বিষয়বস্তুতে চলুন

পটুয়াখালী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পটুয়াখালী
শহর
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
মানচিত্র
পটুয়াখালী বরিশাল বিভাগ-এ অবস্থিত
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী
স্থানাঙ্ক: ২২°২১′২৯″ উত্তর ৯০°১৯′৫৭″ পূর্ব / ২২.৩৫৮০১৪° উত্তর ৯০.৩৩২৫০৮° পূর্ব / 22.358014; 90.332508
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল
জেলাপটুয়াখালী
উপজেলাপটুয়াখালী সদর
পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত১৮৮২
সরকার
  ধরনপৌরসভা
  শাসকপটুয়াখালী পৌরসভা
আয়তন
  পৌর এলাকা১৪.১৮ বর্গকিমি (৫.৪৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
  পৌর এলাকা৮২,৫২১
  পৌর এলাকার জনঘনত্ব৫,৮০০/বর্গকিমি (১৫,০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবাংলাদেশ মান সময় (ইউটিসি+০৬:০০)
পোস্টকোড৮৬০০
পৌর কোড৭৫
ওয়েবসাইটপটুয়াখালী পৌরসভা

পটুয়াখালী পটুয়াখালী জেলার একটি শহর এবং জেলা সদর যা বরিশাল বিভাগের লাউকাঠি নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এটি বরিশাল বিভাগের বরিশাল শহরের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি পটুয়াখালী জেলার প্রশাসনিক সদর দফতর এবং দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর এবং পৌর এলাকা। পটুয়াখালী পৌরসভা ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শহরটি ২০২২ সালের আদম শুমারি অনুসারে ৮২,৫২১ জনসংখ্যাবিশিষ্ট যারা ১৪.১৮ কিমি (৫.৪৭ মা) আয়তন জুড়ে বাস করে।

"পটুয়াখালী" নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। জনসাধারণের বিশ্বাস অনুসারে এই নামটি বাংলা নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে "পাতুয়ার খাল" যা বর্তমানে পটুয়াখালী শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। কথিত আছে যে সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে পর্তুগিজ জলদস্যুরা এই খাল দিয়ে এই অঞ্চলে নিয়মিত আক্রমণ চালাত। স্থানীয় লোকেরা এর নামকরণ করেছিলেন "পাতুয়ার খাল" যার নাম এখন "পটুয়াখালী"। [] অস্ট্রিক বংশোদ্ভূত লোকেরা সম্ভবত এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিকভাবে, চৌদ্দ শতকে পটুয়াখালী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অংশ ছিল। বর্তমান শহরটি তখন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল এবং নদীর তীরে একটি ছোট বাজার সপ্তাহে একবার বসতো। বাংলায় ব্রিটিশ শাসনামলে পটুয়াখালী শহরের ভূখণ্ডের মালিক ছিল এক জমিদার পরিবার। ১৮৬৮ সালে বিচারকের সমন্বয়ে একটি সিভিল কোর্ট গঠন করা হয় এবং ব্রজমোহন দত্ত এর সহায়তায় ১৮৭১ সালে পটুয়াখালীকে তৎকালীন বরিশাল জেলার একটি মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। নদীর উত্তর তীরে, লাউকাঠি গ্রামে, মহকুমার প্রধান জমিদারদের তহসিল কাচারি অবস্থিত ছিল। ঢাকা, ফরিদপুর এবং বরিশাল জেলা থেকে জনসংখ্যার আগমনের সাথে সাথে ধীরে ধীরে একটি ইংরেজ বাজার, একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একই সাথে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিও এখানে ব্যবসার গোড়াপত্তন করল। উচ্চ বিদ্যালয়টি এবং বেগম হাসপাতাল সম্ভবত তখন শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৮৮৭ সালে উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯০৪ সালে বিদ্যালয়ের সাথে একটি ছাত্রাবাস সংযুক্ত হয়। হাসপাতালটি ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ১৯০৪ সালে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছিল, যার পুরো ব্যয়ভার বহন করেন ঢাকার নবাব খাজা আহসানুল্লাহ। তখনকার সময়ে নবাবের স্ত্রীদের উপাধি হিসেবে নামের সাথে বেগম শব্দটি যুক্ত করা হতো, তাই নবাব আহসানুল্লাহর স্ত্রীর নামানুসারে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় বেগম হাসপাতাল। ভাত, জ্বালানী কাঠ, স্থানীয় তাঁতিদের তৈরি মোটা কাপড় এবং হোগলা মাদুর ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান জিনিস। ১৯১১-১২ সালে একটি হোসিয়ারি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৯২ সালের ১লা এপ্রিল পটুয়াখালী পৌরসভা গঠনের মাধ্যমে পটুয়াখালী পৌরশহরের মর্যাদা লাভ করে। কমিশনাররা প্রথমে মনোনীত হন, তবে ১৯০০ সালে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ১৮৭১ সালে স্থানীয় বোর্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

