বিষয়বস্তুতে চলুন

শেরপুর পৌরসভা, শেরপুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শেরপুর পৌরসভা
স্থানীয় সরকার সংস্থা
প্রাতিষ্ঠানিক লোগো
ইতিহাস
শুরু১৬ জুন ১৮৬৯ (1869-06-16)
নতুন অধিবেশন শুরু১৮ মার্চ ২০১৬ (2016-03-18)[]
নেতৃত্ব
পৌরমেয়র
গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
নির্বাচন
এফপিটিপি
সর্বশেষ নির্বাচন
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ (2015-12-30) []
সভাস্থল
শেরপুর পৌরসভা ভবন
ওয়েবসাইট
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

শেরপুর পৌরসভা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি নগরভিত্তিক স্থানীয় সরকার সংস্থা যেটি শেরপুর শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, পৌর পরিষেবা দেওয়াসহ শেরপুর শহরেরর পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশের প্রাচীনতম পৌরসভাসমূহের অন্যতম এ পৌরসভাটি ১৮৬৯ সালে ১৬ জুন পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।[] বর্তমানে এটি একটি 'ক' শ্রেণীর পৌরসভা।[]

অবস্থান ও আয়তন

[সম্পাদনা]

এই পৌরসভার ভৌগোলিক অবস্থান পূর্ব পশ্চিমে ৮৯-৫০ পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৯০-১৫ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত এবং উত্তর দক্ষিণে ২৪-৫৫ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫-১৬ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। ২৫°০০′০০″ উত্তর ৯০°০১′০০″ পূর্ব / ২৫.০০০০° উত্তর ৯০.০১৬৭° পূর্ব / 25.0000; 90.0167

সাধারণ তথ্য

[সম্পাদনা]

ইংরেজ আমলের প্রথম থেকেই শেরপুর শহর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার প্রধান প্রধান শহরগুলের অন্যতম ছিল। ১৮৭২ সনের জানুয়ারী মাসের প্রথমবারের মত ময়মনসিংহ জেলার লোক গণনা করা হয়। এই আদমশুমারী অনুয়াযী মাত্র পাঁচটি শহরে পাঁচ হাজার বা ততোধিক লোক সংখ্যা ছিল। যথাক্রমে ময়মনসিংহ বা নাছিরাবাদ ১০,০৬৮, জামালপুর ১৪,৩১২, কিশোরগঞ্জ ১৩,৩৬৭, ধানীখোলা ৬,৭৩০, শেরপুর ৮,০১৪। শেরপুরের লোকসংখ্যার মধ্যে ৪,২৯৭ জন মুসলমান ও ৩,৭১৮ জন হিন্দু ছিল। ইংরেজ সরকার শেরপুর শহরটির উন্নতিকল্পে ও শহর বাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াত সুবিধার জন্য আদমশুমারীর কয়েক বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালের ১৬ জুন তারিখে শেরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করেন। শহরটির আয়তন সম্পর্কে হরচন্দ্র চৌধুরী ১৮৭২ সনে প্রকাশিত তার ‘‘সেরপুর বিবরণী’’ গ্রন্থে লিখেছেন ১২ বর্গমাইল। সেই বছরেই ১৫ জানুয়ারী রাতের আদমশুমারীতে অধিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭,৯৯১ জন। তন্মেধ্যে পুরুষ ৩,০৮৬ জন্য, স্ত্রী ২,৮১৮ জন, বালক ১,১৩৯ জন ও বালিকা ৯৪১ জন। লোকসংখ্যার অর্ধেক ছিল মুসলিম এবং বাকী অর্ধেক হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মিউনিসিপ্যাল বার্ষিক ট্যাক্স ছিল মাত্র ৩,০০০ টাকা। শহরের শান্তি রক্ষার জন্য ১জন হেড কনষ্টেবল ও ১০ জন কনেস্টবল ছিল। শহরের সীমা ছিল উত্তরে মনকান্দা, দক্ষিণে সেরী, পূর্বে পাকুড়িয়া ও পশ্চিমে মৃগি নদী। ১৯৬৯ সনে প্রকাশিত অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের ‘‘সেরপুরের ইতিকথা’’ গ্রন্থে শেরপুর শহরের আয়তন ৯.১/২ বর্গমাইল বলে উল্লেখ করেছেন। এই শহরের লোকসংখ্যা সম্পর্কে যদ্দুর জানা যায় ১৯১১ সনে ছিল ১৫,৫৯১ জন, ১৯২১ সনে হয় ১৭,৮১৩ জন এবং ১৯৬৯ সনে এসে দাড়ায় ২৪,৯২৪ জন। তন্মধ্যে ১৩,১১৩ জন পুরুষ, ১১,৮১১ জন স্ত্রী এবং ১৯,২৮৯ জন মুসলমান, ৪,২৫৮ জন হিন্দু, ১,২৮৫ জন্য নীচ জাতের হিন্দু, ৯১ জন গারো ও খ্রিষ্টান এবং ৪ জন্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছিল। ‘‘শেরপুর জেলা শুভ উদ্বোধন’’ নামে এক স্মরণিকায় ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সনে শেরপুর শহরের লোকসংখ্যা বলা হয়েছে ৫১,৮৫৪ জন। শেরপুর শহরের উন্নয়নকল্পে যে মিউনিসিপ্যালিটির পত্তন হয় উহাতে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত গভর্ণমেন্টের মনোনীত ও নির্বাচিত মেম্বারদের মধ্যে মাত্র ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হতো। তদানীন্তন জামালপুর সাব-ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকতেন। শেরপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন টি,এ,ডনো (১৮৬৯-১৮৭৪)। ১৩৩৬ বাংলা সালে প্রকাশিত বিজয় চন্দ্র নাগের ‘‘নাগবংশের ইতিহাস’’ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘‘মিউনিসিপ্যালিটির জরাজীর্ণ টিনের অফিস কার্যালয়টি অপসারিত হইয়া বর্তমানে ঐ স্থানে দালান নির্মান আরম্ভ হইয়াছে। এই অফিস ভবন নির্মাণ বাবদ গভর্ণমেন্টের নিকট হতে ৫,০০০ টাকা অনুদান পাওয়া যায় এবং বাকী ৫,০০০ টাকা তৎকালীন চেয়ারম্যান শ্রীযুক্ত হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী (১৯২৭ সাল হতে) মহাশয় স্বীয় পিতৃদেব স্বর্গীয় রায়বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের স্মৃতিকল্পে মিউনিসিপ্যালিটিকে দান করিয়াছেন। এই অফিস ভবন নির্মাণ কার্য্য শেষ হইলে উহা ‘‘চারু ভবন’’ নামে অভিহিত হবে। পরবর্তীতে ‘চারুভবন’ নামকরণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই‘‘চারুভবন’’ এ চারু চন্দ্র চৌধুরীসহ অতীতের কয়েকজন চেয়ারম্যানের ছবি শোভা পেতো। দুর্বৃত্তেরা ইতিহাসের এই চিহ্নগুলো বিভিন্ন সময়ে চুরি করে নিয়ে গেছে। আজকের শেরপুর শহরেকে ৩০/৪০ বছর আগে ‘‘সেরপুর টাউন’’ লিখা হতো। শিক্ষিত প্রবীন ব্যক্তিদের কাছে শুনা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ-টাউন, আমেরিকার জজ-টাউনের পরেই পূর্ব পাকিস্তানের ‘‘সেরপুর টাউন’’ খ্যাত ছিল। আবার হরচন্দ্র চৌধুরী তার বইয়ে ‘‘সহর সেরপুর’’ লিখেছেন। এই ‘সহর সেরপুর’ বা শেরপুর শহর ৩০টি মহল্লায় বিভক্ত ছিল। বর্তমানে ২৪.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট শেরপুর পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৪১ টি মহল্লায় প্রায় ১,০৪,০০০ জন লোক বসবাস করছে। স্বাধীনতার পরবর্তী কালে ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের বিধান অনুসারে প্রথম অনুষ্ঠিত শেরপুর পৌর নির্বাচনে পৌর ভোটারদের সরাসরি ভোটে প্রবীণ জননেতা ‘‘খন্দকার মজিবর রহমান’’ চেয়ারম্যান এবং ছাত্রনেতা ‘‘আমজাদ হোসেন’’ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।[] বর্তমানে পৌরসভায় ১ জন মেয়র, ৩ জন প্যানেল মেয়র, ০৭ জন কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আছে।[]

