bangladesh Sample Vital Statistics 2018 (পিডিএফ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১৯। পৃষ্ঠা ৩১। আইএসবিএন 978-984-34-6845-1 
  6. "সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ চাই"www.prothomalo.com 
  7. "Are we ready for sex ed?"Dhaka Tribune 
  8. "নারীর অগ্রযাত্রায় বড় বাধা বাল্যবিয়ে বন্ধে কার কী করণীয়"bdnews24.com। ১৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৯ 
  9. "গর্ভবতী মায়ের জন্য 'স্মার্ট চুড়ি'"www.prothomalo.com 
  10. "গর্ভে শিশু মৃত্যু: আগে মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে"dw.com 
  11. Bangladesh (প্রতিবেদন)। Bureau of International Labor Affairs। ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।