সাপাহার উপজেলা
সাপাহার | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() মানচিত্রে সাপাহার উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৭′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৫.১১৭° উত্তর ৮৮.৫৮৩° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নওগাঁ জেলা |
সাপাহার থানা | ২ জুলাই ১৯৮৩ |
আয়তন | |
• মোট | ২৪৪.৪৯ বর্গকিমি (৯৪.৪০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৪৯,০৯৬ (২,০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী) [১] |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৮২% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৫৬০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৬৪ ৮৬ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ![]() |
সাপাহার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। আমি রাজধানী সাপাহার:
- আমের_বাহারী_নাম
সিন্দুরি, খুদি ক্ষিরসাপাত, গোলাপ খাস, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধস্বরসহ এমনি প্রায় আটশ’ প্রজাতির আমগাছ ছিল আমাদের দেশে নতুনভাবে বাড়িঘর নির্মাণ কলকারখানা গড়ে ওঠা এবং জনসংখ্যার বেশি চাপ সামাল দিতে বাসস্থানের দরকার বেশি হয় এজন্য, উচ্চ ফলনশীল জাতের আমের প্রতি মোহ ও এককালীন বেশি টাকার প্রয়োজনে বয়স্ক গাছ কেটে ফেলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এসব দেশি আমের জাত।
সারাদেশেই আমের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা জানি আর না-ই জানি প্রত্যেকটা আমের রয়েছে একেকটি নাম। অনেক আমগাছ প্রকৃতিগতভাবেই হাইব্রিড (শংকর প্রজাতির) হয়ে জন্মায়।
এসব আম অন্য আমের চেয়ে আকার, স্বাদ কিংবা রঙয়ে পার্থক্য হলে সে পাই নতুন একনাম। জন্ম হয় নতুন একটি প্রজাতি।
রাজশাহী অঞ্চলের আমের কদর সারা বিশ্বময়,, কিন্তু নওগাঁ জেলার সাপাহার আমের রাজধানী নামের খ্যাত,, আমের মৌসুমে শুধুমাত্র সাপাহারে আমের বেচাকিনা হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার,, নওগাঁতেই যে কত প্রজাতির আম রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। #২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে নাক ফজলিকে নওগাঁ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা বিভিন্ন আমবিষয়ক পুস্তক ও গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় এদেশে আমের প্রায় ৮শটি জার্মপ্লাজম রয়েছে। আম বিজ্ঞানী নওগাঁর সন্তান এম এস ইসলাম বলেন
এসব আমের নামকরণও হয়েছে ভিন্নভাবে। বাগান মালিক নিজেই নিজ নামসহ স্ত্রী, পুত্র, কন্যার নামে আমের নামকরণ করেছেন। আমের নামকরণ সত্যেই বিচিত্র রকমের'।
এম এস ইসলাম বলেন, দেশীয় আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বাই, অগ্নি, অমৃত ভোগ, আলফাজ বোম্বাই, আতাউল আতা, আরিয়াজল, আরাজনমা, আলম শাহী, গিলা, গোলাপবাস, আনারস, ইলশাপেটি, কলাচিনি, কাঁচামিঠা, কালিয়া, কৃষ্ণচূড়া, টিক্কাফারাশ, টিয়াকাঠি, কালাপাহাড়ী, কালিভোগ, কালুয়া, কাঞ্চন খোসাল, কাজলা সিন্দুরি, কিষাণ ভোগ, কোহিনুর, কোহিতুর, কুয়া পাহাড়ি, টোফা, কাজল ফজলি, কাইয়া ডিপি, কাটাসি, গোলাপ খাস, গোলাপ বাস, গোল্লা, গুল্লি, গৌরজিত, গুলগুল্লি, চেপি, চরবসা, চম্পা, চন্দন খোস, চিনি কালাম, চিনি বড়ই, চিনি পাতা, ছাবিয়া, ছানাজুর, ছফেদা, জালী বান্ধা, ভাঙা, জিলাপির