বিষয়বস্তুতে চলুন

ফরিদপুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফরিদপুর
নগর
জুবিলি ট্যাংক
সার্কিট হাউজ
ব্যস্ততম থানা রোড
মানচিত্র
ফরিদপুর ঢাকা বিভাগ-এ অবস্থিত
ফরিদপুর
ফরিদপুর
ফরিদপুর বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
ফরিদপুর
ফরিদপুর
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৬′১৫″ উত্তর ৮৯°৫০′১৮″ পূর্ব / ২৩.৬০৪১৩৮° উত্তর ৮৯.৮৩৮৩০৪° পূর্ব / 23.604138; 89.838304
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা
জেলাফরিদপুর
উপজেলাফরিদপুর সদর
পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত এপ্রিল ১৮৬৯; ১৫৬ বছর আগে (1869-04-01)
সরকার
  ধরনপৌরসভা
  শাসকফরিদপুর পৌরসভা
আয়তন
  পৌর এলাকা৬৬.৩১ বর্গকিমি (২৫.৬০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)
  পৌর এলাকা২,৩৭,২৮৩
  পৌর এলাকার জনঘনত্ব৩,৬০০/বর্গকিমি (৯,৩০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবাংলাদেশ মান সময় (ইউটিসি+০৬:০০)
পোস্টকোড৭৮০০, ৭৮০২, ৭৮০৪
পৌর কোড৬০
আইএসও ৩১৬৬ কোডবিডি-১৫
ওয়েবসাইটফরিদপুর পৌরসভা

ফরিদপুর বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি নগর। এটি পদ্মা নদীর পশ্চিম তীরে ফরিদপুর জেলায় অবস্থিত। কুমার নদ শহরটিকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। ময়েজ মঞ্জিল ও শহরের উপকণ্ঠ অম্বিকাপুরে অবস্থিত জসীম উদ্‌দীনের বাড়ি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।[][]

বাংলার ঐতিহাসিক ফরায়েজি আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ফরিদপুর।[] এখানে অবস্থিত শ্রীঅঙ্গন হিন্দু মহানাম সম্প্রদায়ের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।[]

ফরিদপুর পৌরসভার আয়তন ৬৬.৩১ কিমি (২৫.৬০ মা)[] এবং মোট জনসংখ্যা ২,৩৭,২৮৩ জন।[]

নামকরণ

[সম্পাদনা]

ফরিদপুরের পূর্বে নাম ছিল ফতেহাবাদ। ফরিদপুর নামকরণ করা হয়েছে প্রখ্যাত সাধক এবং দরবেশ খাজা মাইনউদ্দিন চিশতীর শিষ্য ও ফরিদপুরের প্রখ্যাত সুফি সাধক শাহ ফরিদের (শেখ ফরিদুদ্দিন) নামানুসারে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

কোম্পানি ও ব্রিটিশ শাসন

[সম্পাদনা]

১৭৮৬ সালে (মতান্তরে ১৮১৫) ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়, নাম ছিল জালালপুর ও সদরদপ্তর ছিল ঢাকা। তখন বর্তমান ফরিদপুরের নাম ছিল ফতেহবাদ। ১৮০৭ সালে ফরিদপুর জেলার সদর দপ্তর ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয়।[] ১৮২৫ সালে ফরিদপুর কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।[]

১৮৪০ সালে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এডগার এফ লুথার ‘ইংলিশ সেমিনারি স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন যা ১৮৫১ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর পৌরসভা। ১৮৭৩ সালে ফরিদপুর টাউন থিয়েটার (বর্তমানে কার্যক্রম বন্ধ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে চৌধুরী ময়েজউদ্দিন বিশ্বাস ফরিদপুরের একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। তিনি ১৮৮৫ সালে ময়েজ মঞ্জিল নির্মাণ করেন। ফরিদপুর জজ কোর্ট ভবনও এই সময়েই নির্মাণ করা হয়েছে। ১৮৮৯ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুলের পশ্চিম পাশে ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বর্তমান দক্ষিণ ঝিলটুলিতে হিতৈষী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৪ সালে ফরিদপুরে কোতয়ালী থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯৯ সালে কুষ্টিয়া–গোয়ালন্দ ঘাট লাইনের বর্তমান পাচুরিয়া জংশন হতে পুখুরিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয়। তখন ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়।

১৯১০ সালে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ১৯১৮ সালে অম্বিকাচরণ মজুমদার রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেন।[১০] ১৯২১ সালে ‘ফরিদপুর টাউন হল’ নির্মাণ করা হয়, পরবর্তীতে এই টাউন হলের নাম অম্বিকাচরণ মজুমদারের নামানুসারে অম্বিকা মেমোরিয়াল হল নামকরণ করা হয়। ১৯২৭ ফরিদপুর আদর্শ বালিকা উচ্চ ও ১৯৩২ সালে বর্তমান হালিমা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ব্রিটিশ শাসনের সময় ফরিদপুরের বানিজ্যিক কেন্দ্র ছিল বর্তমানের চকবাজার ও রথখোলা যেখানে বর্তমান হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার তৈরি করা হয়েছে। বাজার দুইটি কুমার নদের দুই পাড়ে হওয়াই ১৯৩৫ সালে আলিমুজ্জামান সেতু নির্মাণ করা হয় যা বর্তমানে 'বেইলি ব্রিজ' নামে পরিচিত।[১১] ১৯৩৬ সালে তৎকালীন ফরিদপুর জজ কোর্টের বিচারক মৌলভি তমিজউদ্দিন খান বর্তমান পুরাতন কোর্ট জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন।[১২]

