সীতাকুণ্ড

স্থানাঙ্ক: ২২°৩৭′১২″ উত্তর ৯১°৩৯′৩৬″ পূর্ব / ২২.৬২০০০° উত্তর ৯১.৬৬০০০° পূর্ব / 22.62000; 91.66000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সীতাকুণ্ড
শহর
সীতাকুণ্ড বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
সীতাকুণ্ড
সীতাকুণ্ড
বাংলাদেশে চট্টগ্রামের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৭′১২″ উত্তর ৯১°৩৯′৩৬″ পূর্ব / ২২.৬২০০০° উত্তর ৯১.৬৬০০০° পূর্ব / 22.62000; 91.66000
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাচট্টগ্রাম জেলা
উপজেলাসীতাকুণ্ড
সরকার
 • ধরনপৌরসভা
 • শাসকসীতাকুণ্ড পৌরসভা
 • পৌর মেয়রবদিউল আলম[১]
আয়তন
 • মোট২৮.০ বর্গকিমি (১০.৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[২]
 • মোট৪৩,৫৫৫
 • জনঘনত্ব১,৬০০/বর্গকিমি (৪,০০০/বর্গমাইল)
 • বিশেষণসীতাকুন্ডীয়া
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
ডাক কোড৪৩১০
জাতীয় কলিং কোড+৮৮০
আঞ্চলিক টেলিফোন কোড৩১
ভাষাবাংলা (দাপ্তরিক)
চাঁটগাঁইয়া (কথ্য)
ওয়েবসাইটসীতাকুণ্ড পৌরসভা

সীতাকুণ্ড বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি শহরপৌর এলাকা। প্রশাসনিকভাবে এটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রশাসনিক সদরদপ্তর এবং প্রধান শহর। ভৌগলিকভাবে এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। সীতাকুণ্ড শহর চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এর আয়তন ২৭.৯৭ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪৫,১৪৭ জন।[৩] জাহাজ ভাঙ্গন শিল্পসহ এখানে অনেক ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার কারণে এটি চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক-সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়চন্দ্রনাথ মন্দির, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতসহ এখানে অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের আসামিয় জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। এর পরের শতাব্দীতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল এর হাতে (৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)। সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রিষ্টাব্দ) ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুর বংশের শের শাহ সুরির নিকট বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান গিয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ পরাজিত হলে এই এলাকা আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং আরাকানীদের বংশধররা এই অঞ্চল শাসন করতে থাকেন। পরবর্তীতে পর্তুগীজরাও আরাকানীদের শাসনকাজে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ থেকে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। প্রায় ১২৮ বছরের রাজত্ব শেষে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল সেনাপতি বুজর্গ উম্মেদ খান আরাকানীদের এবং পর্তুগীজদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন।

পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর এই এলাকাটিও ইংরেজদের দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় এই অঞ্চলের কর্তৃত্ব স্বদেশীদের হাতে আসে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ২ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

নামকরণ[সম্পাদনা]

ইতিহাস মতে, এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন। অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। তারা আসবেন জানতে পেরে মহামুনি ভার্গব এখানে স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন। তবে বর্তমানে কুণ্ডগুলো শুকিয়ে গেছে। রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা যে কুণ্ডে স্নান করেন, তার নাম হয় সীতাকুণ্ড। এরপর কালের বিবর্তনে স্থানের নামকরণও করা হয় সীতাকুণ্ড।[৪]

ভূগোল[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে উত্তর দিকে ২০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ২২৯ কিলোমিটার দূরে, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশের সমভূমিতে সীতাকুণ্ড অবস্থিত, এটি ২২°২৭' ২৩" উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৯' ৩৬" পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[৫] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১০ মিটার (৩২ ফুট)। সীতাকুণ্ড শহরের আয়তন ২৭.৯৭ বর্গকিলোমিটার, যা একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমিতে এর অবস্থান হলেও এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ের কাছাকাছি। এর ভূসংস্থান পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঢালু।

