গুনাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গুনাহ বা পাপ ইসলামি ধর্মশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। আল্লাহ্‌র নির্দেশের পরিপন্থী হয় এমন সকল কাজকেই মুসলিমরা গুনাহ হিসেবে বিবেচনা করে এবং ধর্মীয় আইন লঙ্ঘন করাকে অধার্মিকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১] আল্লাহর কোনো আদেশ না মানা ও কোন নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত না রাখাই মূলত গুনাহ। বিশ্বাস করা হয় কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ প্রতিটি মানুষের ভালো ও মন্দ কাজ গুলোকে পরিমাপ করবেন এবং মন্দ কাজের জন্য তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। আল্লাহ ক্ষমা না করলে ঐ ব্যক্তি পরকালে জাহান্নাম (আরবি: جهنم) এর আগুনে দগ্ধ হবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

কুরআন[সম্পাদনা]

কুরআনে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে পাপ বোঝানোর জন্য।

  1. যানব[২]
  2. ইসম[২][৩]
  3. খাতিয়াহ[৪]
  4. জুরম[৩]
  5. জুনাহ/হারাজ[৩]

হাদিস[সম্পাদনা]

তিরমিযী গ্রন্থে একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে:

প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপ করে, পাপীদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা তওবা করে।

— সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ২৪৯৯[৫]

সহিহ মুসলিম থেকে আরেকটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে: সহীহ মুসলিমে, আবু আইয়ুব আনসারি এবং আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন:

আল্লাহর রাসূল বলেন, "সেই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, মানুষ যদি পাপ না করতো তবে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে উঠিয়ে নিয়ে এমন এক সম্প্রদায়ের অবতারণা করতেন, যারা পাপ করত এবং পরে (নিজের ভুল বুঝতে পেরে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতেন।"

হাদিসে পুণ্যের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। আন নাওয়াস বিন সামআন হতে বর্ণিত:

"নবী মুহাম্মাদ বলেছেন, "পুণ্য হল সদ্ব্যবহার, আর পাপ হলো যা সন্দেহ তৈরি করে এবং তুমি পছন্দ কর না যে লোকজন তা জেনে ফেলুক।"

ওয়াবিসা বিন মাবাদ হতে বর্ণিত:

“আমি আল্লাহর রাসুলের কাছে গেলাম এবং তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: “তুমি কি পুণ্য সম্পর্কে জানতে এসেছ?” আমি ইতিবাচক উত্তর দিলাম। তখন তিনি বললেন: “তোমার হৃদয়কে জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল যা আত্মাকে প্রশান্তি এবং হৃদয়কে প্রস্বস্তি দেয়, আর পাপ হল যা সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং হৃদয়কে বিচলিত করে, এমনকি লোকে যদি তা বৈধ বলে এবং বারবার তা ন্যায়সঙ্গত বলে তোমাকে বোঝাতে থাকে তাঁর পরও।”

— আহমাদ আদ-দারমি[৬]

কবিরা (বড়) গুনাহসমূহ[সম্পাদনা]

কবিরা গুনাহর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। তবে নিচের কাজগুলিকে সাধারণত কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়:

  1. শির্‌ক করা (আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করা)।
  2. আল্লাহ্ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করা।
  3. আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।
  4. আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবা।
  5. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।
  6. ব্যভিচার করা।
  7. সমকামিতা
  8. চুরি করা।
  9. ডাকাতি করা।
  10. মদ্যপান করা।
  11. জুয়া খেলা।
  12. পরনিন্দা করা।
  13. হস্তমৈথুন করা।
  14. ফরয (আবশ্যিক) নামাজে অবহেলা করা।
  15. রমযানের রোজা না করা।
  16. যাকাত না দেয়া।
  17. সামর্থ্য থাকলেও হজ না করা।
  18. কালো জাদু চর্চা করা।
  19. আল্লাহ্‌র নির্দেশিত কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করা।
  20. মিথ্যা বলা।
  21. অনাথের সম্পত্তি দখল করা।
  22. সুদ নেয়া, সুদ দেয়া এবং সুদের সাক্ষী থাকা।
  23. ঘুষ খাওয়া।
  24. ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা।
  25. মুমিন নারীদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ দেয়া।
  26. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
  27. অহংকার করা
  28. মিথ্যা সাক্ষী দেয়া
  29. মিথ্যা শপথ করা
  30. চাদাবাজি করা
  31. নিষিদ্ধ খাবার খাওয়া
  32. আল্লাহর আইন দ্বারা বিচার না করা
  33. প্রাণীর ছবি আঁকা
  34. ওজনে কম দেয়া
  35. মুসলিমকে কাফির বলা

কবিরা গুনাহ মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কেউ যদি তাওবা ব্যতীত কবিরা গুনাহ নিয়ে মৃত্যুবরণ করে তবে সে কৃত গুনাহের জন্য কিয়ামতের দিন যন্ত্রণাদায়ক শস্তির সম্মুখীন হবে।

বান্দার জীবদ্দশায় বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারা কবিরা গুনাহ মোচন হয়ে যায়। এমনই কিছু নেক-আমল হলোঃ

(১) বেশী বেশী ওজু করা।

(২) নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া।

(৩) রুকু হতে উঠে “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা।

(৪) বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা।

(৫) ফরজ নামাজের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পাঠ করা এবং একবার (سُبْحَانَ اللهِ، اَلْحَمْدُ ِللهِ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ ) সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” উক্ত দোয়া পাঠ করা।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Oxford Islamic Studies Online"Sin। Oxford University Press। ৪ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  2. Ali, Adbullah Yusuf। The Holy Qur'an। পৃষ্ঠা 126। 
  3. Ituzsu, Toshiko (১৯৬৬)। Ethico-Religious Concepts in the Qur'an। Montreal: McGill University Press। পৃষ্ঠা 193–249। 
  4. Brill Encyclopedia of Islam। Leiden Brill। ১৯৯৭। পৃষ্ঠা 484–486। 
  5. টেমপ্লেট:Ihadis
  6. "40 Hadith: Nawawi: 27, English translation: Hadith 27"sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৫