ক্যাড়া, জোয়ালা, জিতুভোগ, গোবিন্দভোগ, জর্দা, জর্দালু, ত্রিফলা, বাওয়ানী, বাউনি লতা, তাল পানি, দার ভাঙা, দর্শন, দাদভোগ, দেউরি, দিলসাদ, দোফলা, দিল্লির লাডুয়া, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধসর, বড়বাবু, নারিকেলি, নারকেল পাথী, নয়ন ভোগ, প্রসাদ ভোগ, জিতুভোগ, সীতাভোগ, বোগলাগুটি, পাথুরিয়া, ফজলি কালান, ফনিয়া, বারমাসি, বোতল বেকি, বোতলা, বড়শাহী, বাতাসা, বাউই ঝুলি, বিড়া, বেগম পছন্দ, কমল পছন্দ, বেল খাস, বিমলা, বিশ্বনাথ, বোম্বাই কেতুল্লা, বদরুদ্দোজা, বোম্বাই গোপাল ভোগ, বোম্বাই খিরসা, বউ ভুলানী, বৃন্দাবনী, সাহা পছন্দ, বাদশা ভোগ, ভাদুরি, ভবানী, ভবানী চৌরাস, ভারতী, মাল ভোগ, মাংগুড়া পাকা, মিসরীদাগী, মিসরী ভোগ, মিসরী দানা, মিসরী কান্ত, ভূত বোম্বাই, মতিচুর, মোহন ভোগ, মোহন পছন্দ, রাজরানী, রাম প্রসাদ, রানি পছন্দ, কাজী পছন্দ, বিলুপছন্দ, রানি ভোগ, রাজ ভোগ, কালিভোগ, জিবাভোগ, লাক্ষৌ, লাদুয়া, লাডুয়া, লোরাল, লালমুন, লক্ষণ ভোগ, লতা খাট, লতা বোম্বাই, নাবী বোম্বাই, লোহাচুর, শ্যাম লতা, রসবতী, সাটিয়ার ক্যাড়া, সাদাপাড়া, সবজা, সুবা পছন্দ, শাহী পছন্দ, সরিখাস, শরিফ খাস, সিন্দুরি, সারাবাবু, শোভা পছন্দ, সুলতান পছন্দ, সফদরপছন্দ, সূর্যপুরী, সুরমাই ফজলি, হায়াতী, হিমসাগর, খুদি ক্ষিরসাপাত, ক্ষিরপুরি, ক্ষিরমন, ক্ষির টাটটি, ক্ষির বোম্বাই, বেলতা, হাড়িভাঙা, বৈশাখী, গৌড় মতি, হুক্কা, লাড়ুয়ালী, ডালভাঙা, মণ্ডা, মিছরী দমদম, নীলাম্বরী, খান বিলাস, বাতাসা, মনাহারা, পাথুরিয়া, তোহ্ফা, ফোনিয়া, মধুচুষকি, মধুমামি, নকলা, মোহিনিসিন্দুরী, ভুজাহাড়ি, সন্ধ্যাভারুতি, পদ্মমধু, অমৃতভোগ, লতারাজ, বৃন্দাবনি ইত্যাদি।
এছাড়াও দেশে স্বল্প পরিমাণে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদিত বিদেশি আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো, আব্দুল আজিজ, আলফানসো, আলী চৌরস, আম্রপালী, আমবাজান, আমন দাশেহারী, মল্লিকা, চৌসা, তোতাপুরী, বোম্বাই গ্রিন, আনানাস খাশ, আনোয়ার রাতাউল, আনোয়ার আতাউল, আগমামাশু, আওবেক, ইরউইন, কেন্ট, কেনসিংটন, কেইট, কারাবাও, কাইটুক, পিকো, পকনা, পাহুতান, ছিদরালী, ছওসি, জাওনিয়া, ঝিল, ডক্টর পছন্দ, দিল রৌশন, দিল বাহার, দিল ওয়ালা, দালুয়া, চন্দ্রকরণ, কেরি, বোয়ার, ফ্লোরিগ্যান, জিলেট, ভাদুরী, দাসেহারি, ধুপা, নীল উদ্দিন, নোড়া, নাম-ডক-মাই, নওয়াব পছন্দ, নিলাম্বরী, পীরের ফলী, রওশান টাকী, পালমার, পাহুতান, বেগম ফুলি, ভুলীয়া, মালদাহ, মালগোবা, মাদ্রাজী, মিঠুয়া পাটনা, রাগ, র্যাড, রুবি, রত্না, লাভ-ই-মশগুল, লিটল ফ্লাওয়ার, সবদেরাজ, সামার বেহেস্ত, সামার বেহেস্ত চৌসা, সাদওয়ালা, সুকুর খন্দ, সেভেন-ইন-ওয়ান, সুগার কিং, হিটলার পছন্দ, হেডেন, বানানা আম, টমি এটকিনস, জিনহুয়াং, জিনসুই, জিহুয়া, গুইরা, হং শিয়াং ইয়া, তাইনং নম্বর ১, চোকানান, ডট, ডানকুন, অ্যাডওয়ার্ড, সেনসেশন, এলডন, ফ্যাসেল, ফোর্ড, গোল্ড নাগেট, আইভোরি, জাকার্তা, পারভিন, অসটিন, সান-ই-খোদা, সানসেট, গেডং, গোলেক, মালগোয়া, মাসমুদা, প্রায়র, কেরালাডোয়ার্ফ, ওনো, জিল, নীলাম, টংডোম, দাশেহারী, হানিগোল্ড এবং আরুমানিস, শাহজালাল কন ম্যাংগো, মোবাশ্বিরা sweet mango উল্লেখযোগ্য।