চট্টগ্রাম শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে, সীতাকুণ্ড শহরকে একটি স্যাটেলাইট টাউন হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভাটিয়ারীর পাশাপাশি শিল্প উন্নয়নের জন্য এ শহরকে নির্বাচিত একটি অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের স্তরের নিচে অবস্থিত জমতে থাকা পলির এক অবিচ্ছিন্ন সমতল ভূমিতে এই শহরটি একটি বাঁধের কারণে জোয়ারের প্রভাব এবং এই অঞ্চলের বন্যার হাত থেকে মুক্ত।[৬] সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দির এবং বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
২০০১৩৬,৬৫০—    
২০১১৪৫,১৪৭+২.১১%
উৎস:[৩]

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের আদমশুমারী ও গৃহগণনা অনুসারে সীতাকুণ্ড শহরের জনসংখ্যা ৪৫,১৪৭ জন,[৩] যা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সাংবিধানিক রাষ্ট্র সিন্ট মার্টিনের মোট জনসংখ্যার সমান। যার মধ্যে ২২,৭৫৯ জন পুরুষ এবং ২২,৩৮৮ জন মহিলা। শহরের নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০০:৯৮, যেখানে জাতীয় লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০.৩ এবং জাতীয় শহুরে লিঙ্গ অনুপাত হল ১০৯।[৭] ২০১১ সালে তথ্য অনুযায়ী স্বাক্ষরতার হার ৬২.১%, যেখানে জাতীয় শহুরে স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৪% ও চট্টগ্রাম জেলার স্বাক্ষতার হার ৫৮.৯%। সীতাকুণ্ড শহরে ৯০১৭ টি পরিবার রয়েছে, গড়ে প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন।

২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী শহরের মোট জনসংখ্যার ৮৯.৬৫% মুসলমান, ১০.০৯% হিন্দু, ০.১৭% বৌদ্ধ, ০.০১% খ্রিস্টান ও ০.০৮% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

প্রশাসন[সম্পাদনা]

সীতাকুণ্ড শহর সীতাকুণ্ড পৌরসভা নামক একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। সীতাকুণ্ড পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভাটি শহরকে ৯টি ওয়ার্ড এবং ২২টি মহল্লায় বিভক্ত করেছে। এ শহরের উল্লেখযোগ্য মহল্লাগুলি হল ইয়াকুবনগর, নুনাচড়া, মহাদেবপুর, সোবানবাগ, ভূঁইয়া পাড়া, চৌধুরী পাড়া (প্রেমতলা নামেও পরিচিত), মৌলভী পাড়া, আমিরাবাদ, এডিলপুর এবং শিবপুর। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর থাকেন। পৌরসভার প্রধান হলেন মেয়র। এছাড়াও তিন জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রয়েছেন।

আইনশৃঙখলার দিক থেকে শহরটি সীতাকুণ্ড পুলিশ থানার অধীন। সীতাকুণ্ড থানা ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসেদর ২৮১ নং আসন চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড শহর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

সীতাকুণ্ড শহরে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হল সড়কপথ, যদিও এখানে বহুপূর্ব থেকেই উন্নত রেলপথের সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এ শহরের পাশ দিয়ে গেছে। যা সীতাকুণ্ডকে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম এবং ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে। সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন এ শহরের সেবা প্রদানকারী একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এ শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দর।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সীতাকুণ্ড শহরের পৌরসভার মেয়র"। ২০১৯-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৫ 
  2. "সীতাকুণ্ড শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪ 
  3. "Sitakunda Town"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯ 
  4. "চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির ঘিরে আছে যত রহস্য"jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫ 
  5. "22.623273, 91.660071 Latitude longitude Map"www.latlong.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৬ 
  6. সীতাকুণ্ড পৌরসভার ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-০২-১৫ তারিখে; নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সরকার, ২০০৬
  7. "BANGLADESH URBAN CENSUS RESULTS AT A GLANCE"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা x। ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