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

পৌরসভায় বর্তমানে ২টি সরকারি কলেজ, ২টি বেসরকারি কলেজ, ২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ৭টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি রেজিঃ উচ্চ বিদ্যালয়, ২১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ টি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩০টি কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয় আছে। এছাড়াও ১টি কৃষি ইনস্টিটিউট, ১টি সরকারি গণগ্রন্থাগার আছে।

স্থাপনা

[সম্পাদনা]

পৌরসভায় বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ১টি জেলা সদর হাসপাতাল, ১টি মা ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র, ১টি সরকারি শিশু (মেয়ে) পরিচর্যা কেন্দ্র, ৩টি নার্সিংহোম, ১টি শহীদ মিনার, ২টি কবরস্থান, ১টি মহাশ্মশান ঘাট আছে। বিনোদনের জন্য ১টি টেনিস মাঠ, ১টি শিশু পার্ক, ১ টি পার্ক ও ১টি আধুনিক স্টেডিয়াম আছে।[]

যোগাযোগ ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

শেরপরের সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের স্থলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।[] সরকারি কোনো বাস সার্ভিস না থাকলেও বেসরকারি অসংখ্য বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া জলপথে নৌকা পরিবহনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। শেরপুরে কোন রেলপথ নেই।

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]
Mysaheba Jame Masque, Sherpur

পৌরসভার দর্শনীয় স্থানসমূহ হচ্ছে শের আলী গাজী তোরণ, মাই সাহেবা মসজিদ, মা ভবতারা মন্দির, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শহীদ মিনার ও পৌর শিশু পার্ক।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "দায়িত্ব নিলেন মেয়র ও কাউন্সিলররা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৯ 
  2. "সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৯ 
  3. "কবি হিরন্ময়ী চৌধুরীর কথা"আওয়ার শেরপুর। জুন ২৬, ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৫, ২০২৩ 
  4. "Official Website of Sherpur Pourashava"। ২৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  5. "পৌরসভার সাধারণ তথ্য"। ৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  6. "কাউন্সিলরগণ"। ১৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  7. "At a glance Of Sherpur Pourashava"। ২৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  8. "Sherpur Historical Picture"। ২৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]