নওগাঁর নুদীপুরের আমচাষি এনামুল হক জানান, নওগাঁ ধামুরহাট থানায় এক সময় বৃন্দাবনি, গোলাপবাস, দাদভোগ, গোড়ভোগ, ফুনিয়া, দিলশাদ, কাঞ্চন খোসাল, সিন্দুরি, খুদি ক্ষিরসাপাত, গোলাপ খাস, টিক্কাফারাশ, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধস্বর, নারিকেলি, নয়ন ভোগ, নাগ ফজলি, বৈশাখী, বারমাসি, বোম্বাই, বৌ ভুলানি, বাদশাভোগ, মতিচুর, মোহনভোগসহ শত শত প্রজাতির আম পাওয়া যেতো। বর্তমানে সেগুলো তেমন একটা দেখা যায় না। তবে যাই বলেন যদিও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে এক সময় আমের জন্য পরিচিতি ছিল জোরালোভাবে বর্তমানে আম চাষের দিক দিয়ে নওগাঁ জেলার সাপাহারকে আমের রাজধানী বলা হয় পাশাপাশি সাপাহার ধামইহাট নেয়ামতপুর পোরশা পত্নীতলা আম চাষের জন্য এখন বিখ্যাত শুধুমাত্র আম ক্রয় বিক্রয়ের জন্য আমের মৌসুমে সাপাহারে এবং আগ্রাদ্বিগুণ বাজারে গড়ে ওঠে হাজার হাজার অস্থায়ী আমের আড়ত যেখান থেকে আম ক্রয় করে সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়। নওগাঁ জেলার আম সুস্বাদু সুমিষ্ট এবং দামে সাশ্রয় হওয়ায় এই এলাকার প্রতি সারা বাংলাদেশের একটা আলাদা ভালোলাগা রয়েছে,, এজন্য নওগার আম মানেই একটা নিজস্ব ব্রান্ড,,, ,, রিপোর্টেড বাই শাহাজালাল ইসলাম, নওগাঁ ধামইরহাট
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]সাপাহার রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নওগাঁ জেলার একটি উপজেলা। সাপাহার এর অবস্থান ২৫.১২৫০° উত্তর ৮৮.৫৮১৯° পূর্ব। মোট আয়তন ২৪৪,৪৯ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে পোরশা উপজেলা, পূর্বে পত্নীতলা উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। প্রধান নদী পুনর্ভবা এবং জবাই বিল উল্লেখযোগ্য। বর্তমনে জবাই বিলের শাখাতে নির্মিত পাহাড়ীপুকুর ব্রীজ ব্যাপক আকারে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এবং এটি সাপাহার থানার একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সময়সীমা
[সম্পাদনা]সাপাহার উপজেলা হচ্ছে একটি মানসম্মত উপজেলা। এ উপজেলায় যোগাযোগের ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদুর প্রসারী। নওগাঁ হতে ৬০ কি.মি. পশ্চিমে এ উপজেলা অবস্থিত । পাকা রাস্তা সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাস।
প্রশাসনিক এলাকা
[সম্পাদনা]আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে নওগাঁ জেলার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম উপজেলা।১৯৮৩ সালের ২ জুলাই হতে মানউন্নীত সাপাহার থানা হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
সাপাহার উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন,১৫২টি মহল্লা এবং ২৪৫ টি গ্রাম রয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো ইউনিয়ন গুলোর নাম:
- ১নং সাপাহার ইউনিয়ন
- ২নং গোয়ালা ইউনিয়ন
- ৩নং তিলনা ইউনিয়ন
- ৪নং আইহাই ইউনিয়ন
- ৫নং পাতাড়ী ইউনিয়ন
- ৬নং শিরন্টি ইউনিয়ন
ইতিহাস ও নামকরণ
[সম্পাদনা]নওগাঁ জেলার সীমান্ত ঘেঁষা এই উপজেলাটির নাম সাপাহার উপজেলা। সাপাহার নামকরণের নিখুঁত কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া না গেলেও এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট থেকে জানা গেছে ব্রিটিশ শাসনামলে এই এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল। তৎকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে শম্পা রানী নামে এক সুন্দরী বাঁইঝি তার নাচগানে এলাকাকে মাতিয়ে রেখেছিল। