দুপচাঁচিয়া উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′০.০১২″ উত্তর ৮৯°১০′০.০১২″ পূর্ব / ২৪.৮৬৬৬৭০০০° উত্তর ৮৯.১৬৬৬৭০০০° পূর্ব / 24.86667000; 89.16667000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দুপচাঁচিয়া
উপজেলা
মানচিত্রে দুপচাঁচিয়া উপজেলা
মানচিত্রে দুপচাঁচিয়া উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′০.০১২″ উত্তর ৮৯°১০′০.০১২″ পূর্ব / ২৪.৮৬৬৬৭০০০° উত্তর ৮৯.১৬৬৬৭০০০° পূর্ব / 24.86667000; 89.16667000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
জেলাবগুড়া জেলা
থানা ও উপজেলা১৮৮০ ও ১৯৮৪সাল
সরকার
 • ধরনউপজেলা পরিষদ
 • চেয়ারম্যানমোঃ ফজলুল হক (স্বতন্ত্র প্রার্থী)
আয়তন
 • মোট১৬২.৪৫ বর্গকিমি (৬২.৭২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১৩)
 • মোট৪,৪৬,২৬৩
 • জনঘনত্ব২,৭০০/বর্গকিমি (৭,১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৭২.৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৮৮০,৫৮৮১ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ১০ ৩৩
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

দুপচাঁচিয়া বাংলাদেশের বগুড়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা; যেটি পূর্বে "ধুপচাঁচিয়া" নামে পরিচিত ছিল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বগুড়া-৩ আসনের অন্তর্গত।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

বগুড়া সদর থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এর মোট আয়তন ১৬২.৪৫ বর্গ কিলোমিটার এবং দুপচাঁচিয়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ১০.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। এর পূর্ব পাশ দিয়ে নাগর নদী বয়ে গেছে। দুপচাঁচিয়া বগুড়া জেলার অন্যতম একটি উপজেলা। দুপচাঁচিয়া এর উত্তরে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলা, দক্ষিণে আদমদীঘি উপজেলাকাহালু উপজেলা, পূর্বে শিবগঞ্জ উপজেলাকাহালু উপজেলা, পশ্চিমে আদমদীঘি উপজেলাজয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

দুপচাঁচিয়া পৌরসভা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা নয়টি ওয়ার্ড ও আটত্রিশটি মহল্লার সমন্বয়ে গঠিত। দুপচাঁচিয়া পৌরসভা ছাড়াও তালোড়া পৌরসভা নামে আরও একটি পৌরসভা ২০১২ সালে গঠিত হয়। এছাড়া এই উপজেলার অন্তর্গত ৬ টি ইউনিয়ন, ১১৫ টি মৌজা এবং ২৩০ টি গ্রাম আছে। পোস্ট অফিস আছে ১১ টি।

ইউনিয়ন সমূহ[১]:

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪,৪৬,২৬৩ জন।[২] যার ১,৬০,৮৯৪ জন পুরুষ ও ১৭৯,২৯০ জন নারী। প্রতি কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯৯০ জন। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬১ হাজার ৮১৯ জন ও মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৮৭০ জন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

"দুপচাঁচিয়া" নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি আছে যে এখানে নাকি একসময় প্রচুর "ধুপ" উৎপন্ন হত। অনেকে বলেন সেই "ধুপ" হতেই "ধুপচাঁচিয়া" নামের সৃষ্টি। আবার অনেকে বলেন এককালে হিন্দু প্রধান এলাকা হিসাবে এখানে প্রচুর ধোপা শ্রেণির লোক বাস করত। এই ধোপা কথাটি থেকেই কালক্রমে এই এলাকার নামকরণ হয়েছে ধোপচাঁচিয়া। এছাড়াও প্রচলিত আছে এখানে একসময় "ধূপছায়া" নামে একধরনের শাড়ি পাওয়া যেত। যা দেশে বিদেশে অনেক বিখ্যাত ছিল। সেই ধূপছায়া হতে "ধুপচাঁচিয়া" নামের উৎপত্তি, যা পরবর্তীতে "দুপচাঁচিয়াতে" পরিবর্তিত হয়েছে।[৩]

দুপচাঁচিয়া পুলিশ থানার কার্যক্রম ১৮৮০ সালে শুরু হয়। দুপচাঁচিয়া থানাটি ১৯৮৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২০ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রলায়ের আদেশ বলে দুপচাঁচিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৮৪ টি,[৪] মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৬ টি, মাদ্রাসা আছে ২৬ টি, কলেজ আছে ৮ টি।[৫] দুপচাঁচিয়াতে বর্তমানে শিক্ষার হার ৭২.৫%।

উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান সমূহ: আছির উদ্দীন চিশতী মেমোরিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মোস্তফাপুর দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দুপচাঁচিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ দুপচাঁচিয়া, দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজ, দুপচাঁচিয়া মহিলা কলেজ, দুপচাঁচিয়া শাপলা উচ্চ বিদ্যালয়, তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী শাহ্ এয়তেবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ।

কৃষি[সম্পাদনা]

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে মোট জমির পরিমাণ ২৪,০৫৪ হেক্টর। এতে মোট ফসলী জমির পরিমাণ ৫৫,৬৯০ হেক্টর। অধিকাংশই দুই ফসলী জমি বা তিন ফসলী জমি। জমিতে সেচ দেয়ার জন্য গভীর নলকূপ আছে ৫৬৭ টি এবং অ-গভীর নলকূপ আছে ৬৯৯ টি। এ উপজেলাতে বাৎসরিক মোট ১,৩২,০০০মে: টন খাদ্য উৎপাদিত হয় যেখানে বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা ৩৭,৯৯০মেঃ টন। উদ্ধৃত খাদ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৪৪%, ব্যবসা ১৩.৮৪%, চাকরি ৪.৪৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৭%, শিল্প ০.৭৪%, নির্মাণ ০.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৫% এবং অন্যান্য ৬.৩৯%। এখানকার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, বিস্কুট, মাছদুধ[৬] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পণ্যঃ

কৃষিপণ্যঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার কৃষিপণ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। খাদ্যশস্য জাতীয়- ধান, গম, আলু, সরিষা। শাক সবজি- লাউ, শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, ঢেঁড়স, ডাটা শাক, সজিনা, বরবটি, কচু। মসলা- পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ

খোলাশ খেলনা শিল্পঃ উপজেলার আড়াই কিঃ মিঃ উত্তরে ঐতিহাসিক ধাপসুলতানগঞ্জ হাটের পরেই খোলাশ গ্রাম। এ গ্রামের মোন্না পাড়ায় বহু পরিবার খেলনা শিল্পের সাথে জড়িত। শুরুতে এখানে টমটম, ঘিরনি সহ ৭/৮ ধরনের খেলনা তৈরি হত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্লাস্টিক খেলনা তৈরিতে জড়িয়ে পড়েছে এসব শিল্পীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ এলাকার খেলনার কদর রয়েছে। খোলাশ গ্রামের এই খেলনা তৈরির ঐতিহ্য প্রায় ৬০ বছরের।[৭]

এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিঃ তালোড়ায় ১৯৫৪ সালে উত্তর বঙ্গের প্রথম এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। লাদুরাম আগারওয়ালা নামে এক মারোয়ারী খেতওয়াত এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি চালু করেন। পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি এখানে গড়ে উঠে। এসব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত মালামাল উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সমাদৃত।

মিল-চাতালঃ উত্তরবঙ্গের মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চাল প্রসিদ্ধ। এ উপজেলার চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সুনামের সাথে বিক্রি হয়। এ উপজেলায় ৫ শতাধিক চাতাল ও চাউলকল স্থাপিত রয়েছে। উপজেলা সদর, তালোড়া, চৌমুহনী ও সাহারপুকুরে এ ধরনের মিল চাতাল বেশি।

তাঁত শিল্পঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার তাঁত শিল্পের ইতিহাস বহু পুরাতন। দুপচাঁচিয়া থানা সৃষ্টির অনেক আগে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছিল। তাঁত শিল্পের তৈরি ধূপছায়া নামক শাড়ি এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল। কালক্রমে ধূপছায়া শাড়ীর নাম থেকেই দুপচাঁচিয়া নামকরণ করা হয়েছে বলে কথিত আছে। পরে তাঁত শিল্পের বিলুপ্তি ঘটে। এ তাঁত সূত্র ধরেই উপজেলার দেবখন্ড তাঁতিপাড়া, নলঘড়িয়া, ডাকাহার গ্রাম, তারাজুন গ্রাম, চান্দাইল গ্রাম, নূরপুর গ্রাম, নওদাপাড়া, ফুটানিগঞ্জ গ্রামের প্রায় ৩ শত পরিবার এ তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব তাঁত শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে গায়ের চাদর, গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর উল্লেখযোগ্য।

