মুত্তাকী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুত্তাকী (আরবি: مُتَّقِينَ বা তক্বী (আরবি: تقي) শব্দের অর্থ ইসলাম ধর্ম অনুসারে ধার্মিক, আল্লাহ ভীরু। তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। অর্থাৎ যাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় আছে এবং যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করেন তারাই মুত্তাকী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ এবং অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে মুক্ত রাখে তাকে মুত্তাকী বলা হয়। মুত্তাকী ব্যক্তি সততা, আমানতদারি, সহনশীলতা, কৃতজ্ঞতা, ন্যায় ও ইসলামের গুণে গুণান্বিত হয়ে থাকে। মুত্তাকীর গুণাবলিঃ কুরআন হলো মানুষের জন্য হিদায়াত বা পথপ্রদর্শক। কিন্তু সবাই এই কুরআন থেকে হিদায়াত পাবে না। হিদায়াত পাবেন তারাই যারা তাকওয়া অবলম্বনকারী, তথা মুত্তাকী, ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন অর্থাৎ এই কুরআন হলো মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।’ আর মুত্তাকী হলো তারা ‘যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, আর তোমার প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং তোমার আগে যা নাজিল করা হয়েছিল, তার ওপর ঈমান আনে এবং আখেরাতের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সূরা বাকারাঃ ৩-৫)। উপরিউক্ত আয়াত গুলোতে মুত্তাকীদের পাঁচটি মৌলিক গুণের কথা বলা হয়েছেঃ ১। অদৃশ্য, দৃষ্টির অন্তরালের বস্তু, যা ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত, যেমন আল্লাহ, ফেরেশতা, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করা। ২। যথাযথ ভাবে যথা নিয়মে, যথা সময়ে সব শর্ত পালন করে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে নামাজ সম্পাদন করা। ৩। আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে মানব কল্যাণে আল্লাহতায়ালার পথে ব্যয় করার মানসিকতাসম্পন্ন হওয়া। ৪। আল্লাহ তায়ালার দিকনির্দেশনা সংবলিত সব আসমানি কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে আল-কুরআনুল কারিমকে স্বীকার করা ও সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। ৫। মুত্তাকির পঞ্চম গুণ হচ্ছে পৃথিবীর জীবনের কর্মের চিরস্থায়ী ফলাফল পাওয়ার জন্য আখিরাতের জীবনের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ পুরুষরা নারীদের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা। (সূরা নিসাঃ ৩৪) মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত হাদিসে আছে, যে মহিলা যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে চলে এবং স্বামীর পূর্ণ আনুগত্য করে, তার ইচ্ছা, সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। (তিরমিযীঃ ১১৫৯) মোট কথাঃ ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। অর্থাৎ স্বামী বেনামাজি এবং বদমেজাজি হলেও তার আনুগত্য করা ওয়াজিব

"আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।"

— সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১[১]

গুনাহের পরিস্থিতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন কারো প্রতি ক্রোধ জাগ্রত হয়েছে, এ অবস্থায় আল্লাহর ভয়ে সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে মুত্তাকী হিসাবে গণ্য হয়। তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ উপরের আয়াতের ‘শয়তানের পক্ষ হতে কুমন্ত্রণাকে’ ‘ক্রোধ’ শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যান্য গুনাহের পরিস্থিতিতেও আল্লাহর ভয়ে নিজকে নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা ‘তাকওয়ার’ পরিচয় পাওয়া যায়।[২]

মুত্তাকীদের ৫ টি বৈশিষ্ট্যঃ

১. সবসময় মনের ভেতর আল্লাহ তায়ালার ভয় রাখেন।

মুত্তাকী হলেন আল্লাহ পাকের ঐসকল বান্দা, যাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের ভয় আছে এবং  যারা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। আল্লাহকে স্মরণ করার এক পর্যায় হল, গুনাহের পরিস্থিতি তৈরি হলে আল্লাহকে  স্মরণ করা এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى  فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

 ‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই  হবে তার আবাস।’-সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১

২. কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।

৩. সবসময় সৎকর্ম করা ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন এবং অন্যকেও এ ব্যাপারে করার ও বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।

৪. কোন মন্দ কাজে জরিয়ে পরলে সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার কাছে আনুশোচনাগ্রস্থ হন।

যখন কোনো বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরতে শুরু করে তখন আল্লাহ কত খুশি হন হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان على راحلته بأرض فلاة، فانفلتت منه، وعليها طعامه وشرابه، فأيس منها، فأتى شجرة فاضطجع في ظلها قد أيس من راحلته، فبينا هو كذلك إذا هو بها قائمة عنده، فأخذ بخطامها ثم قال من شدة الفرح : اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح

    অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কোনো মরুভূমিতে সফর করছে। যে উটে সফর করছে তাতেই তার পাথেয় ও সামানা। কোথাও হয়ত যাত্রা বিরতির জন্য একটু  নেমেছে। এদিকে সুযোগ পেয়ে উটটি পালিয়ে গেল। এখন এই ধূ ধূ মরুভূমিতে মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই প্রান্তর পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়, আর পানি ও পাথেয় ছাড়া বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। অতএব মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে এক গাছের নিচে এসে শুয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে,  তার সেই উট সব পাথেয়সহ তার সামনে উপস্থিত। আনন্দের আতিশয্যে ভুলে বলে ফেলেছে اللهم أنا عبدي وأنت ربك  (হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা,তুমি আমার রব) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বান্দা ঐ মুহূর্তে তার উট ফিরে পেয়ে যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, আল্লাহ পাক তার ফিরে আসা বান্দার প্রতি তারচেয়েও বেশি খুশি হন। - [সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৪৬]

৫. তারা জান্নাতে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের আশা রাখেন।[২]নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন”কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা  সকল পছন্দনীয় বিষয়কে মুত্তাকীরা মেনে নেন নিজের জীবনে প্রয়োগ করেন।ব্যাখ্যা করা হলো -

তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। অর্থাৎ যাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় আছে এবং যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করেন তারাই মুত্তাকী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ এবং অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে মুক্ত রাখে তাকে মুত্তাকী বলা হয়।এই কারণে মূলত মহান আল্লাহতালা মুত্তাকীদের পছন্দ করেন ভালোবাসেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]