জলবায়ু

[সম্পাদনা]
পটুয়াখালী-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৫.৮
(৭৮.৪)
২৮.২
(৮২.৮)
৩১.৯
(৮৯.৪)
৩৩.১
(৯১.৬)
৩৪.৬
(৯৪.৩)
৩১.৪
(৮৮.৫)
৩০.৩
(৮৬.৫)
৩০.৫
(৮৬.৯)
৩১.২
(৮৮.২)
৩১.২
(৮৮.২)
২৯.০
(৮৪.২)
২৬.৩
(৭৯.৩)
৩০.৩
(৮৬.৫)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ১৩.১
(৫৫.৬)
১৬.০
(৬০.৮)
২০.৬
(৬৯.১)
২৪.১
(৭৫.৪)
২৫.৫
(৭৭.৯)
২৫.৭
(৭৮.৩)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৪.১
(৭৫.৪)
১৯.২
(৬৬.৬)
১৪.৪
(৫৭.৯)
২১.৬
(৭০.৯)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১২
(০.৫)
২৭
(১.১)
৫১
(২.০)
৯৯
(৩.৯)
২৪২
(৯.৫)
৫৩৬
(২১.১)
৫৮৬
(২৩.১)
৪৯৯
(১৯.৬)
৩৪৮
(১৩.৭)
১৯৭
(৭.৮)
৪৭
(১.৯)
১০
(০.৪)
২,৬৫৪
(১০৪.৫)
উৎস: Climate-data.org

খেলাধুলা

[সম্পাদনা]

পটুয়াখালীর দুটি জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট এবং ফুটবল এবং স্থানীয় জনপ্রিয় খেলাগুলি হল কাবাডি, খো খো, লাঠি খেলা। শহরে পটুয়াখালী স্টেডিয়াম নামে একটি স্থানীয় স্টেডিয়াম রয়েছে। এটি স্থানীয় ক্রীড়া এবং জাতীয় অনুষ্ঠানের ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পটুয়াখালীর উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় যারা জাতীয় দলে খেলেছেন তাদের মধ্যে কামরুল ইসলাম রাব্বিসোহাগ গাজী অন্যতম। []

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

পটুয়াখালী শহরটি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ। পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং একটি বিখ্যাত স্কুল। স্থানীয় মাননীয় ব্যক্তিত্ব ও আধিকারিকদের দ্বারা এটি ১৮৭৬ সালে পটুয়াখালী প্রবেশিকা বিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৪ সালে তৎকালীন এসডিও মিঃ ফয়েজ উদ্দিন হোসেইন একটি নতুন জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন এবং স্থানীয় জনগণের অর্থের সাহায্যে একটি এক তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৮৭সালে, বিদ্যালয়টি নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে আরোহণের অনুষ্ঠানের স্মারকলিপি হিসাবে নতুন নামকরণ করা হয় "পটুয়াখালী জয়ন্তী উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয়"। শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শহরে উল্লেখযোগ্য কলেজ এবং স্কুল রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে: পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারি, পটুয়াখালী টাউন উচ্চ বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পটুয়াখালী কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ওয়াজেদাবাদ মোস্তফাবিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও শহরে দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, একটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং একটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষাগত কার্যক্রম বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে পরিচালিত হয়।

পরিবহন এবং যোগাযোগ

[সম্পাদনা]

শহরে ব্যবহৃত প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা হল রিকশা, অটোরিকশা, বাস, মিনি বাস, বাইক এবং মোটর গাড়ি। পটুয়াখালী শহরে সড়ক ও নৌপথ ঊভয়ভাবে যাওয়া যায়। শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চৌমুহনীতে একটি বাস স্টেশন এবং অপর প্রান্তে অবস্থিত একটি লঞ্চ টার্মিনাল রয়েছে যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই অঞ্চলে কোনও রেলপথ নেই।

পটুয়াখালীর বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান (৮৬.০৯%), অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিতে হিন্দু (১৩.৮৩%) এবং অন্যান্য ধর্মের খুব কম সংখ্যক রয়েছে, প্রধানত খ্রিস্টান (০.০১%) এবং বৌদ্ধ (০.০৭%)।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন হিন্দু মন্দির রয়েছে

যথাক্রমে উল্লেখযোগ্য-

১.শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, কলাপাড়া।

২.শ্রী লোকনাথ/কালীমন্দির নাচনাপাড়া,কলাপাড়া।

৩.শ্রী শ্রী রাধাবৃন্দাবন চন্দ্র ইসকন মন্দির,মনোহরপুর।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ত্ব

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "পাতুয়ার খাল থেকে পটুয়াখালী"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৯
  2. "সোহাগ গাজী - বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল"ক্রিকইনফো। ২০ ডিসেম্বর ২০১৫।