মৎস্য চাষঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রায় ৩,৫০০ টি পুকুর ও ৪৪৬ টি জলাশয় রয়েছে। উপজেলার খাস পুকুরগুলো সরকারীভাবে লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুকুরগুলোকে ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপকভাবে মাছ চাষ করা হয়। উপজেলার অধিকাংশ পুকুর ও জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাংগাস মাছ ব্যাপকহারে চাষ করা হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে মাছ চাষ বিস্তার লাভ করায় মাছের পোনার চাহিদা পূরণের জন্য অনেক মৎস্য বীজাগার অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে।

গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালনঃ ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উপজেলা পশু পালন অফিস সূত্রে জানা যায় গরুর সংখ্যা ২৭১৫০ টি, মহিষের সংখ্যা ৩১২০ টি, ছাগলের সংখ্যা ২৪,৭৮৬ টি, ভেড়ার সংখ্যা ৫২৪২ টি, মোরগ-মুরগীর সংখ্যা ৪৫,৬৮২ টি, হাঁসের সংখ্যা ৪৮৩০২ টি। উপজেলায় ২৬ টি ডেইরী ফার্ম ও ২৯ টি মুরগীর ফার্ম গড়ে উঠেছে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে সরকারী ও বেসরকারী মিলেয়ে ব্যাংকের সংখ্যা ১১টি।

বিবিধ[সম্পাদনা]

দুপচাঁচিয়াতে সরকারী হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক এর পাশাপাশি বেশ কিছু ক্লিনিক বেসরকারীভাবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ০১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্র আছে ০৪টি, কমিউনিটি ক্লিনিক আছে ২৪টি এবং বেসরকারী ক্লিনিক আছে ০৮ টি। বগুড়া জেলার সবচেয়ে বড় হাট "ধাপের হাট" এই দুপচাঁচিয়াতেই অবস্থিত। এছারাও আরও ছোট-বড় ২১ টি হাট-বাজার আছে।[২]

ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য স্থান[সম্পাদনা]

ধাপসুলতানগঞ্জঃ ধাপসুলতানগঞ্জ একটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান। দুপচাঁচিয়া উপজেলার উত্তরে নাগর নদের তীরে এর অবস্থান এবং উপজেলা সদর থেকে এটি দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানটির নাম হয় ধাপসুলতান নামকরণ করা হয় করাণ কথিত রয়েছে এখানকার ঢিবি বা ধাপের উপর হযরত শাহ্ সুলতান বলখী এর আস্থানা ছিল। এছাড়াও দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নিয়ন্ত্রানাধীন গো-হাটের জন্যও স্থানটি বিখ্যাত।

বেড়ুঞ্জঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের প্রাচীন গ্রাম হিসেবে বেড়ুঞ্জে অনেক পুরাতন পুকুর, অট্টালিকা, মসজিদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। লোকমুখে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দির শেষ দিকে সৈয়দ হোসেন আলী নামক আরবের একজন সাধক ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বীয় স্ত্রী এবং কিছু সংখ্যক শিষ্য সমেত এ অঞ্চলে আগমন করেন। পরবর্তীতে এখানে একটি পরগনার পত্তন করেন।

গোবিন্দপুর মন্দিরঃ গোবিন্দপুর মন্দির গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মৌজার একটি প্রাচীন মন্দির। বর্তমানে মন্দিরের জমিতে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূবেই এ মন্দির থেকে পাথরের পুরাতন মূতি নিয়ে মহাস্থানগড়ে স্থাপন করা হয়। এছাড়াও এখানকার মন্দিরের দেওয়ালে অন্তর্ভাগে ও বহিঃর্ভাগে অনেক হস্তশিল্প রয়েছে।

গান্ধি ভিটাঃ এ উপজেলার তালোড়ায় ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী আসেন ও ৮/১০ দিন অবস্থান করেন। পরবর্তীতে জায়গাটি গান্ধি ভিটা নামকরণ করা হয়। এখানে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি তালোড়া তিন মাথা থেকে দুর্গাপুর সড়কের ২ শত গজ দক্ষিণে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে চরকাই টোল (স্কুল) উদ্বোধন করেন।

গুনাহার সাহেব বাড়িঃ অবিভক্ত বাংলার এক্সাইজ কমিশনার মরহুম খান বাহাদুর মোতাহার হোসেন খান ১৯৪১ইং সালে নির্মিত বাড়িটির নান্দনিক কাঠামোগত সৌন্দর্য এবং লোকগাথা সবার মুখেমুখে ছড়িয়ে পরার কারণে এটি স্থানীয় টুরিস্টদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। গুনাহার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকাতে অবস্থিত এই বাড়িটি দুপচাঁচিয়া উপজেলাবাসীর কাছে 'সাহেব বাড়ি' হিসেবে সুপরিচিত একটি নাম। এখানে ব্রিটিশ পিরিয়ডে টেলিফোন সংযোগ, কেরোসিন তেলে ফ্যান সহ নানা শৌখিন আসবাবপত্র ছিল দর্শনীয় বিষয়।