পূর্ব-পাকিস্তান

[সম্পাদনা]

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় শেখ মুজিবুর রহমানমহিউদ্দিন আহমেদ ফরিদপুর কারাগারে বন্দি হিসেবে ছিলেন।[১৩]

১৯৫৬ সালে ফরিদপুর স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৩ সলে ফরিদপুরে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ১৯৬৬ ফরিদপুরগভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটসারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, ১৯৬৮ সালে ইয়াছিন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

জনপরিসংখ্যান

[সম্পাদনা]
ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৮৭২১০,০৭৭    
১৮৮১১০,২৬৩+০.২%
১৮৯১১০,৭৭৪+০.৪৯%
১৯০১১১,৬৪৯+০.৭৮%
১৯১১১৩,১৩১+১.২%
১৯২১১৪,৫০৩+১%
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯৮১৬৬,৫৭৯+২.৫৭%
১৯৯১৬৩,৯৩৮−০.৪%
২০০১৯৯,৯৪৫+৪.৫৭%
২০১১১,২১,৬৩২+১.৯৮%
২০২২২,৩৭,২৮৩+৬.২৬%
[১৪][১৫][১৬]

বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী ফরিদপুর পৌরসভায় মোট ৫৭,২২৭টি পরিবার রয়েছে ও ২,৩৭,২৮৩ জন মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে পুরুষ ১১৮৭১৭ জন, নারী ১১৮৫৪৯ জন ও হিজড়া ১৭ জন।[১৬]

ফরিদপুর পৌরসভায় মোট ৬৭,৪৫২ জন কর্মজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৮,২৩৪ জন এবং নারী ৯,২১৮ জন। অন্যদিকে মোট ৫৫,৮৩৭ জন ব্যক্তি গৃহকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন যাদের মধ্যে ৫৪,৩৬০ জনই নারী। কর্মজীবীদের মধ্যে ৮৪.২০ শতাংশ সেবামূলক, ৯.৮ শতাংশ শিল্প ও ৬ শতাংশ কৃষি কর্মের সঙ্গে জড়িত।[১৬]

ফরিদপুর পৌরসভায় ধর্ম (২০২২)
  1. ইসলাম (৮৭.৩৬%)
  2. হিন্দু (১২.২৫%)
  3. খ্রিস্ট (০.৩৭%)
  4. বৌদ্ধ (০.০০৫%)
  5. অন্যান্য (০.০০৫%)

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী ফরিদপুর পৌরসভায় বসবাসকারী ২,৩৭,২৮৩ জন মানুষের মধ্যে ২,০৭,২৭৮ জন ইসলাম, ২৯,০৯৪ জন হিন্দু, ৮৮৫ জন খ্রিস্ট, ১৩ জন বৌদ্ধ ও ১৩ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন।[১৬]

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]
বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ
অন্যান্য
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক
মাধ্যমিক বিদ্যালয়

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. প্রবীর কান্তি বালা (৮ ডিসেম্বর ২০২১)। "পল্লিকবির 'ছোট গাঁ' আজ অগোছালো শহর"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  2. ফরিদপুরের ইতিহাস (পিডিএফ)। কলকাতা: পারুল প্রকাশনী। ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  3. মঈন উদ-দিন আহমদ খান (২০০৭)। বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস (পিডিএফ)। গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া কর্তৃক অনূদিত। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  4. "Sridham Sriangan Faridpur" [শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন ফরিদপুর] (ইংরেজি ভাষায়)। Mahanam sampraday। ২৮ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  5. "জিও কোড - ফরিদপুর জেলা" (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ৫ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  6. "জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২" (পিডিএফ)বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন - বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। পৃ. ৩৯০। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২৪
  7. "ফরিদপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য"bfcks.com/। বৃহত্তর ফরিদপুর চাকরীজিবী কল্যাণ সমিতি। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  8. "জেলা প্রশাসনের পটভূমি"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন - ফরিদপুর জেলা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  9. নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর (১১ নভেম্বর ২০২৩)। "ফরিদপুর জেলা কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দী"প্রথম আলো। ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  10. হারুন-অর-রশীদ (৪ অক্টোবর ২০২০)। "ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস"বাংলাদেশ জার্নাল। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  11. "দুর্ভোগের নাম বেইলি ব্রিজ"জাগো নিউজ ২৪। ১৩ এপ্রিল ২০২৩। ২ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  12. "ফরিদপুরে ৮৪ বছরের পুরনো দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহাসিক কোর্ট জামে মসজিদ"জাগো নিউজ ২৪। ১২ এপ্রিল ২০২২। ১৮ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  13. শেখ মুজিবুর রহমান (২০২১)। অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পিডিএফ)। ঢাকা: মহিউদ্দিন আহমেদ, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৫০৬১৯৫৭। ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  14. "Bengal District Gazetteer: Faridpur District Statistics 1911-1912 to 1920-1921" [বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার: ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট পরিসংখ্যান ১৯১১-১৯১২ থেকে ১৯২০-১৯২১] (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০২৫
  15. "Population And Housing Census National Report Volume-03: Urban Area Rport, 2011" [জনসংখ্যা ও গৃহগণনা জাতীয় প্রতিবেদন খণ্ড-০৩: নগর এলাকা প্রতিবেদন, ২০১১] (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০২৫
  16. 1 2 3 4 "Population and Housing Census 2022 COMMUNITY REPORT: FARIDPUR" [জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কমিউনিটি রিপোর্ট: ফরিদপুর] (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০২৫

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  • উইকিমিডিয়া কমন্সে ফরিদপুর সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
  • উইকিঅভিধানে ফরিদপুর-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।