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সে সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সুফি সাধক সেই শম্পা রানীর প্রেমে পড়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তখন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার এই প্রেম কিছুতেই মেনে নিতে না পারায় অবশেষে বাঁইঝি শম্পাকে প্রেমের দায়ে সমাজচ্যুত হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়। বাঁইঝি শম্পার মৃত্যুতে প্রেমিক সুফি সাধক পাগল হয়ে যায় এবং বাঁইঝি শম্পার নাম কাগজে লিখে হার বানিয়ে গলায় পরিধান করে ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে পাগল সুফি সাধকেরও মৃত্যু হলে উপজেলা সদর ঈদগাহ সংলগ্ন এলাকায় তাকে কবরস্থ করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের সুফি সাধক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শম্পা রানীর প্রেমের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকার নাম হয় শম্পাহার। কালের আবর্তনে সেই শম্পাহার থেকেই বর্তমান সাপাহার, যা এখন আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় সাজানো-গোছানো এক ছোট শহর। এছাড়া অনেকের মতে সাপাহারের নামকরণের ইতিহাস ভিন্ন। কারো মতে প্রাচীন কালে এখানে এক উপজাতি বাস করত আর তাদের খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য পেত বরেন্দ্র এই অঞ্চলের গুই সাপ। তারা এই গুই সাপগুলিকে নির্বিচারে ধরে খেত এবং তার চামড়া দিয়ে সুন্দর সুন্দর মানিব্যাগ ও তাদের বাচ্চাদের গলার হার তৈরি করত। মূলত সেই থেকেই এই স্থানের নামকরণ হয়েছে সাপাহার। ২৪৪.৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ১৩৯টি মৌজার উপজেলাটিতে গ্রাম রয়েছে ২৩২টি। এ উপজেলার লোকসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬ জন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে উপজেলাটি পোরশা থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে নওগাঁ জেলার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম উপজেলা ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই হতে মানোন্নীত সাপাহার থানা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সাপাহার উপজেলা বাসীর শিষ্টাচার ও উন্নত মন মানসিকতায় উন্নয়নের দিক হতে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাপাহার থানাকে। সাপাহার থানা-উপজেলা এখন নওগাঁ জেলার একটি সুন্দর ও উন্নত উপজেলা। উপজেলার ঐতিহ্য হিসেবে এখানে রয়েছে প্রায় এক হাজার একর আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় যার নাম ঐতিহ্যবাহী জবই বিল। পূর্ব নাম ডমরইল যা কালের বিবর্তনে জবই বিল নামকরণ হয়েছে। উপজেলার আইহাই ও শিরন্টি ইউনিয়নকে উপজেলা সদর হতে দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে এই বিল। গত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আইহাই ও পাতাড়ী এ দুই ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের দুর্দশার কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকার বিলের উপর ৫০০ মিটার এপ্রোচ সংযোগ সড়ক সহ ২০০ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। প্রাচীন কালে শীতকালে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া হতে অসংখ্য অতিথি পাখি আসত এবং রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাখি শিকারীরা এই বিলে পাখি শিকার করতে আসত বলে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। জেলার শস্য ভান্ডার নামে খ্যাত ছোট্ট পরিসরের উপজেলাটির পূর্বে পত্নীতলা উপজেলা, উত্তরে ও পশ্চিমে ভারত এবং দক্ষিণে পোরশা উপজেলা। উপজেলার পশ্চিম এলাকা ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে পূর্ণভবা নদী। এককালে এ নদী দিয়ে ব্যবসায়ীদের বড় বড় মাল বোঝাই নৌকা দেশের দিনাজপুর, রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী শহরে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করত। বহু পূর্বে এ উপজেলায় যাতায়াতের তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। সর্বত্রই কাঁচা কর্দমাক্ত রাস্তা। এসব রাস্তা দিয়েই মানুষ অতি কষ্টে চলাচল করত। আধুনিক সভ্যতার যুগে আস্তে আস্তে এখন প্রায় সর্বত্রই সভ্যতার ছোঁয়া লেগে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। সুদূর জেলা সদর হতে মহাদেবপুর, এবং জয়পুরহাট হতে পত্নীতলায় মিলিত হয়ে একটি প্রধান রাস্তা এ উপজেলার উপর দিয়ে পোরশা উপজেলা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও রাজশাহী শহরে চলে গেছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]সাপাহার উপজেলা এর জনসংখ্যা প্রায় ১,৬১,৭৯২ (২০১১ আদমশুমারী) জন। পুরুষ, ৫০.৬৮%, এবং নারী ৪৯.৩২% । গড় সাক্ষরতার হার ৪৭.১% ।
- ভাষাসমূহ :
সাপাহার উপজেলার সরকারি ভাষা বাংলা। উপজেলার প্রায় ৯৮% মানুষই বাংলা ভাষাভাষীর। বাংলা ভাষার বাহিরে কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয় ভাষা যেমন : সাঁওতালি , মুন্ডা ,সাদরি ইত্যাদি প্রচলিত আছে।
- ধর্মবিশ্বাস :
বাংলাদেশ সরকারের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সাপাহার উপজেলার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার। মোট জনসংখ্যার ৯৭.২৬% মুসলিম, ৪.৮৭% হিন্দু , ০.৪৬% খ্রিস্টান ও ১.৪২% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ।
- ইসলাম 93.26 (৯৩.৩%)
- হিন্দুধর্ম 4.87 (৪.৮৭%)
- খ্রিস্ট ধর্ম 0.46 (০.৪৬%)
- অন্যান্য 1.42 (১.৪২%)
শিক্ষা
[সম্পাদনা]সরকারি কলেজ ১টি, বেসরকারি কলেজ ৫ টি, টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ১টি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৩০ টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৩টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৯টি, কমিউনিটি স্কুল ৬টি, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ১২টি এবং মাদ্রাসা ৪৬ টি ।
- কলেজসমূহ
- সাপাহার সরকারি কলেজ
- আল-হেলাল ইসলামী একাডেমী অ্যান্ড কলেজ
- সাপাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ
- চৌধুরী চাঁন মোহাম্মদ মহিলা কলেজ
- ভিওইল কলেজ
- দিঘীরহাট কলেজ
- তিলনা কলেজ
- উচ্চ বিদ্যালয়
- আল-হেলাল ইসলামী একাডেমী অ্যান্ড কলেজ
- সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
- মহজিদ পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- সাপাহার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- জামান নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- সাপাহার ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- শিরন্টি মানিকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- তিলনা এম.এল উচ্চ বিদ্যালয়