স্মৃতি অম্লান

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

এই উপজেলা বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের মাঝে হওয়ায় এবং উপজেলার মধ্যে তালোড়া ও আলতাফনগর রেলওয়ে স্টেশন থাকায় একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এই উপজেলা নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল দুপুরে বগুড়া পতন হয় অর্থাৎ বগুড়া দখলে নেয় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুপচাঁচিয়া থানা সদরে পাকহানাদার বাহিনী দখল নেয়া শুরু করে। পরের দিন ২৩ এপ্রিল সকালে দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ওষুধ ব্যবসায়ী সতীশ চন্দ্র বসাককে তাঁর দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি দখলদারবাহিনী জীবন্ত হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন দুপচাঁচিয়া চৌধুরীপাড়ার চৌধুরীবাড়িতে নির্মম গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়। গণহত্যার দু’দিন অতিক্রম হবার পর আনুমানিক ১৯/২০ জনের জন্যে গণকবর খুঁড়ে লাশগুলো সমাধিস্থ করা হয় চৌধুরীবাড়ির শ্যাম সরোবরের সন্নিকটে।[৮]

নয় মাসে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কালে এ উপজেলার প্রায় দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ভারত ও দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নিয়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরোধ ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন এফ এফ ( ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা) এবং মুজিব বাহিনী। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ত্বে ছিলনে এ, বি, এম শাহজাহান। এ, বি, এম শাহজাহান ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে এ এলাকায় আসার আগে এই উপজেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩/৪ টি দল (প্রতি দলে ১২-১৫ জন করে) বিভিন্ন অবস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু অপারেশনে অংশ নিচ্ছিল। এ, বি, এম শাহজাহান প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় আসার পর গোবিন্দপুর, তালোড়া, গুনাহার ইউনিয়ন সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাহালু, আদমদীঘি ও নন্দীগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা এ, বি, এম শাহজাহানের সমন্বিত নেতৃত্ত্বে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার বড় চাপরা রেলওয়ে ব্রীজ ৭১ এর আগস্ট মাসের প্রথম দিকে, জিয়ানগরের আক্কেলপুরে রায়কালী রাস্তার উপরের ব্রীজ আগস্ট মাসের শেষ দিকে, কাহালু ব্রীজ ধ্বংস করা সহ বেশ কিছু অপারেশনে অংশ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হাসান আলী তালুকদারও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে এই উপজেলার চার জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন শহীদ নজরুল ইসলাম, পিতা-নজাবত আলী, সাং-ডিমশহর; শহীদ নিজাম উদ্দিন, পিতা-হালিম উদ্দিন প্রাং, সাং-গোবিন্দপুর; শহীদ মুনছুর রহমান, পিতা-আব্বাস আলী, সাং-গাড়ী বেলঘড়িয়া; শহীদ গোলাম মোস্তফা, পিতা-মেছের আলী ফকির, সাং-পাঁচথিতা, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া। এছাড়া পদ্মপুকুর ও চৌধুরীপাড়া বধ্যভূমিতে আরও নাম জানা অজানা অনেকেই হত্যা করা হয়।[৮]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

  • ওস্তাদ হাবিবুর রহমান সাথী (১৯৩৩-১৯৯৮) - গায়ক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, লেখক, নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা।
  • এবিএম শাহজাহান- সাবেক পাটপ্রতিমন্ত্রী (জাপা), ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার, সাবেক মহাসচিব, জাতীয় পার্টি

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দুপচাচিঁয়া উপজেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে দুপচাঁচিয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪ 
  3. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "দুপচাঁচিয়ার ইতিহাস"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪ 
  4. উপজেলা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ঃ ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩
  5. উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়; ৩০সে ডিসেম্বর, ২০১৩
  6. "দুপচাঁচিয়া উপজেলা"banglapedia.org 
  7. জেগে উঠেছে খেলনার গ্রাম খোলাশ, ইত্তেফাক, ১৫ এপ্রিল ২০২২
  8. পার্থিব, সুকান্ত, সম্পাদক (এপ্রিল ২৩, ২০১৭)। "স্মৃতির অতলে সেদিনের গণহত্যা" 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]