- জবই উচ্চ বিদ্যালয়
- আইহাই উচ্চ বিদ্যালয়
- তিলনি-পাতাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়
- মিরাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- ভিওইল উচ্চ বিদ্যালয়
- করমুডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়
- গোয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়
- নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- খোট্টাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- কোচ কুড়িলা উচ্চ বিদ্যালয়
- তেঘরিয়া বি.এল উচ্চ বিদ্যালয়
- আশড়ন্দ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ
- পিছলীডাঙ্গা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- বিন্যাকুড়ি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়
- মাদ্রাসা
- জয়দেবপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা
- পাতাড়ি ফাজিল মাদ্রাসা
- মসজিদপাড়া দাখিল মাদ্রাসা
- এলেম নগর দাখিল মাদ্রাসা
- জবাই সুফিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা
- মুঙ্গরইল ফাজিল মাদ্রাসা
- গোপালপুর ফাজিল মাদ্রাসা
- আলাদিপুর মাদ্রাসা
- ইসলামপুর দাখিল মাদ্রাসা
- সাপাহার শরফতুল্লাহ মাদ্রাসা
- সাপাহার কওমী মাদ্রাসা
- সাপাহার মহিলা মাদ্রাসা
- পাহাড়ী পুকুর দাখিল মাদ্রাসা
- হাপানীয় কে এম ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা
- শাহবাজপুর আলিম মাদ্রাসা
- পিছলীডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা
- ধর্মপুর দাখিল মাদ্রাসা
- খোট্টাপাড়া দাখিল মাদ্রাসা
- মানিকুড়া দাখিল মাদ্রাসা
- মাইপুর দাখিল মাদ্রাসা
- মালিপুর দাখিল মাদ্রাসা
- চাঁচাহার ফাজিল মাদ্রাসা
- খঞ্জনপুর তালকুড়া লতিফিয়া আলিম মাদরাসা
- তিলনী দাখিল মাদ্রাসা
- কলমুডাঙ্গা জোহাকিয়া মাদ্রাসা
- সেনপুর এড়েন্দা দাখিল মাদরাসা
খাদ্য ও অর্থনীতি
[সম্পাদনা]কৃষি ৫২.১৫%, কৃষি শ্রমিক ২২.৫৮%, অকৃষি ৩.০৭%,, বাণিজ্য ৭.১৪%, চাকরি ৭.৪৭%, অন্যান্য ৭.৫৯%।
প্রধান শস্য হলো: ধান, গম, তরমুজ, সরিষা,এবং আম। এলাকার বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্যের মধ্যে রয়েছে বুনা ধান, তিল, তিসি ইত্যাদি। প্রধান ফল আম, কাঁঠাল , কলা, তাল, জাম এবং পেঁপে ইত্যাদি।
কারখানা, খামার ও কুটিরশিল্প
[সম্পাদনা]দুগ্ধ খামার ৩টি, মুরগির খামার ৩০টি, মৎস্য খামার ১টি (সরকার নিয়ন্ত্রিত), এবং স্থানীয়ভাবে আরও ২০টি। বরফ কারখানা ৭টি, আটা কল ৯টি, বয়লার ৮টি, চাল কল ২৭টি। বাঁশ কারখানা ১২২টি, স্বর্ণকার ৪৫, কামার ৩৪, কাঠের কাজ ১৬৮, সেলাই মেশিন ২৯২টি।
আমদানি-রপ্তানি
[সম্পাদনা]প্রধান রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ধান, গম , সরিষা, এবং আম। এখানকার প্রধান ফসল হচ্ছে ধান।
ভূমির ব্যবহার
[সম্পাদনা]মোট আবাদি জমি ২৫১৬২ হেক্টর, পতিত জমি ১০০ হেক্টর; একক ফসল ৬২%, দ্বিগুণ ফসল ২৯% এবং ত্রিগুণ ফসল জমি ৯%।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
সাপাহার জিরো পয়েন্ট
-
গণগ্রন্থাগার
-
সাপাহার সরকারি কলেজ
-
জবাই সেতু
-
উপজেলা চত্বর শহীদ মিনার
-
সাপাহার শহর
-
কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Population by religion community – 2011"। Census of India, 2011। The Registrar General & Census Commissioner, India। ২৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।